ঈদের দিনগুলো আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের দিন। এ দিনগুলোতে রয়েছে বিশেষ কিছু ইবাদত, কিছু শিষ্টাচার ও কিছু প্রথাগত অভ্যাস। যেমন:
১। গোসল করা:
কিছু কিছু সাহাবী থেকে গোসল করার আমলটি সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
এক ব্যক্তি আলী (রাঃ) কে গোসল করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল: "তিনি বললেন: তুমি চাইলে তো প্রতিদিন গোসল করতে পার। সে বলল: না; যে গোসল আসলেই গোসল (অর্থাৎ যে গোসলের ফযিলত আছে)। তিনি বললেন: জুমাবারের গোসল, আরাফার দিনের গোসল, কোরবানীর ঈদের দিনের গোসল এবং ঈদুল ফিতরের দিনের গোসল।"[মুসনাদে শাফেয়ি (পৃষ্ঠা-৩৮৫), আলবানী 'ইরওয়াউল গালিল' এ (১/১৭৬) বর্ণনাটিকে সহিহ বলেছেন]
২। নতুন পোশাকাদি পরে নিজেকে সুন্দর করা:
আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) বলেন: একবার উমর (রাঃ) রেশমের তৈরী একটি জুব্বা; যা বাজারে বিক্রির জন্য তোলা হয়েছিল; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে এসে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি এ জুব্বাটি কিনুন; ঈদের সময় ও প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাতের সময় এটি পরবেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন: "এটি এমন ব্যক্তির পোশাক যার কোন ভাগ বা অংশ নেই (অর্থাৎ তাকওয়া ও সওয়াবের)।"[সহিহ বুখারী (৯০৬) ও সহিহ মুসলিম (২০৬৮)]
ইমাম বুখারী (রহঃ) এ হাদিসের শিরোনাম দেন এভাবে: "দুই ঈদ ও দুই ঈদের সময় নিজেকে সুন্দর করা সংক্রান্ত পরিচ্ছেদ"।
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:
এটি প্রমাণ করে যে, এ উপলক্ষগুলোতে নিজেকে সুন্দর করা তাদের মাঝে মশহুর ছিল।[আল-মুগনি (২/৩৭০)]
ইবনে রজব আল-হাম্বলি (রহঃ) বলেন: এ হাদিসটি ঈদের জন্য নিজেকে সুন্দর করার প্রমাণ বহন করে এবং মুসলমানদের মাঝে সেটি প্রথাগত অভ্যাস ছিল।[ফাতহুল বারী (৬/৬৭)]
শাওকানী (রহঃ) বলেন: ঈদের জন্য নিজেকে সুন্দর করা শরিয়তসম্মত হওয়ার পক্ষে এ হাদিসের দলিল এভাবে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের জন্য নিজেকে সুন্দর করার দৃষ্টিভঙ্গিকে অনুমোদন করেছেন। তিনি শুধু এ ধরণের পোশাক পরার ব্যাপারে আপত্তি করেছেন। যেহেতু সেটা রেশমের তৈরী ছিল।[নাইলুল আওতার (৩/২৮৪)]
সাহাবায়ে কেরামের যামানা থেকে আমাদের সময় পর্যন্ত মানুষ এভাবে করে আসছে।
বাইহাকী সহিহ সনদে নাফে' থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: দুই ঈদের সময় ইবনে উমর (রাঃ) সর্বোত্তম পোশাক পরতেন।
তিনি আরও বলেন: ঈদের এ সাজ গ্রহণের ক্ষেত্রে ঈদের নামাযে গমনকারী ব্যক্তি ও ঘরে অবস্থানকারী ব্যক্তি; এমনকি নারী ও শিশু সকলের বিধান সমান।[ইবনে রজব রচিত 'ফাতহুল বারী' (৬/৬৮-৭২)]
কোন কোন আলেম বলেছেন: কেউ যদি ইতিকাফ করে থাকে তাহলে তিনি ইতিকাফের পোশাকে ঈদগাহে যাবেন‑ এটি অসমর্থিত অভিমত।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: ঈদের সুন্নত হল সুন্দর কাপড়চোপড় পরা; এক্ষেত্রে ইতিকাফকারী কিংবা ইতিকাফকারী নন সকলে সমান।[আসয়িলা ওয়া আজওয়িবা ফি সালাতিল ঈদাইন (পৃষ্ঠা-১০)]
৩। উত্তম সুগন্ধি ব্যবহার করা:
সহিহ সূত্রে ইবনে উমর (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, "ঈদুল ফিতরের দিন তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতেন"।[যেমনটি এসেছে 'ফারইয়াবি' রচিত 'আহকামুল ঈদাইন" গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-৮৩)]
