আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
723 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (9 points)
edited by
স্ত্রী এমন এক পুরুষের প্রায়ই প্রশংসা করে, যে দ্বীনদারিতা ও দুনিয়া দুইদিক দিয়েই আমার চেয়ে উত্তম অবস্থায় রয়েছে। তার দ্বীনের জ্ঞানও আমার চেয়ে বেশি। এমনটা আমার মনে কষ্ট সঞ্চার করে। এমতাবস্থায় স্ত্রীর সম্পর্কে ইসলাম কি বিধি বিধান দিয়েছে এবং আমার যদি মনে ঈর্ষা বোধ হয় তবে এটা কি উচিত? এর জন্য আমার গুনাহ হবে?

1 Answer

0 votes
by (682,440 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

প্রথমেই আমরা কিছু বিষয় জেনে নেইঃ 

রাসুলুল্লাহ সাঃ  ইরশাদ করেন, অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। আর স্ত্রীদের সঙ্গে আচার-ব্যবহারে আমি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। (তিরমিজি-৪০৬২)
,
সুতরাং স্ত্রীদের কাছে সর্বোত্তম হওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাঃ এই হাদীসে উদ্ভুদ্ধ করেছেন।
তাই আমাদেরকেও  স্ত্রীদের কাছে সর্বোত্তম হতে হবে।
,
রাসুল (সা.) স্ত্রীদের প্রশংসা করার মধ্যেও কোনো কমতি করতেন না। বরং ভরপুর মজলিসে প্রশংসা করতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না। যেমন একবার ইরশাদ করেন, খাদিজার প্রতি আমার প্রচণ্ড ভালোবাসা রয়েছে।" (মুসলিম হা. ২৪৩৫)

আরেকবার হজরত আয়েশা (রা.)-এর ব্যাপারে বলেন, 'খাদ্যের মধ্যে যেমন 'ছরীদ' (আরবের খাবার বিশেষ) সর্বশ্রেষ্ঠ, তেমনি নারীদের মধ্যে আয়েশা শ্রেষ্ঠ।' (বোখারি, হা.-৩৪১১)
,
★তাই সেই হিসেবে স্ত্রীদেরও উচিত স্বামীর প্রশংসা করা।
এতেই সংসারে শান্তি আসবে।
নতুবা ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকবে।
,
এমন কোনো কথা বলা ঠিক নয়,যাতে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। 
 
★হিংসা (حسد) বলা হয়: কারো কল্যাণ দেখে অন্তরে জ্বালা অনুভব করা এবং তার ক্ষতি করার জন্য চেষ্টা করা।
,
★ঈর্ষা বলা হয়ঃ
কারো কল্যাণ ও ভালো কিছু দেখে তার ক্ষতির চিন্তা না করে তার অনুরূপ বা তার চেয়ে বেশি কল্যাণ প্রত্যাশা করা এবং তা অর্জনের চেষ্টা-সাধন করাকে ঈর্ষা (غبطة) বলা হয়। এটি জায়েয়। এতে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয় এবং সমাজে কল্যাণ ও সৎকর্মের বিস্তৃতি ঘটে।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস থেকে আমরা এর উত্তর পাই
إِيّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النّارُ الْحَطَبَ أَوْ قَالَ الْعُشْبَ.
তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থেকো। কারণ হিংসা নেক আমলসমূহকে গ্রাস করে নেয়, যেভাবে আগুন গ্রাস করে লাকড়ি (অথবা ঘাস)।
 (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯০৫)
,
হাদীসের ভাষ্য এমন
إِنّ الْحَسَدَ يُطْفِئُ نُورَ الْحَسَنَاتِ.
সন্দেহ নেই, হিংসা নেক আমলসমূহের নূর ও আলোকে নিভিয়ে দেয়। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯০৬

হিংসা তাই সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। এ হিংসা কোনো মুমিনের চরিত্র হতে পারে না। 

হাদীসের বক্তব্য এমনই

لَا يَجْتَمِعَانِ فِي قَلْبِ عَبْدٍ الْإِيمَانُ وَالْحَسَدُ.
কোনো বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হতে পারে না। (সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৩১০৯)
,
হিংসার একটি রূপ এমনও, যেখানে কারও অমঙ্গল কামনা নেই। কারও ভালো কোনো কিছু দেখে তার বিনাশ নয়, বরং নিজের জন্যেও অর্জিত হোক অনুরূপ ভালো ও কল্যাণ
এই কামনা রয়েছে সেখানে। 

হিংসাক  আরবীতে বলে ‘হাসাদ’ আর পরেরটিকে বলা হয় ‘গিব্তা’, বাংলায় যাকে আমরা বলি ‘ঈর্ষা’। 

এই ঈর্ষা দোষণীয় কিছু তো নয়ই, বরং ক্ষেত্রবিশেষে প্রশংসনীয়ও। ঈর্ষা অনেক সময় আমলের আগ্রহ সৃষ্টি করে। নেক কাজে উদ্ধুদ্ধ করে। ভালো কাজে ও কল্যাণকর ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। মুমিন বান্দা যখন কাউকে বারবার হজ্ব-উমরা পালন করতে দেখে কিংবা অল্প বয়সে কাউকে বায়তুল্লাহ যিয়ারতের সৌভাগ্য হাসিল করতে দেখে, সে তখন আবেগে আপ্লুত হয়, তার মনে ঈর্ষা জন্ম নেয়।

এ সৌভাগ্য যদি আমারও হাসিল হতো! এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ
لاَ حَسَدَ إِلاَ عَلَى اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ الْكِتَابَ وَقَامَ بِهِ آنَاءَ اللّيْلِ وَرَجُلٌ أَعْطَاهُ اللهُ مَالاً فَهْوَ يَتَصَدّقُ بِهِ آنَاءَ اللّيْلِ وَالنّهَار.
হিংসা (অর্থাৎ ঈর্ষা) কেবল দুই ব্যক্তিকেই করা যায়Ñআল্লাহ যাকে কুরআন হিফ্জ করিয়েছেন আর সে রাতের বিভিন্ন প্রহরে নামাযে দাঁড়িয়ে তা তিলাওয়াত করে, আর যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে তা দিনে-রাতে দান করে। সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০২৫
,
নির্দেশনা এমন
لاَ تَقَاطَعُوا وَلاَ تَدَابَرُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَحَاسَدُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا.
তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না, একে অন্যের পেছনে লেগে থেকো না, একে অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। বরং তোমরা আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও, পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৩৫
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আমরা বলবো যে দুনিয়াবি বিষয় নিয়ে অন্য স্বামীকে নিয়ে কথা বলা ঠিক হয়নি।
কারন নিজ স্বামীও তো অনেক মেহনতই করছেন।
তবে নিজ স্বামীর ভিতরে দ্বীনদারির কমতি থাকলে হেদায়াত,দাওয়াতের লক্ষ্যে  অন্য স্বামীর দ্বীনদারির বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাতে তিনি নেক কাজের উপর উদ্ভুদ্ধ হতে পারেন,তাহলে জায়েজ আছে।
,
তবে এমনিতেই স্বামীকে জ্বালানোর জন্য বলা যাবেনা।
স্বামী যদি দ্বীনদারি হয়,তাহলেও এমনটি বলা ঠিক হবেনা।
তবে আরো বেশি দ্বীনদারি অর্জনের জন্য বলা যাতে পারে।
তবে স্বামী কষ্ট পেলে এই ছুরতে বলা ঠিক হবেনা।
,
স্বামী যদি প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে দ্বীনি দিক লক্ষ্য করে ঈর্ষা করেন,তাহলে তাহা জায়েজ আছে।      


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...