আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
1,770 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (72 points)
edited by
১) কাউকে প্রশংসা করার সীমারেখা কি? কতটুকু?
/ইসলামে কোন প্রশংসা করা নিষিদ্ধ?এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

২) যে ব্যক্তি প্রশংসা করে আর যার প্রশংসা করা হয়, উভয়ে কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়?ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে কি কি ক্ষতি হতে পারে?

1 Answer

+1 vote
by (574,050 points)
edited by
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
কুরআনুল কারিমে এসেছে-‘তুমি মনে করো না- তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং না করা বিষয়ের জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে। এরূপ কখনও মনে করো না, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা আল ইমরান : আয়াত ১৮৮)

হজরত আবু বকর রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সা:-এর মজলিসে এক ব্যক্তির প্রশংসা করা হলো। তিনি তা শুনতে পেয়ে বললেন, ‘সর্বনাশ! তুমি তো তোমার ভাইয়ের গলা কেটে দিলে!’ এ কথা তিনি বারবার উচ্চারণ করলেন। এরপর তিনি বললেন, ‘তোমাদের কারো যদি একান্তই প্রশংসা করতে হয়, তাহলে এরূপ বলবে- আমার ধারণামতে তিনি এরূপ। অবশ্য যদি সে সত্য সত্য সে রূপ হয়ে থাকে। অথচ তার প্রকৃত অবস্থা তো আল্লাহই ভালো জানেন। আর আল্লাহর সম্মুখে কেউ নির্দোষ নয়।’ [সহিহ বুখারি]।

হজরত আবু মুসা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সা:এক ব্যক্তিকে আরেক ব্যক্তির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে শুনলেন। তখন তিনি বললেন, ‘তুমি তো তাকে হত্যা করে ফেললে, অথবা তার পিঠ কেটে ফেললে।’। [আদাবুল মুফরাদ]।
۔

উপরোল্লিখিত হাদিসগুলোয় রাসূলুল্লাহ সা: ও তাঁর সাহাবিদের কাছ থেকে ব্যক্তি প্রশংসা বা তোষামোদ সম্পর্কিত যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে, তাতে একজন ব্যক্তিত্ববান মুসলিমের পক্ষে এমন হীন কর্মে প্রবৃত্ত হওয়া মোটেও সমীচীন নয়। এতে অপরের পাশাপাশি নিজের ব্যাপারেও ভুল বিশ্বাস তৈরি হয় এবং নিজের অজান্তে আত্মোপলব্ধির অনুভূতি হ্রাস পায়। 
,
অন্য দিকে অতিশয় প্রশংসিত ব্যক্তি যদি সমাজের ক্ষমতাশালী কেউ হয়, তা হলে সে আরো স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দেখা দেয়। কাজেই সর্বাবস্থায় ব্যক্তি প্রশংসা থেকে বিরত থাকা উত্তম।
ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো ব্যক্তির যদি প্রশংসা করতে হয়, তা হলে এতটুকু বলা যায় যে, তিনি একজন ভালো লোক। 
,
কাহারো প্রশংসা করা নিন্দিত নয়- যতক্ষণ তা স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে না যায়। প্রশংসা যখন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায় তখন আর তা প্রশংসনীয় থাকে না; বরং নিন্দনীয় স্তাবকতায় পরিণত হয়ে যায়। ইসলাম স্তাবকতাকে অনুমোদন করে না। কেননা তা প্রশংসাকারী ও প্রশংসিত উভয়ের পক্ষে ক্ষতিকর। অতএব প্রশংসায় মাত্রাজ্ঞানের পরিচয় দেওয়া ও মধ্যপন্থা অবলম্বন জরুরি। অর্থাৎ যে যতটুকু প্রশংসার উপযুক্ত ঠিক ততটুকু প্রশংসা করা, তার বেশি নয়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এক ব্যক্তি অন্য একজনের প্রশংসা করলে তিনি তাকে ধিক্কার দিয়ে বললেন, (অর্থ) তুমি তো লোকটার মেরুদণ্ড ভেংগে দিলে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৩০০০)