ইবনে রজব হাম্বলি (রহঃ) বলেন:
মালেক বলেছেন: আমি শুনেছি আলেমগণ প্রত্যেক ঈদের সময় সাজসজ্জা করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করাকে মুস্তাহাব মনে করেন।
শাফেয়িও মুস্তাহাব মনে করতেন।
[ইবনে রজব রচিত 'ফাতহুল বারী' (৬/৬৮)]
এ সাজসজ্জা ও সুগন্ধির ব্যবহার নারীরা নিজেদের বাড়ীতে স্বামীদের সামনে, মহিলাদের সামনে কিংবা মাহরাম পুরুষদের সামনে করবেন।
আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা গ্রন্থে (৩১/১১৬) এসেছে:
সুন্দর কাপড় পরিধান, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া, সুগন্ধি ব্যবহার করা, চুল ফেলা ও দুর্গন্ধ দূর করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নামাযে গমনকারী ও ঘরে অবস্থানকারী উভয়ে সমান। যেহেতু এটি সাজসজ্জা করার দিন তাই সকলে সমান। তবে, এটি নারীদের ক্ষেত্রে নয়।
নারীরা যদি বাহিরে বের হয়: তাহলে তারা সাজসজ্জা করবে না। বরং সাধারণ পোশাকে বের হবে। সুন্দর পোশাক পরবে না। সুগন্ধি লাগাবে না। যাতে করে মানুষ তাদের প্রতি আকৃষ্ট না হয়। বৃদ্ধ মহিলা ও অসুন্দর মহিলারদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। তারাও পুরুষদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করবে না। বরং পুরুষদের থেকে দূরে থাকবে।[সমাপ্ত]
৪। তাকবীর দেয়া:
ঈদুল ফিতরের সময় চাঁদ দেখার পর থেকে তাকবীর দেয়া সুন্নত। দলিল হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী: “তিনি চান– তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি যে, তোমাদেরকে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন সে জন্য 'তাকবির' উচ্চারণ কর (আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা কর)।”[সূরা বাকারা ২: ১৮৫] সংখ্যা পূর্ণ করা হচ্ছে‑ রোযার সংখ্যা পূর্ণ করার মাধ্যমে।
তাকবীর দেয়ার সময় শেষ হবে ইমাম খোতবা দেয়ার জন্য বের হওয়ার মাধ্যমে।
আর ঈদুল আযহার ক্ষেত্রে: আরাফার দিন সকাল থেকে তাকবীর দেওয়া শুরু হবে এবং তাশরিকের সর্বশেষ দিন তথা ১৩ ই যিলহজ্জে শেষ হবে।
৫। দেখা-সাক্ষাত:
ঈদের সময় আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবকে দেখতে যেতে কোন অসুবিধা নেই। ঈদের সময় এভাবে দেখা-সাক্ষাত করা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
কারো কারো মতে, ঈদগাহ থেকে ফেরার সময় ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করার বিধান দেয়ার পেছনে এটাই গূঢ় রহস্য।
অধিকাংশ আলেমের মতে, ঈদের নামাযে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া ও অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা মুস্তাহাব। জাবের বিন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: "ঈদের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক পথে যেতেন অপর পথে ফিরতেন।"[সহিহ বুখারী (৯৪৩)]
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) এর গূঢ় রহস্য সম্পর্কে বলেন:
কারো কারো মতে, যাতে করে তাঁর জীবিত ও মৃত নিকটাত্মীয়দেরকে দেখে আসতে পারেন। কারো কারো মতে, যাতে করে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে পারেন।[ফাতহুল বারী (২/৪৭৩)]
৬। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন:
