আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
84 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। আমার বয়স ২৩বছর। সরকারি নার্সিং কলেজ এ পড়ি।কিন্তু ২বর্ষে ওঠার পর থেকে বুঝতে পেরেছি এই হারাম পরিবেশে পড়াশোনা আমার জন্য সম্ভব না।পর্দার মতো ফরজ বিধান লঙ্ঘন হচ্ছে মেনে নিতেই কষ্ট হয় আমার। ইসলামের সব কিছুই মানার চেষ্টা করি আমি আলহামদুলিল্লাহ। এই এখানে এসে আমি ব্যর্থ জীবন কাটাছি।আমার বড় বোন নার্স সরকারি চাকরি করেন। উনি আর আমার পরিবার চান আমিও উনার মতোই হয়।এতো বড় হয়ে গেছি বাসায় আমার জন্য বিয়ে আলাপ করে না কখনো। উনাদের চিন্তা একটাই মেয়ে পড়া শেষ করে চাকরি করবে। কিন্তু আমার এসব ভালো লাগে না চাকরি আর। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমি ইসলাম এর নিষেধগুলো আরো ভালো ভাবে মানতে শুরু করি।জানি না হেদায়েত কতটুকু বা পেয়েছি।কোনো রকম হারাম ভিডিও দেখি না আর কোনো গান শুনি না আর।সব হারাম বন্ধ করে দিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। ইসলামের সব বিধিনিষেধ মানার চেষ্টা করি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমার সমস্যা এখান হলো আমার কেমন জানি একা একা লাগে।মনে বিয়ে আমার জন্য জরুরি। বেহায়ার মতো সবাইকে বলেছি বিয়ে কথা।কেউ বুঝতে চাইনি।আমার পরিবার চাই পড়া শেষ করে চাকরি করবো তারপর বিয়ে কিন্তু আমার এসব ভালো লাগে না। আমার বাবার লাখ লাখ টাকার ঋণ আল্লাহর দয়ায় জমিও আছে সেইপরিমাণ যা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব আল্লাহ যদি চান। কিন্তু উনারা নাজার জমি বিক্রি করতে।

দিনের প্রায় সময় এখন কান্না পায়।১.,কি করবো আমি? মেয়ে মানুষ আমি বাইরে চাকরি কিভাবে করবো। আর এতো টাকার ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবো আমি।আমার কি মেয়ে হিসেবে দায়িত্ব উনাদের কথা মতো চাকরি করা এই পরিবেশে?
২. বিয়ে নিয়ে উনারা কোনো কথাই বলেন না। আমি রয়েছি শুধু এখন ঘরে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে তবুও বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন না উনারা।আমার কি উচিত বার বার উনাদের বিয়ের কথা মনে করিয়ে দেওয়া? নাকি শুধু দোয়া করবো?

1 Answer

0 votes
by (559,530 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/39894/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ  
পর্দা রক্ষা করা ফরজ। 

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

★অসুস্থ্য মানুষদের সেবা করাও সওয়াবের কাজ। যেহেতু মহিলাদের  জন্য মহিলা ডাক্তারের প্রয়োজন। 
তাই মহিলাদের জন্য পর্দার বিধান পুরোপুরি ভাবে পালনের শর্তে ডাক্তারী শিক্ষা অর্জন করা,ডাক্তারী করা জায়েজ আছে।  
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৪/২৫৬)

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
ইসলামি স্কলারগন  মুসলিম মহিলাদের মেডিকেল পড়াকে ফরযে কিফায়া বলেছেন। অর্থাৎ মুসলিমদের মধ্যে অবশ্যই কিছু মহিলার এ পেশায় আসা আবশ্যক যেন মহিলা সংক্রান্ত অসুখ-বিসুখ, সিজার, সন্তান ডেলিভারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদেরকে পর পুরুষ বা অমুসলিমদের শরণাপন্ন না হতে হয়।

সুতরাং সমাজের অর্থশালী ও উদ্যোগী ব্যক্তিদের জন্য মহিলাদের জন্য স্বতন্ত্র মেডিকেল কলেজ/ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা ফরজ- যেন আমাদের দ্বীনদার বোনেরা পর পুরুষ থেকে আলাদা থেকে নির্বিঘ্নে এ বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে পারে।

তবে স্বতন্ত্র ব্যবস্থা না থাকলেও দীনী কিছু বোনেরা পূর্ণ পর্দা ও শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে প্রচলিত সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল বা নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা করবেন এবং ভবিষ্যতে মহিলাদের জন্য আলাদা মেডিক্যাল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন।

আরো জানুনঃ 

যতদিন পর্যন্ত দেশে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।
১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।
২/চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের  সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।(ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১)

বিস্তারিত জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
উপরোক্ত শর্তগুলি পূর্ণ রুপে মেনে পুরো শরীর,চেহারা,হাতা পা ঢেকে পর্দা করে নার্সিং কলেজ এ লেখাপড়া করা জায়েজ হবে।   

উম্মাহ এর খিদমাহ এর স্বার্থে,পর্দানশীন নারী রোগী দের পর্দা রক্ষার্থে সার্জারিতে দ্বীনদার মহিলা ডাক্তারদের ক্যারিয়ার করা জায়েজই শুধু নয়,বরং এটি
বর্তমান সময়ে অতিব প্রয়োজন।
তবে সর্বক্ষেত্রে পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলবেন,গায়রে মাহরাম পুরুষদের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে থেকে বিরত থাকবেন।   

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
এক্ষেত্রে তাদের ড্রেস কোড মানা বাধ্যতামূলক হলে পূর্ণ পর্দা করা সম্ভব না হলে করনীয় সম্পর্কে জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রয়োজন, অপরাগতা কিংবা ঠেকায় পড়ার পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ অবস্থায় নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শরীয়ত তাদের ওপর এমন দায়িত্ব আরোপ করে নি, যার কারণে তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا
‘নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)

আরো জানুনঃ- 

(০১)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
এই পরিবেশে চাকরি করা আপনার উপর দায়িত্ব নয়। এই দায়িত্ব শরীয়ত আপনাকে দেয়নি। শরীয়ত আপনার উপর এমন কোনো দায়িত্ব আরোপ করে নি, যার কারণে আপনার ঘরের বাইরে যেতে হয়। 

উক্ত ঋণ পরিশোধ এর দায়িত্ব আপনার নয়,এ-র দায়িত্ব আপনার বাবার।

এক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত শর্তাবলি মানা সম্ভব হলে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন।

আর উপরে উল্লেখিত শর্তাবলি কোনোভাবেই মানা সম্ভবপর না হলে সেক্ষেত্রে করনীয় সম্পর্কে জানুনঃ- 

(০২)
আপনার বিবাহের প্রয়োজনীয়তার বিষয় আপনি বলতে পারবেন,তারা বিষয়টি গুরুত্ব না দিলে বারবার বলতে এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।
পরামর্শ থাকবে পরিবারের মুরব্বিদের মাধ্যমে আপনার বাবা মাকে আপনার বিবাহের প্রয়োজনীয়তার বিষয় বুঝানো।

পাশাপাশি মহান আল্লাহর দরবারে নিয়মিত দোয়া অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...