আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
58 views
in পবিত্রতা (Purity) by (5 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম, আমি অনেক হতাশ আমাকে সাহায্য করুন। আমি একসময় অধার্মিক ছিলাম। ইসলামের বিধিবিধান জানা ছিলো না। তখন হাতের কনুই এর উপর একটি ট্যাটু করি।
আমাকে বলা হয়েছিলো ৪ থেকে ৫ বার লেজার করলে ট্যাটু দূর হবে। আমি ১ বার লেজার করে তেমন উন্নতি হয়নি।

পরে আমি অধৈর্য হয়ে, ট্যাটু তোলার জন্য চামচ গরম করে হাতে ছ্যাঁকা দিয়েছিলাম। এতে আমার হাতের ট্যাটু করা স্থান পুড়ে যায়। পরে ইনফেকশন হয়ে ১ মাস এন্টিবায়োটিক খেয়েছি। বর্তমানে ইনফেকশন ভালো হয়ে গিয়েছে। ট্যাটুর বেশিরভাগ অংশ উঠে গিয়েছে। কিন্তু ট্যাটু করা স্থানের চামড়া ঝলসে গিয়েছে। তবে ট্যাটু করা স্থানে পানি লাগাতে কোনো সমস্যা হয় না।

চাড়ার উপরের স্তরে ট্যাটুর কালি নেই। কিন্তু চামড়ার ভিতরে ট্যাটুর হালকা কিছুটা কালি রয়ে গেছে। প্রশ্ন ১: বর্তমান অবস্থায় আল্লাহ কি ওজু এবং ফরজ গোসল গ্রহণ করবে?

এখন ডাক্তার বলছে শেষ একমাএ উপায় প্লাস্টিক সার্জারি। জায়গাটার চামড়া কেটে ফেলে দিতে হবে। প্রশ্ন ২: আর আমি যদি প্লাস্টিক সার্জারি করেও যদি সম্পূর্ণ সফল না হয় তাহলে কি আমার ওজু এবং ফরজ গোসল আদায় হবে?

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ ۫

 ‘আমি সবচেয়ে সুন্দর কাঠামোতে মানুষ সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা তিন, আয়াত, ৪)

তাই মানুষের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বিকৃত করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এ কারণেই পবিত্র কোরআনে অঙ্গবিকৃতিকে শয়তানের অনুসারীদের কাজ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

অভিশপ্ত শয়তান আল্লাহকে বলেছিল,

وَّلَاُضِلَّنَّہُمۡ وَلَاُمَنِّیَنَّہُمۡ وَلَاٰمُرَنَّہُمۡ فَلَیُبَتِّکُنَّ اٰذَانَ الۡاَنۡعَامِ وَلَاٰمُرَنَّہُمۡ فَلَیُغَیِّرُنَّ خَلۡقَ اللّٰہِ ؕ  وَمَنۡ یَّتَّخِذِ الشَّیۡطٰنَ وَلِیًّا مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ فَقَدۡ خَسِرَ خُسۡرَانًا مُّبِیۡنًا

এবং আমি তাদেরকে সরল পথ হতে নিশ্চিতভাবে বিচ্যুত করব, তাদেরকে (অনেক) আশা-ভরসা দেব এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কান চিরে ফেলবে এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে। ৮৪ যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধু বানায়, সে সুস্পষ্ট লোকসানের মধ্যে পড়ে যায়।’ (সুরা নিসা, আয়াত-১১৯)

হাদিসে অঙ্গবিকৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অভিশপ্ত আখ্যা দেওয়া দেওয়া হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘যে নারী নকল চুল ব্যবহার করে এবং যে তা সরবরাহ করে, আর যে নারী ট্যাটু আঁকে এবং যে আঁকায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ (বুখারি, হাদিস, ৫৫৯৮; মুসলিম, হাদিস, ৫৬৯৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে নারী সৌন্দর্যের জন্য ট্যাটু আঁকে এবং আঁকায়, যে নারী ভ্রু কাটে এবং দাঁত ফাঁকা করে, আল্লাহ তাআলা তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ (বুখারি, হাদিস, ৫৬০৪)

