আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
128 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)
মা সরকারি চাকুরিজীবী। প্রায় ৮/৯ বছর তিনি চাকরির জন্য বিদেশে ও দেশের দূরবর্তী জেলায় থেকেছেন। বাবা দুটো মেয়েকে লালন পালন করেন একা। এরপর মা বাসার কাছে চাকরির ব্যবস্থা করে বাসায় চলে আসেন। কিন্তু এরপর থেকেই শুরু হয় অশান্তির। স্বাভাবিকভাবেই বাবা দুটো মেয়ে সামলে ক্যারিয়ার সেভাবে গড়তে পারেননি। মা এ নিয়ে খোটা দিত প্রচুর। এখন মেয়ে দুটো বড় হয়েছে। কিন্তু মা কাছে আসার পর 7/8 বছর ধরেই অশান্ত বাসার পরিবেশ। এমনিতে সমস্যা নেই, মা একটু দ্রুত রেগে যায়। আর বাসায় কাজ নিয়েই মূলত উনার সমস্যা।
এখন ইদানিং মেয়ের মনে হচ্ছে মা হয়তো সংসারটাকে নিজের মতো গুছিয়েই নিতে পারছেন না। মা প্রায় সারাক্ষণই রেগে যাচ্ছেন। অফিসের কাজেও বিরক্ত হচ্ছেন, আবার বাসায় এসে নরমাল রান্না করতেই রেগে যাচ্ছেন। কাজ করেন ঠিকই, তবে অকথ্য গালাগালি ধরনের কথাবার্তা বলতে থাকেন। যেমন খাওয়ার টেবিল গোছানো, এটা তো স্বাভাবিক যে এটা বারবার মুছতে হবেই। মানে খাওয়ার পর একটু নোংরা হবে, আবার মুছতে হবে, এমন। ঘর আজ ঝাড়ু দিলে তিনদিন পর ময়লা হবেই। কিন্তু এগুলো মার কাছে খুবই বিরক্তির কারণ হচ্ছে। সকালে টেবিল মোছার পর রাতে আবার টেবিল একটু অগোছালো থাকলে তিনি সমানে বকাবকি করেন। উনি নাকি সংসারের জন্য খাটতে খাটতে শেষ। তাও কিছু ঠিক থাকে না। ছোট মেয়ের কথা হচ্ছে, সংসারের এই কাজগুলো তো স্বাভাবিক। তাহলে মা যখন ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছে, তখন সংসারের এগুলোতে একটু কষ্ট হবেই। এভাবে প্রতিদিন গালিগালাজ করার কী মানে?? ছোট মেয়েই রান্নাবান্না বা টুকটাক ঘরের কাজ সামলায়। একদিন মেয়ে যদি ঘরটা ঝাড়ু না দেয় বা টেবিলটা না মুছে, মা খোটা দেয় যে "মেয়ে নাকি খালি মুখেই বলে, কাজের বেলায় না।" মেয়ে কষ্ট পায় এটা ভেবে যে তার বয়সী মেয়েরা তো সাধারণত এত কাজই করে না। তবু তার মা তাকে এভাবে কথা শোনায়।


১) আসলে এখানে এই সংসারের কাজের দায়িত্বটা কার?? মেয়ের জন্য কি সবটা গুছিয়ে রাখা সত্যিই আবশ্যক??
২) মেয়ে কি পরামর্শ নেওয়ার জন্য কোনো বান্ধবীর সাথে এই ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বলতে পারবে?? মানে এই প্রশ্নে তো ডিটেইলস বলা যায় না। গিবত ভেবে অন্য কাউকেও বলা যায় না। কিন্তু মার ব্যবহার খুব খারাপ লাগছে ইদানিং। অল্পতেই উনি অনেক চিল্লাচিল্লি করেন। এমন পরিবেশে এতবছর থেকে মেয়েটাও খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও উত্তম আখলাক প্র্যাকটিস করতে পারছে না। খুবই মানসিক চাপের মধ্যে আছে সে। মন হালকা করার জন্য কি সে বান্ধবীর সাথে শেয়ার করতে পারবে সবকিছু?? গিবত হবে কিনা।

3) বাবা মার জন্য কি এমন পরিবেশ তৈরি করাটা জরুরী না?? যে পরিবেশে সন্তান সঠিক আখলাক প্র্যাকটিস করতে পারবে?? অথবা বাবা মায়ের খারাপ আচরণের প্রভাবে সন্তানের আচরণও বিগড়ে গেলে সেজন্য কি বাবা মা দায়ী হবে??

