আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
79 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (23 points)
আচ্ছালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। প্রিয় হযরত,

আমরা একটা বিষয়ে ওলামায়ে কেরামদের মুখে থেকে শুনি , হাসরের ময়দানে নবীদের পরে হাফেজে কুরআন , আলেম শাফায়াত করবে। এই বিষয়টা নিয়ে বিশেষ করে শায়েখে চরমনায় রহঃ কে নিয়ে নানা রকম কটু কথা মানুষ বলে, যা আমার অনেক খারাপ লাগে। শাফায়াতের বিষয়ে যত দিক আছে , যেমন

১. কে কে শাফায়াত করবে,
২.একজন জান্নাতি কত জন জাহান্নামীকে শাফায়াত করবে
৩.একজন জান্নাতির পেছনে কতজন শাফায়ৎ পেয়ে পেছনে পেছনে জান্নাতে যাবে ইত্যাদি বিভিন্ন দিকগুলো যদি কুরআন হাদিস থেকে বিস্তারিত আলোচনা করতেন। তাহলে আমি এই বিষয়টা সুন্দরভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে পারতাম।
আল্লাহর গোলামের জন্য দোয়া চাই। আপনাদের আল্লাহ পাক নেক হায়াত দান করুন। আচ্ছালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَ لَا تَنۡفَعُ الشَّفَاعَۃُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا لِمَنۡ اَذِنَ لَهٗ ؕ حَتّٰۤی اِذَا فُزِّعَ عَنۡ قُلُوۡبِهِمۡ قَالُوۡا مَاذَا ۙ قَالَ رَبُّکُمۡ ؕ قَالُوا الۡحَقَّ ۚ وَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡکَبِیۡرُ ﴿۲۳﴾
আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কারো উপকার করবে না। অবশেষে যখন তাদের অন্তর থেকে ভয় বিদূরিত হবে তখন তারা বলবে, ‘তোমাদের রব কী বলেছেন’? তারা বলবে, ‘সত্যই বলেছেন’ এবং তিনি সুমহান ও সবচেয়ে বড়। 
(সুরা সাবা ২৩)

یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مَا خَلۡفَهُمۡ وَ لَا یَشۡفَعُوۡنَ ۙ اِلَّا لِمَنِ ارۡتَضٰی وَ هُمۡ مِّنۡ خَشۡیَتِهٖ مُشۡفِقُوۡنَ ﴿۲۸﴾
তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন। আর তারা শুধু তাদের জন্যই সুপারিশ করে যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। তারা তাঁর ভয়ে ভীত।
(সুরা আম্বিয়া ২৮)

কে কে শাফায়াত করবেঃ-

নবীজি (সা.)-এর শাফায়াত : কঠিন কিয়ামতের দিন নবীজি (সা.)-এর আগে কাউকে শাফায়াত করার অনুমতি দেওয়া হবে।

সেই শাফায়াতে নবীজি (সা.) তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত মাকবুল দোয়াটি তাঁর উম্মতদের উদ্দেশে করার জন্য রেখে দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীই যা চাওয়ার চেয়ে নিয়েছেন। অথবা নবী (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক নবীকে যে দোয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছিল তিনি সে দোয়া করে নিয়েছেন এবং তা কবুলও করা হয়েছে। কিন্তু আমি আমার দোয়াকে কিয়ামতের দিনে আমার উম্মতের শাফায়াতের জন্য রেখে দিয়েছি।
’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩০৫)

নবীদের শাফায়াত : কিয়ামতের দিন নবীজি (সা.)-এর পর অন্য নবীরাও শাফায়াত করার সুযোগ পাবেন। মুসলিম শরিফের দীর্ঘ হাদিসের একাংশ দ্বারা এর প্রমাণ পাওয়া যায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরেশতারা সুপারিশ করলেন, নবীরাও সুপারিশ করলেন এবং মুমিনরাও সুপারিশ করেছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৪৩)

