কোন মহিলা নিজ স্বামীর অবাধ্য হওয়াও কবীরা গুনাহ্’র অন্যতম। তাই তো আল্লাহ্ তা‘আলা এ জাতীয় মহিলাদের জন্য পর্যায়ক্রমে কয়েকটি শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَاللَّاتِيْ تَخَافُوْنَ نُشُوْزَهُنَّ فَعِظُوْهُنَّ وَاهْجُرُوْهُنَّ فِيْ الْـمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوْهُنَّ، فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوْا عَلَيْهِنَّ سَبِيْلًا، إِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيْرًا»
‘‘আর যে নারীদের তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদেরকে সদুপদেশ দাও তথা আল্লাহ্ তা‘আলার আযাবের ভয়-ভীতি দেখাও, তাদেরকে শয্যায় পরিত্যাগ করো এবং প্রয়োজনে তাদেরকে প্রহার করো। এতে করে তারা তোমাদের অনুগত হয়ে গেলে তাদের ব্যাপারে আর অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সমুন্নত মহীয়ান’’। (নিসা’ : ৩৪)
কোন মহিলা তার স্বামীর প্রয়োজনের ডাকে সাড়া না দিলে যদি সে তার উপর রাগান্বিত হয়ে রাত্রি যাপন করে তা হলে ফিরিশ্তারা তার উপর লা’নত করতে থাকেন যতক্ষণ না সে সকালে উপনীত হয়।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا الْـمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ.
‘‘কোন পুরুষ নিজ স্ত্রীকে তার শয্যার দিকে ডাকলে সে যদি তাতে সাড়া না দেয় অতঃপর সে তার উপর রাগান্বিত হয়ে রাত্রি যাপন করে তা হলে ফিরিশ্তারা তার উপর লা’নত করতে থাকে যতক্ষণ না সে সকালে উপনীত হয়’’। (বুখারী ৩২৩৭; মুসলিম ১৪৩৬)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ! مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُوْ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهَا، فَتَأْبَى عَلَيْهِ إِلاَّ كَانَ الَّذِيْ فِيْ السَّمَاءِ سَاخِطًا عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنْهَا.
‘‘সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! কোন ব্যক্তি নিজ স্ত্রীকে তার শয্যার দিকে ডাকলে সে যদি তাতে সাড়া দিতে অস্বীকার করে তা হলে সে সত্তা যিনি আকাশে রয়েছেন (আল্লাহ্ তা‘আলা) তার উপর অসন্তুষ্ট হবেন যতক্ষণ না তার উপর তার স্বামী সন্তুষ্ট হয়’’। (বুখারী ৩২৩৭, ৫১৫৩; মুসলিম ১৪৩৬)
কোন মহিলা নিজ স্বামীর সমূহ অধিকার আদায় না করলে সে আল্লাহ্ তা‘আলার সমূহ অধিকার আদায় করেছে বলে ধর্তব্য হবে না।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَّسْجُدَ لِغَيْرِ اللهِ لَأَمَرْتُ الْـمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا، وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ! لَا تُؤَدِّيْ الْـمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّيَ حَقَّ زَوْجِهَا كُلِّهِ، حَتَّى لَوْ سَأَلَـهَا نَفْسَهَا وَهِيَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ.
‘‘আমি যদি কাউকে আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য সিজ্দাহ্ করতে আদেশ করতাম তা হলে মহিলাকে তাঁর স্বামীর জন্য সিজ্দাহ্ করতে আদেশ করতাম। কারণ, সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! কোন মহিলা নিজ প্রভুর সমূহ অধিকার আদায় করেছে বলে ধর্তব্য হবে না যতক্ষণ না সে তার স্বামীর সমূহ অধিকার আদায় করে। এমনকি কোন মহিলাকে তার স্বামী সহবাসের জন্য ডাকলে তাতে তার অস্বীকার করার কোন অধিকার নেই। যদিও সে তখন উটের পিঠে আরোহণ অবস্থায় থাকুক না কেন’’। (ইব্নু মাজাহ্ ১৮৮০; আহমাদ ৪/৩৮১ ইব্নু হিববান/ইহ্সান, হাদীস ৪১৫৯ বায়হাক্বী ৭/২৯২)
স্বামীর সন্তুষ্টিতেই স্ত্রীর জান্নাত এবং তার অসন্তুষ্টিতেই স্ত্রীর জাহান্নাম।
একদা জনৈকা সাহাবী মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তার স্বামীর কথা উল্লেখ করলে তিনি তাকে বলেন:
انْظُرِيْ أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ، فَإِنَّهُ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ.
