মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَ لَا تَنۡفَعُ الشَّفَاعَۃُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا لِمَنۡ اَذِنَ لَهٗ ؕ حَتّٰۤی اِذَا فُزِّعَ عَنۡ قُلُوۡبِهِمۡ قَالُوۡا مَاذَا ۙ قَالَ رَبُّکُمۡ ؕ قَالُوا الۡحَقَّ ۚ وَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡکَبِیۡرُ ﴿۲۳﴾
আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কারো উপকার করবে না। অবশেষে যখন তাদের অন্তর থেকে ভয় বিদূরিত হবে তখন তারা বলবে, ‘তোমাদের রব কী বলেছেন’? তারা বলবে, ‘সত্যই বলেছেন’ এবং তিনি সুমহান ও সবচেয়ে বড়।
(সুরা সাবা ২৩)
یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مَا خَلۡفَهُمۡ وَ لَا یَشۡفَعُوۡنَ ۙ اِلَّا لِمَنِ ارۡتَضٰی وَ هُمۡ مِّنۡ خَشۡیَتِهٖ مُشۡفِقُوۡنَ ﴿۲۸﴾
তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন। আর তারা শুধু তাদের জন্যই সুপারিশ করে যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। তারা তাঁর ভয়ে ভীত।
(সুরা আম্বিয়া ২৮)
কে কে শাফায়াত করবেঃ-
নবীজি (সা.)-এর শাফায়াত : কঠিন কিয়ামতের দিন নবীজি (সা.)-এর আগে কাউকে শাফায়াত করার অনুমতি দেওয়া হবে।
সেই শাফায়াতে নবীজি (সা.) তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত মাকবুল দোয়াটি তাঁর উম্মতদের উদ্দেশে করার জন্য রেখে দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীই যা চাওয়ার চেয়ে নিয়েছেন। অথবা নবী (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক নবীকে যে দোয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছিল তিনি সে দোয়া করে নিয়েছেন এবং তা কবুলও করা হয়েছে। কিন্তু আমি আমার দোয়াকে কিয়ামতের দিনে আমার উম্মতের শাফায়াতের জন্য রেখে দিয়েছি।
’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩০৫)
নবীদের শাফায়াত : কিয়ামতের দিন নবীজি (সা.)-এর পর অন্য নবীরাও শাফায়াত করার সুযোগ পাবেন। মুসলিম শরিফের দীর্ঘ হাদিসের একাংশ দ্বারা এর প্রমাণ পাওয়া যায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরেশতারা সুপারিশ করলেন, নবীরাও সুপারিশ করলেন এবং মুমিনরাও সুপারিশ করেছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৪৩)
হাদিসে ‘নবীগণ’ দ্বারা বোঝা যায়, অন্য নবীরাও সুপারিশ করার অনুমতি পাবেন।
ফেরেশতাদের শাফায়াত : মহান আল্লাহ তাঁর কিছু বিশেষ ফেরেশতাদের সুপারিশ করার সুযোগ দেবেন, তাঁরা ছাড়া অন্য কোনো ফেরেশতা সুপারিশ করার অনুমতি পাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আকাশে কত ফেরেশতা আছে, তাদের কোনো সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না, যতক্ষণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট, তাকে অনুমতি না দেন।’ (সুরা নাজম, আয়াত : ২৬)
শহীদের শাফায়াত : যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করতে গিয়ে শাহাদাতবরণ করেছেন, কিয়ামতের দিন তাঁদের সুপারিশও গ্রহণ করা হবে।
মিক্বদাম বিন মা’দিকারিব কিন্দী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,
عن الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ : يُغْفَرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دَفْعَةٍ ، وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنْ الْجَنَّةِ ، وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ، وَيَأْمَنُ مِنْ الْفَزَعِ الْأَكْبَرِ ، وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ ، الْيَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنْ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ، وَيُزَوَّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ زَوْجَةً مِنْ الْحُورِ الْعِينِ ، وَيُشَفَّعُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَقَارِبِهِ ) .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য রয়েছে ৬টি দান; তার রক্তের প্রথম ক্ষরণের সাথে তার পাপ ক্ষমা করা হবে, জান্নাতে তার বাসস্থান দেখানো হবে, কবরের আযাব থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হবে, কিয়ামতের মহাত্রাস থেকে নিরাপত্তা পাবে, ঈমানের অলঙ্কার পরিধান করবে, সুনয়না হুরীদের সাথে তার বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার নিজ পরিজনের মধ্যে ৭০ জনের জন্য তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে।(তিরমিযি-১৬৬৩,আহমাদ ১৭১৮২,ইবনে মাজাহ ২৭৯৯, সহীহ তিরমিযী ১৩৫৮)
মা-বাবার জন্য সন্তানের শাফায়াত :
আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে মুসলিমের তিনটি সন্তান সাবালক হওয়ার আগে মারা গেল, তাদের প্রতি তাঁর রহমতস্বরূপ অবশ্যই আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
’ (বুখারি, হাদিস : ১২৪৮)
মুমিনের শাফায়াত : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মৃত ব্যক্তির ওপর যখন একদল মুসলিম (যাদের সংখ্যা এক শ হবে) জানাজার নামাজ আদায় করে এবং সবাই তার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে, তবে তার জন্য এ সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০৮৭)
অন্য হাদিসের একাংশে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, ওই দিন মুমিনরা তাদের ওই ভাইদের স্বার্থে আল্লাহর সঙ্গে এত অধিক বিতর্কে লিপ্ত হবে, যারা জাহান্নামে রয়ে গেছে যে তোমাদের পার্থিব অধিকারের ক্ষেত্রেও এমন বিতর্কে লিপ্ত হইয়ো না। তারা বলবে, হে রব, এরা তো আমাদের সঙ্গেই সিয়াম, সালাত আদায় করত, হজ করত। তখন তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে যে যাও, তোমাদের পরিচিতদের উদ্ধার করে আনো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৪৩)
রোজা ও কোরআন এর শাফায়াত : কঠিন কিয়ামতের দিন রোজা ও কোরআনও মানুষের জন্য সুপারিশ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিয়াম ও কোরআন বান্দার জন্য শাফায়াত করবে। সিয়াম বলবে, হে রব, আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মেটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফায়াত কবুল করো। কোরআন বলবে, হে রব, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১৮৩৯)