আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। এক ব্যক্তি ছোটবেলা থেকেই বিবিধ নিয়ামতে বড় হয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। কখনো টাকাপয়সার সমস্যায় পড়তে হয়নি, বাবা মা সবসময় সবরকম সাপোর্ট করে এসেছেন, ভাইবোনেরা সবসময় তার সাথে সদয় থেকেছেন, পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো, চাকরিবাকরি ভালো করেছেন, আলেমের কাছে দ্বীন শিক্ষা করেছেন, অল্প বয়সেই অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন, অন্যের উপকার করে থাকেন, কখনো কোন নারীর ফিতনায় পড়তে হয়নি তাকে, ছোট থেকেই ইসলামের প্রতি অনেক ভালোবাসা তার আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু তিনি বেশ অহংকারী স্বভাবের। এটা অবশ্য হঠাৎ করে বুঝা যায় না কিন্তু অনেক ভালো করে খেয়াল করলে বুঝা যায় যে তার মধ্যে কিছুটা হলেও অহংকার আছে। তিনি মাঝেমধ্যেই এমনভাবে লেখেন যেগুলো প্রচণ্ড ইম্যাচিউর মানসিকতার পরিচয় বহন করে। তিনি যদি টের পান যে কেউ কখনো কবিরা গুনাহ করেছে সে তওবাকারী হলেও তাকে এড়িয়ে চলেন। না, তাদেরকে খোটা দেন না বা গালাগালি, ঝগড়াঝাটি করেন না কিন্তু তার প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা কমিয়ে দেন। কেউ তার সাথে বারবার খারাপ ব্যবহার করলে মূল ইস্যু নিয়ে কথা না বলে অপর ব্যক্তির সাথে কথা বলে সলভ না করে তাকে সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট দেন(বজ্রকঠিন নীরবতা দিয়ে কষ্ট দেওয়া যাকে বলে)। যার ফলে অপর পাশের মানুষটা তার সাথে একটা অদৃশ্য দূরত্ব বোধ করেন। তার আত্মীয়দের সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়নি ঠিকই কিন্তু কেউ বিপদে না পড়লে তিনি সেই আত্মীয়ের খোঁজও রাখেন না। বিপদে পড়লে সর্বোচ্চটা দিয়ে এগিয়ে যান কিন্তু এমনি নরমাল টাইমে ফোন দিয়ে খোঁজখবর নেন না, তার নাকি অস্বস্তি লাগে।
তিনি নিজেই বলেছেন যে তার কাউকে দরকার হয়না, অন্যদেরই তাকে দরকার হয়, বিপদের সময় কেউ তাকে সাহায্য করেনি তাই মানুষকে জীবন থেকে সরিয়ে দিতেও তার সমস্যা হয় না। একজন তাকে মনে করিয়ে দেয় যে বিপদের সময় কেউ পাশে না থাকুক, আল্লাহ তো ছিলেন। তিনি সেটা নিয়ে উচ্ছ্বসিত না হয়ে রিপ্লাই দিলেন যে আল্লাহ তো সবসময়ই থাকেন। অথচ যাদের বিপদের সময় আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ পাশে থাকে না তাদের ভিতরে একটা অন্যরকম কৃতজ্ঞতাবোধ থাকে যেটা তার ভিতর বাহ্যিকভাবে দেখা যায়নি, যদিও তিনি "আলহামদুলিল্লাহ" বলতেন।
কয়েক মাস আগে এক মেয়ের সাথে তার বিয়ের কথা চলছিল। মেয়ে মোটামুটি তার মুড বুঝেই কথা বলত। কিন্তু কন্টিনিউয়াস তার এসব জিনিস দেখতে দেখতে ২/১ বার মেয়েটা রিয়্যাক্ট করে বসে আর মেজাজ ধরে রাখতে না পেরে। সাথে সাথেই মেয়েটাকে শুরু করে সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট দেওয়া। অথচ মেয়েটা পুরো ফ্যামিলির সাথে ফাইট করেছিল যাতে এই ছেলেকে মেনে নেয়, শুধুমাত্র তার দ্বীনদারিতা দেখে। মেয়েটাকে ছেলের বাবা মা পছন্দ করেনি কিন্তু তারা "না" বলার