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


মহিলা সাহাবিরা স্বামীর সংসারের কাজগুলো নিজেরাই করতেন। যেমন-

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنِ الْحَكَمِ، سَمِعْتُ ابْنَ أَبِي لَيْلَى، قَالَ حَدَّثَنَا عَلِيٌّ، أَنَّ فَاطِمَةَ، عَلَيْهَا السَّلاَمُ شَكَتْ مَا تَلْقَى مِنْ أَثَرِ الرَّحَا، فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم سَبْىٌ، فَانْطَلَقَتْ فَلَمْ تَجِدْهُ، فَوَجَدَتْ عَائِشَةَ، فَأَخْبَرَتْهَا، فَلَمَّا جَاءَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَخْبَرَتْهُ عَائِشَةُ بِمَجِيءِ فَاطِمَةَ، فَجَاءَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَيْنَا، وَقَدْ أَخَذْنَا مَضَاجِعَنَا، فَذَهَبْتُ لأَقُومَ فَقَالَ " عَلَى مَكَانِكُمَا ". فَقَعَدَ بَيْنَنَا حَتَّى وَجَدْتُ بَرْدَ قَدَمَيْهِ عَلَى صَدْرِي وَقَالَ " أَلاَ أُعَلِّمُكُمَا خَيْرًا مِمَّا سَأَلْتُمَانِي إِذَا أَخَذْتُمَا مَضَاجِعَكُمَا تُكَبِّرَا أَرْبَعًا وَثَلاَثِينَ، وَتُسَبِّحَا ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ، وَتَحْمَدَا ثَلاَثَةً وَثَلاَثِينَ، فَهْوَ خَيْرٌ لَكُمَا مِنْ خَادِمٍ ".

মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা (রাঃ) যাঁতা চালানোর কষ্ট সম্পর্কে একদিন (আমার নিকট) অভিযোগ প্রকাশ করলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী আসল। ফাতিমা (রাঃ) (এক জন গোলাম পাওয়ার আশা নিয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে গেলেন। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে, আয়িশা (রাঃ) এর কাছে তাঁর কথা বলে আসলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘরে আসলেন তখন ফাতিমা (রাঃ) এর আগমন ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ) তাঁকে অবহিত করলেন। (আলী (রাঃ) বলেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এখানে আসলেন, যখন আমরা বিছানায় শুয়ে পড়েছিলাম। তাঁকে দেখে আমি উঠে বসতে চাইলাম। কিন্তু তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় থাক এবং তিনি আমাদের মাঝখানে এমনভাবে বসে পড়লেন যে আমি তাঁর পদদ্বয়ের শীতলতা আমার বক্ষে অনুভব করলাম। তিনি বললেন, আমি কি তোমরা যা চেয়েছিলে তার চেয়েও উত্তম জিনিস শিক্ষা দিবনা? (তা হল) তোমরা যখন ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় যাবে তখন চৌত্রিশ বার "আল্লাহু আকবার" তেত্রিশবার "সুবহানাল্লাহ" তেত্রিশবার "আল্ হামদুলিল্লাহ" পড়ে নিবে। এটা খাদিম (যা তোমরা চেয়েছিলে) অপেক্ষা অনেক উত্তম।
(বুখারী ৩৪৪০)

হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, জাঁতা দিয়ে গম ভেঙে আটা গুঁড়ো করতে করতে (নবী কন্যা) হজরত ফাতেমা (রা.)-এর হাতে ঠোসা পড়ে গিয়েছিল। তাই তিনি নবী করিম (সা.)- এর কাছে গিয়েছিলেন একজন দাসীর জন্য। বাড়ি যেয়ে যখন বাবাকে পেলেন না, তখন মা হজরত আয়েশা (রা.)-কে সবকিছু জানালেন। হজরত আয়েশা (রা.) নবী করিম (সা.)- এর কাছে হজরত ফাতেমা (রা.)- এর আগমনের সংবাদ পৌঁছে দিলেন। যখন নবীজী বাড়িতে আসলেন তখন মা আয়েশা ও ফাতেমা এক বিছানায় শুয়েছিলেন। যখন নবী করিম (সা.) আসলেন, তখন নবীজীর শব্দ শোনে তারা উঠতে গেলে নবী করিম (সা.) তাদের উঠতে বারণ করলেন। নিজে যেয়ে তাদের মাঝে বসলেন। পরে হজরত ফাতেমাকে (রা.) বললেন, তুমি আমার কাছে যা চাচ্ছো তার চেয়ে আরও ভালো জিনিস আমি তোমাকে দেবো কী? তুমি যখন বিছানায় শোবে তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ বলবে, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ বলবে এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলবে। -সহিহ বোখারি: ৩১১৩ ও সহিহ মুসলিম: ৭০৯০

