আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
135 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
reshown by
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

১.বিয়ের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে মোহরানা ধার্য করা যায় কি? যেমন:মেয়ে যদি এমন মোহরানা নির্ধারণ করে যাতে মোহরানার একটা অংশ ছেলেকে পরিশোধ করতে হবে এবং বাকি অংশ বিবাহ সম্পর্ক টিকে থাকা কালীন মেয়ে কখনো দাবি করবে না এমন কসম করে। কিন্তু যদি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোর থাকে তখন ছেলেকে মোহরানার সম্পূর্ণ অংশ পরিশোধ করেই তালাক দিতে হবে। এমন করা কি জায়েজ আছে?

২.মোহরানা নির্ধারণ করে বিবাহ হয়ে যাওয়ার পর যদি সহবাসের পূর্বেই স্বামী ইন্তেকাল করেন, তাহলে কি সেই মোহরানা পরিশোধ করতে হবে? এমন ক্ষেত্রে মেয়ে যদি আগে থেকেই ওয়াদা দেয় যে ,স্বামী ইন্তেকাল করলে সে মোহরানার দাবী রাখবে না, তাহলেও কি স্বামীর ইন্তেকাল এর পর মোহরানা পরিশোধ বাধ্যতামূলক?

৩.মোহরানা যদি এমন ধার্য করা হয়: "ছেলের এক বছরের ইনকাম+পরিবার থেকে খুশি হয়ে যতটুকু স্বর্ণ দিবে "---------এটা কি ঠিক হবে?কারণ পুরোটাই তো অনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়ে থাকছে!

৪.মোহরানার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া বেশি উত্তম নাকি অনির্ধারিত থাকতে পারে? আসলে ছেলেপক্ষ উল্লেখ করে দিতে চাচ্ছে না। এক্ষেত্রে করণীয় কি?
by (3 points)
Why is there no answer here?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://www.ifatwa.info/74568/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে মোহর কিছু দেওয়া এবং কিছু অংশ বাকি রাখা শরীয়ত সম্মত। 
,
পবিত্র কুরআন শরীফে এসেছে  
আল্লাহ তায়ালা বলেন 

فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤] 

অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। [সূরা নিসা-২৪] 
,
★আলোচ্য আয়াত দ্বারা একথা স্পষ্ট হয় যে যদি মোহরানা নির্ধারন হওয়ার পর স্ত্রী যদি (মোহরানা মাফ করে দেওয়া বা কম করে দেওয়া বা বাকি রেখে অন্য সময়ে দেওয়া) কোনো বিষয়ের উপর স্বামীর সাথে একমত হয়, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।   
সুতরাং স্ত্রীর সম্মতিতে মোহরানা বাকি রাখা জায়েজ আছে।     

لَا خِلَافَ لِأَحَدٍ أَنَّ تَأْجِيلَ الْمَهْرِ إلَى غَايَةٍ مَعْلُومَةٍ نَحْوَ شَهْرٍ أَوْ سَنَةٍ صَحِيحٌ وَإِنْ كَانَ لَا إلَى غَايَةٍ مَعْلُومَةٍ فَقَدْ اخْتَلَفَ الْمَشَايِخُ فِيهِ قَالَ بَعْضُهُمْ يَصِحُّ وَهُوَ الصَّحِيحُ وَهَذَا؛ لِأَنَّ الْغَايَةَ مَعْلُومَةٌ فِي نَفْسِهَا وَهُوَ الطَّلَاقُ أَوْ الْمَوْتُ أَلَا يَرَى أَنَّ تَأْجِيلَ الْبَعْضِ صَحِيحٌ، وَإِنْ لَمْ يَنُصَّا عَلَى غَايَةٍ مَعْلُومَةٍ، كَذَا فِي الْمُحِيطِ.

