আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
82 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (12 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।

আমার স্বামী সকালে সাড়ে ৭টায় বাসা থেকে কাজে বের হয়, আরেকবার বাসায় আসে রাত ১১ টায়। তিনি একটি প্রাইভেট কলেজে শিক্ষকতা করেন এবং ব্যাচে ছাত্রদের পড়ান। মাঝখানে এক ঘন্টার জন্য আসেন। দুপুরের খাওয়া ও কিছুক্ষণ ঘুমান/বিশ্রাম নেন। এই সময়টাও খাওয়া বা বিশ্রামের বাইরে তিনি ফাক পেলেই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন৷ আবার রাতে বাসায় এসেও কাজ/শিক্ষকতার পড়াশোনা নিয়ে ফোন/ল্যাপটপে ব্যস্ত থাকেন। আমি বুঝি তার কাজ, সবসময় তাকে বিরক্ত করিনা৷ কিন্তু আমি একটা মানুষ, আমার অনেক সময় কথা বলতে ইচ্ছে করেছে। আমার সারাদিনের বিভিন্ন কথা থাকে যেগুলো শেয়ার করতে ইচ্ছে করে।

মাঝে মাঝে কথা বলতে গেলেও সে বেশিরভাগই দায়সারা রেসপন্স করে, আবার কখনো বা ৩/৪ বার বললেও কথার উত্তর পাইনা। পরে চিৎকার করে উঠলে বা রেগে গেলে বলে, কি বলছো শুনিনাই। কথার উত্তর কি সাথে সাথেই দিতে হবে? সারাদিন পরিশ্রম করে এসে এসব ভালো লাগেনা এরকম নানান কথা বলে।

অনেক সময় হয় যে, তার হাতে ফোন নেই। কিন্তু আমি কথা বলছি সে অন্যমনস্ক, বা বাচ্চার সাথে এমনভাবে ব্যস্ত যেন আমি কিছু বলিইনি। অথবা এমনিই বিভিন্ন এক্টিভিটি এমনভাবে করতে থাকে যেন তাকে কেউ কিছু বলছেইনা। পরে যদি জিজ্ঞেস করি, আমি কি কিছু বলছি তোমাকে? তাহলে কখনো বলে, শুনিনাই আরেকবার বলো। কিংবা কখনো এমনভাবে উত্তর দেয় যে উত্তর শুনলে মনে হয় কোনভাবে দায়সারা উত্তর দিয়ে যেন বাচে।

উস্তায, আমি একজন মানুষ। যে আমি বিয়ের পর বান্ধবীদের কটু কথার জন্য সবাইকে ছেড়েছি। কারো সাথে অনলাইন, অফলাইন কোন যোগাযোগ নাই। আত্মীয়স্বজন রা টক্সিক তাই বিশেষ খোজখবর ছাড়া খুব বেশি কথা হয়না। আমার জীবনে এই একজন মানুষ, আর আমার বাবা,মা, ভাই। সারাদিন কথা বলার মত আমার দুইটা মেয়ে আর স্বামী।

আমার আবেগ,অনুভূতি, ভালো মন্দ সব বলার মত আমার একজনই মানুষ। আমি বাসা থেকে মাসেও একবার বের হইনা। বাবার বাসাতেও সচরাচর যাই না, ফোনে কথা হয় টুকটাক।
সারাদিন সংসার,বাচ্চা সামলানোর পর যেটুকু সময় থাকে আইওএম এর পড়াশোনা করি। সে যেই সময়টা বাসায় থাকে সে সময় অন্য কিছু করিনা। তার সাথে এটা ওটা বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সে বেশিরভাগ সময়ই উপরে উল্লেখিত বিবরণের ন্যায় আচরণ করে।।। যার ফলে আমি প্রায়ই রেগে যাই, চিৎকার চেচামেচি করি কিন্তু তার আচরণ কখনোই পরিবর্তন হয় না। আমি চাই তার এই আচরণ টা ইগ্নোর করতে। কিন্তু আমি সবসময় পারিনা।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
১. আমি নিজেকে কিভাবে এই ব্যাপারে সহনশীল করতে পারি আমাকে একটু নাসীহা যদি করতেন, খুব উপকার হয়। কারণ ১১ বছরে তাকে আমি বদলাতে পারিনি। এবার আমি সত্যিই ক্লান্ত। আমার এসব নিয়ে ঝগড়া করতে আর ভালো লাগেনা।

২. সারাদিন তিনি পরিশ্রম করে বাসায় আসার পর আমার তার সাথে কথা বলতে চাওয়াটা কি অযৌক্তিক? আমার কি তাঁকে স্পেইস দেওয়া উচিত সেসময়? প্রতিদিন বা সমসময়?