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إذا كان أحدكم مادحا صاحبه لامحالة، فليقل : احسب فلانا والله حسيبه، ولا ازكى على الله أحدا، احسبه -ان كان يعلم ذاك- كذا وكذا
তোমাদের কেউ যখন তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রশংসা করবেই তখন তার সম্পর্কে যেন কেবল এতটুকুই বলে যে, ‘আমি অমুককে এমন-এমন মনে করি, তবে বাস্তবে সে কেমন সে হিসাব আল্লাহ তাআলার কাছেই আছে, আমি আল্লাহর জ্ঞানের বিপরীতে কারও সাফাই দিচ্ছি না। এটাও বলবে কেবল তখনই যখন তার সম্পর্কে সেরকম জানা থাকে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৩০০০ )
,
শায়েখ আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম বলেন
এই হাদীস নিয়ে চিন্তা করে দেখুন, কী কঠিন সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। এক তো প্রশংসা করা যাবে কেবল এমন বিষয়ে যা জানা আছে, অজ্ঞাত বা আনুমানিক বিষয়ে কিছুতেই নয়। দ্বিতীয়ত জানা বিষয়েও নিশ্চয়তাবোধক শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। যেমন, তিনি একজন আমানতদার লোক, ‘অমুক ব্যক্তি পরহেযগার’ ইত্যাদি। বরং বলতে হবে, আমি তাকে পরহেজগার মনে করি বা আমার জানামতে সে একজন আমানতদার ইত্যাদি। তারপরও প্রকৃত অবস্থাকে আল্লাহ তাআলার উপরই ন্যস্ত করতে হবে। যেহেতু পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান তাঁরই আছে, আমরা অতি সামান্যই জানি।
,
 এ হাদীসে যে والله حسيبه (আল্লাহ তাআলাই তার প্রকৃত অবস্থার হিসাব গ্রহণকারী) বলার তালীম দেওয়া হয়েছে, এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এর দ্বারা যেমন সতর্ক করা হয়েছে, সে যেন অসত্য কিছু না বলে, তেমনি প্রশংসা দ্বারা প্রশংসিত ব্যক্তির যে ক্ষতি হতে পারে সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার প্রতিকারেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রশংসা দ্বারা প্রশংসিত ব্যক্তির অন্তরে অহংকার অহমিকা জন্মানোর অবকাশ থাকে আর বাস্তবিকই যদি তা জন্ম নিয়ে ফেলে তবে তো প্রশংসা দ্বারা তার মস্তবড় ক্ষতি করে ফেলা হল। 
,
সুতরাং কারো প্রশংসা, খোশামোদ, তোষামোদ করতে গিয়ে অতিরঞ্জিত না করাই ইসলামের বিধান।
,
দ্বীনের স্বার্থে তার অন্যান্য নেক আমল এর প্রশংসা করা যাবে,তবে অতিরঞ্জন করা জায়েজ হবেনা।
,

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
কেউ প্রশংসার যোগ্য না হলে তার প্রশংসা করা কখনো জায়েয হবে না।এবং কারো ব্যাপারে ফিতনায় পতিত হওয়ার আশংকা থাকলে তখন তার বাস্তব গুনাগুণের প্রশংসা করাও জায়েয হবে না।এবং মিথ্যা সংমিশ্রিত প্রশংসা করাতো মোটেই  জায়েয হবে না।নতুবা কাউকে নেক কাজের প্রতি উদ্বোদ্ধ করতে তার প্রশংসা করার অনুমোদন রয়েছে।

বিস্তারিত জানুনঃ 
,
(০২)
অতিরক্তি প্রশংসা ও তোষামোদের দ্বিমুখী ক্ষতি রয়েছে। যে ব্যক্তি প্রশংসা করে আর যার প্রশংসা করা হয়, উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রশংসিত ব্যক্তির অন্তরে অহংকার অহমিকা জন্মানোর অবকাশ থাকে আর বাস্তবিকই যদি তা জন্ম নিয়ে ফেলে তবে তো প্রশংসা দ্বারা তার মস্তবড় ক্ষতি করে ফেলা হল। 

★মিথ্যা প্রশংসা কারীর গুনাহ হয়। 
অতিশয় প্রশংসিত ব্যক্তি যদি সমাজের ক্ষমতাশালী কেউ হয়, তা হলে সে আরো স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দেখা দেয়।
এতে প্রশংসা কারীরও ক্ষতি হয়। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
স্বামীর প্রশংসা করা যাবে তাকে?? সে খুশি হয় স্ত্রীর প্রশংসা পেলে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...