আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
311 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (20 points)
edited by
আসসালামুআলাইকুম।
আমি মহিলাদের সফর প্রসঙ্গে যে মাস'আলা সেগুলো ইতিমধ্যেই পড়েছি এই ওয়েবসাইট থেকে। তবুও কিছু ব্যাপারে জানতে চাচ্ছি।

১) আমি এমন অনেক আলিম ও প্রক্টিসিং মুসলিমকে দেখেছি যারা নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়া একদমই পছন্দ করেনা। জরুরী প্রয়োজনেও না। কাছাকাছি দূরত্বে গেলে যতটুকু সম্ভব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও যদি মাহরাম পুরুষ ছাড়া বের হয় তবুও তারা সেটাকে কবিরাহ গুনাহের দৃষ্টিতে দেখেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের মতো জেনারেল ফ্যামিলি ও জেনারেল লাইন থেকে দ্বীন মানা নারীদের ক্ষেত্রে এতোটা কঠোর হওয়া কি বাড়াবাড়ি নয়? অথবা নিজের ব্যক্তিগত মতামত অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া নয়?    
২) অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় যে একজন বোনকে দ্বীনের দাওয়াত  দেয়ার প্রয়োজন মনে হয় , হৃদয়ে তাদের জন্য ব্যাথা অনুভব হয়। কিন্তু তিনি থাকেন শহরে আর আমি গ্রামে। যেতে সময় লাগে ৪০ মিনিটের মতো। এমতাবস্থায় তাদের সাথে দ্বীনি উদ্দেশ্যে দেখা করার প্রয়োজন পড়লে শহরের নামাজঘরে তাদের সাথে সাক্ষাত করি সাধারণত। কিন্তু ইদানীং দ্বীনি প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া যথাসম্ভব কমিয়ে আনছি। তো মাঝে মধ্যে যদি একান্ত প্রয়োজনে যেতেই হয় এটা কি শরীয়াহর দৃষ্টিতে নিন্দনীয় হবে নাকি প্রয়োজনে যাওয়া যাবে?

 ৩) অনেকসময় দ্বীনিবোনদের বাসায় দাওয়াহ-র স্বার্থে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। সেখানে এমন বোনও আছে আমাদের দাওয়াহ-র ফলে যারা দ্বীনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছে। তো তারা যখন বলে আপু একটু আসো। তখন যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করি। অনেকের বাসা কিছুটা দূরে হয়। কিন্তু সাধারণত দুনিয়াবী রঙ তামাশার স্বার্থে কোথাও যাওয়া হয়না। এদিকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার মতো মাহরামও নেই। যদিও খুব একটা যাইনা আজকাল তবুও যদি শেষবারের মতো বা দীর্ঘদিন পর পর যাই শরীয়াহ কি আমাকে অনুমোদন দিবে?

৪) একটা পীরের খানকায় বিদ'আত ও বিভিন্ন গুনাহের কাজ বহুদিন ধরে চলে আসছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসে। প্রধান পীর মারা গেছেন। উলামারা এটাকে বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন কাজ হয়নি। এরপর তারা এসলাহর উদ্দেশ্যেও চেষ্টা করেছেন সম্ভবত কিন্তু খাস মজলিশে প্রবেশ করতে পারেননি।
এক্ষেত্রে আমি পারিবারিক সূত্রে সেখানকার খাস মজলিশের সাথে সম্পৃক্ত আছি৷ তো একজন ওস্তাযের পরামর্শে সেখানে এসলাহর নিয়তে সময় দেয়া শুরু করলামমাত্র। একদিনেই অনেকটা পজিটিভ ফলাফল পেলাম।
প্রশ্ন হচ্ছে আমি আমার আম্মার সাথে সেখানে যাই। আব্বা এ ব্যাপারে জানেনা যে আমি যাই। কিন্তু আব্বা দ্বীনি প্রয়োজনে আমার বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে কখনো না করেন না।অনুমতি আছে। কিন্তু এখানে আব্বাকে এজন্য জানানো হয়নি যে তিনি হয়তো উম্মতের বৃহত্তর কল্যানের ব্যাপারটা বুঝবেন না উল্টো নিষেধ করবেন। হঠাৎ জানলেও তেমন রিয়েক্ট করবেন না ইন শাআল্লাহ। কিন্তু এখন বললে না করতে পারেন।     
তো আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে সেখানে এসলাহর উদ্দেশ্যে মেহনত করা এবং হক্কানী উলামাদের কেন্দ্রে প্রবেশ করিয়ে দেয়া। কারণ এখানকার যে ব্যবস্থাপনা একে হক্বপন্থী আলিমরা পরিচালিত করতে পারলে আশা করি ওয়াকফকৃত ওই বিশাল মসজিদ ও জমি উম্মাহর কাজে আসবে।  এখন আব্বাকে না জানিয়ে সেখানে গেলে কি আমার গুনাহ হবে নাকি পরিস্থিতির আলোকে শরীয়াহ অনুমোদন দিবে?