বর্ণিত হাদিসে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, নবী কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.)- এর স্বামীর সংসারের কাজকর্ম নিজের হাতেই করতেন। আটা পিষতে পিষতে হাতে দাগও পড়ে গেছে। কিন্তু নবী করিম (সা.) মেয়েকে স্বামীর সংসারের কাজ করতে বারণ করেননি, কিংবা জামাতাকে অভিযুক্ত করেননি। স্বামীকে বলেননি, আমার মেয়েকে দিয়ে কেন করাচ্ছো? তাকে কাজের লোক রেখে দাও ইত্যাদি ইত্যাদি।  

বরং অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, কূপ থেকে খাবার পানি চামড়ার মশকে করে কাঁধে ঝুলিয়ে বহন করতে করতে হজরত ফাতেমা (রা.)- এর ঘাড়ে দাগ পড়ে গিয়েছিল।  

পবিত্র কোরআনের সূরা যারিয়াতের ২৬ নম্বর আয়াতে দেখা যাচ্ছে, দুইজন ফেরেশতা যখন মানুষের আকৃতি ধারণ করে হজরত ইবরাহিম (আ.)- এর কাছে এলেন তখন তিনি তাদের চিনতে পারলেন না। তাদের সঙ্গে সালাম ও কুশল বিনিময় করেই তাদের মেহমানদারি করার জন্য কিছু আনতে ছুটে যান স্ত্রীর কাছে।

পবিত্র কোরআনের এ বর্ণনা ধারা থেকে বুঝে আসে, হজরত ইবরাহিম (আ.)- এর স্ত্রীও ঘর-সংসারের কাজ করতেন। তাই তিনি মেহমান বসিয়ে রেখে মেহমানদারির জন্য স্ত্রীর শরণাপন্ন হন।

বর্ণিত আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, ঘর-সংসারের কাজ সাধ্যমতো নিজে করা স্ত্রীদের জন্য নববী সুন্নত; যদিও ফরজ নয়।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
রান্না বান্না করা স্ত্রীর উপর মূলত ওয়াজিব না।এবং তার চিকিৎসা খরচও স্বামীর উপর ওয়াজিব না।যেহেতু আমাদের সমাজে স্বামীরাই স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ বহন করে থাকে,তাই স্ত্রীরা ঘরের রান্না-বান্না করবে,তার উপর চিকিৎসা খরচের বিপরীতে এটা নৈতিকভাবে ওয়াজিব।সুতরাং আপনার স্ত্রী ঘরের রান্না-বান্না করবে।

বিস্তারিত জানুনঃ-  430

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রয়োজন, অপরাগতা কিংবা ঠেকায় পড়ার পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ অবস্থায় নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শরীয়ত তাদের ওপর এমন দায়িত্ব আরোপ করে নি, যার কারণে তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا
‘নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)

নারী মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ ‘তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম।’ (আবু দাউদ ৫৬৭)

যে নারী স্বামীর একান্ত অনুগতা ও পবিত্র সে নারীর বড় মর্যাদা রয়েছে ইসলামে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَصَّنَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا، دَخَلَتْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ.

‘‘রমণী তার পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়লে, রমযানের রোযা পালন করলে, ইজ্জতের হিফাযত করলে ও স্বামীর তাবেদারী করলে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।
(মিশকাতুল মাসাবিহ ৩২৫৪।)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيْ النِّسَاءِ خَيْرٌ؟ قَالَ: «الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ وَلَا تُخَالِفُهُ فِي نَفْسِهَا وَلَا مَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ» . رَوَاهُ النَّسَائِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَان

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, কোন্ রমণী সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে স্বামী স্ত্রীর প্রতি তাকালে তাকে সন্তুষ্ট করে দেয়, স্বামী কোনো নির্দেশ করলে তা (যথাযথভাবে) পালন করে এবং নিজের প্রয়োজনে ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করে না।
হাসান :
(নাসায়ী ৩২৩১, আহমাদ ৭৪২১, ইরওয়া ১৭৮৬, সহীহাহ্ ৮৩৩৮, সহীহ আল জামি‘ ৩২৯৮.মিশকাত ৩২৭২।)

https://ifatwa.info/13963/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
স্ত্রীর উপর স্বামীর খেদমত আবশ্যক।
হাদীস শরীফে আছে,

