বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/42566/ নং ফাতওয়াতে আমরা বলেছি যে,
মা বাবার সর্বদায় আনুগত্য করতে হবে,তাদের কথার নাফরমানী
করা যাবেনা। তাদের সাথে সর্বদায় ভালো ব্যবহার করতে হবে। তারা কষ্ট পায়, এমন কাজ কখনোও
করা যাবেনা।
তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের
অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক। পিতামাতার খরচ বহন করা; তাদের খোঁজ-খবর
নেয়া; প্রয়োজনের সময় বিশেষ করে বার্ধক্যে তাদের পাশে থাকা আবশ্যক । মাতাপিতার দেখভাল করা ও তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা শরীয়ত কর্তৃক ফরয ঘোষনা করা
হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ
بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ
وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا
আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে
সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে
প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস।” (সূরা আহকাফ-১৫)
আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ
تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ
عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ
تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য
কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই
যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং
বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। (সূরা বনী ইসরাঈল-২৩)
أن جاهمة جاء إلى النبي
صلى الله عليه وسلم، فقال: يا رسول الله، أردت أن أغزو وقد جئت أستشيرك، فقال: «هل
لك من أم؟» قال: نعم، قال: فالزمها، فإن الجنة تحت رجليها»
হযরত জাহিমাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ
(সা.) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণের ইচ্ছা করেছি, আপনার কাছে পরামর্শ
নিতে এসেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, “তোমার কি মা আছেন?” সাহাবী জবাব দিলেন, “হ্যাঁ!”। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, “তাঁর সেবাকে
নিজের উপর আবশ্যক করে নাও। নিশ্চয়ই তাঁর দুই পায়ের নিচে রয়েছে জান্নাত।” (সুনানে নাসাঈ:
৩১০৪)
হাদিস শরীফে আরও এসেছে,
عن أبي هريرة رضي الله
عنه قال : "جاء رجلٌ إلى رسول الله -صلى الله عليه وسلم- فقال : يا رسول
الله، من أحق الناس بحسن صحابتي؟، قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أمك) ، قال: ثم
من؟ قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أبوك) متفق عليه .
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক সাহাবী
এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে কে আমার সর্বাধিক মনোযোগ পাওয়ার
যোগ্য?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি
জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?”
রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি
আবার জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?”
রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি
পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?”
রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার পিতা।” (বুখারী
ও মুসলিম)
তবে তারা যদি শরীয়ত বহির্ভূত কাজের
আদেশ করে, তাহলে তা মানা যাবেনা।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنِ النَّوَّاسِ بْنِ
سِمْعَانَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِىْ
مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ»
নাও্ওয়াস ইবনু সিম্‘আন (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিপালকের
অবাধ্যতার মাঝে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য নেই। (শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৪৫৫, সহীহ আল জামি‘
৭৫২০)
আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/8707/
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে প্রথমে আপনাদের
জন্য করণীয় হলো, আপনি আপনার ভাইদেরকে বুঝাতে থাকবেন যেন তারা স্বীয় মাতাপিতার
হক আদায় ও তাদের খেদমতের ব্যাপারে সদা তৎপর হওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ, এখন আপনার
ভাইদের উপর আবশ্যক হলো, পিতা-মাতাকে দেখা শোনা করা এবং তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়া। তারপরও
যদি তারা এটা না করে তাহলে তারা গোনাহগার হবে।
তবে যেহেতু মেয়েরা দেখা-শোনা করছেন সেজন্য মেয়েরা অনেক অনেক
সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনার ভাইয়েরা আপনার পিতা-মাতাকে
দেখা-শোনা করে না বা ভরণ-পোষণ দেয় না। তাই আপনার পিতা-মাতা তাদের জীবন-যাপন বা চিকিৎসা
ইত্যাদির জন্য চাইলে এই সম্পদ বিক্রিও করে
দিতে পারে বা কাউকে দান করেও দিতে পারে। এটা একান্ত তাদের অধিকার। কারণ, এটা তাদের
সম্পদ।
তবে প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় এই
পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে যে, প্রথমে আপনার ভাইদেরকে
বলবেন, পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ দেওয়ার জন্য। তারা যদি দিতে না চায় তাহলে তাদেরকে বলবেন, পিতা-মাতা চাইলে এ সম্পদ বিক্রি করে দিয়ে তারা জীবন যাপন করবেন।
যেহেতু তোমরা পিতা-মাতাকে টাকা-পয়সা দিচ্ছো না।
তাই বলে হয়তো কোনো মেয়ের কাছে বা বড় মেয়ের কাছে উক্ত সম্পদ ন্যায্য মূল্যে
বাকীতে বিক্রি করে দিতে পারে। তারপর অল্প অল্প করে ওই টাকা দিয়ে পিতা-মাতাকে দেখাশোনা
করা যেতে পারে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে হয়তো ভাইয়েরা আর কিছু বলবে না ঐ সম্পদের
ব্যাপারে।
এরপরেও যদি তাদের দেখা-শোনা
করতে করতে টাকা পয়সা শেষ হয়ে যায় অর্থাৎ ওই জমির বিক্রয় মূল্য। তারপর মেয়েরা বা
মেয়ের জামাইরা তাদেরকে দেখাশোনা করবেন আল্লাহ তালার সন্তুষ্টি ও সওয়াবের আশায়। যেমন
এখন করছেন।