ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যারা শুধুমাত্র কুরআনকে ইসলাম ধর্মের বিধান এবং আইন হিসাবে মানেন ও বিশ্বাস করেন তাদেরকে কুরানবাদী বলা হয়। তারা অবশ্য আহলে কুরআন বা কুরআন ওনলি বলেও নিজেদেরকে পরিচয় দেন। তারা হাদিস, ইজমা ইত্যাদিকে ইসলাম ধর্মের বিধান এবং আইন হিসাবে মানেন না।
বর্তমান যুগে হাদীছ অস্বীকারকারী ভ্রান্ত ফেরকার লোকেরা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ বলে দাবী করে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
وَعَن أبي رَافع وَغَيره رَفعه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيهِ أَمر مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُولُ لَا أَدْرِي مَا وَجَدْنَا فِي كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ»
আবূ রাফি‘ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের কাউকেও যেন এরূপ অবস্থায় না দেখি যে, সে তার গদিতে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। আর তার নিকট আমার নির্দেশাবলীর কোন একটি পৌঁছবে, যাতে আমি কোন বিষয় আদেশ করেছি অথবা কোন বিষয় নিষেধ করেছি। তখন সে বলবে, আমি এসব কিছু জানি না, যা কিছু আমি আল্লাহর কিতাবে পাবো তার অনুসরণ করবো।
(সহীহ : আহমাদ ২৩৩৪৯, আবূ দাঊদ ৪৬০৫, তিরমিযী ২৬৬৩, ইবনু মাজাহ্ ১৩, সহীহুল জামি‘ ৭১৭২,মিশকাত ১৬২।)
وَعَن الْمِقْدَام بن معدي كرب عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنه قَالَ: «أَلا إِنِّي أُوتيت الْكتاب وَمِثْلَهُ مَعَهُ أَلَا يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعَانٌ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَقُولُ عَلَيْكُمْ بِهَذَا الْقُرْآنِ فَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَلَالٍ فَأَحِلُّوهُ وَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوهُ وَإِنَّ مَا حَرَّمَ رَسُولُ الله كَمَا حَرَّمَ اللَّهُ أَلَا لَا يَحِلُّ لَكُمُ لحم الْحِمَارُ الْأَهْلِيُّ وَلَا كُلُّ ذِي نَابٍ مِنَ السَّبع وَلَا لُقَطَةُ مُعَاهَدٍ إِلَّا أَنْ يَسْتَغْنِيَ عَنْهَا صَاحِبُهَا وَمَنْ نَزَلَ بِقَوْمٍ فَعَلَيْهِمْ أَنْ يُقْرُوهُ فَإِنْ لَمْ يَقْرُوهُ فَلَهُ أَنْ يُعْقِبَهُمْ بِمِثْلِ قِرَاهُ»
মিক্বদাম ইবনু মা‘দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে তার অনুরূপ জিনিসও। জেনে রেখ, শীঘ্রই এমন এক সময় এসে যাবে, যখন কোন উদরভর্তি বড় লোক তার গদিতে বসে বলবে, তোমরা কেবল এ কুরআনকেই গ্রহণ করবে। এতে যা হালাল পাবে তাকেই হালাল জানবে এবং যা এতে হারাম পাবে তাকেই হারাম মনে করবে। অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম বলেছেন, তা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তারই অনুরূপ। তাই জেনে রেখ! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং শিকারী দাঁতওয়ালা কোন হিংস্র পশুও হালাল নয়। এমতাবস্থায় মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকের কোন হারানো বস্ত্তও তোমাদের জন্য হালাল নয়, তবে সে যদি সেটির মুখাপেক্ষী না হয় সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। যখন কোন লোক কোন সম্প্রদায়ের নিকট পৌঁছে, তাদের উচিত ঐ লোকের মেহমানদারি করা। যদি তারা তার মেহমানদারি না করে তবে সে জোরপূর্বক তাদের নিকট থেকে তার মেহমানদারির সম-পরিমাণ জিনিস আদায় করার অধিকার রাখবে।
(সহীহ : আবূ দাঊদ ৪৬০৪, সহীহুল জামি‘ ২৬৪৩, ইবনু মাজাহ ১২,মিশকাত ১৬৩।)
