আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
74 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
reshown by
আসসালামুআ'লাইকুম ওয়ারহমাতুল্লহি ওয়াবারকাতুহ,

১.পরিবার পর্দার ক্ষেত্রে সাপোর্টিভ না হলে বা মাহরাম পুরুষরা তেমন পর্দা ঠিক ভাবে না করতে দিলে ...তাদের সাথে কি ফ্রি মিক্সিং দাওয়াত এ যাওয়া উচিত যেগুলো দাওয়াত/অনুষ্ঠানে দেদারসে নারী পুরুষ গল্প করতে থাকে পর্দা করে গেলে ও নন মাহরাম রা কথা বলতে আসে ...বা এমন আত্মীয়দের বাসায় কি যাওয়া উচিত যাদের বাসায় গেলে পর্দা লঙ্ঘন হয়..?

বাড়ি থেকে বের হতে মন না চাওয়া এগুলো কি বাড়াবাড়ি ...?

পর্দা নষ্ট হলে মনে হয় সব শেষ হয়ে গিয়েছে ,,,বাসা থেকে বের হলে মনে হয় গুনাহ করছি...বাইরে যদি কোনো প্রয়োজনে ও বের হতে হয় তা ও মনে হয় বড় পাপ করে ফেলেছি আর মনে হয় শুধু শুধু ই নিজের ইচ্ছায় গুনাহ করলাম বা তেমন প্রয়োজন ছিলনা বের হওয়া....
এগুলো কি বাড়াবাড়ি...? নাকি কোনো মানসিক সমস্যা..?

২.আবার অনেকে বলে কোথাও না গেলে নাকি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করছি তাই আমি জাহান্নামি হব... কিন্তু তাদের বাসায় গেলে বা তাদের দাওয়াতে গেলে ও পর্দা লঙ্ঘন হয়....তাহলে গুনাহ কি আমার ই হচ্ছে ....?

এগুলোর জন্য নিজেকে ই গুনাহগার মনে হয় মনে হয় সব শেষ হয়ে গেছে...

আমার করনীয় কি এই অবস্থায়?

1 Answer

0 votes
by (58,500 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/85580/  নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,

চেহারার পর্দা করাও আবশ্যক। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}


আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলোনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}


আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}


হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেন,

 وَلاَ تَنْتَقِبِ المَرْأَةُ المُحْرِمَةُ، وَلاَ تَلْبَسِ القُفَّازَيْنِ

আর ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নিকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে।’ (বুখারী : ১৮৩৮)

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, নবী  যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও চেহারা ঢাকতেন।


আয়েশা রাযি. হজ অবস্থায় মহিলা সাহাবীদের পর্দার যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করা যায় পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা আন্তরিক ছিলেন। তাঁরা স্বাভাবিক অবস্থায় তো বটেই ইহরাম অবস্থায় যখন মুখ ঢাকতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানেও পরপুরুষের সামনে থেকে নিজেদের চেহারা আড়াল করেছেন। আয়েশা রাযি. বলেন,

كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهﷺ مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا إِلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ.

আমরা ইহরাম অবস্থায় সাল্লাল্লাহু -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি হন, আমাদের সঙ্গীনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি।’ (আবূ দাঊদ : ৫৩৮১; বাইহাকী : ৩৩৮৮)

আসমা বিনত আবী বাকর রাযি. বলেন, আমরা পুরুষদের থেকে আমাদের চেহারা আবৃত রাখতাম। (মুস্তাদরাক হাকেম : ১৬৬৪)


ফাতিমা বিনতুল মুনযির রহ. বলেন, ‘আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রাযি.-এর সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম।’ (ইমাম মালেক, মুয়াত্তা: ১/৩২৮; হাকিম, মুসতাদরাক : ১/৪৫৪)


মুফতী মুহাম্মদ শাফী রহ. লিখেছেন, ‘ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্য থেকে ইমাম মালিক, ইমাম শাফি’ঈ ও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. তিনজনই মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার মোটেই অনুমতি দেন নি- তা ফিতনার আশংকা থাকুক বা না থাকুক। ইমাম আবূ হানীফা রহ. ফিতনার আশংকা যদি না থাকে- এই শর্তে খোলা রাখার কথা বলেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এই শর্ত পূরণ হবার নয়, তাই হানাফী ফকীহগণ গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার অনুমতি দেননি।’ (মা‘আরিফুল কুরআন : ৭/২১৪)

আরো জানুনঃ

 https://ifatwa.info/9333/


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন!