এ বিষয়ে কারো কোনো মতভেদ নেই যে,নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধযোগ্য সম্পূর্ণ মহরকে বাকী রাখা জায়েয।যেমনঃ- এক মাস বা এক বৎসর।কিন্তু যদি নির্দিষ্ট দিন-তারিখ উল্লেখ না থাকে, তাহলে এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ রয়েছে,কিছুসংখ্যক উলামায়ে কেরাম জায়েয বলে থাকেন।এটাই বিশুদ্ধ মত।কেননা বাস্তবে একটি দিন-তারিখ অবশ্যই নির্দিষ্ট রয়েছে।আর ইহা হল,তালাক বা মৃত্যু।কেননা দিন-তারিখ উল্লেখ ব্যতীত মহরের কিছু অংশ বাকী রাখা জায়েয[মুহিত]
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৩১৮)

★★স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে মোহরানার কিছু অংশ বাকি রাখা জায়েজ হবে।   
স্ত্রীর অনুমতি থাকলে এটি অনুচিত হবেনা।
তবে উত্তম হলো একেবারে নগদ পরিশোধ করে দেওয়া।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

واتوا النساء صدقاتهن نحلة فان طبن لكم عن شيئ منه نفسا فكلوا هنيئا مرئيا

এবং তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশিমনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে ছেড়ে  দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য তাহলে তা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর।-সূরা নিসা : ৪

এই আয়াতের প্রধান কয়েকটি শিক্ষা ও বিধান এই :

১. মোহর আদায় করা ফরয। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন।

২. মোহর সম্পূর্ণরূপে নারীর প্রাপ্য। তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া অন্য কারো তাতে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সুতরাং স্বামী যেমন স্ত্রীকে মোহর থেকে বঞ্চিত করতে, কিংবা পরিশোধ করার পর ফেরত নিতে পারে না তেমনি পিতা-মাতা, ভাইবোন বা অন্য কেউ নিজ কন্যার, বোনের বা আত্মীয়ার মোহর তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নিতে পারে না। নিলে তা হবে কুরআনের ভাষায় ‘আক্ল বিল বাতিল’ তথা অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা।

৩. মুমিনের কর্তব্য খুশিমনে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্ত্রীর মোহর আদায় করা। কারো অনুরোধ-উপরোধ বা জোর-জবরদস্তির অপেক্ষায় থাকা কুরআনী শিক্ষার পরিপন্থী ও অতি নিন্দনীয় প্রবণতা।

৪. স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা গ্রহণ করার পর স্বামীকে উপহার দেয় তাহলে স্বামী তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করতে পারবে।

৫. পূর্ণ মোহর ছেড়ে দেওয়ার বা পূর্ণ মোহর স্বামীকে উপহার দেওয়ারও অধিকার স্ত্রীর রয়েছে, তবে সাধারণ অবস্থায় পূর্ণ মোহর না দিয়ে কিছু অংশ দেওয়াই ভালো।

৬. স্বামী যদি চাপ দিয়ে বা কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ মাফ করিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহর বিচারে তা মাফ হবে না।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
এমন করার সুযোগ নেই।
মোহরানার যেই অংশ সম্পর্কে মেয়ে সন্তুষ্টি চিত্তে কসম কাটে যে বিবাহ সম্পর্ক টিকে থাকা কালীন মেয়ে কখনো তাহা দাবি করবে না,সেক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও ছেলেকে মোহরানার বাকি অংশ আদায় করতে হবেনা।

(০২)
এক্ষেত্রে মেয়েকে পূর্ণ মোহরানা দিতে হবে।
হ্যাঁ যদি মেয়ে সন্তুষ্টি চিত্তে মাফ করে দেয়,সেক্ষেত্রে তাহা ভিন্ন কথা। 

(০৩)
অনির্দিষ্টভাবে মোহরানা নির্ধারণ করার সুযোগ নেই। এটা শরীয়তে অনুমোদিত নয়।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

 قَدۡ عَلِمۡنَا مَا فَرَضۡنَا عَلَیۡہِمۡ فِیۡۤ اَزۡوَاجِہِمۡ وَ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ لِکَیۡلَا یَکُوۡنَ عَلَیۡکَ حَرَجٌ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿۵۰﴾

আমরা অবশ্যই জানি মুমিনদের স্ত্রী এবং তাদের মালিকানাধীন দাসীগণ সম্বন্ধে তাদের উপর যা নির্ধারিত করেছি। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সুরা আহযাব ৫০)

(০৪)
মোহরানার পরিমাণ নির্ধারণ করতেই হবে।
এটা স্ত্রীর হক।
এটা নিয়ে ছেলেপক্ষের গড়িমসি করার কোনো সুযোগ নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...