আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
80 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (4 points)

আসসালামু আলাইকুম

আমার কাছের একজন মানুষ এর কিছু বিষয় সম্পর্কে সে জানতে চাচ্ছে

 

১। কোন মা বাবা তাদের সন্তান কে কোন পাপ কাজ করা শিকিয়েছে এবং ঐ সন্তান ঐ পাপ কাজে লিপ্ত ।বালেগ হওয়ার পর ও তা থেকে বিরত থাকেনি। এ ক্ষেত্রে বালেগ হওয়ার পর ঐ সন্তান এর গুনাহ এর ভার কি বাবা মা এর উপর পর যাবে কি?

যেমন- সামির এর বাবা তাকে মিথ্যা/চুরি বলা/করা  শিকিয়েছে । বালেগ হওয়ার পর ও সে ঐ কাজ থেকে বিরত থাকেনি। বালেগ হওয়ার পর ও কি তার গুনাহ এর ভার তার বাবার উপর যাবে কি?

 ২। কেও যদি কোন আমল না করে (যেমন-ফরজ কোন ইবাদত ও করে না, )। তাহলে সে কি জান্নাতে যাবে।(সে শিরক করে না )

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

https://ifatwa.info/86288/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى وَإِن تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَى حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى إِنَّمَا تُنذِرُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالغَيْبِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَمَن تَزَكَّى فَإِنَّمَا يَتَزَكَّى لِنَفْسِهِ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ

কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না-যদি সে নিকটবর্তী আত্নীয়ও হয়। আপনি কেবল তাদেরকে সতর্ক করেন, যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখেও ভয় করে এবং নামায কায়েম করে। যে কেউ নিজের সংশোধন করে, সে সংশোধন করে, স্বীয় কল্যাণের জন্যেই আল্লাহর নিকটই সকলের প্রত্যাবর্তন। (৩৫:১৮)

من عرض نفسه للتهمة فلا يلومن من أساء الظن به)) منها ما أخرجه ابن أبي الدنيا في الصمت من طريق عكرمة،

হযরত উমর/আলী রাযি বলেন,যে ব্যক্তি নিজেকে তুহমতের জায়গায় নিক্ষেপ করলো,তার ব্যাপারে লোকজনের ধারণা মন্দ হলে,সে যেন নিজকে ব্যতীত অন্যকে দোষারোপ না করে। (ইবনে আবি দুনিয়া)

সন্তানদেরকে ইসলামী সভ্যতা  (তাহযীব) শেখানো, দ্বীন ও শরীয়তের মৌলিক বিষয়াদি শেখানো এবং একজন দ্বীনদার-নামাযী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাও মা-বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

হাদীস শরীফে এসেছে- ‘জেনে রেখ, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাদের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’ -সহীহ বুখারী ১/২২২ হাদীস ৮৯৩

সুসন্তান যেমন মা-বাবার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের বড় সম্পদ এবং সদকা জারিয়া তেমনি সন্তান যদি দ্বীন ও শরীয়তের অনুগত না থাকে, দুর্নীতি ও গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে সে উভয় জগতেই মা-বাবার জন্য বিপদ। দুনিয়াতে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও পেরেশানির কারণ। আর কবরে থেকেও মা-বাবা তার গুনাহর ফল ভোগ করতে থাকবে। আখিরাতে এই  আদরের দুলালই আল্লাহ তাআলার দরবারে মা-বাবার বিরুদ্ধে আপিল করবে যে, তারা আমাকে দ্বীন শেখায়নি। তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। তাই এই আমানতের হক আদায়ের প্রতি খুবই যত্নবান হতে হবে।

সুতরাং আপনি যদি আপ্রান চেষ্টা করেন দ্বীনের পথা চলানোর জন্য,তারপরেও সন্তা না শোনে,তাহলে পিতামাতার কোনো গুনাহ হবেনা কবরে গিয়ে তারা গুনাহের ভাগিদার হবেনা।

কুরআন শরীফে এসেছেঃ

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ 

আল্লাহ তায়ালা  কাহারো গুনাহের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দিবেননা। (সুরা ফাতির ১৮)

ইসলাম বাবা-মার উপর দায়িত্ব দিয়েছেন যে, তারা যেন সাত বছর বয়স থেকে তাদের সন্তানদেরকে নামাযের আদেশ দেয়, দশ বছর বয়সে নামাযের জন্য প্রহার করে। কোন পিতামাতা যদি তাদের সন্তানদেরকে শৈশবকাল থেকে এভাবে নামাযে অভ্যস্ত করে তোলে তাহলে আশা করা যায়, তাদের সন্তানরা কখনো বেনামাযী হবে না।

সেই সাথে প্রতিটি পিতামাতার উপর ফরজ দায়িত্ব হল, সন্তানদেরকে দ্বীনী শিক্ষা প্রদান করা এবং ইসলামী জীবনযাপনে অভ্যস্ত করা।