‘‘ভেবে দেখো তার সাথে তুমি কি ধরনের আচরণ করছো! কারণ, সেই তো তোমার জান্নাত এবং সেই তো তোমার জাহান্নাম’’।
(আহমাদ ৪/৩৪১ নাসায়ী/’ইশ্রাতুন্ নিসা’, হাদীস ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩ ইব্নু আবী শাইবাহ্ ৪/৩০৪; হা’কিম ২/১৮৯ বায়হাক্বী ৭/২৯১)
কোন মহিলা তার স্বামীর অবদানসমূহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি কখনো সন্তুষ্টির দৃষ্টিতে তাকাবেন না।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَى امْرَأَةٍ لَا تَشْكُرُ لِزَوْجِهَا، وَهِيَ لَا تَسْتَغْنِيْ عَنْهُ.
‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা এমন মহিলার দিকে (সন্তুষ্টির দৃষ্টিতে) তাকান না যে নিজ স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না; অথচ সে তার স্বামীর প্রতি সর্বদাই মুখাপেক্ষিণী’’। (নাসায়ী/’ইশ্রাতুন্ নিসা’, হাদীস ২৪৯, ২৫০; হা’কিম ২/১৯০ বায়হাক্বী ৭/২৯৪ খতীব ৯/৪৪৮)
কোন মহিলা তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দিলে তার জান্নাতী অপরূপা সুন্দরী স্ত্রী তথা ’হূররা সে মহিলাকে তিরস্কার করতে থাকে।
মু‘আয বিন্ জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا تُؤْذِيْ امْرَأَةٌ زَوْجَهَا إِلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الْـحُوْرِ الْعِيْنِ: لَا تُؤْذِيْهِ، قَاتَلَكِ اللهُ ! فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيْلٌ، أَوْشَكَ أَنْ يُّفَارِقَكِ إِلَيْنَا.
‘‘কোন মহিলা তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দিলে তার জান্নাতী অপরূপা সুন্দরী স্ত্রীরা বলে: তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ্ তোমাকে ধ্বংস করুক! কারণ, সে তো তোমার কাছে কিছু দিনের জন্য। বেশি দেরি নয় যে, সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২০৪৪)
আল্লাহ্ তা‘আলা, তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং স্বামীর আনুগত্যহীনতার কারণেই অধিকাংশ মহিলারা জাহান্নামে যাবে।
’ইমরান বিন্ ’হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
اطَّلَعْتُ فِيْ الْـجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ، وَاطَّلَعْتُ فِيْ النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ.
‘‘আমি জান্নাতে উঁকি মেরে দেখতে পেলাম,জান্নাতীদের দের অধিকাংশই গরীব শ্রেণীর এবং জাহান্নামে উঁকি মেরে দেখতে পেলাম, জাহান্নামীদের অধিকাংশই মহিলা’’। (বুখারী ৩২৪১; মুসলিম ২৭৩৮)
আবূ সা’ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ! تَصَدَّقْنَ، فَإِنِّيْ أُرِيْتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ، فَقُلْنَ: وَبِمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ!؟ قَالَ: تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيْرَ.
‘‘হে মহিলারা! তোমরা (বেশি বেশি) সাদাকা করো। কারণ, আমি তোমাদেরকেই জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী রূপে দেখেছি। মহিলারা বললো: কেন হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা বেশি লা’নত করে থাকো এবং স্বামীর কৃতজ্ঞতা আদায় করো না’’। (বুখারী ৩০৪; মুসলিম ৮০)