إذا دعا الرجل زوجته لحاجته فالتأته، وإن  كانت على التنور

স্বামী যখন নিজ প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকবে তখন সে যেন তাতে সাড়া দেয়, যদিও সে চুলায় (রান্নার কাজে) থাকে (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৬০; সুনানে নাসাঈ, হাদীস : ৮৯৭১)।

 স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গিনী স্ত্রীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হল। 

১. স্বামীর আনুগত্য : স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। তবে যে কোন আনুগত্যই নয়, বরং যেসব ক্ষেত্রে আনুগত্যের নিম্ন বর্ণিত তিন শর্ত বিদ্যমান থাকবে। (ক) ভাল ও সৎ কাজ এবং আল্লাহর বিধান বিরোধী নয় এমন সকল বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ নয়। 

(খ) স্ত্রীর সাধ্য ও সামর্থ্যরে উপযোগী বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। কারণ আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্বারোপ করেন না। 

(গ) যে নির্দেশ কিংবা চাহিদা পূরণে কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, সে ব্যাপারে স্বামীর আনুগত্য করা। আনুগত্য আবশ্যক করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘নারীদের উপর পুরুষগণ শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী।’ [বাকারা : ২২৭] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: ‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কারণ আল্লাহ তাআলা-ই তাদের মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন। দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ করে।’ [নিসা : ৩৪]

২. স্বামী-আলয়ে অবস্থান: নেহায়েত প্রয়োজন ব্যতীত ও অনুমতি ছাড়া স্বামীর বাড়ি থেকে বের হওয়া অনুচিত।মহান আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নারীদের ঘরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীদের সম্বোধন করে বলেন—সকল নারীই এর অন্তর্ভুক্তঃ ‘তোমরা স্ব স্ব গৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত নিজেদের কে প্রদর্শন করে বেড়িও না। ’ [আহজাব : ৩৩]

৩. নিজের ঘর এবং সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করা। স্বামীর সাধ্যের অতীত এমন কোন আবদার কিংবা প্রয়োজন পেশ না করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘরের জিম্মাদার। এ জিম্মাদারির ব্যাপারে তাকে জবাবদেহিতার সম্মুখীন করা হবে।’ [বুখারী: ২৫৪৬] 

৪. নিজের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষা করা,নিজেকে কখনো পরীক্ষা কিংবা ফেতনার সম্মুখীন না করা। 

৫. স্বামীর অপছন্দনীয় এমন কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া হোক না সে নিকট আত্মীয় কিংবা আপনজন। যেমন ভাই-বেরাদার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘তোমাদের অপছন্দনীয় কাউকে বিছানায় জায়গা না দেয়া স্ত্রীদের কর্তব্য।’ [মুসলিম : ২১৩৭] স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা না রাখা। কারণ, রোজা নফল—আনুগত্য ফরজ।

আরো  জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
এই সংসারের কাজের দায়িত্বটা মেয়েটির মায়ের। মেয়ের জন্য সবটা গুছিয়ে রাখা আবশ্যক নয়।

(০২)
এটা গীবত হবে।
তবে সেই বান্ধবী যদি মেয়েটির মাকে সংশোধন এর চেষ্টা করতে সক্ষম হয়,সেক্ষেত্রে মাকে সংশোধন এর নিয়তে বান্ধবীকে বলা যাবে।

(০৩)
হ্যাঁ, বাবা মার জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করাটা জরুরী যে পরিবেশে সন্তান সঠিক আখলাক প্র্যাকটিস করতে পারবে।

অথবা বাবা মায়ের খারাপ আচরণের প্রভাবে সন্তানের আচরণও বিগড়ে গেলে সেজন্য বাবা মাও দায়ী হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (3 points)
ছোট মেয়ে সংসারের মোটামুটি সব কাজই করার চেষ্টা করে। তবু একদিন যদি কাজ না করে, সেদিন হয়তো মা খুব রেগে যায় বা অশান্তি হয়। এমন হলে কি মেয়ে গুনাহগার হবে?? মানে ইচ্ছাকৃত দুয়েকদিন সংসারের এসব কাজে অলসতা করার জন্য?
by (573,870 points)
এ কাজ তো তার উপর আবশ্যক নয়।
সুতরাং এক্ষেত্রে মেয়ে গুনাহগার হবেনা।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...