আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
2,749 views
in পবিত্রতা (Purity) by (100 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!
১.ফরজ গোসলের নিয়তে মনে মনে কি বলতে হয়?
২.মেয়েদের পিরিয়ড শেষে ফরজ গোসল করার সময় ফরজ গোসলের নিয়মগুলো পালন করার আগে লজ্জাস্থানের নাপাকি, অপবিত্র লোমগুলো ফেলে নিয়ে তারপর  ফরজ গোসলের নিয়ত করে ওজু গোসল করে নিলে হবে?!  বা নিয়মগুলো পালন করার আগে নিয়ত ছাড়া সম্পুর্ন গোসল করে, লজ্জাস্থানের অপবিত্র লোম, নাপাকি দূর করে,  সম্পুর্ণ শরীর সাবান দিয়ে পরিস্কার করে, চুল শ্যাম্পু করে গোসল শেষে ফরজ গোসলের নিয়ত করে নিয়ম গুলো পালন করে নিলে হয়ে যাবে? নাকি ফরজ  নিয়মগুলো পালনের মাঝেই গোসল করতে হবে?
৩.ফরজ গোসলে নিয়ত করে প্রথমে হাত তিনবার ধুয়ে নেয়ার পর লজ্জাস্থানও তিনবার পানি নিয়ে পরিস্কার করতে হয় নাকি একবার পানি নিয়েই করা উচিত?
৪.ফরজ গোসলের নিয়মগুলো পালনের সময় মাথায় তিনবার পানি ঢালতে হয় নাকি একবার? তিনবার পানি ঢালার পরও যদি সন্দেহ থাকে যে সব চুলের গোড়া ভালো করে ভিজলো কিনা করনীয় কি? এরপর গোসলের সময় বার বার পানি ঢালায় একসময় ভিজে যায় সব চুল!   পবিত্রতা অর্জন হবে এতে?তাছাড়া তিনবার ডানে, তিনবার বামে, তিনবার মাথা হতে সম্পুর্ণ শরীরে পানি ঢালার ক্ষেত্রেও যদি মনে হয় সম্পুর্ন শরীর ভিজলো কিনা করনীয় কি? অজান্তে কোনো অংশ শুকনো থাকতে পারে তাই!

৫.পিরিয়ড শেষে ফরজ গোসলের আগে নখ কেটে নিতে হয়?  নাকি গোসল শেষে নখ কেটে নিলেই হবে?
৬.ফরজ গোসলে নিয়ম পালনে প্রথমে ফরজ গোসলের নিয়ত করে তিনবার  হাত ধুয়ে লজ্জাস্থান পরিস্কার করে, বাম হাত ধোয়ার পর যে নামাজের ওজুর ন্যায় ওজু করতে হয় সেই ওজুর আগে কি আবার ওজুর নিয়ত করতে হয়?! নাকি একবার ফরজ গোসলের নিয়ত করে নিলেই হবে?

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
নিয়ত মানে হল মনস্থির করা। কোন কাজটি করছি? কেন করছি? কার জন্য করছি? কি করছি? এসব বিষয় নির্ধারণ করার নাম হল নিয়ত।

প্রতিটি কাজের সওয়াব পাবার জন্য নিয়ত থাকা আবশ্যক।

নিয়ত হচ্ছে, অন্তরের বিষয়।
অন্তর দিয়ে নিয়ত করতে হয়।

নিয়ত বাংলায় বা আরবীতে বলা জরুরী নয়। আরবীতে যেসব নিয়ত আমাদের দেশে প্রচলিত এসব শব্দে কোন নিয়ত কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ «إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوٰى فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ إِلَى اللهِ وَرَسُوْلِه فَهِجْرَتُهٗ إِلَى اللهِ وَرَسُولِه وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ اِلٰى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهٗ إِلٰى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ 

উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিয়্যাতের উপরই কাজের ফলাফল নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী ফল পাবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্যই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থপ্রাপ্তির জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহের জন্য হিজরত করবে সে হিজরত তার নিয়্যাত অনুসারেই হবে যে নিয়্যাতে সে হিজরত করেছে।
( সহীহ : বুখারী ১, মুসলিম ১৯০৭, তিরমিযী ১৬৩৭, নাসায়ী ৭৫, আবূ দাঊদ ২২০১, ইবনু মাজাহ্ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২।
,
গোসলের নিয়ত করা গোসল শুদ্ধ হওয়ার জন্য জরুরি নয়। 
তবে প্রতিটি কাজের জন্য যেহেতু সওয়াব পাবার জন্য নিয়ত থাকা আবশ্যক।
গোসলের তথা পবিত্রতা ছওয়াব পাওয়ার জন্য নিয়ত করতে হবে।
,
মনে মনে এই ভাবে মনস্থির করবেঃ
নাপাকি দূর করার উদ্দেশ্যে আমি গোসলের নিয়ত করিলাম।
,
কেহ কেহ আরবীতে নিয়ত করে থাকে,
نويت الغسل لرفع الجنابة
নাওয়াইতুল গোসলা লিরাফয়িল জানাবাতি।
,
অনেক ইসলামী স্কলারদের মত হলো নামায, রোযা, যাকাত, কুরবানি, ওযু, গোসল ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদতে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা কুরআন-সুন্নাহ ও সাহাবীদের আমল থেকে প্রমাণিত নয়। তাই তা বিদআত।