উল্লেখ্য যে আমার আব্বু ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মাহরাম নেই।তিনি জব করায় সাধারণত একাই চলাচল করতে হয় বাধ্য হয়ে।আর দুই এই সবগুলোই আমার শহরে এবং খুউব বেশি দূরে না। সফর পরিমাণ দূরত্বে তো নয়ই

1 Answer

0 votes
by (589,380 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছেন,
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ : " لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ ، وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ ، فَقَامَ : رَجُلٌ ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ اكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا ، وَخَرَجَتِ امْرَأَتِي حَاجَّةً ، قَالَ : اذْهَبْ فَحُجَّ مَعَ امْرَأَتِكَ " .
الكتب » صحيح البخاري » كِتَاب الْجِهَادِ وَالسِّيَرِ » بَاب مَنِ اكْتُتِبَ فِي جَيْشٍ فَخَرَجَتِ امْرَأَتُهُ 
তরজমাঃ-আজনবী পুরুষ-মহিলার মাহরাম ব্যতীত পরস্পর  খালওয়াত তথা নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না।এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বলল।অমুক জিহাদে আমার আমার নাম লিখা হয়েছে,অন্যদিকে আমার স্ত্রী হজ্বে যেতে চাচ্ছে।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃবললেন,তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্বে যাও।(বুখারী-২৮০০)

খালওয়াহ শব্দের ব্যখ্যা
 الْخَلْوَةُ فِي اللُّغَةِ: مِنْ خَلاَ الْمَكَانُ وَالشَّيْءُ يَخْلُو خُلُوًّا وَخَلاَءً، وَأَخْلَى الْمَكَانُ: إِذَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ أَحَدٌ وَلاَ شَيْءَ فِيهِ، وَخَلاَ الرَّجُل وَأَخْلَى وَقَعَ فِي مَكَان خَالٍ لاَ يُزَاحَمُ فِيهِ
ভাবার্থ যখন কোনো স্থানে উক্ত আজনবী পুরুষ ও মহিলা ব্যতীত অন্য কেউ থাকবে না বা অন্য কোনো এমন জিনিষ থাকবে না যা সহবাসকে বাধা দিতে পারে।তথা এমন খালি স্থান যেখানে লোকসমাগম বলতে নেই।(আল মাওসুআতুল ফেকহীয়্যায়;১৯/২৬৫)


ফিৎনার আশংকা না থাকলে সফরের দূরত্বের চেয়ে কম (অর্থাৎ তিনদিন তিনরাত দূরত্বের জায়গা অথবা ৭৭(এক বর্ণনায় ৮২.৫) কিলোমিটারের চেয়ে কম) দূরত্ব মহিলার জন্য মাহরাম ব্যতীত সফর করা বৈধ রয়েছে।শায়খাইন রাহ তথা ইমাম আবু হানিফা রাহ ও ইমাম আবু ইউসুফ রাহ থেকে বর্ণিত রয়েছে,একদিন একরাত দূরত্বের জায়গা থেকে কম হলে তথা (৭৭÷৩=২৫.৬)২৫.৬ কিলোমিটার বা তার চেয়ে কম পরিমাণ জায়গা হলে মহিলা মাহরাম ব্যতীত সফর করতে পারবে।অন্যথায় পারবে না।
বর্তমান এই ফিতনার যুগে  নিম্নোক্ত মতামত-ই ফাতাওয়া তথা শরয়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্য।তবে এখানেও ফিতনার আশঙ্কা না থাকা চাই।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।(কিতাবুন-নাওয়াযিল;১৫/৪১৭)

বিস্তারিত জানুন- https://www.ifatwa.info/212


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১)
মাহরামের অনুমতিক্রমে জরুরী প্রয়োজনে কাছাকাছি দূরত্বে যথাসম্ভব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে মহিলা ঘরের বাহিরে যেতে পারবে।তবে মাহরামকে সাথে নিয়ে যাওয়াই সবেচেয়ে বেশী নিরাপদ।
পরিবেশ নিরাপদ হলে,মাহরামের উচিৎ,বিশেষ প্রয়েজনের সময় অনুমতি দিয়ে দেয়া।যেহেতু বর্তমান অবস্থা সর্বদাই আশংকাজনক থাকে,তাই মাহরাম কর্তৃক বাধা প্রদানকে বাড়াবাড়ি বলা যাবে না।

(২)
মাহরাম সাথে নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন।যদি সম্ভব না হয়, তাহলে পরিবেশ নিরাপদ হলে,যেতে পারবেন।সর্বোত্তম হল,প্রথমে মাহরামকে সাথে নিয়ে যাওয়া,বা মহিলাদের এক জামাতের সাথে যাওয়া।

(৩)
যদি আপনার মাহরাম না থাকে,তাহলে আপনি মহিলাদের এক জামাতকে সাথে করে নিয়ে যাবেন।তাহলে পরিবেশ কিছুটা নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।

(৪)
এখানেও আপনি মহিলাদের এক জামাত বা অন্তত আরো তিন চারজন মহিলাকে সাথে করে নিবেন।এক্ষেত্রে আপনার পিতাকে না জানানোর জন্য আপনার কোনো গোনাহ হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...