আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
99 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (11 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ। উস্তাদ বর্তমানে বিভিন্ন নিউজে "সারোগেট মাদার" সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন হলো ইসলামে এটা জায়েজ কিনা? আর গর্ভভারা দেওয়া কি বৈধ?

অনেক বন্ধ্যা নারী বা গর্ভে বাচ্চা কেরি করতে অক্ষম এমন নারীরা সারোগেট মাদার খোজ করে! এটা কি সঠিক? সঠিক না হলে বন্ধ্যানারীরা কিভাবে সন্তান নিতে পারে?

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

ইংরেজি সারোগেসি শব্দের অর্থ হলো গর্ভাশয় ভাড়া। সারগেট মাদার মানে ভাড়াটে মা। এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে একজন নারী কোনো এক যুগলের জন্য গর্ভধারণ করে। যারা চিকিৎসা বা শারীরিক কারণে গর্ভধারণ করতে অক্ষম। ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ পদ্ধতিতে নারীদেহ হতে ডিম্বাণু ও পুরুষ দেহ হতে শুক্রাণু দেহের বাইরে টেস্টটিউবে নিষিক্ত করে তা সারোগেট নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

সন্তান সবারই কাম্য। অনেক চেষ্টা করেও যখন সন্তান না আসে কিংবা সন্তানের প্রয়োজন যদি একান্তই হয় তবে সন্তান গ্রহণের স্বাভাবিক পন্থা ছাড়া ভিন্ন কোনো পন্থা অবলম্বনে সতর্ক থাকতে হবে। ইতিহাস বলে, জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.) ও যাকারিয়া (আ.) বার্ধক্য বয়সে সন্তান লাভ করেছেন। তবে তারা এমন কোনো পন্থা অবলম্বন করেন নাই যেটি শরিয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মূলত আল্লাহ তায়ালা তার মুমিন বান্দাদের বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে থাকেন; কখনও দিয়ে বা কখনও না দিয়ে। হতে পারে সন্তান না পাওয়াটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ। তাই বেশি বেশি দোয়া করতে হবে, ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে হারাম কোনো পন্থা অবলম্বন করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং সালফে সালেহিন থেকে এর কোনো অনুমোদন পাওয়া যায় না।

ইসলামের দৃষ্টিতে সারোগেসি সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। কারণ প্রথমত নারীর জরায়ু ব্যবহার একমাত্র স্বামীর জন্য সংরক্ষিত। কোনো পর পুরুষের জন্য কোনোভাবেই একজন নারীর জরায়ু বা গর্ভ ব্যবহারের সুযোগ নেই। সুতরাং সারোগেসি পদ্ধতিতে নারীর গর্ভ ভাড়া দেওয়া এবং কোনো পুরুষ/দম্পতি কর্তৃক তা ভাড়া নেওয়া উভয়টি নাজায়েজ। দ্বিতীয়ত এটি জিনার অন্তর্ভুক্ত। আবু দাউদ শরিফে হজরত রোওয়াইফা ইবনে সাবেত আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে সারোগেসি নিষিদ্ধের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহর নবী মোহাম্মদ (সা.) বলেন, আল্লাহ এবং আখেরাতে ঈমান রাখে এমন কারো জন্য বৈধ নয় যে, সে তার পানি অন্যের ক্ষেতে সিঞ্চন করবে। অর্থাৎ অন্যের জরায়ুতে তার বীর্য রাখবে। (আবু দাউদ : ২১৫৮)।

আর এটা সারোগেট মায়ের জন্য চরম অপমানকর। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি।’ (সুরা ইসরা : ৭০)।

 এ জন্য মানুষের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করা বা ভাড়া দেওয়া জায়েজ নেই। কারণ তা আল্লাহ প্রদত্ত সম্মান ও মর্যাদার পরিপন্থি। আন্তর্জাতিক ইসলামিক ফিকহ একাডেমির স্কলাররাও সম্মিলিতভাবে সারোগেসি অবৈধ হওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তা ছাড়া সারোগেসি পদ্ধতিতে একজন নারী গর্ভ ধারণ করে আরেকজন নারী সন্তানের মা হওয়ার সুযোগ নেই। মা হতে হলে তাকে সন্তান ধারণে অবশ্যই মায়ের ভূমিকা পালন করতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তাদের মা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে প্রসব করেছে।’ (সুরা মুজালা : ২)।

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড বলছে, এটা ইসলামী শরিয়তে হারাম। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আইডেন্টিফাই ক্রাইসিস। কেননা এখানে শুধু মাতৃত্ব-পিতৃত্বের বিষয়টাই হারিয়ে যায় না বরং নসল তথা বংশধারার পবিত্রতা বাধাগ্রস্ত করে। শুধু তাই নয় প্রকৃত বাবা-মা কে হবেন তা নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া পবিত্র কোরআনের বিধান অনুযায়ী জন্মদাতা নারীই হয় সন্তানের মা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের মা তো শুধু তারাই, যারা তাদের জন্ম দিয়েছে।’ (সুরা মুজাদালাহ : ২)।