আরো জানুনঃ 
,
(০২)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
হাদীস শরীফে রাসুল সাঃ এর ফরজ গোসলের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।     

حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ سَالِمِ بْنِ أَبِي الْجَعْدِ، عَنْ كُرَيْبٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنْ مَيْمُونَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم اغْتَسَلَ مِنَ الْجَنَابَةِ، فَغَسَلَ فَرْجَهُ بِيَدِهِ، ثُمَّ دَلَكَ بِهَا الْحَائِطَ ثُمَّ غَسَلَهَا، ثُمَّ تَوَضَّأَ وُضُوءَهُ لِلصَّلاَةِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ غُسْلِهِ غَسَلَ رِجْلَيْهِ.


মাইমূনাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপবিত্রতার গোসল করলেন। তিনি নিজের লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। তারপর হাত দেয়ালে ঘষলেন এবং তা ধুলেন। তারপর সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করলেন। গোসল শেষ করে তিনি তাঁর দু’পা ধুয়ে নিলেন। (বুখারী ২৬০২৪৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৮)
,
حَدَّثَنَا مُوسَى، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ سَالِمِ بْنِ أَبِي الْجَعْدِ، عَنْ كُرَيْبٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَتْ مَيْمُونَةُ وَضَعْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَاءً لِلْغُسْلِ، فَغَسَلَ يَدَيْهِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا، ثُمَّ أَفْرَغَ عَلَى شِمَالِهِ فَغَسَلَ مَذَاكِيرَهُ، ثُمَّ مَسَحَ يَدَهُ بِالأَرْضِ، ثُمَّ مَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَغَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ، ثُمَّ أَفَاضَ عَلَى جَسَدِهِ، ثُمَّ تَحَوَّلَ مِنْ مَكَانِهِ فَغَسَلَ قَدَمَيْهِ

ইবনু ‘আববাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মাইমূনাহ্ (রাযি.) বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তিনি তাঁর হাত দু’বার বা তিনবার ধুয়ে নিলেন। পরে তাঁর বাম হাতে পানি নিয়ে তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। তারপর মাটিতে হাত ঘষলেন। তারপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, তাঁর চেহারা ও দু’হাত ধুয়ে নিলেন। অতঃপর তাঁর সারা দেহে পানি ঢাললেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুয়ে নিলেন। (বুখারী ২৫৭,২৪৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৫)
,
ফরজ গোসলের নিয়ম সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
ফরজ গোসলে উত্তমরুপে কুলি, নাকে পানি দেওয়া,আর সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে দিলেই যথেষ্ট। 
বাকি যেসব নিয়ম বলা হয়,সেগুলো সুন্নাত,মুস্তাহাব।

★পিরিয়ড শেষেই হোক,বা অন্য কোনো সময়েই হোক,  ফরজ গোসলের জন্য অবাঞ্চিত লোম পরিস্কার করা জরুরি নয়।
আপনি যেই নিয়মেই গোসল করুন,  
উত্তমরুপে কুলি, নাকে পানি দেওয়া,আর সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে দিলেই যথেষ্ট। 
,
(০৩)
মুল বিষয় হলো লজ্জাস্থান যেনো পরিস্কার হয়।
চাই এক বার পানি ব্যবহারের মাধ্যমেই হোক,বা একাধিক বার।
,
(০৪)
মুল বিষয় হলো সমস্ত চুলের গোড়ায় যেনো পানি দ্বারা ভিজে যায়।
চাই এক বার পানি ব্যবহারের মাধ্যমেই হোক,বা একাধিক বার।
,
(০৫)
নখ কাটা জরুরি নয়।
আপনার ইচ্ছা।
,
(০৬)
শুধু ফরজ গোসল বা পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
শুধু কি পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরই গোসল ফরজ হয়?
নাকি পিরিয়ড যতদিন চলে তার প্রত্যেকদিনই গোদল করা ফরজ??  জানাবেন প্লিজ 
by (574,050 points)
পিরিয়ড যতদিন চলে তার প্রত্যেকদিনই গোসল করা ফরজ নয়।
পিরিয়ড শেষ হলে গোসল ফরজ হবে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 427 views
+1 vote
1 answer 504 views
...