প্রশ্নের বিবরন মতে বাড়িতে নন মাহরামদের সামনে চেহারা হাত পা সহ পূর্ণ শরীর ঢেকে থাকলে খাস পর্দা হবে।

প্রশ্নের বিবরন মতে এক্ষেত্রে যদি আপনার হাত ও পা খোলা থাকে, সেক্ষেত্রে ফিতনার আশংকা না থাকলে পারিবারিক কাজের মধ্যে থাকার দরুন বিশেষ প্রয়োজনে কবজি থেকে হাত ও পায়ের পাতা খোলা রাখতে পারবেন।

তারপরেও হাত ও পা সম্পূর্ণ ঢাকলে বেশি ভালো হয়। কেননা চেহারা হাত পা সহ পূর্ণ শরীর ঢেকে থাকলেই কেবল খাস পর্দা হবে।

ঢিলেঢালা জামা পড়বেন,ও এমন জামা পড়ার চেষ্টা করবেন, যাতে নন মাহরামদের মধ্যে আকর্ষণ সৃষ্টি না হয়।


১. আপনি আপনার পরিবারের লোকজনকে মহব্বতের সাথে আরো বুঝানোর চেষ্টা করবেন যে, হাত, পা সহ পূর্ণ শরীর ঢেকে থাকলে খাস পর্দা হবে। অন্যথায় গোনাহ হবে। এটাই আল্লাহ তায়ালার বিধান।

এরপরও যদি তারা গায়রে মাহরামের সামনে মুখ খোলে যেতে বলে তাহলে এই হুকুম মান্য করা আপনার উপর আবশ্যক নয়। এতে তারা কষ্ট পেলেও কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ।


২. সময় সুযোগ তেমন না মিললে শুধু ফোনে কথা বলেও আত্মীয়তা সম্পর্ক ঠিক রাখা যাবে। প্রয়োজনে মাসে একবার বা দুই মাসে একবার তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন।

তবে সময় সুযোগ হলে মাঝে মাঝে অল্প সময়ের জন্য হলেও নিকটতম আত্মীয়দের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা দরকার।

কেউ যদি মনে মনে কোনো আত্মীয়ের প্রতি বিদ্বেষ না রাখে, কিন্তু সে হয়ত মাসে একবারও তাদেরকে ফোন করেনা, তাদের সাথে ৬ মাসে একবার বা বছরে একবার বা ২-৩ বছর পর একবার দেখা করে তবে সে সম্পর্ক ছিন্নকারীর দলভুক্ত হবে না।


এখানে কথা বন্ধ রাখার মাসয়ালা স্পষ্ট করছিঃ

শরীয়তের বিধান হলো কাহারো সাথে শরয়ী ওযর ব্যাতিত  তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা, সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই। (কিতাবুল ফাতওয়া ৬/২১৭)


সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবেননা। সাধ্যমত তাদের প্রয়োজন পুরো করার চেষ্টা করবেন। 

তাদের বাসায় গেলে যদি পর্দা রক্ষা করা সম্ভব না হয়, তাহলে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তাদের বাসায় যাবেন না। গেলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন পর্দা মেনে চলার। চেষ্টা করে চলা যাবে ইনশাআল্লাহ

স্পষ্ট আকারে বুঝিয়ে বলবেন যে শরীয়ত গত সমস্যার কারনে আপনাদের বাসায় আমাদের তেমন যাওয়া হচ্ছেনা।

এক্ষেত্রে যদি তারা বেশি রাগারাগি করে, তাহলে  এই অবস্থায় সেখানে বেড়াতে যাবেন, হেকমতের সহিত বুঝাবেন, সম্পর্ক ছিন্ন করবেননা।

আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/4223/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...