জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
,
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী স্বপ্নদোষ হলো প্রাকৃতিক চাহিদা,মানবীয় চাহিদা।
,
স্বপ্নের মাধ্যমে যৌনউত্তেজনামুলক কিছু দেখলে বা করলে বীর্যপাত হয়। আর তাকেই বলে স্বপ্নদোষ। যদিও তা দূষনীয় নয়, যদি তা বেশী আকারে না হয়। দোষের হয় তখনি, যখন মাসে ৪ থেকে ৫ বারের অধিক হতে থাকে। আর তখনই প্রয়োজন হয় চিকিৎসা ও আনুষঙ্গিক প্রতিব্যবস্থার। অতএব স্বাভাবিকভাবে স্বপ্নদোষ হওয়াতে যুবকের ঘাবড়াবার কিছু নেই। এতে কোন ক্ষতি আছে, এমন ধারণা করে চিন্তিত হওয়ারও কোন কারণ নেই। বীর্য বেশী হলে তা তরল হয়ে। স্থলন হবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। অতএব স্বপ্নদোষে বীর্যক্ষয় হয়ে সে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, এমন দুশ্চিন্তা মনে এনে নিজেকে দুর্বল করা ঠিক নয়। অবশ্য অতিরিক্ত মাত্রায় হলে চিন্তার কারণ বটে।
,
এটি পুরুষ মহিলা উভয়েরই হয়।
হযরত উম্মে সালমা রাযি থেকে বর্ণিত,
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أَنَّهَا قَالَتْ جَاءَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ امْرَأَةُ أَبِي طَلْحَةَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ : ( إِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحْيِي مِنْ الْحَقِّ هَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ مِنْ غُسْلٍ إِذَا هِيَ احْتَلَمَتْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَمْ إِذَا رَأَتْ الْمَاءَ )
তিনি বলেন,হযরত আবু তালহা রাযি এর স্ত্রী উম্মে সুলাইম রাযি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট এসে বললেন,ইয়া রাসূলুল্লাহ সাঃ! নিশ্চয় আল্লাহ হককে প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না,মহিলার উপর কি গোসল ফরয হবে, যখন মহিলার স্বপ্নদোষ হবে?
রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,হ্যা মহিলার উপরও গোসল ফরয হবে,যখন মহিলা পানিকে দেখবে।(সহীহ বোখারী-৩৭৩,সহীহ মুসলিম-৪৭১)
,
এক মহিলা রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলল, মেয়েলোকের যখন স্বপ্নদোষ হবে এবং সে বীর্যরস দেখতে পাবে তখন কি সে গোসল করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এরপর ‘আয়িশাহ (রাঃ) মহিলাটিকে বললেন, তোমার উভয় হাত ধূলিময় হোক এবং তাতে অস্ত্রের খোঁচা লাগুক। তিনি [‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেন, তারপর রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ছেড়ে দাও ওকে (ভর্ৎসনা করো না) সন্তান মা-বাবার সদৃশের কারণেই হয়ে থাকে। যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের আগে জরায়ুতে প্রবেশ করে তখন সন্তানের আকৃতি তার মামাদের মতই হয়। আর যখন পুরুষের বীর্য মেয়েলোকের বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন তার আকৃতি চাচাদের মতই হয়। (ই.ফা. ৬০৬, ই.সে. ৬২২)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬০২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
,
★এটার উপর মানুষকে কোনো প্রকারের ধরপাকড় করা হবেনা।
কারন ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষের কোনো কাজের মুয়াখাযা (ধরপাকড়) নেই।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ المُبْتَلَى حَتَّى يَبْرَأَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَكْبُرَ
আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন ধরণের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, (২) অসুস্থ (পাগল) ব্যক্তি, যতক্ষণ না আরোগ্য লাভ করে এবং (৩) অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, যতক্ষণ না বালেগ হয়।
(আবু দাউদ ৪৩৯৮)
.
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত টানা ৫.৬.৭ দিন স্বপ্নদোষ হওয়াটি রোগ।
,
যদি সম্ভব হয়,তাহলে দ্রুত বিবাহ করে ফেলুন।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ حَدَّثَنَا أَبِي حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ قَالَ حَدَّثَنِي عُمَارَةُ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ دَخَلْتُ مَعَ عَلْقَمَةَ وَالأَسْوَدِ عَلٰى عَبْدِ اللهِ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم شَبَابًا لاَ نَجِدُ شَيْئًا فَقَالَ لَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّه“ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّه“ لَه“ وِجَاءٌ.
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সঙ্গে আমরা কতক যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছু ছিল না। এই হালতে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন। হে যুবক সম্প্রদায় [৩]! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা, সাওম তার যৌনতাকে দমন করবে।(মুসলিম ৫০৬৬.আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৬)
,
★যদি এই মুহুর্তে বিবাহ সম্ভবপর না হয়,
তাহলে এর জন্য দ্রুত ট্রিটমেন্ট শুরু করা দরকার।
,
উলামায়ে কেরামগন কিছু আমলের কথা উল্লেখ করেছেন।
সেগুলোও করুনঃ
১- যৌন-উত্তেজনামূলক কিছু দেখা, শোনা ও পড়া থেকে দুরে থাকতে হবে।
২- মন থেকে সকল যৌন ও বিবাহ-চিন্তা দূর করে দিতে হবে। আর তার জন্য ব্যস্ততাময় কাজ খুঁজে নিতে হবে, দ্বীন ও আখেরাতমূলক বক্তৃতা শুনে, আলোচনা করে অথবা পড়ে অবসর সময়কে কাজে লাগাতে হবে।
৩- নির্জন বা একাকী বাস ও কুসংসর্গ ত্যাগ করতে হবে। পরহেজগার বন্ধুর সাথে সময় কাটাতে হবে।
৪- গুরুপাক ও উত্তেজক খাদ্য গ্রহণ করা যাবেনা। বিশেষ করে রাত্রে এমন খাদ্য অবশ্যই খাওয়া যাবেনা।
৫- নিয়মিত ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে হবে।
৬,রাতে খাবার খাবার খাওয়ার কমপক্ষে এক দেড় ঘণ্টা পর ঘুমোতে যেতে হবে।
তার আগে নয়।
শোবার সময় আগে ওযু করে নিতে হবে। অতঃপর ডান কাতে শুতে হবে। উবুড় হয়ে শোয়া যাবেনা। ঘুমাবার পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন।
সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে দুই হাতে ফুক দিয়ে সমস্ত শরীরে বুলিয়ে নেবে এবং এরূপ ৩ বার করবেন।
যতক্ষণ না ঘুম এসেছে ততক্ষণ দুআ, কুরআন অথবা মুখস্থ পাঠ পড়তে থাকবেন। আর ভুলেও এ সময়ে যৌন বা বিবাহের চিন্তা মনেও আনবেন না। খারাপ স্বপ্ন দেখে জেগে উঠলে বাম দিকে তিনবার থুথু মার, শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাবেন এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোবেন।
,
শেষ রাতে গোসল সংক্রান্ত বলবো যে যদি ঠান্ডা পানি ব্যবহারে জীবন কষ্ট হয়,তাহলে গরম পানি দিয়ে গোসল করে নামায আদায় করতে পারবেন।
এ ব্যাপারে কোনো প্রকার সমস্যা নেই।