 ফিকহের উসুল অনুযায়ী ‘সহবাসের ক্ষেত্রে মূল হচ্ছে হারাম’। যতক্ষণ না হালালভাবে আকদ হয়। সারোগেসি প্রত্যক্ষভাবে জিনা না হলেও এমন কিছু দায়বদ্ধতা থেকেই যায় যা কোনোভাবেই হালাল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে না। আল্লাহ তায়ালা জৈবিক চাহিদা পূরণ ও সন্তান গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট পন্থা এবং বংশ বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে স্ত্রীকেই চিহ্নিত করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে সন্তান গ্রহণের জন্য নিজের বিবাহিত স্ত্রীকেই চিহ্নিত করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি ওই সত্ত্বা, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। তারপর যখন সে তার সঙ্গে সঙ্গত হয় তখন সে এক হালকা গর্ভধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। অতঃপর গর্ভ যখন ভারী হয়ে আসে তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, যদি আপনি আমাদের এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন তাহলে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।’ (সুরা আরাফ : ১৮৯)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর যে লোক ঈমান রাখে, সে যেন নিজের পানি (বীর্য) দিয়ে অন্যের সন্তানকে সিক্ত না করে।’ (আবু দাউদ : ১৮৭৪; তিরমিজি : ১১৩১)।

দ্বিতীয়ত, ধনীরা সারোগেসি পদ্ধতিটা অবলম্বন করে থাকেন তুলনামূলক সেøভ গার্ল বা গরিবদের মাধ্যমে। এসবের ভিত্তিতে বলা যায় এই বিষয়টি সরাসরি হাদিসে জিবরিলকে হাইলাইট করে, যেখানে রাসুল (সা.) এটাকে কেয়ামতের আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দাসী তার মুনিবকে জন্ম দেবে’। এখানে স্পষ্টত বিলিনিয়ানের ঘরে সন্তান আসছে একজন সারোগেট মাদারের মাধ্যমে। যা স্পষ্ট কেয়ামতের আলামত বোঝা যাচ্ছে।

সারোগেসিতে প্রকৃত মাতৃত্বের ছোঁয়া পাওয়া যায় না। কেননা একজন মা পরম সযত্নে প্রায় ৪০ সপ্তাহ গর্ভধারণ করেন এবং প্রসবের সময় কঠিন যন্ত্রণা সহ্য করেন। তারপরেও জন্মদানের সময়টা মায়ের কাছে শ্রেষ্ঠ অনুভূতি মনে হয়। একথা সর্বজনবিদিত যে, সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে মা ও সন্তানের বন্ধন দৃঢ় হয়। কিন্তু সারোগেসির সন্তান তার মাকে কীভাবে প্রকৃত মায়ের মতো ভালোবাসবে কিংবা মায়েরই কীভাবে সন্তানের প্রতি অনুভূতি কাজ করবে যেখানে কষ্ট তো নেই এমনকি দুগ্ধপানের ছিটেফোঁটাও নেই। মোট কথা, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল আমাদের যা গ্রহণ করতে বলেছেন সেটা গ্রহণ করা আর যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকার মধ্যেই প্রকৃত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আল্লাহ সবাইকে ইসলাম মেনে চলার তাওফিক দিন।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. উপরে উল্লেখিত জটিলতাগুলো সৃষ্টি হওয়ার কারণ হলো- একদিকে যেমন মা-বাবার শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ব্যবহারের কারণে তাদেরই মা-বাবা বলা যায়, অন্যদিকে গর্ভ ভাড়াদাতা (সারোগেট মা) গর্ভধারণের কারণে তাকেও মা বলতে হয়। এক কথায় বলতে গেলে এ ধরনের পদ্ধতি উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি ডেকে আনবে। মানববংশধারার পবিত্রতাকে হুমকিতে ফেলবে। সন্তানের বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।

তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত, এসব বিষয়ে সতর্ক থাকা। এই অবৈধ ও শরিয়তবিরোধী এবং মানবিক পবিত্রতা বিনষ্টকারী গুনাহ থেকে নিজেদের ও অন্যদের রক্ষা করা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে শয়তানের সূক্ষ্ম প্রতারণা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

২. ইসলাম একজন স্বাধীন পুরুষকে শারীরিক ও আর্থিক সঙ্গতিসাপেক্ষে চারটি বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে। প্রথম স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তান না হলে দ্বিতীয় বিয়ে করে সন্তান নেওয়া সম্ভম। অথবা শর্তসাপেক্ষে টেস্ট টিউব বেবির মাধ্যমেও সন্তানের মা-বাবা হওয়া যায়। অতএব মুসলিম দম্পতির জন্য সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার সুযোগ নেই। আল্লাহ বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।

আরো জানুন: https://ifatwa.info/90258/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...