আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
73 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (18 points)
আসসালামু আলাইকুম
আমি বদনজরের কিছু বিষয় নিয়ে একটু কনফিউজড। আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন উস্তাযা।


১.অনেকে ফেইসবুকে হাজবেন্ডের জব হলে,বাচ্চা,ইত্যাদি হলে ফেইসবুকে শেয়ার করে।তখন বেশিরভাগ মানুষই আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি বলে দুয়া করে দেন।অনেকেই বলে এইসব শেয়ার না করাই ভালো। কারন বদনজর লাগতে পারে।এখন সবাই তো "ভালো ভালো কমেন্ট করে" দিল তাহলে বদনজর কিভাবে লাগতে পারে??সবাই তো আলহামদুলিল্লাহ, বারাকাল্লাহ বলে দুয়া করেছে।তাইলে ফেইসবুকে এইসব শেয়ার করতে অনেকে মানা কেন করেন??


২.বদনজর নাকি ভালো নজরেও লেগে যেতে পারে।এখন যারা নজর লাগায় সেটা "ভালো নজরে" হোক বা "খারাপ নজরে" তাদের কি গুনাহ হবে??বদনজর লাগালে গুনাহগার হবেনা??

এই যেমন আমি না চাইলেও যদি অজান্তে নজর লেগে যায় কারো উপর।তারজন্য কি আমার গুনাহ হবে??এরজন্য আমার করনীয় কি??আর বদনজর থেকে বাচতে কি করতে পারি সেটাও জানাবেন উস্তাযা।মাসনুন আমল করার পরেও নাকি বদনজর লাগতে পারে অনেকেই বলে থাকেন।


৩.আমার সংসার জীবনে বদনজরের অনেক ইফেক্ট পড়ে অনেক সময় বুঝতে পারি কিছু লক্ষন মিলিয়ে।সেজন্য ব্যাক্তিগত বিষয় সহ, আমার হাজবেন্ডের জব,স্যালারি ইত্যাদি নিয়ে কেউ জানুক সেটা চাইনা।সেজন্য উনাকেও নিষেধ করি উনার জবের বিষয় নিয়ে যেন কাউকে না বলে।এটা কি আমার অতি বাড়াবাড়ি??কারন উনার কাছেদুরের বেশিরভাগ মানুষই হিংসা করে যা অনেক সময় বুঝা যায়।এমন মানুষ থেকে কিভাবে দুরে থাকা কি উওম নয় যারা বদনজর,হাসাদের কারন হতে পারে?? কিভাবে হাজবেন্ডকে বুঝাতে পারি যেন উনি না ভুল বুঝে আমাকে।

1 Answer

0 votes
by (567,180 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

وَإِنْ يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ

অর্থঃ কাফিররা যখন উপদেশ বাণী (কুরআন) শ্রবণ করে তখন তারা যেন তাদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়িয়ে ফেলতে চায় এবং বলেঃ সে তো এক পাগল। (সূরা কলামঃ ৫১)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেনঃ

عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العين حق

বদ নজর সত্য। (বুখারীঃ ১০/২১৩) অর্থাৎ এর বাস্তবতা রয়েছে, এর কুপ্রভাব লেগে থাকে।

আয়েশা সিদ্দীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ

استعيذوا بالله من العين فإن العين حق

তোমরা বদ নজরের ক্রিয়া (খারাপ প্রভাব) থেকে রক্ষার জন্যে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর। কেননা তা সত্য। (ইবনে মাযাহঃ ৩৫০৮)

ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ

العين حق ولو كان شيء سابق القدر لسبقته العين ، وإذا استغسلتم فاغسلوا

বদ নজর (এর খারাপ প্রভাব) সত্য এমনকি যদি কোন বস্তু ত্বাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। সুতরাং তোমাদেরকে যখন (এর প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্যে) গোসল করতে বলা হয় তখন তোমরা গোসল কর । (মুসলিমঃ ১৪/১৭১)

আসমা বিনতে উসাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আবেদন করনে যে, জাফরের সন্তানদের নজর লাগে আমি কি তাদের জন্যে ঝাড়ফুঁক করব? উত্তর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ

نعم فلو كان شئ سابق القضاء لسبقته العين

অর্থঃ হ্যাঁ! কোন বস্তু যদি তাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। (তিরমিযীঃ ২০৫৯, আহমদঃ ৬/৪৩৮) ৫।

حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، قَالَ مَرَّ عَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ بِسَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ وَهُوَ يَغْتَسِلُ فَقَالَ لَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ وَلاَ جِلْدَ مُخَبَّأَةٍ . فَمَا لَبِثَ أَنْ لُبِطَ بِهِ فَأُتِيَ بِهِ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقِيلَ لَهُ أَدْرِكْ سَهْلاً صَرِيعًا . قَالَ " مَنْ تَتَّهِمُونَ بِهِ " . قَالُوا عَامِرَ بْنَ رَبِيعَةَ . قَالَ " عَلاَمَ يَقْتُلُ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ إِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ مِنْ أَخِيهِ مَا يُعْجِبُهُ فَلْيَدْعُ لَهُ بِالْبَرَكَةِ " . ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ فَأَمَرَ عَامِرًا أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيَغْسِلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ وَرُكْبَتَيْهِ وَدَاخِلَةَ إِزَارِهِ وَأَمَرَهُ أَنْ يَصُبَّ عَلَيْهِ . قَالَ سُفْيَانُ قَالَ مَعْمَرٌ عَنِ الزُّهْرِيِّ وَأَمَرَهُ أَنْ يَكْفَأَ الإِنَاءَ مِنْ خَلْفِهِ .

আবূ উমামা ইবনে হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমের ইবনে রবীআ (রাঃ) সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ)-র নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তখন গোসল করছিলেন। আমের (রাঃ) বলেন, আমি এমন খুবসুরত সুপুরুষ দেখিনি, এমনকি পর্দানশীন নারীকেও এরূপ সুন্দর দেখিনি, যেমন আজ দেখলাম। অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাহল (রাঃ) বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট নিয়ে যাওয়া হলো এবং তাঁকে বলা হলো, ধরাশায়ী সাহলকে রক্ষা করুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কাকে অভিযুক্ত করছো? তারা বললো, আমের ইবনে রবীআকে। তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ বদনজর লাগিয়ে তার ভাইকে কেন হত্যা করতে চায়? তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের মনোমুগ্ধকর কিছু দেখলে যেন তার জন্য বরকতের দোয়া করে। অতঃপর তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন, অতঃপর আমেরকে উযু করতে নির্দেশ দিলেন। তিনি তার মুখমন্ডল, দু’ হাত কনুই পর্যন্ত, দু’ পা গোছা পর্যন্ত এবং লজ্জাস্থান ধৌত করলেন। তিনি আমেরকে পাত্রের (অবশিষ্ট) পানি সকলের উপর ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি সাহলের পেছন দিক থেকে পানি ঢেলে দেয়ার জন্য আমেরকে নির্দেশ দেন।
(ইবনে মাজাহ ৩৫০৯.আহমাদ ১৫৫৫০, মুয়াত্তা মালেক ১৭৪৭, মিশকাত ৪৫৬২। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ، عَنِ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ مُضَارِبِ بْنِ حَزْنٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " الْعَيْنُ حَقٌّ " .

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বদনজর সত্য।
সহীহুল বুখারী ৫৭৪০, ৫৯৪৪, মুসলিম ২১৮৭, আবূ দাউদ ৩৮৭৯, আহমাদ ৭৮২৩, ২৭৪৬৫, ৯১৫৮, ৯৯৪৮।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو هِشَامٍ الْمَخْزُومِيُّ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ أَبِي وَاقِدٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ فَإِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ " .
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। কেননা বদনজর সত্য বা বাস্তব ব্যাপার।
(ইবনে মাজাহ ৩৫০৮)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
এক্ষেত্রে আলহামদুলিল্লাহ, বারাকাল্লাহ,মাশাআল্লাহ বললে বদনজর লাগবেনা। তবে কেহ যদি ছবিটি দেখে শুধুমাত্র "সুন্দর হয়েছে" এধরণের কোনো কথা বলে, সেক্ষেত্রে বদনজর লাগার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাই ফেইসবুকে এইসব শেয়ার করতে অনেকে নিষেধ করেন।

আবার ফেইসবুকে ছবি আপলোড নিয়ে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ থাকায় অনেক উলামায়ে কেরামগন এভাবে ছবি আপলোডকে নাজায়েজ বলে থাকেন।

(০২)
কেউ খারাপ নজরে দেখলে তার গুনাহ হবে।
তবে ভালো নজরে দেখলে তার গুনাহ হবেনা।

বদনজরে আক্রান্ত হলে করনীয় সম্পর্কে জানুনঃ- https://ifatwa.info/96526/

বদনজর থেকে বাঁচতে সুরা ফালাক ও সুরা নাস বেশি বেশি করে পাঠ করার পরামর্শ থাকবে। 

(০৩)
সাধারণ ক্ষেত্রে এটা বাড়াবাড়ি নয়।
তবে যদি এসব বিষয় শেয়ার করা কোনো ক্ষেত্রে যদি অধিক প্রয়োজনীয় হয়,সেক্ষেত্রে শেয়ার না করা বাড়াবাড়ি হবে।

যারা বদনজর,হাসাদের কারন হতে পারে,তাদের থেকে দূরে থাকা উত্তম।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...