★রাসূল (ছাঃ)-এর উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলো হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকে বাস্তবে দেখা দেয়। এ সময় এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটে, যারা সুন্নাতকে অস্বীকার করে। ইমাম শাফেঈ এমন একজন হাদীছ অস্বীকারকারী ব্যক্তির সাথে তার মুনাযারার কথা উল্লেখ করেছেন (কিতাবুল উম্ম ৭/২৮৭-২৯২)।
সেখানে তিনি তার দাবীর অসারতা প্রমাণ করেছেন। অতঃপর দীর্ঘ এগারো শত বছর হাদীছ অস্বীকারকারীদের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ মিলেনি। বিগত শতাব্দী তথা ত্রয়োদশ হিজরীতে এই ফিৎনার পুনরাবির্ভাব ঘটে মিসর, ইরাক এবং এই উপমহাদেশেও এই ভ্রষ্ট আক্বীদার কিছু ব্যক্তির আবির্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
,
ইমাম সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেন, ‘তারা কাফের এবং ইসলাম হ’তে খারিজ। তাদের হাশর হবে ইহূদী ও নাছারা বা অন্যান্য ভ্রান্ত মতাবলম্বীদের সাথে’ (মিফতাহুল জান্নাহ পৃঃ ৫)।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)
রাসূল সাঃ এর অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআনে একাধিক আয়াত এসেছে। যেমন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥٩:٧
রসূল তোমাদেরকে যা দেন,তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। { সূরা হাশর-৭}
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٣:٣١
বলুন,যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। {সূরা আলে ইমরান-৩১}
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ ۚ وَمَن يَتَوَلَّ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ [٦٠:٦
তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা কর, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে,আল্লাহ বেপরওয়া,প্রশংসার মালিক। {সূরা মুমতাহিনা-৬}
শুধু তাই নয়। রাসূল সাঃ এর আমল কথাকে আল্লাহর কথা বলে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى (3) إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى (4
তিনি নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বলেন না, বরং তিনি তা’ই বলেন, যা আল্লাহ তা’আলা অহী মারফত জানাতে বলেন। সুরা নজম-৩-৪}
উপরোক্ত আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় প্রমাণ করছে। রাসূল সাঃ এর আদেশ নিষেধ, আমল ইত্যাদি যা হাদীস সেটিকে অস্বিকার করা মানে আল্লাহকে অস্বিকার করা। কুরআনকেই অস্বিকার করা। তাই রাসূল সাঃ এর হাদীস অস্বিকারকারী কিছুতেই কুরআন মান্যকারী হতে পারে না। বরং সে এক নাম্বারের কুরআন অস্বিকারকারী।
তাই তারা কাফের।
বিস্তারিত জানতে ‘হাদীছের প্রামাণিকতা’ বইটি পড়তে পারেন।
আরো জানুনঃ-
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
একটি হাদিসে বেশি পয়েন্ট রয়েছে, আরেকটি হাদিসে তার থেকে কম, অপর আরেকটি হাদিসে তার থেকেও কম।
এর দরুন এক হাদীস আরেক হাদীসের বিরোধী বলার কোনো সুযোগ নেই।
বেশি পয়েন্ট ওয়ালা হাদীসের মাঝ কম পয়েন্ট ওয়ালা হাদীসও আছে।
মূলত রাবীদের স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার দরুন এমনটি হয়নি।
বরং কেউ কিছু তথ্য আগে থেকেই জানে,তাই কোনো সাহাবী তার কাছে কম তথ্য উল্লেখ করেছেন। তথা আংশিক হাদীস উল্লেখ করেছেন।
বা কাহারো কাছে তারা পুরো হাদীস উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করেননি,তাই তার কাছে আংশিক হাদীস উল্লেখ করেছেন।
আর এভাবে যুগের পর যুগ হাদীসটি আমাদের কাছে আসার কারনে আমরা সেভাবেই হাদীসটি পাচ্ছি।