৩. তিনি আমার কথার রেস্পন্স করেন না/কম করেন কারণে আমি যদি তিনি বাসায় আসার পর তার কাজগুলো সেরে দিয়ে নিজের কাজে চলে যাই, যেমন সংসার বা বাচ্চাদের কাজ করি তাহলে কি তার হক নষ্ট করা হবে?

জাঝাকিল্লাহু খইরন ওয়াল আখিরহ উস্তায। এলোমেলো ভাবে বলার জন্য দুঃখিত।

1 Answer

0 votes
by (566,100 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

স্বামীর উপর স্ত্রীরও কিছু অধিকার ও হক্ব রয়েছে যেমন, বিয়ের পর স্ত্রীর ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষা করে স্ত্রীকে একটি বাসস্থান ও খাদ্য এবং বস্র দান করা।এটা স্বামীর উপর  স্ত্রীর অধিকার ওহক্ব এবং শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব। এ সম্পর্কে কোরআনের ঘোষনা হলঃ
ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ
নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সূরা নিসা-১৯)

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .

 

সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ

বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে-

تجب السكني لها عليه في بيت خال

মর্থার্থ: স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াত, ১/৬০৪)

স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা।
স্ত্রীর সঙ্গে প্রয়োজনে একান্তে বসা ও খোশগল্প করা।

অবসরে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে কিছু গল্পগুজব করা, তার মনের কথা জানা-বোঝা, তার কোনো চাহিদা থাকলে তা জেনে নিয়ে পূরণ করা স্বামীর জন্য জরুরি। 
প্রয়োজন মাফিক স্ত্রীকে সময় দেয়া।

বাড়িতে প্রবেশ করে স্ত্রীকে সালাম দেওয়া।

স্ত্রীর প্রতি উত্তম ধারণা রাখা।
স্ত্রীর প্রয়োজনীয় চাহিদা যথাসম্ভব  পূরন করা।
স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করা ও তাকে গুরুত্ব দেওয়া।

স্ত্রীকে তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া

স্ত্রীকে তার মা-বাবা, ভাই-বোন ও নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া উচিত। আর এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া বা মাহরাম ব্যক্তিকে সঙ্গে দিয়ে পাঠাতে হবে। ইফকের ঘটনাকালে আয়েশা (রা.) অসুস্থ হলে তিনি পিতার বাড়িতে গমনের জন্য রাসুল (সা.)-এর কাছে অনুমতি চান। রাসুল (সা.) তাঁকে অনুমতি দিলে তিনি পিতৃগৃহে চলে যান। (বুখারি, হাদিস : ২৬৬১

স্ত্রী তার বাবা মার সাথে কতদিন পরপর সাক্ষাৎ করতে পারবে,এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ- 

স্ত্রীর দ্বীন পালনে পূর্ণ সচেষ্ট হওয়া।

নারীদের সাথে সদ্ভাবে ব্যবহার করতে হলে তাদেরকে নিয়মমাফিক অন্ন-বস্র-বাসস্থান দিতে হবে,স্ত্রীর চিকিৎসা করানো স্বামীর উপর ওয়াজিব নয় এবং ঘরের রান্নাবান্না স্ত্রীর উপর ওয়াজিব নয়।তবে উভয়টা একটি ভালো ও উত্তম এবং প্রশংসনীয় কাজ ।

আরো জানুনঃ- 

স্বামীর হক সংক্রান্ত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
আপনি স্বামীকে ভালবাসুন। তার সমস্ত চাওয়া পাওয়াকে আন্তরিকতার সাথে পূরণ করুন। তাকে নরম ভাবে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করুন। এবং আল্লাহর কাছে দু'আ করুন। আল্লাহ আপনার স্বামীকে উক্ত বিষয় বুঝার তওফিক দান করুক।

(০২)

স্বামীর উপর আবশ্যক হলোঃ- স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা। স্ত্রীর সঙ্গে প্রয়োজনে একান্তে বসা ও খোশগল্প করা।

অবসরে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে কিছু গল্পগুজব করাতার মনের কথা জানা-বোঝাতার কোনো চাহিদা থাকলে তা জেনে নিয়ে পূরণ করা স্বামীর জন্য জরুরি।  প্রয়োজন মাফিক স্ত্রীকে সময় দেয়া।


এর পরও যদি আপনাকে আপনার স্বামী সময় না দেয়, তাহলে তার গোনাহ হবে।


★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্ত্রীর হক সম্পূর্ণভাবে আদায় হচ্ছেনা।

(০৩)
এক্ষেত্রে তিনি যদি আপনাকে না ডাকেন,তাহলে প্রশ্নের বিবরন মতে তার হক নষ্ট করা হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...