যদি কেহ প্রবেশ করায়,সেক্ষেত্রে জড়ায়ুর ভিতরের অংশে উক্ত ভেজা আঙ্গুল প্রবেশ করালে উক্ত রোযা গুলি ভেঙ্গে যাবে।
কুরআন মাজীদের সর্বপ্রথম এই আয়াতটি প্রতিটি সূরার পূর্বে আনা হয়েছে। অর্থাৎ ১১৩ বার এবং সূরা নামলে স্বতন্ত্র আয়াত হিসেবেও এসেছে। إِنَّهُ مِنْ سُلَيْمَانَ وَإِنَّهُ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ অতএব, এই আয়াত কুরআনের অংশ হওয়া বা না হওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্নই উত্থাপিত হয় না। তবে এ নিয়ে ইখতেলাফ রয়েছে যে, প্রতিটি সূরার পূর্বের এই অংশ স্বতন্ত্র আয়াত হিসেবে গণ্য হবে কিনা?
কেউ কেউ বলেছেন, بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
সূরা নামলের স্বতন্ত্র আয়াত এবং প্রত্যেক দুই সূরার মাঝে স্বতন্ত্র একটি আয়াত। তাই এই আয়াতের মর্যাদা কুরআনের অনুরূপ। এই আয়াত ওযূ ছাড়া স্পর্শ করা জায়েয নয়। (শারহু মানিয়্যা)
ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর অভিমত হলো, এটি স্বতন্ত্র কোনো আয়াত নয়। বরং দুই সূরার মাঝে পার্থক্য ও ব্যবধান সৃষ্টির জন্য আনা হয়েছে। আর কুরআন মাজীদের প্রথমে স্বতন্ত্র আয়াত হিসেবে আনা হয়েছে। ইমাম মালেকেরও একই অভিমত।
قال مالك رحـ وأبو حنيفة رحـ ليست فى أوائل السور بآية وإنما هي استفتاح ليعلم بها مبدائها
আবু বকর জাস্সাস রহ. আহকামুল কুরআনে এর উপর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং ইমামে আযম আবু হানীফা রহ. এর মতকে শক্তিশালী ও সুপ্রমাণিত করেছেন। বিস্তারিত জানার জন্য হযরতের আলোচনাটি অধ্যয়ন করা যেতে পারে। (আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ০২)
ইমাম কুরতুবী বলেন যে, সকল কথার মধ্যে সঠিক কথা হ’ল ইমাম মালেকের কথা যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়’। যেমন ‘কুরআন’ খবরে ওয়াহেদ অর্থাৎ একজন ব্যক্তির বর্ণনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় না। বরং তা প্রতিষ্ঠিত হয় অবিরত ধারায় অকাট্ট বর্ণনা সমূহের মাধ্যমে, যাতে কোন মতভেদ থাকে না। ইবনুল ‘আরাবী বলেন, এটি সূরা ফাতিহার অংশ না হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এতে মতভেদ রয়েছে। আর কুরআনে কোন মতভেদ থাকে না। বরং বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহ একথা প্রমাণ করে যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়’। এটি সূরা নমলের ৩০তম আয়াত মাত্র।
বিসমিল্লাহ সুরা ফাতেহার অংশ কিনা,এই বিষয় নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে।
হানাফি মাযহাবের মত হলো বিসমিল্লাহ সুরা ফাতেহার অংশ নয়।
দলিল নিম্নোক্ত হাদীসঃ-
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى صَلَاةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهِيَ خِدَاجٌ ثَلَاثًا غَيْرُ تَمَامٍ» فَقِيلَ لِأَبِي هُرَيْرَةَ: إِنَّا نَكُون وَرَاء الإِمَام فَقَالَ اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «قَالَ اللَّهُ تَعَالَى قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي نِصْفَيْنِ وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ (الْحَمد لله رب الْعَالمين) قَالَ اللَّهُ تَعَالَى حَمِدَنِي عَبْدِي وَإِذَا قَالَ (الرَّحْمَن الرَّحِيم) قَالَ اللَّهُ تَعَالَى أَثْنَى عَلَيَّ عَبْدِي وَإِذَا قَالَ (مَالك يَوْم الدّين) قَالَ مجدني عَبدِي وَقَالَ مرّة فوض إِلَيّ عَبدِي فَإِذا قَالَ (إياك نعْبد وَإِيَّاك نستعين) قَالَ هَذَا بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ (اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالّين) قَالَ هَذَا لِعَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ» . رَوَاهُ مُسلم
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলো কিন্তু এতে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ- সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ করলো না তাতে তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ’’অসম্পূর্ণ’’ রয়ে গেল। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। এ কথা শুনে কেউ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা যখন ইমামের পিছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবো তখনও কি তা পাঠ করবো? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ তখনও তা পাঠ করবে নিজের মনে মনে। কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’’আল্লাহ বলেছেন, আমি ’সালাত’ অর্থাৎ, সূরাহ্ ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করেছি, (এভাবে যে, হামদ ও সানা আমার জন্য আর দু’আ বান্দার জন্য)। আর বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হয়।
বান্দা বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমস্ত জাহানের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো। যখন বান্দা বলে, আল্লাহ বড় মেহেরবান ও পরম দয়ালু। আল্লাহ তখন বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করলো। বান্দা যখন বলে, আল্লাহ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনের মালিক, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করলো। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ!) আমরা একমাত্র তোমারই ’ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য কামনা করি, তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার (’ইবাদাত আল্লাহর জন্য আর দু’আ বান্দার জন্য)। আর আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ)! তুমি আমাদেরকে সহজ ও সরল পথে পরিচালিত কর। সে সমস্ত লোকের পথে, যাদেরকে তুমি নি’আমাত দান করেছ। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, এটা আমার বান্দার জন্য, আর বান্দা যা চাইবে, সে তাই পাবে।
(মুসলিম ৩৯৫, তিরমিযী ২৯৫৩, ইবনু মাজাহ্ ৮৩৮, আহমাদ ৭২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭৬।)
তবে বিসমিল্লাহ পুরো কুরআন শরীফের একটি আয়াত। তাই খতমে তারাবিহতে একবার হলেও জোড়ে আওয়াজে সুরা ফাতেহা পড়তে হয়।