আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
44 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (16 points)
আমি সম্প্রতি আমার মামার বাসায় বেড়াতে যাই। তখন আমার মামাতো বোন কথার প্রসঙ্গে বলে, তার দাদা বাড়ির (অর্থাৎ আমার নানা বাড়ির) কেউ যদি তাদের বাসায় বেড়াতে যায় তাহলে নাকি তারা খুব বিরক্ত হয় কারন তার বাবা অর্থাৎ আমার মামা নাকি হাত ভরে বাজার করে, এতে তাদের অনেক টাকা নষ্ট হয়। এরকম সে অনেক কথাবার্তা বলে, অনেক বদনাম করে আমার নানাবাড়ির সবাইকে নিয়ে যার ৫০% কথা ছিল সত্য আর ৫০% ছিল মিথ্যা। তো আমি যেদিন চলে আসবো তাদের বাসা থেকে সেদিন আমার মামাতো বোন আমাকে ওয়াদা করায় যাতে আমি এই কথা গুলো কাউকে না বলি। তখন আমি বলি যে "আমি আমার মাকে জিজ্ঞাসা করবো সত্যতা জানার জন্য"। তখনও আমার মামাতো বোন বারবার মানা করতে থাকে যাতে কাউকে না বলি।


বাসায় এসে আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করি কথাগুলার সত্যতা জানার জন্য এবং আমার মাকে সতর্ক করে দেই যাতে তাদের বাসায় আর না যায় কারন সে বলেছে, আমার মা নাকি বিরক্তিকর।
আর আমার মা কে বলি যে, খালাদের বলতে যাতে ওদের বাসায় আর না যায় যেহেতু ওদের অনেক টাকা নষ্ট হয়ে যায় আমরা গেলে। আমার মা এই কথা গুলা আমার খালাদের বলার পর বিষয় টা পুরো পরিবারে ছড়িয়ে পরে এবং এর জন্য  আমার মামা মামী ও আমার মামাতো বোন আমাদের পরিবারের সাথে সকল যোগাযোগ ছিন্ন করে ফেলে।
উল্লেখ্য : আমার মামা মামী সব সময়ই আমার বোনদের চরিত্র নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের সাথে যে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেলো, এটা নিয়ে আমি খুব অনুতপ্ত বোধ করছি। আমি বুঝতে পেরেছি আমার কাউকেই এই কথা গুলো বলা উচিত হয় নি। আমি চাই তাদের সাথে সম্পর্ক ঠিক করে ফেলতে কোনো এক সময় কিন্ত সেটা আদৌও সম্ভব হবে কিনা আমি জানি না। আমি অনেক অনুতপ্ত। আমি চাই আপনি আমাকে এমন কোনো দোয়া বলে দেন, যেটা পড়ার মাধ্যমে আমি আমার গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারি। এবং এই ভুলের জন্য যাতে আমাকে জাহান্নামে না যেতে হয়

1 Answer

0 votes
by (54,210 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/4223/ নং ফাতওয়াতে আমরা বলেছি যে,

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার মূল কথা হলো-‘পরস্পরের সঙ্গে মেহেরবানী করা ও অনুগ্রহ করা।’

আত্মীয়তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেহেরবাণী ও অনুগ্রহ সম্পর্কে আল্লামা কুরতুবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি যথার্থই বলেছেন, রাহেম বা আত্মীয়তার সর্ম্পক দুই ধরনের হয়-

>> সাধারণ সম্পর্কএ সম্পর্কটি ব্যাপক এবং বিস্তৃত। যাকে বলা হয় দ্বীনি সম্পর্ক। একজন মানুষের সঙ্গে ঈমানি বন্ধনের কারণে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। ঈমানদারদের সঙ্গে ভালবাসা রাখা। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা। সব সময় তাদের কল্যাণে কাজ করা।


তাদের ক্ষতি হয় এমন কাজকে তাদের থেকে প্রতিহত করা। তাদের জন্য ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। লেন-দেন ও যাবতীয় ব্যবহারিক কর্মকাণ্ডে বৈষম্য দূর করা এবং তাদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ তাদের হকগুলো আদায় করা।

যেমন- অসুস্থদের দেখতে যাওয়া; তাদের হকসমূহের ব্যাপারে সচেতন থাকা; তাদের গোসল দেয়া; জানাযার নামাজ আদায় করা; দাফন-কাফন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা।

,

>> বিশেষ সম্পর্কমাতা-পিতা উভয় দিক থেকে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়তা রক্ষা করা। তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।

যেমন- পিতামাতার খরচ বহন করা; তাদের খোঁজ-খবর নেয়া; প্রয়োজনের সময় বিশেষ করে বার্ধক্যে তাদের পাশে থাকা।

আর যখন অনেক আত্মীয়ের অধিকার একত্রিত হয়; তখন নিকটাত্মীয় হওয়ার ক্ষেত্রে অধিকার বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার পাবে। পর্যায়ক্রমে তারপর যেটি তুলনামূলক কাছের সেটি অগ্রাধিকার পাবে।

