ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
দানকারী ঋণমুক্ত হতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি এমন পর্যায়ের ঋণেজড়িত হয় যে, যা পরিশোধ করার জন্য তার সমস্ত সম্পত্তি ব্যয় হয়ে যাবে, তাহলে এমন ব্যক্তির উচিৎ যে, নিজ ঋণ প্রথমে পরিশোধ করা। তারপরও ঐ অবস্থায় দান করলে তার ব্যাপারে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। কেউ বলেন, এরূপ করা জায়েয নয়। কেননা এতে পাওনাদারের ক্ষতি করা হয় এবং নিজের জিম্মায় আবশ্যিক ঋণের বোঝা বহন করে রাখা হয়।
ইমাম বুখারী রাহ এ সম্পর্কে একটি অধ্যায় রচনা করে বলেন যে,
باب لاَ صَدَقَةَ إِلاَّ عَنْ ظَهْرِ غِنًى وَمَنْ تَصَدَّقَ وَهْوَ مُحْتَاجٌ، أَوْ أَهْلُهُ مُحْتَاجٌ، أَوْ عَلَيْهِ دَيْنٌ، فَالدَّيْنُ أَحَقُّ أَنْ يُقْضَى مِنَ الصَّدَقَةِ وَالْعِتْقِ وَالْهِبَةِ، وَهْوَ رَدٌّ عَلَيْهِ، لَيْسَ لَهُ أَنْ يُتْلِفَ أَمْوَالَ النَّاسِ.
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকা ব্যতীত সাদকা না করা। যে ব্যক্তি সাদকা করতে চায়; অথচ সে নিজে দরিদ্র বা তার পরিবার-পরিজন অভাবগ্রস্হ অথবা সে ঋণগ্রস্হ, এ অবস্হায় তার জন্য সাদকা করা, গোলাম আযাদ করা ও দান করার চেয়ে ঋণ পরিশোধ করা কর্তব্য। এরূপ সাদকা করা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যের সম্পদ বিনষ্ট করার অধিকার তার নেই।
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيدُ إِتْلاَفَهَا أَتْلَفَهُ اللَّهُ». إِلاَّ أَنْ يَكُونَ مَعْرُوفًا بِالصَّبْرِ فَيُؤْثِرَ عَلَى نَفْسِهِ وَلَوْ كَانَ بِهِ خَصَاصَةٌ كَفِعْلِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حِينَ تَصَدَّقَ بِمَالِهِ، وَكَذَلِكَ آثَرَ الأَنْصَارُ الْمُهَاجِرِينَ، وَنَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ إِضَاعَةِ الْمَالِ، فَلَيْسَ لَهُ أَنْ يُضَيِّعَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِعِلَّةِ الصَّدَقَةِ. وَقَالَ كَعْبٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أَنْخَلِعَ مِنْ مَالِي صَدَقَةً إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ: «أَمْسِكْ عَلَيْكَ بَعْضَ مَالِكَ، فَهْوَ خَيْرٌ لَكَ». قُلْتُ فَإِنِّي أُمْسِكُ سَهْمِي الَّذِي بِخَيْبَرَ
নবী (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি বিনষ্ট করার ইচ্ছায় অন্যের সম্পদ হস্হগত করে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দিবেন। [ইমাম বুখারী (র) বলেন,] তবে এ ধরনের ব্যক্তি যদি ধৈর্যশীল বলে পরিচিত হয়, তথা নিজের দারিদ্র উপেক্ষা করে অন্যকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়, তাহলে সে সাদকা করতে পারে। যেমন আবূ বকর (রা)-এর (অমর) কীর্তি, তিনি সমুদয় সম্পদ সাদকা করে দিয়েছিলেন। তেমনিভাবে আনসারী সাহাবাগণ মুহাজির সাহাবাদেরকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। নবী (সাঃ) সম্পদ বিনষ্ট করতে নিষেধ করেছেন। কাজেই (ঋণ পরিশোধ না করে) সাদকা করার বাহানায় অন্যের সম্পদ বিনষ্ট করার কোন অধিকার কারো নেই। কা’ব ইব্ন মালিক (রা) বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সম্পদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর উদ্দেশ্যে সাদকা করে আপন তাওবা সম্পূর্ণ করতে চাই। তিনি বলেনঃ তোমার কিছু মাল নিজের জন্য রেখে দিবে। আর এটাই তোমার জন্য শ্রেয়। আমি বললাম, আমি খায়বারে প্রাপ্ত অংশটুকু রেখে দিব।[২১/ যাকাত (كتاب الزكاة) দ্রষ্টব্য)
অন্যদিকে কেউ বলেন, দান করা জায়েয আছে কিন্তু উত্তমতার বিপরীত।এবং এটাই গ্রহণযোগ্য যে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য সদকাহ করার চেয়ে ঋণ পরিশোধ করাই উত্তম।