আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
3,659 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (13 points)
সাধারণভাবে জেনে এসেছি কোরআন পড়িয়ে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দাবি করা মারাত্মক রকমের গুনাহ। বরং কেউ খুশি হয়ে যা দিবে সেটা নিতে হয়। আবার এটাও শুনেছি ক্ষেত্রবিশেষ দাবি করা জায়েজ আছে। এটা সম্পর্কে একটু পরিষ্কার তথ্য জানতে চাচ্ছি।
by (13 points)
জাযাকাল্লাহু খইর

1 Answer

0 votes
by (696,600 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!

কুরআন শিক্ষা দিয়ে বেতন নেয়া জায়েয কি না?
এ ব্যাপারে উম্মতের উলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
(১) শাফেয়ী, মালেকি, এবং হাম্বলী মাযহাবের উলামায়ে কেরামদের মতে কুরআন শিক্ষা দিয়ে বেতন গ্রহণ তথা উজরত আলাত-তা'আত জায়েয।

যেমন ইমাম নববী রাহ লিখেন,
هذا تصريح بجواز أخذ الأجرة على الرقية ، بالفاتحة ، والذِّكر , وأنها حلال لا كراهة فيها , وكذا الأجرة على تعليم القرآن , وهذا مذهب الشافعي ، ومالك ، وأحمد ، وإسحاق ، وأبي ثور ، وآخرين من السلف , ومَن بعدهم .
" شرح النووي " ( 14 / 188 )

(২) হানাফি মাযহাবে বিষয়টা কিছু ব্যাখ্যাসাপেক্ষ্য অর্থাৎ এ ব্যাপারে হানাফি উলামাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কিছুসংখ্যক উলামায়ে কেরাম বিশেষকরে মুতাক্বাদ্দিমিন(৩০০ হিজরী পৃর্ব) হানাফি ফকিহগণ নাজায়েয বলেছেন।তবে মুতা'আখখিরিন(৩০০ হিজরী পরবর্তী) হানাফি ফকিহগণ আবার জায়েয বলেছেন।

এ দুইটি মতের মধ্যে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে সেটাই যা অপর তিন মাযহাবের মাযহাব। তথা কুরআন শিক্ষা দিয়ে বেতন গ্রহণ রুখসতযোগ্য বা অনুমোদনযোগ্য। দলিল হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর ব্যাপকতা
 " إن أحق ما أخذتم عليه أجراً كتاب الله ." 
“তোমরা যেই যেই কাজের জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করে থাকো, এর মধ্যে আল্লাহর কিতাবই সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত” 
[সহিহ বুখারী-২২৭৬ ও সহিহ মুসলিম-]

এছাড়া যেহেতু এর প্রয়োজন রয়েছে।এবং এ শিক্ষা দিতে গিয়ে এক্ষেত্রে শিক্ষকের সময়ও আটকে যাচ্ছে, যে কারণে শিক্ষক নিজ ভরণপোষণের ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন না।তাই বিনিময়ে কুরআন শিক্ষা প্রদান করা জায়েয হবে।
যেহেতু পূর্ববর্তী যুগে সকল আলেমদের জন্য সরকার কর্তৃক ভাতা নির্ধারিত ছিলো,তাই তখনকার যুগের উলামায়ে কেরাম শিক্ষার বিনিময় গ্রহণকে নাজায়েয বলেছেন।কেননা সরকারের পক্ষ্য থেকে যে পরিমাণ ভাতা আসত তা দ্বারা অনায়াসে তাদের জীবন চলে যেতো।

কিছু কিছু হাদীসে কুরআন শিক্ষার বিনিময় গ্রহণকে নাজায়েয বলা হয়েছে,যেমন ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে,

وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ رَجُلٌ أَهْدَى إِلَيَّ قَوْسًا مِمَّنْ كُنْتُ أُعَلِّمُهُ الْكِتَابَ وَالْقُرْآنَ وَلَيْسَتْ بِمَالٍ فَأَرْمِي عَلَيْهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ قَالَ: «إِنْ كُنْتَ تُحِبُّ أَنْ تُطَوَّقَ طَوْقًا مِنْ نَارٍ فَاقْبَلْهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি এক লোককে লেখা এবং কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলাম, সে আমার জন্য একটি ধনুক উপহার দিয়েছে, যা মূল্যবান কোনো মাল নয়। সুতরাং আমি কি জিহাদে ঐ ধনুক ব্যবহার করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি তুমি জাহান্নামের শিকল গলায় পরতে ভালোবাসা, তবে তা গ্রহণ করতে পারো।(আবূ দাঊদ ৩৪১৬, ইবনু মাজাহ ২১৫৭, আহমাদ ২২৬৮৯,মিশকাত ২৯৯০)