হাদিসে ‘নবীগণ’ দ্বারা বোঝা যায়, অন্য নবীরাও সুপারিশ করার অনুমতি পাবেন।

ফেরেশতাদের শাফায়াত : মহান আল্লাহ তাঁর কিছু বিশেষ ফেরেশতাদের সুপারিশ করার সুযোগ দেবেন, তাঁরা ছাড়া অন্য কোনো ফেরেশতা সুপারিশ করার অনুমতি পাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আকাশে কত ফেরেশতা আছে, তাদের কোনো সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না, যতক্ষণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট, তাকে অনুমতি না দেন।’ (সুরা নাজম, আয়াত : ২৬)

শহীদের শাফায়াত : যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করতে গিয়ে শাহাদাতবরণ করেছেন, কিয়ামতের দিন তাঁদের সুপারিশও গ্রহণ করা হবে। 

মিক্বদাম বিন মা’দিকারিব কিন্দী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,
عن الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ : يُغْفَرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دَفْعَةٍ ، وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنْ الْجَنَّةِ ، وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ، وَيَأْمَنُ مِنْ الْفَزَعِ الْأَكْبَرِ ، وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ ، الْيَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنْ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ، وَيُزَوَّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ زَوْجَةً مِنْ الْحُورِ الْعِينِ ، وَيُشَفَّعُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَقَارِبِهِ ) .
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য রয়েছে ৬টি দান; তার রক্তের প্রথম ক্ষরণের সাথে তার পাপ ক্ষমা করা হবে, জান্নাতে তার বাসস্থান দেখানো হবে, কবরের আযাব থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হবে, কিয়ামতের মহাত্রাস থেকে নিরাপত্তা পাবে, ঈমানের অলঙ্কার পরিধান করবে, সুনয়না হুরীদের সাথে তার বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার নিজ পরিজনের মধ্যে ৭০ জনের জন্য তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে।(তিরমিযি-১৬৬৩,আহমাদ ১৭১৮২,ইবনে মাজাহ ২৭৯৯, সহীহ তিরমিযী ১৩৫৮)

মা-বাবার জন্য সন্তানের শাফায়াত : 
আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে মুসলিমের তিনটি সন্তান সাবালক হওয়ার আগে মারা গেল, তাদের প্রতি তাঁর রহমতস্বরূপ অবশ্যই আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
’ (বুখারি, হাদিস : ১২৪৮)

মুমিনের শাফায়াত : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মৃত ব্যক্তির ওপর যখন একদল মুসলিম (যাদের সংখ্যা এক শ হবে) জানাজার নামাজ আদায় করে এবং সবাই তার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে, তবে তার জন্য এ সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০৮৭)

অন্য হাদিসের একাংশে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, ওই দিন মুমিনরা তাদের ওই ভাইদের স্বার্থে আল্লাহর সঙ্গে এত অধিক বিতর্কে লিপ্ত হবে, যারা জাহান্নামে রয়ে গেছে যে তোমাদের পার্থিব অধিকারের ক্ষেত্রেও এমন বিতর্কে লিপ্ত হইয়ো না। তারা বলবে, হে রব, এরা তো আমাদের সঙ্গেই সিয়াম, সালাত আদায় করত, হজ করত। তখন তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে যে যাও, তোমাদের পরিচিতদের উদ্ধার করে আনো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৪৩)

রোজা ও কোরআন এর শাফায়াত : কঠিন কিয়ামতের দিন রোজা ও কোরআনও মানুষের জন্য সুপারিশ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিয়াম ও কোরআন বান্দার জন্য শাফায়াত করবে। সিয়াম বলবে, হে রব, আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মেটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফায়াত কবুল করো। কোরআন বলবে, হে রব, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১৮৩৯)
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)

(২.৩)
শহীদদের ক্ষেত্রে ৭০ জনের কথা উল্লেখ রয়েছে।
আর আমল ওয়ালা হাফেজদের ক্ষেত্রে ১০ জনের কথা উল্লেখ রয়েছে। 
অন্যান্যদের ক্ষেত্রে কোনো সংখ্যার কথা পাইনি।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...