পরেও সে তার বাবা মাকে রাজি করানোর চেষ্টা করছিল। সেই সময় মেয়েটা এরকম করে বসায় তিনি আর মেয়েটাকে হ্যাঁ না কিছুই জানাননি বা মেয়েটা অনেকবার সরি বলে নিজের পজিশন ক্লিয়ার করার চেষ্টা করার পরেও মেয়েটাকে সরাসরি বলেননি যে তিনি আর চেষ্টা করছেন না। হঠাৎই অন্য জায়গায় বিয়ে করে ফেলেন। একে তো মেয়ে নিজের বাবা মায়ের হাতে পায়ে ধরে রাজি করায়, পাকা কথা বলতে এসে ছেলের বাবা মা "না" করে দেয় ছেলে তখন কিছুই করতে পারে না, এরপর ছেলে তার বাবা মাকে কনভিন্স করছে বলেও স্পষ্ট কিছু জানায় না, হঠাৎই অন্য জায়গায় বিয়ে করে ফেলে সবকিছু মিলিয়ে মেয়ে আর তার পরিবার এখনো ছেলেকে অভিশাপ দেয়।
বলে রাখা ভালো যে ছেলেটা মেয়ের বন্ধুবান্ধবকে জনে জনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল যে মেয়ের আগে কখনো কোথাও প্রেম ছিল কিনা। কারণ ঐ যে তওবাকারী হলেও বিয়ের পর এসব প্রকাশ পেলে শ্রদ্ধা কমে যাবে তাই। কিন্তু এতে মেয়ের বন্ধুবান্ধব অনেক বিরক্ত হয়ে মেয়েটাকেই কথা শুনিয়ে দেয়। ওদিকে ছেলেটা নিজেই এই মেয়ের সাথে অনেক কথা বলত। মেয়েটা চেষ্টা করত সংক্ষেপে উত্তর দেওয়ার কিন্তু ছেলেই কোন প্রসঙ্গ আসলে দরকার না থাকলেও অনেক ঘটনা বিস্তারিত বলত, বিভিন্ন ব্যাপারে মেয়ের পরামর্শ চাইত। মেয়েটা এরকমটা মনে করিয়ে দেওয়ার পর(ঐ যে রাগের মাথায়) ছেলে বলে যে "আমি আসলে খুব কম মানুষের সাথেই ফ্রি হই। আপনার সাথে বেশি কথা হয়ে গিয়েছে। এজন্য আপনার কাছে আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আর আপনার ভুল হচ্ছে আমাকে কল দেওয়া।" এটা বলে ঠিকই কিন্তু অন্য দোষগুলো শুনার পর মেয়েটাকে কিছুই না বলে, নীরবে কাট অফ করে, সরাসরি কিছু না জানিয়ে, ঝুলিয়ে রেখে অন্য জায়গায় বিয়ে করে ফেলে(শুধু বলেছিল যে মেয়েটার কথা রুড, কিন্তু আগাবে কি আগাবে না তা আর বলেনি)।
আর তাছাড়া ছেলে নিজের লেখালেখির মাধ্যমে বা কাজকর্মের অন্য যেসব লোকের অনুভূতিতে আঘাত হানে তারা ঐ ছেলেকে অভিশাপ দেয় এই বলে যে ছেলে নিয়ামতের মধ্যে বড় হওয়ায় এর কদর বোঝে না। তাই আল্লাহ যেন তার নিয়ামত কেড়ে নেয় আর বুঝিয়ে দেয় যে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া এসব নিয়ামত সে কোনদিন পেত না। আর মেয়েটা দুয়া করে যে আমি এত কষ্ট করে বাবা মাকে বুঝিয়ে রাজি করালাম আর ছেলের বাবা মা আমার বাবা মাকে অপমান করল, আমার বন্ধুবান্ধবের কাছে ছেলেটার এরকম আচরণের জন্য কথা শুনলাম, ছেলের এত দোষ ইগনোর করলাম আর আমার একটা ভুলের জন্য ছেলে আমাকে সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট দিল(অথচ ছেলের কাজের প্রতিক্রিয়ায়ই মেয়ে ওটা রাগের মাথায় করেছে কিন্তু ছেলে কোনভাবেই মানতে চায়নি তার ভুল), বাবা মাকে মানাচ্ছে ইঙ্গিত দিয়ে কোনকিছু না জানিয়ে অন্য জায়গায় বিয়ে করে পুনরায় অপমান করল। সেই ছেলে আর তার পরিবার যাতে ক্রমাগত তার বউয়ের পরিবারের কাছে অপমানিত হতে থাকে।