এই জাতীয় সকল প্রকার হাদীসের ব্যখ্যায় ইমাম কুরতুবী রাহ বলেন
وأما الأحاديث فليس شيء منها يقوم على ساق ، ولا يصح منها شيء عند أهل العلم بالنقل - وليس في الباب حديث يجب العمل به من جهة النقل" انتهى باختصار .(" تفسير القرطبي " ( 1 / 335 ، 336 )
কুরআন শিক্ষার বিনিময় গ্রহণ নাজায়েয হওয়া নিয়ে যেই সব হাদিস পাওয়া যায়, সেই সব হাদীসের কোনোটির সনদও সন্তুষজনক নয়, এমনকি বিশুদ্ধও নয়। (তাফসীরে কুরতুবি- ১/৩৩৫-৩৩৬)

তাছাড়া তিনি আরেকটা জবাব দিয়েছেন, সেটা হল, হাদীসে তখনই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যখন কুরআন জাননেওয়ালা লোকদের স্বল্পতার দরুণ কোনো একজনের উপর কুরআন শিক্ষা প্রদান করা ফরয হয়ে যায়, তখন তার জন্য বিনিময় গ্রহণ করা নাজায়েয।এবং সেটাই হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।

আল্লাহ-ই উত্তম তাওফিকদাতা। আমাদের নবী মুহাম্মদ এর প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (6/ 55 ):
"(و) لا لأجل الطاعات مثل (الأذان والحج والإمامة وتعليم القرآن والفقه)، ويفتى اليوم بصحتها لتعليم القرآن والفقه والإمامة والأذان.
 (قوله: ولا لأجل الطاعات) الأصل أن كل طاعة يختص بها المسلم لا يجوز الاستئجار عليها عندنا؛ لقوله عليه الصلاة والسلام : «اقرءوا القرآن ولا تأكلوا به»، وفي آخر ما عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم  إلى عمرو بن العاص: «وإن اتخذت مؤذناً فلا تأخذ على الأذان أجراً»؛ ولأن القربة متى حصلت وقعت على العامل، ولهذا تتعين أهليته، فلا يجوز له أخذ الأجرة من غيره كما في الصوم والصلاة، هداية. مطلب تحرير مهم في عدم جواز الاستئجار على التلاوة والتهليل ونحوه مما لا ضرورة إليه.
(قوله: ويفتى اليوم بصحتها لتعليم القرآن إلخ) قال في الهداية: وبعض مشايخنا - رحمهم الله تعالى - استحسنوا الاستئجار على تعليم القرآن اليوم؛ لظهور التواني في الأمور الدينية، ففي الامتناع تضييع حفظ القرآن، وعليه الفتوى اهـ، وقد اقتصر على استثناء تعليم القرآن أيضاً في متن الكنز ومتن مواهب الرحمن وكثير من الكتب، وزاد في مختصر الوقاية ومتن الإصلاح تعليم الفقه، وزاد في متن المجمع الإمامة، ومثله في متن الملتقى ودرر البحار".
البحر الرائق شرح كنز الدقائق ومنحة الخالق وتكملة الطوري (8/ 22):
قال - رحمه الله -: "(والفتوى اليوم على جواز الاستئجار لتعليم القرآن) ، وهذا مذهب المتأخرين من مشايخ بلخ استحسنوا ذلك، وقالوا: بنى أصحابنا المتقدمون الجواب على ما شاهدوا من قلة الحفاظ ورغبة الناس فيهم؛ ولأن الحفاظ والمعلمين كان لهم عطايا في بيت المال وافتقادات من المتعلمين في مجازات التعليم من غير شرط، وهذا الزمان قل ذلك واشتغل الحفاظ بمعائشهم فلو لم يفتح لهم باب التعليم بالأجر لذهب القرآن فأفتوا بالجواز، والأحكام تختلف باختلاف الزمان".فقط واللہ اعلم


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...