জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
কুরআনে কারীম ও হাদীস শরীফের বিভিন্ন জায়গায় মাদকদ্রব্য হারামের কথা বর্ণিত হয়েছে।
সুরা মায়েদার ৯০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۹۰﴾
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক সম্প্রদায় হবে যারা যিনা-ব্যভিচার, রেশমী কাপড় ব্যবহার, মদ্যপান ও গান বাদ্যকে হালাল করবে। [বুখারীঃ ৫৫৯০]
অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করবে ও তাওবাহ করবে না, সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। [বুখারীঃ ৫৫৭৫]
,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ সম্পর্কে কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেছেন। এরশাদ হয়েছেঃ ‘সর্বপ্রকার অপকর্ম এবং অশ্লীলতার জন্মদাতা হচ্ছে মদ [ইবন মাজাহ ৩৩৭১]
কারণ, এটি পান করে মানুষ নিকৃষ্টতর পাপে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে যে, মদ এবং ঈমান একত্রিত হতে পারে না। [নাসায়ীঃ ৮/৩১৭]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণীর ব্যক্তির উপর লা'নত করেছেন। (১) যে লোক নির্যাস বের করে, (২) প্রস্তুতকারক, (৩) পানকারী, (৪) যে পান করায়, (৫) আমদানীকারক, (৬) যার জন্য আমদানী করা হয়, (৭) বিক্রেতা, (৮) ক্রেতা, (৯) সরবরাহকারী এবং (১০) এর লভ্যাংশ ভোগকারী। [ইবন মাজাহঃ ৩৩৮০]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন এক মজলিশে মদ্যপানে সাকীর কাজ সম্পাদন করছিলেন। আবু তালহা, আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ, উবাই ইবন কা'ব, সোহাইল রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমূখ নেতৃস্থানীয় সাহাবীগণ সে মজলিশে উপস্থিত ছিলেন। প্রচারকের ঘোষণা কানে পৌছার সঙ্গে সঙ্গে সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন - এবার সমস্ত মদ ফেলে দাও। এর পেয়ালা, মটকা, হাড়ি ভেঙ্গে ফেল। [মুসনাদে আহমাদ ৩/১৮১; বুখারী ৪৬২০; মুসলিম: ১৯৮০]
এছাড়া বহু হাদীসেও মদের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
হাদীস শরীফে একবার মদপানকারীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বেত্রাঘাত ও জুতাপেটা কিছুই বাদ না যাওয়ার একটি বর্ণনাও রয়েছে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট বলেছেন : ما أسكر كثيره فقليله حرام যে বস্তু বেশি পরিমাণ খেলে নেশা হয় তার সামান্য পরিমাণ খাওয়াও হারাম। (জামে তিরমিযী ১৮৬৫;সুনানে ইবনে মাজাহ৩৩৯৩;সুনানে আবু দাউদ,৩৬৮১)
এমনকি মদের খালি পাত্র–বোতলগুলো ঘরে রাখার ব্যাপারেও স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণই হচ্ছে এসব বোতল চোখে পড়ার কারণে নিষিদ্ধ মদের প্রতি যেন আগ্রহ জেগে না ওঠে।
হাদীসে মদকে সকল অশ্লীলতার মূল আখ্যা দেয়া হয়েছে।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবী হযরত মুআয রা.-কে যে বিশেষ দশটি অসিয়ত করেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল
ولا تشربن خمرا فإنه رأس كل فاحشة
অর্থাৎ কখনো কোনো প্রকারের মদ পান করবে না। কারণ এটি সকল অশ্লীলতার মূল।
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত যারা এমন বিষাক্ত মদ খেয়ে মারা যাচ্ছে,তাদেরকে আত্মহত্যাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে।
আর আত্মহত্যাকারী নিজেকে যে উপায়ে হত্যা করবে, তাকে সেভাবে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে জাহান্নামে লাফ দিতে থাকবে স্থায়ীভাবে। আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে স্থায়ীভাবে থাকবে। আর যে ব্যক্তি নিজেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করবে, জাহান্নামে সেই ছুরি তার হাতে থাকবে। তা দিয়ে সে তার পেটে আঘাত করবে, তাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৭৮)
,
তবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা হলো তারা যদি মৃত্যুর সময়ে ঈমান হারা না হয়,তাহলে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার পর ঈমানের বদৌলতে কোনো না কোনো দিন তারাও জান্নাতে যাবে।
(০২)
আত্মহত্যা মহাপাপ এবং এর শাস্তিও খুব ভয়াবহ- একথা সবাই জানে। কিন্তু তার জানাযা পড়া যাবে না বা তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করা যাবে না- এ ধারণা ঠিক নয়। তার জানাযাও পড়া হবে তার জন্য মাগফিরাতের দুআও করা যাবে।
তবে এমন ব্যক্তির জানাযায় শীর্ষস্থানীয় দ্বীনী ব্যক্তিত্ব না গিয়ে সাধারণ লোক দিয়ে জানাযার নামায পড়িয়ে নেওয়াই উত্তম।
(শরহু মুসলিম, নববী ৭/৪৭ (৯৭৮ নং হাদীসের অধীনে); সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/১৯)
,
প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবরাহিম নখয়ি বলেন, ‘যারা আত্মহত্যা করবে, তাদের জন্য জানাজা পড়া যাবে। তেমনি জেনার কারণে বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে যেসব নারী মারা যাবে, তাদেরও জানাজা পড়া যাবে। একইভাবে যে ব্যক্তি মদ পানের কারণে মারা যাবে, তারও জানাজা পড়া যাবে।’ (ইব্ন আবি শায়বা, হাদিস : ১১৯৮৪)
অন্য হাদিসে এসেছে : জাবির ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.)-এর দরবারে এক লোককে হাজির করা হয়, তীরের ফলা দ্বারা যে নিজেকে হত্যা করেছে। তখন তিনি তার ওপর নামাজ পড়েননি।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯৭৮)
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তাদের জানাজা হবে,এবং তাদের জানাযায় অংশ গ্রহন করা যাবে।
,
তাই আমির, আলিম উলামা ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা ওই ব্যক্তির জানাজায় শরিক হবেন না।