মেয়ে অবশ্য এভাবে বদদুয়া করার সময় নিজের দোষ স্বীকার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েই দুয়া করে। হ্যাঁ ঐ ছেলের অনেক ভালো গুণও আছে। কিন্তু তার এরকম অহংকারী স্বভাব, কাউকে দরকার নেই মনোভাব, ইম্যাচিউরের মত কথা বলা বা কাজ করা, মেয়েটা আর তার ফ্যামিলির সাথে এমন করা, খুব সূক্ষ্মভাবে অন্যকে ছোট করা, কেউ অশ্রদ্ধা করছে মনে করলে তাকে কিছু না জানিয়ে জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করা(না, খুন করা না), সম্ভাব্য পাত্রীর গোপন ত্রুটি অনুসন্ধান করা তাও জনে জনে জিজ্ঞাসা করা যাতে বিয়ের পর কিছু প্রকাশ পেয়ে ডিভোর্স দিতে না হয় বা বিশ্বাস নষ্ট না হয় ইত্যাদি কারণে কি ছেলেকে বদদুয়া করা যাবে? ঐ লোকগুলো বা ঐ মেয়েটা কি বদদুয়া করতে পারবে এভাবে যে
"হে আল্লাহ তোমার নিয়ামত পেয়ে সে বাহ্যিকভাবে তো আলহামদুলিল্লাহ বলেছে কিন্তু তার ভিতরটা হয়ত প্রকৃত আলহামদুলিল্লাহ বলেনি। তার কাজকর্ম, আচরণে সে পরোক্ষভাবে নিজেকে সুপিরিয়র দেখাতে চায়। সে নিজেই বলে যে এত নিয়ামত পেয়েও উপভোগ করার সময় সুযোগ পায়নি, তার ভিতর শুন্যতাই কাজ করেছে। হ্যাঁ এজন্য হয়ত তাকে করুণা করা যায় কিন্তু তার অহংকার করাটা জাস্টিফাই হয় না। এই অহংকার করাটা সে স্বীকার করলেও সংশোধনের কোন প্রচেষ্টা তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। কারো কোন পূর্বের গুনাহ প্রকাশ পেলেই সে বলতে থাকে যে মানুষ আসলে শুধু লেবাস চেঞ্জ করে, ভিতর থেকে অতটা চেঞ্জ হয় না। সে সৎভাবে কাজ করে বলে এই সততার অহংকারে সে যাদের সততা নাই তাদের পরোক্ষভাবে কথা শুনায়। অন্যের গুনাহ প্রকাশ হয়েছে, ঐ মুহূর্তে দেখা যায় না যে সে এই জিনিস ভাবছে যে এটা তার সাথেও হতে পারত। আর তাছাড়া মেয়েটাকে এভাবে ঝুলিয়ে রেখে সে অন্যায় করেছে। আগে তো সে মেয়েটাকে ভাব দেখিয়েছে যে গার্ডিয়ান রাজি এরপর এরকম করেছে। তাকে যেভাবেই হোক এর প্রাপ্য বুঝিয়ে দেও। মেয়েটাকে যেভাবে একটা দোষের জন্য সে রিজেক্ট করেছে, তার ফ্যামিলি মেয়েটার ফ্যামিলিকে যেভাবে অপমান করেছে সেভাবেই তাদেরকে তুমি অপমান করাও, সাইলেন্ট ট্রিটমেন্টের সম্মুখীন করাও তার বউয়ের ফ্যামিলির থেকে। আর তার যেসব নিয়ামতের কারণে এত অহংকার সেগুলো এমনভাবে ধূলিসাৎ করে দেও যেন এগুলো কোনদিন ছিলই না। তাকে এমন পজিশনে ফেল যেন সে বুঝতে পারে তুমি ছাড়া তার আর কেউই নেই। তখনই সে প্রকৃত বিনয়ী হবে বলে আশা করা যায়। আমীন!"
এমন দুয়া করা কি জায়েয আছে? যদি জায়েজ না হয়ে থাকে তাহলে ঐ বদদুয়া নিজেদের উপর না পড়ার জন্য কী ব্যবস্থা নিতে হবে? এত জটিল প্রকৃতির লোক আর এত জটিল পরিস্থিতি যে সবকিছু বুঝিয়ে বলা গেল না, হয়ত গুছিয়ে লিখতেও পারি নি। আর এত বড় ঘটনার পর মেয়েটা বেশ বড়সড় ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটার জন্য দুয়া করবেন। এত জটিল পরিস্থিতি যে মেয়েটা আল্লাহর কাছে দুয়া করতে গেলেও তার আবেগগুলোকে, কষ্টগুলোকে ভাষা দিতে পারে না। মেয়েটা সম্ভবত কাঁদতেও ভুলে গেছে।
আর ঐ ছেলেটার মত মানুষের ব্যাপারে কি কুরআন বা সহিহ হাদিসে কিছু বলা আছে? দুয়াগুলো গুছিয়ে সুন্দর করে কীভাবে করা যেতে পারে সেটা উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যাবে?