তবে ট্যাটু নয় তবে ট্যাটুর সঙ্গে সাদৃশ্য আছে এমন আঁকাজোকা যা কয়েক দিন বা সপ্তাহ পর আপনাআপনি মুছে যায়, ফিকহবিদদের ভাষ্য মতে, এমন অঙ্কন নাজায়েজ নয়। তবে শর্ত হলোতাতে প্রাণীর ছবি বা অন্য ধর্মের প্রতীক জাতীয় কোনো কিছু থাকতে পারবে না এবং অজু-গোসলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হতে পারবে না। (হাশিয়াতু ইবনে আবিদিন: ৫ / ২৩৯)

ট্যাটুর কারণে ত্বকে পানি পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি হলে অজু-গোসল শুদ্ধ হবে না। ফলে যত দিন ট্যাটু থাকবে, তত দিন অজু-গোসল আদায় হবে না। এবং এই অবস্থায় নামাজ আদায় হবে না। একইভাবে অস্থায়ী আঁকাজোকার কারণে পানি পৌঁছাতে না পারলেও অজু-গোসল শুদ্ধ হবে না। আর যত দ্রুত সম্ভব না উঠিয়ে ফেলা এবং উঠানোর চেষ্টা করা উচিত। (আল-মাউসুয়াতিল ফিকহিয়্যাহ আল-কুয়েইতিয়্যাহ)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

আপনার ২টি প্রশ্নের উত্তর একত্রে দেওয়া হচ্ছে যে,  প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যেসব অঙ্গ অযু বা গোসলের ভিতর ধোয়া ফরজ, সেসব স্থানে ট্যাটু লাগানো হলে আর তা সেই স্থানে পানি পৌছাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে অযু বা গোসল হবেনা। নতুবা অযু হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তার/ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহনযোগ্য হবে।

শরীরের যে স্থানে ট্যাটু করা হয় সেখানে রক্ত জমাট বাধে-যা নাপাক এবং রক্তের সাথে বিভিন্ন রঙ কেমিক্যাল, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি মিশ্রণের ফলে সেখানে চামড়ার উপর একটা আস্তরণ তৈরি হয়। যার কারণে ওজু-গোসলের সময় চামড়া পানি পৌঁছে না। তাই ট্যাটু কৃত স্থানটা নাপাক হওয়ার পাশাপাশি ওজু-গোসলের সময় সেখানে পানি পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে এ অবস্থায় ওজু-গোসল শুদ্ধ হবে না।ফলশ্রুতিতে সালাতও শুদ্ধ হবে না।

তবে কেউ যদি এর বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে এমনটি করে থাকে তাহলে তা জানার সাথে সাথে অনুতপ্ত হৃদয়ে খাঁটি ভাবে তাকে আল্লাহর নিকট তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে এবং শরীরে লাগানো উল্কি/ ট্যাটু উঠিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।

 বর্তমানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অথবা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে লেজারের সাহায্যে স্থায়ী ট্যাটু রিমুভ করা সম্ভব। অবশ্য লেজারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এ কাজটি সম্পাদন করা হয় এবং এক সাময় ট্যাটুর চিহ্ন মুছে যায়। ইদানীং এটি আমাদের দেশেও করা হচ্ছে।

কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টার পরও কোন কারণে যদি তা রিমুভ করা সম্ভব না হয় অথবা বিলম্ব হয় বা এতে অঙ্গহানি বা শারীরিক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে সে অবস্থাই যথারীতি ওজু-গোসল এবং সালাত অব্যাহত রাখতে হবে। এ কারণে কোনভাবেই সালাত পরিত্যাগ করা বৈধ নয়। খাঁটি অন্তরে তওবার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায় ইনশাআল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...