,

নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ধরন আল্লাম ইবনু আবি জামরাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

>> আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা অনেক সময় মালামাল ও ধন-সম্পদ দ্বারা হয়;

>> প্রয়োজনের সময় সাহায্য করার দ্বারা হয়;

>> ক্ষতিকে প্রতিহত করার মাধ্যমে হয়;

>> পরস্পরের সঙ্গে হাসি-খুশি ও ব্যবহারের মাধ্যমে হয়;

>> দোয়া করার দ্বারাও হয়;

>> সাধ্যানুযায়ী কারো কাছে কল্যাণকর কিছু পৌঁছানো দ্বারাও হয়;

>> সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী ক্ষতি থেকে বাঁচানোর দ্বারাও হয় এবং তাদের উপকার করার দ্বারাও হয়।

,

সুতরাং সময় সুযোগ তেমন না মিললে শুধু ফোনে কথা বলেও আত্মীয়তা সম্পর্ক ঠিক রাখা যাবে।

তবে সময় সুযোগ হলে মাঝে মাঝে অল্প সময়ের জন্য হলেও নিকটতম আত্মীয়দের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা দরকার।


কেউ যদি মনে মনে কোনো আত্মীয়ের প্রতি বিদ্বেষ না রাখে, কিন্তু সে হয়ত মাসে একবারও তাদেরকে ফোন করেনা, তাদের সাথে ৬ মাসে একবার বা বছরে একবার বা ২-৩ বছর পর একবার দেখা করে তবে সে  সম্পর্ক ছিন্নকারীর দলভুক্ত হবেনা।

,

এখানে কথা বন্ধ রাখার মাসয়ালা স্পষ্ট করছিঃ


শরীয়তের বিধান হলো কাহারো সাথে শরয়ী ওযর ব্যাতিত  তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা, সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই।

(কিতাবুল ফাতওয়া ৬/২১৭)


এটা যদি তাদের সামনা সামনি না হওয়ার কারনে হয়,যে সামনা সামনি,দেখা সাক্ষাৎ  যেহেতু আমাদের  হচ্ছেনা,তাই কথা বলার সুযোগও হচ্ছেনা।

তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই।

তবে দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার পরেও বিনা কারনে কাহারো সাথে কথা বার্তা বলা বন্ধ করে দেওয়া,সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই।


হাদীস শরীফে এসেছে 

عن أبي أیوب رضي اللّٰہ عنہ أن رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم قال: لا یحل لمسلم أن یہجر أخاہ فوق ثلاث لیال یلتقیان فیعرض ہذا و یعرض خذت وخیرہما الذي یبدأ بالسلام۔ (رواہ مالک في الموطا ۲؍۹۰۷، صحیح البخاري رقم: ۶۲۳۷، الترغیب و الترہیب رقم: ۴۱۸۹)

যার সারমর্ম হলো কোনো মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের সাথে ৩ দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা,সম্পর্ক ছিন্ন রাখা জায়েজ নেই।

,

বিদ্বেষ পোষন না করে এমনিতেই দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার কারনে কথা না হলে কোনো সমস্যা নেই।

তবে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে খোজ খবর নেওয়া জরুরি।

,

আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে,তা হলোঃ 

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ " . - صحيح

জুবাইর ইবনু মুত্বঈম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

(বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ১৯-(২৫৫৫)

.

عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ " . قَالَ ابْنُ أَبِي عُمَرَ قَالَ سُفْيَانُ يَعْنِي قَاطِعَ رَحِمٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

মুহাম্মাদ ইবনু জুবাইর (রাহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (জুবাইর) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ  কর্তনকারী (আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী) জান্নাতে যেতে পারবে না।

(সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪০৮), সহীহ আবূ দাউদ (১৪৮৮), বুখারী, মুসলিম।


এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে সম্পর্ক ছিন্ন করাই হলো মূল দোষ।

সম্পর্ক ছিন্ন না করে এমনিতেই যদি দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার কারনে কথা না হয়,এটা কোনো সমস্যা নয়।

আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/4223/


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!


★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনারা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবেন না।

সাধ্যমত তাদের সাথে মোবাইলে হলেও কথা-বার্তা বলার চেষ্টা করবেন। তাদেত সাথে ফোনেই যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবেন। মাঝেমধ্যে ফোন দিবেন। এভাবে আস্তে আস্তে দেখবেন যে, সম্পর্ক ঠিক হয়ে গিয়েছে। আর আপনারা ফোন দিলে তারা যদি কথা না বলে ফোন কেটে দেয় তাহলে গোনাহ তাদের হবে। মোটকথা আপনারা আপনাদের অবস্থান থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখার ও করার চেষ্টা করে যাবেন।

আর উপরোক্ত কারণে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নিবেন। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...