জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى لَا يَصبِغون فخالفوهم»
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহূদী এবং নাসারাগণ দাড়ি চুলে খিযাব লাগায় না। সুতরাং তোমরা তাদের বিপরীত করো (অর্থাৎ- খিযাব লাগাও)।
(বুখারী ৩৪৬২, ৫৮৯৯; মুসলিম (২১০৩)-৮০, নাসায়ী ৫২৪১, আবূ দাঊদ ৪২০৩, ইবনু মাজাহ ৩৬২১, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৩৪৫, মুসনাদে আহমাদ ৭২৭৪, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৫৯৫৭, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৮৩৮৬, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১২১।)
(لا يصبغون) আরবী শব্দ صِبْغٌ صَبْغٌ থেকে নির্গত। যার অর্থ রঙ করা বা খিযাব লাগানো। তারা রঙ করে না। অর্থাৎ তারা তাদের দাড়িতে খিযাব ব্যবহার করে না। অতএব তোমরা তাদের বিরোধিতা করো অর্থাৎ মেহেদীর খিযাব ব্যবহার করো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
দাড়ি সাদা হয়ে গেলে খিযাব তথা রঙ দিয়ে তা পরিবর্তন করতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহিত করেছেন। ফাতহুল বারীতে ইমাম আহমাদ-এর বরাতে হাসান সনদে আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন- ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আনসারী কিছু বৃদ্ধ লোকের সামনে বের হন, যাদের দাড়ি সাদা হয়ে গিয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলেন, হে আনসারের দল! তোমরা দাড়িকে লাল করো, হলুদ করো এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করো’’। ইমাম ত্ববারানী তাঁর ‘আওসাত্ব’ কিতাবে আনাস (রাঃ) থেকে এমন হাদীস বর্ণনা করেন। আর ‘কাবীরে’ ‘উতবাহ্ ইবনু ‘আবদুল মালিক থেকে বর্ণনা করেন- ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনারবদের বিরোধিতা করতে চুল পরিবর্তন করার নির্দেশ দেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৯৯)
وَعَن جَابر قَالَ: أُتِيَ بِأَبِي قُحَافَةَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ وَرَأْسُهُ وَلِحْيَتُهُ كَالثُّغَامَةِ بَيَاضًا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «غَيِّرُوا هَذَا بِشَيْءٍ وَاجْتَنِبُوا السَّواد» . رَوَاهُ مُسلم
জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন (আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর পিতা) আবূ ক্বুহাফাকে (মুসলিম বানানোর জন্য) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে উপস্থিত করা হলো। সে সময় তাঁর মাথার চুল ও দাড়ি সুগামার (কাশফুলের) মতো একেবারে সাদা ছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন কিছুর দ্বারা তার চুল দাড়ির শুভ্রতাকে পরিবর্তন করে দাও। তবে কালো রং ব্যবহার করো না।
(মুসলিম (২১০২)-৭৯, নাসায়ী ৫০৭৬, ইবনু মাজাহ ৩৬২৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৪৯৬, আবূ দাঊদ ৪২০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৪৭১, শু‘আবুল ঈমান ৬৪১৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫২১৯।)
বর্ণিত হাদীসটি কালো খিযাব ব্যবহার হারাম হওয়ার স্বপক্ষের দলীল। ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করতে অনুচ্ছেদটি এভাবে রচনা করেন, ‘লাল বা হলুদ দিয়ে চুল খিযাব করা মুস্তাহাব এবং কালো দিয়ে খিযাব করা হারাম অনুচ্ছেদ’। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমাদের মাযহাব হলো, মহিলা ও পুরুষের জন্য চুলের শুভ্রতায় হলুদ ও লাল খিযাব ব্যবহার মুস্তাহাব। আর আমাদের মাযহাবের বিশুদ্ধ মতে কালো খিযাব ব্যবহার হারাম। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৯৯)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরাম একথার উপর ইজমা বর্ণনা করেন যে,
দাড়িতে খেযায দেওয়া এবং না দেওয়া উভয়টিই সমান। খেযাব দেয়া উত্তম না, না দেয়া উত্তম? সে সম্পর্কে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উলামাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
ইমাম নববী রাহ, মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করেন যে,
وَقَالَ الْقَاضِي: اِخْتَلَفَ السَّلَف مِنْ الصَّحَابَة وَالتَّابِعِينَ فِي الْخِضَاب وَفِي جِنْسه، فَقَالَ بَعْضهمْ: تَرْك الْخِضَاب أَفْضَل وَرَوَوْا حَدِيثًا عَنْ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّهْي عَنْ تَغْيِير الشَّيْب، لِأَنَّهُ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يُغَيِّر شَيْبه، رُوِيَ هَذَا عَنْ عُمَر وَعَلِيّ وَأُبَيّ وَآخَرِينَ ـ رَضِيَ اللَّه عَنْهُمْ ـ وَقَالَ آخَرُونَ: الْخِضَاب أَفْضَل، وَخَضَّبَ جَمَاعَة مِنْ الصَّحَابَة وَالتَّابِعِينَ.... قالَ الطَّبَرَانِيُّ: الصَّوَاب أَنَّ الْآثَار الْمَرْوِيَّة عَنْ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِتَغْيِيرِ الشَّيْب، وَبِالنَّهْيِ عَنْهُ، كُلّهَا صَحِيحَة، وَلَيْسَ فِيهَا تَنَاقُض، بَلْ الْأَمْر بِالتَّغْيِيرِ لِمَنْ شَيْبه كَشَيْبِ أَبِي قُحَافَة وَالنَّهْي لِمَنْ لَهُ شَمَط فَقَطْ، قَالَ وَاخْتِلَاف السَّلَف فِي فِعْل الْأَمْرَيْنِ بِحَسَبِ اِخْتِلَاف أَحْوَالهمْ فِي ذَلِكَ مَعَ أَنَّ الْأَمْر وَالنَّهْي فِي ذَلِكَ لَيْسَ لِلْوُجُوبِ بِالْإِجْمَاعِ... اهـ.
মর্মার্থ-
খেযাব দেওয়া উত্তম? না না দেয়া উত্তম? সে সম্পর্কে উলামাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।তবে খেযাব প্রদানকে যারা মুস্তাহাব বলেছেন, তাদের উক্তব্যই গ্রহণযোগ্য বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
দাড়ি সাদা রাখা হারাম নয়,জায়েজ।
সুতরাং কেউ যদি সাদা দাড়িতে মেহেদী দেওয়া বা অন্য কালার করার চেয়ে দাড়ি সাদা রাখাকে প্রাধান্য দেয় আর সুন্দর মনে করে তাহলে গুনাহ হবেনা বা ঈমানের কোন সমস্যা হবেনা।