আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
330 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (41 points)

আসসালামুআলাইকুম। হযরত আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ধন ধান্যে পুস্প ভরা কবিতাটি আবৃত্তি করা হয়। তো সেই কবিতার শেষের কয়েকটি লাইন এইরকম,

ভায়ের মায়ের এমন স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ?
-
ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি,
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি-
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানী সে যে- আমার জন্মভূমি।

মা বলতে দেশকে বুঝানো হচ্ছে এবং সেই ক্ষেত্রে আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি-পংক্তিতে আসলে দেশের কাছেই  এই দেশেতে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা করা হচ্ছে এরকম বুঝানো হচ্ছে কি না? দেশের কাছে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা করাটা তো ঈমানের সাথে সাঙ্ঘর্সিক হবে। আপনাদের মতামত চাচ্ছি যে ঈমানের সাথে সাঙ্ঘর্সিক কোন ব্যাপার আছে কি না এই লাইনটিতে?

1 Answer

0 votes
by (589,260 points)
edited by
 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 
জবাবঃ- 
 এটা অবধারিত সত্য যে, একজন মানুষ যখন পৃথিবীর বিশাল ভূখন্ডের কোনো এক অংশে জন্মলাভ করে, সেখানকার আলো-বাতাস গ্রহণ করে, সেখানে বেড়ে ওঠে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার মাটি-মানুষের প্রতি অন্যরকম হৃদ্যতা ও আপনত্ব অনুভব করে। জন্মভূমির প্রতি মানুষের এই স্বভাবজাত আকর্ষণকে ইসলাম মূল্যায়ন করেছে। পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বিদায়ের প্রাক্কালে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, ‘‘ভূখন্ড হিসেবে তুমি কতই না উত্তম, আমার কাছে তুমি কতই না প্রিয়। যদি আমার স্বজাতি আমাকে বের করে না দিতো তবে কিছুতেই আমি অন্যত্র বসবাস করতাম না।’’ (জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৯২৬) মক্কা নগরী তো শুধু আল্লাহর রাসূলের জন্মভূমিই ছিল না, এ তো ঐ পবিত্র ভূখন্ড, যেখানে আল্লাহর ঘর প্রতিষ্ঠিত। পরবর্তীতে যখন তিনি মদীনা মুনাওয়ারাকে স্থায়ী আবাসভূমি হিসেবে গ্রহণ করেন, তখন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মদীনার প্রতি তার হৃদয়ের অনুরাগ প্রকাশ করতেন। এক হাদীসে হযরত আনাস রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, দূর থেকে মদীনার জনপদ নজরে আসতেই তিনি তাঁর উটনীর গতি বাড়িয়ে দিতেন, অথবা কোনো চতুষ্পদ জন্তুর উপর থাকলে তাকে নাড়াতে থাকতেন। বস্ত্তত মদীনার প্রতি ভালবাসার দরুনই তিনি এমনটি করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮০২) আরেক হাদীসে হযরত আনাস রা. বলেন, ‘আমি খেদমতের নিয়তে রাসূলের সাথে খায়বার অভিযানে গেলাম। অতঃপর যখন অভিযান শেষে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এলেন, উহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টিগোচর হল তিনি বললেন, এই পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও একে ভালবাসি। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৮৮৯) 

 মোটকথা, স্বদেশের প্রতি মানবমনের এই স্বভাবজাত অনুরাগকে ইসলাম সমর্থন করে। কিন্তু এই দেশপ্রেম যদি সীমা অতিক্রম করে আত্মঅহমিকা কিংবা আত্মকেন্দ্রিকতার জন্ম দেয়, অথবা যদি মানুষকে অন্ধত্ব ও উগ্রতার দিকে নিয়ে যায় এবং আল্লাহর সৃষ্টি অন্য কোনো দেশ বা ভূখন্ডের বিরুদ্ধে অন্যায় বিদ্বেষের জন্ম দেয়, বিশেষত অধ্যুষিত এলাকার প্রতি সহানুভূতি জন্ম না দেয়. তাহলে সেটাকে ইসলাম কখনোই তা সমর্থন করে না। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘‘সব মুসলিম এক শরীরের ন্যায়। এর কোনো একটি অঙ্গ আক্রান্ত হলে অন্য সকল অঙ্গ তার ব্যাথায় ছটফট করবে।’ সুতরাং ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বদেশের প্রতি ভালবাসা থাকবে। সঙ্গে অপর মুসলিম দেশের প্রতিও হীতাকাঙ্খা থাকতে হবে। নিজ দেশের মুসলিম ভাইদের আপন মনে করতে হবে। অমুসলিম নাগরিকেরও হক্ব রক্ষা করতে হবে। অপর দেশের মুসলিম ভাইদেরও পর মনে করা যাবে না। ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বোধ দেশের ভেতরে যেমন, দেশের বাইরেও তেমনি সব মুসলমানের প্রতি সম্প্রসারিত থাকবে।(সংগৃহিত) 

 শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রহ. বলেন: 
“দেশকে ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ” কথাটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস হিসেবে বলা হয়ে থাকে। এটি একটি মিথ্যাচার। দেশকে ভালবাসতে হলে, এ কারণে ভালবাসতে হবে যে, সেটি ইসলামি রাষ্ট্র- চাই তা আপনার জন্মভূমি হোক বা দূরের কোনো দেশ হোক।সবগুলোই ইসলামী দেশ। প্রতিটি ইসলামি দেশকে রক্ষা করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।” (শাইখ আল্লামা উসাইমীন রহ. কর্তৃক রিয়াযুস সালেহীন গ্রন্থের ব্যাখ্যা) 

 যাহোক, 
দেশের প্রতি ভালবাসা থাকা মানুষের প্রকৃতিগত বিষয়। সকল ধর্মের লোকই তাদের দেশকে ভালবাসে। কিন্তু কোনো ইসলামি দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকাটা মুসলিম ও সুনাগরিক হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কোনো ইসলামী দেশ যদি কাফের দেশ দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন ঐ দেশে বসবাসকারী প্রতিটি মুসলিমের জন্য সর্বাত্তকভাবে কাফেরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে যায়। আবার অন্য দিকে দেশ থেকে যদি ইসলাম পালন করা অসম্ভব হয়ে যায় এবং জান-মাল ও ইজ্জত-সম্ভ্রম অনিরাপদ পড়ে তখন দেশ ছেড়ে ‘হিজরত’ও করতে হতে পারে। সুতরাং দেশকে ভালবাসতে হবে, একতাবদ্ধ থেকে দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে হবে এবং দেশ বিরোধী সকল অন্যায় কার্যক্রম ও ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় প্রতিটি মুসলিমদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কিন্তু তা “দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ” এমন মিথ্যা হাদিসের উপর ভিত্তি করে নয় বরং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ ও প্রকৃতিগত ভালবাসা থেকে। আল্লাহ তাআলা আমাদের দেশকে সকল ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করুন এবং দেশের শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত করুন। আল্লাহুম্মা আমীন। 

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
 “আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি-” 
এমন কথা বলা ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না।তবে যদি বসবাসস্থল অমুসলিম অধ্যুষিত হয়,তাহলে এমন কথা বলা উচিৎ হবে না। আপনারা এ প্রকারের সংগীত গাইতে পারবেন। রুখসত রয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (589,260 points)
সংশোধন ও সংযোজন করা হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...