শুভেচ্ছা জ্ঞাপন সেটি যে কোন বৈধ ভাষায় হতে পারে। তবে, সর্বোত্তম ভাষা হচ্ছে‑ 'তাকাব্বালাহু মিন্না ও মিনকুম' (আল্লাহ্ আমাদের ও আপনাদের নেক আমলগুলো কবুল করে নিন)। কেননা এটি সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত আছে।
জুবাইর বিন নুফাইর বলেন: ঈদের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীবর্গ যখন একজন অপরজনের সাথে সাক্ষাত করতেন তখন বলতেন: 'তাকাব্বালাহু মিন্না ও মিন্ক' (আল্লাহ্ আমাদের ও আপনার নেক আমলগুলো কবুল করে নিন)। হাফেয ইবনে হাজার 'ফাতহুল বারী' গ্রন্থে (২/৫১৭) এ বর্ণনার সনদকে 'হাসান' বলেছেন।
মালেক (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে এক মুসলিম যদি অপর মুসলিমকে বলে: 'তাকাব্বালাহু মিন্না ও মিন্ক, ওয়া গাফারাল্লাহু লানা ও লাক' (আল্লাহ্ আমাদের ও আপনার নেক আমলগুলো কবুল করে নিন। আল্লাহ্ আমাদেরকে ও আপনাকে ক্ষমা করে দিন) সেটা কি মাকরুহ হবে? তিনি বলেন: মাকরুহ হবে না।[আল-মুনতাকা শারহুল মুয়াত্তা (১/৩২২)]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন:
ঈদের দিন শুভেচ্ছা জ্ঞাপন হচ্ছে নামায পড়া শেষে একজন অপরজনকে বলবে: 'তাকাব্বালাহু মিন্না ও মিনকুম' (আল্লাহ্ আমাদের ও আপনাদের নেক আমলগুলো কবুল করে নিন) এবং "আহালাহুল্লাহু আলাইক" (আল্লাহ্ ঈদকে আপনার জীবনে পুনরায় ফিরিয়ে আনুন) বা এ ধরণের কোন কথা। একদল সাহাবী থেকে এ ধরণের শুভেচ্ছা বর্ণিত আছে যারা এভাবে করতেন। ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য আলেমগণ এ ধরণের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের অবকাশ দিয়েছেন। কিন্তু আহমাদ বলেন: আমি শুরুতে কাউকে শুভেচ্ছা জানাই না। যদি কেউ আমাকে শুভেচ্ছা জানায় তখন আমি তাকে জবাব দেই। কেননা শুভেচ্ছার জবাব দেয়া ওয়াজিব।
পক্ষান্তরে, শুরুতে শুভেচ্ছা জানানো: এটি কোন নির্দেশিত সুন্নাহ্ নয় এবং নিষিদ্ধও নয়। যে ব্যক্তি তা করেন তার পূর্বসূরি রয়েছে। যে ব্যক্তি করেন না তারও পূর্বসূরি রয়েছে।[মাজমুউল ফাতাওয়া (২৪/২৫৩)]
৭। বাড়তি খাবার-দাবারের আয়োজন:
বাড়তি খাবার-দাবার ও ভাল খাবার-দাবার খেতে কোন অসুবিধা নেই। সেটা নিজ বাসায় হোক কিংবা বাসার বাহিরে কোন রেস্টুরেন্টে হোক। তবে, যে সব রেস্টুরেন্টে মদ সরবরাহ করা হয় কিংবা যে রেস্টুরেন্ট মিউজিকের ধ্বনিতে প্রকম্পিত এমন রেস্টুরেন্টে নয়। কিংবা যেখানে বেগানা পুরুষেরা নারীদেরকে দেখতে পায় সেখানেও নয়।
কোন কোন দেশের ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে: স্থল ভ্রমণ বা নৌ-ভ্রমণে বের হওয়া। যাতে করে ঐ স্থানগুলো থেকে দূরে থাকা যায় যেখানে নারী-পুরুষের বেপরোয়া মেলামেশা ঘটে থাকে কিংবা শরয়ি বিধানগুলো লঙ্ঘনের মহোৎসব যেখানে চলে।
নুবাইশা আল-হুযাইলি (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "তাশরিকের দিনগুলো পানাহার ও আল্লাহ্র যিকির দিন।"[সহিহ মুসলিম (১১৪১)]
৮। খেলা-ধুলা করা:
পরিবারকে নিয়ে কোন স্থল ভ্রমণ বা নৌ-ভ্রমণে যাওয়া, সুন্দর সুন্দর স্থানগুলো পরিদর্শন করা বা এমন কোন স্থানে যাওয়া যেখানে বৈধ খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে‑ এসবে কোন আপত্তি নেই। অনুরূপভাবে মিউজিকমুক্ত নাশিদ শুনতেও বাধা নেই।