এভাবে কাজ করলে আশা করা যায়, সন্তানরা বড় হয়েও নামাযী, সচ্চরিত্রবান, সুানগরিক, ও ভালো মানুষ হিসেব গড়ে উঠবে। এত কিছু করার পরও যদি বড় হয়ে কোন সন্তান বেনামাযী হয় বা ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত হয় তাহলে সেই এর দায় দায়িত্ব বহন করবে; পিতামাতা নয়।

পক্ষান্তরে পিতামাতা যদি সন্তানের উপর তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার কারণে সন্তান বেনামাযী হয় বা সন্তান অনৈসলামিক কর্মে লিপ্ত হয় তারা কেউই এ গুনাহ থেকে মুক্তি পাবে না।

কিন্তু যদি এমন হয়, বাবা-মা প্রথম জীবনে ভালোভাবে ইসলাম পালন না করার কারণে সন্তানদেরকে ইসলামের উপর গড়ে তোলেননি কিন্তু পরবর্তীতে তওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করেছে এবং ইসলাম অনুযাযী তাদের জীবন সাজিয়েছে তাহলে এখন তারা তাদের সন্তানদেরকেও তওবা করে ইসলামের পথে ফিরে আসার জন্য নির্দেশ দিবে। আর সন্তাদের জন্য অপরিহার্য হল, অতীত জীবন থেকে তওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করা এবং ইসলামের পথে ফিরে আসা।

এখন যদি পিতামাতা নামায-রোযা ও ইসলামের পথে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়ার পরও তারা নামায-রোযা না করে বা ইসলামে ফিরে না আসে তাহলে পিতামাতা গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। কিন্তু সন্তানরা তাদের কৃতকর্মের জবাবদাহী করবে

সন্তানের বয়স ১০ বছর হলে হাদীস শরীফে নামাযের জন্য শাসন করার কথাও এসেছে। সাত বছর থেকে নামাযের জন্য এমনভাবে গড়ে তুলবে যেন ১০ বছর বয়সে সন্তান নামাযে পূর্ণ অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফিকাহবিদগণ বলেন, ‘রোযার হুকুমও একই।’ অর্থাৎ ৭-৮ বছর বয়সী সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তাদেরকে ধীরে ধীরে রোযার প্রতি অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। এরপর ১০ বছর বয়সে উপনীত হলে যদি স্বাস্থ্যগতভাবে দুর্বল না হয় তাহলে প্রয়োজনে রোযার জন্য শাস্তিও দেওয়া যাবে। -ফাতাওয়া শামী  ২/৪০৯

সাহাবায়ে কেরাম রা. তাঁদের সন্তানদেরকে রোযা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। সাহাবিয়া রুবায়্যি বিনতে মুআওয়াজ রা. বলেন, ‘আমরা নিজেরা আশুরার রোযা রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদেরকেও রোযা রাখাতাম। তাদের জন্য পশমের তৈরি খেলনা রাখতাম। যখন বাচ্চাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদত তখন তাকে খেলনা দিতাম, এভাবে ইফতারের সময় হয়ে যেত।’ -সহীহ বুখারী ১/২৬৩

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. সন্তানদেরকে ইসলামী সভ্যতা  (তাহযীব) শেখানো, দ্বীন ও শরীয়তের মৌলিক বিষয়াদি শেখানো এবং একজন দ্বীনদার-নামাযী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাও মা-বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। শরীয়ত যাদেরকে অভিভাবকের দায়িত্ব অর্পন করেছেন এবং যে অভিভাবকত্ব সম্পর্কে আল্লাহ কিয়ামতের ময়দানে লোকদিগকে জিজ্ঞাসা করবেন, তারা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন না করে, তাহলে তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে।

মাতাপিতা যদি সন্তানকে দ্বীন শিক্ষা না দেয়তাহলে এ ত্রুটির জন্য তাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত করা হবে। যদি মাতাপিতা সন্তানকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার পর ও গুনাহের কাজ থেকে বাধা দেওয়ার পরও সন্তান গোনাহের কাজে জড়িয়ে যায়ফরজ ও ওয়াজিব আহকাম আদায় না করে তাহলে এক্ষেত্রে মাতাপিতা দোষী সাব্যস্ত হবেন না। বাবা মায়ের আমল নামায় গোনাহ লিখিত হবে না। তবে তারা যদি  দায়িত্ব আদায় না করে তাহলে কেন আদায় করল নাসেজন্য তাদেরকে কাঠগড়ায় দাড় করানো হবে। এবং সন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরেও গুনাহ করার কারণে তাকেও শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে। মোটকথা, মাতা পিতা ও সন্তান উভয়ে আল্লাহ তাআলার নিকট অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। 

২.  ঈমান থাকা সত্ত্বেও যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের ফরজ-ওয়াজিব বিধান স্বীকার করে কিন্তু পালন না করে,  তাহলে সে ফাসেক।  সে তার গুনাহের সমপরিমাণ শাস্তি ভোগ করে ঈমান থাকার কারণে কোনো না কোনো সময় জান্নাতে যাবে। তবে সে অকৃতকর্মের জন্য দীর্ঘ সময় জাহান্নামের আগুনে শাস্তি ভোগ করতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...