বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
এটা অবধারিত সত্য যে, একজন মানুষ যখন পৃথিবীর বিশাল ভূখন্ডের কোনো এক অংশে জন্মলাভ করে, সেখানকার আলো-বাতাস গ্রহণ করে, সেখানে বেড়ে ওঠে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার মাটি-মানুষের প্রতি অন্যরকম হৃদ্যতা ও আপনত্ব অনুভব করে। জন্মভূমির প্রতি মানুষের এই স্বভাবজাত আকর্ষণকে ইসলাম মূল্যায়ন করেছে।
পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বিদায়ের প্রাক্কালে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, ‘‘ভূখন্ড হিসেবে তুমি কতই না উত্তম, আমার কাছে তুমি কতই না প্রিয়। যদি আমার স্বজাতি আমাকে বের করে না দিতো তবে কিছুতেই আমি অন্যত্র বসবাস করতাম না।’’ (জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৯২৬)
মক্কা নগরী তো শুধু আল্লাহর রাসূলের জন্মভূমিই ছিল না, এ তো ঐ পবিত্র ভূখন্ড, যেখানে আল্লাহর ঘর প্রতিষ্ঠিত।
পরবর্তীতে যখন তিনি মদীনা মুনাওয়ারাকে স্থায়ী আবাসভূমি হিসেবে গ্রহণ করেন, তখন বিভিন্ন সময়ে
বিভিন্নভাবে মদীনার প্রতি তার হৃদয়ের অনুরাগ প্রকাশ করতেন।
এক হাদীসে হযরত আনাস রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, দূর থেকে মদীনার জনপদ নজরে আসতেই তিনি তাঁর উটনীর গতি বাড়িয়ে দিতেন, অথবা কোনো চতুষ্পদ জন্তুর উপর থাকলে তাকে নাড়াতে থাকতেন। বস্ত্তত মদীনার প্রতি ভালবাসার দরুনই তিনি এমনটি করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮০২)
আরেক হাদীসে হযরত আনাস রা. বলেন, ‘আমি খেদমতের নিয়তে রাসূলের সাথে খায়বার অভিযানে গেলাম। অতঃপর যখন অভিযান শেষে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এলেন, উহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টিগোচর হল তিনি বললেন, এই পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও একে ভালবাসি। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৮৮৯)
মোটকথা, স্বদেশের প্রতি মানবমনের এই স্বভাবজাত অনুরাগকে ইসলাম সমর্থন করে। কিন্তু এই দেশপ্রেম যদি সীমা অতিক্রম করে আত্মঅহমিকা কিংবা আত্মকেন্দ্রিকতার জন্ম দেয়, অথবা যদি মানুষকে অন্ধত্ব ও উগ্রতার দিকে নিয়ে যায় এবং আল্লাহর সৃষ্টি অন্য কোনো দেশ বা ভূখন্ডের বিরুদ্ধে অন্যায় বিদ্বেষের জন্ম দেয়, বিশেষত অধ্যুষিত এলাকার প্রতি সহানুভূতি জন্ম না দেয়. তাহলে সেটাকে ইসলাম কখনোই তা সমর্থন করে না।
হাদীস শরীফে এসেছে, ‘‘সব মুসলিম এক শরীরের ন্যায়। এর কোনো একটি অঙ্গ আক্রান্ত হলে অন্য সকল অঙ্গ তার ব্যাথায় ছটফট করবে।’
সুতরাং ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বদেশের প্রতি ভালবাসা থাকবে। সঙ্গে অপর মুসলিম দেশের প্রতিও হীতাকাঙ্খা থাকতে হবে। নিজ দেশের মুসলিম ভাইদের আপন মনে করতে হবে। অমুসলিম নাগরিকেরও হক্ব রক্ষা করতে হবে। অপর দেশের মুসলিম ভাইদেরও পর মনে করা যাবে না। ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বোধ দেশের ভেতরে যেমন, দেশের বাইরেও তেমনি সব মুসলমানের প্রতি সম্প্রসারিত থাকবে।(সংগৃহিত)
শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রহ. বলেন:
“দেশকে ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ” কথাটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস হিসেবে বলা হয়ে থাকে। এটি একটি মিথ্যাচার। দেশকে ভালবাসতে হলে, এ কারণে ভালবাসতে হবে যে, সেটি ইসলামি রাষ্ট্র- চাই তা আপনার জন্মভূমি হোক বা দূরের কোনো দেশ হোক।সবগুলোই ইসলামী দেশ। প্রতিটি ইসলামি দেশকে রক্ষা করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।”
(শাইখ আল্লামা উসাইমীন রহ. কর্তৃক রিয়াযুস সালেহীন গ্রন্থের ব্যাখ্যা)
যাহোক,
দেশের প্রতি ভালবাসা থাকা মানুষের প্রকৃতিগত বিষয়। সকল ধর্মের লোকই তাদের দেশকে ভালবাসে। কিন্তু কোনো ইসলামি দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকাটা মুসলিম ও সুনাগরিক হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কোনো ইসলামী দেশ যদি কাফের দেশ দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন ঐ দেশে বসবাসকারী প্রতিটি মুসলিমের জন্য সর্বাত্তকভাবে কাফেরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে যায়। আবার অন্য দিকে দেশ থেকে যদি ইসলাম পালন করা অসম্ভব হয়ে যায় এবং জান-মাল ও ইজ্জত-সম্ভ্রম অনিরাপদ পড়ে তখন দেশ ছেড়ে ‘হিজরত’ও করতে হতে পারে।
সুতরাং দেশকে ভালবাসতে হবে, একতাবদ্ধ থেকে দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে হবে এবং দেশ বিরোধী সকল অন্যায় কার্যক্রম ও ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় প্রতিটি মুসলিমদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কিন্তু তা “দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ” এমন মিথ্যা হাদিসের উপর ভিত্তি করে নয় বরং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ ও প্রকৃতিগত ভালবাসা থেকে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের দেশকে সকল ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করুন এবং দেশের শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
“আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি-”
এমন কথা বলা ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না।তবে যদি বসবাসস্থল অমুসলিম অধ্যুষিত হয়,তাহলে এমন কথা বলা উচিৎ হবে না।
আপনারা এ প্রকারের সংগীত গাইতে পারবেন। রুখসত রয়েছে।