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, "একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন তখন আমার নিকট দুটি বালিকা বুআছ যুদ্ধ সংক্রান্ত গান গাইছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবু বকর (রাঃ) এসে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শয়তানের বীণ! তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। অতঃপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম, আর তারা বেরিয়ে গেল।
এক ঈদের দিন হাবশিরা বর্শা ও ঢাল দিয়ে খেলছিল। তখন আমি নিজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরয করলাম কিংবা তিনি নিজে থেকে বলেছিলেন: তুমি কি তাদের খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ, তারপর তিনি আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তার গালের সাথে লাগান। তিনি তাদের বললেন: হে বনু আরফিদা! তোমরা যা করতে ছিলে তা করতে থাক। শেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তখন তিনি আমাকে বললেন: তোমার কি দেখা শেষ? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তাহলে চলে যাও।"[সহিহ বুখারী (৯০৭) ও সহিহ মুসলিম (৮২৯)]
অপর এক রেওয়ায়েতে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই দিন বলেছেন: "যাতে করে ইহুদীরা জানে যে, আমাদের ধর্মে কিছু উদারতা রয়েছে। আমি উদার একেশ্বরবাদী ধর্ম নিয়ে প্রেরিত হয়েছি।"[মুসনাদে আহমাদ (৫০/৩৬৬), মুসনাদ গ্রন্থের মুহাক্কিকগণ হাদিসটিকে 'হাসান' বলেছেন এবং আলবানী 'সিলসিলা সহিহা' গ্রন্থে (৪/৪৪৩) হাদিসটির সনদকে 'জায়্যিদ' বলেছেন]
ইমাম নববী (রহঃ) এ হাদিসের শিরোনাম দিতে গিয়ে লেখেন: "ঈদের দিনগুলোতে গুনাহ নেই এমন খেলাধুলার অবকাশ দান শীর্ষক পরিচ্ছেদ"।
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন: এই হাদিস থেকে আমরা শিখতে পারি যে, ঈদের দিনগুলোতে পরিবার ও সন্তানদের জন্য উদার হওয়া শরিয়তে স্বীকৃত; নানাবিধ চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রে এবং শরীর থেকে ইবাদতের কষ্ট-ক্লেশ দূর করার ক্ষেত্রে।
আরও শিখতে পারি যে, ঈদ-উৎসবে আনন্দ প্রকাশ করা ইসলামী নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত।[ফতাহুল বারী (২/৫১৪)]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
এ ঈদে আরও যা করা হয়: মানুষ পরস্পর হাদিয়া বিনিময় করে; অর্থাৎ তারা খাবার প্রস্তুত করে একে অপরকে দাওয়াত দেয়, তারা একত্রিত হয়, আনন্দ প্রকাশ করে‑ এগুলোতে কোন দোষ নেই। কেননা এ দিনগুলো ঈদ-উৎসবের দিন। এমনকি আবু বকর (রাঃ) যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে প্রবেশ করলেন...গোটা হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
এ হাদিসে দলিল রয়েছে যে, (আলহামদু লিল্লাহ্) বান্দাদের জন্য ইসলামি শরিয়তের সহজতা হল: ঈদের দিনগুলোতে মানুষকে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া।[মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ আল-উছাইমীন (১৬/২৭৬)]
আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যাতে (১৪/১৬৬) এসেছে যে:
ঈদের দিনগুলোতে পরিবার ও সন্তানদের জন্য নানা মাধ্যমে চিত্ত বিনোদন দেওয়া এবং ইবাদতের ক্লান্তি ও ক্লেশ থেকে শরীরকে আরাম দেওয়ার ক্ষেত্রে উদার হওয়া শরিয়ত স্বীকৃত। অনুরূপভাবে ঈদ-উৎসবে আনন্দ প্রকাশ করা ইসলামী নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। ঈদের দিনগুলোতে খেলাধুলা করা বৈধ; সেটা মসজিদের ভেতরে হোক কিংবা মসজিদের বাহিরে হোক। যেহেতু আয়েশা (রাঃ) এর হাদিসে হাবাশার লোকদের অস্ত্র নিয়ে খেলাধুলা করা উদ্ধৃত হয়েছে।