আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
53 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (1 point)
অনেক পোষাকে বিশেষত টি-শার্টে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি বা মুখাবয়ব থাকে। অনেকেই বিশেষত শহরের লোকেরা এই  ধরনের পোষাক বেশি পড়ে থাকে কিংবা বাচ্চাদেরকেও পড়ায়। এদের একটা অংশ আবার মুসলিম।  এখন আমার প্রশ্ন হল-

১। প্রাণীর ছবিযুক্ত পোষাকের ব্যবসা করা যাবে কিনা?

২। মুসলিমদের নিকট এই ধরনের পোষাক বিক্রি করা যাবে কিনা? গেলে এই পোষাক পড়া যে মুসলিমদের জন্য ঠিক নয় একথা তাদেরকে বলে দিতে হবে কিনা?

৩। আনুষঙ্গিক, প্রাপ্ত বয়ষ্কদের হাফ প্যান্ট (ছেলে মেয়ে উভয়ই), মেয়েদের টি শার্ট, থ্রিপিসের ব্যবসা করা যাবে কিনা? টাখনুর নিচে চলে যায় ছেলেদের  এমন প্যান্ট বিক্রি করা যাবে কিনা? মেয়েদের জিন্সের প্যান্ট বিক্রি করা যাবে কিনা?

৪। পোষাকের ব্যবসার  মূলনীতিগুলো কি কি?

1 Answer

0 votes
by (677,160 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এসব কাপড় বানানো,বিক্রয় করা মাকরূহ হবে।
যেহেতু এর দ্বারা গোনাহের কাজের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। আর গোনাহের কাজের সহযোগিতা করাও নিষিদ্ধ।

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ 

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥:٢

সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। {সূরা মায়িদা-২}

বাকি এসব কাপড় বিক্রির টাকাকে হারাম বলা যাবে না। কারণ, এসব কাপড় বিক্রির দ্বারা মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে থাকে কাপড়, ছবি নয়।
তাই ছবি থাকায় কাপড় বিক্রি করা মাকরূহ হলেও এর দ্বারা উপার্জিত অর্থকে হারাম বলা যাবে না। [ফাতাওয়া কাসিমীয়া-১৯/৪৯৬]

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   
عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ: أَنَّ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ رَأَى حُلَّةً سِيَرَاءَ تُبَاعُ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَوِ ابْتَعْتَهَا تَلْبَسُهَا لِلْوَفْدِ إِذَا أَتَوْكَ وَالجُمُعَةِ؟ قَالَ: «إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ» وَأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ بَعْدَ ذَلِكَ إِلَى عُمَرَ حُلَّةً سِيَرَاءَ حَرِيرٍ كَسَاهَا إِيَّاهُ، فَقَالَ عُمَرُ: كَسَوْتَنِيهَا، وَقَدْ سَمِعْتُكَ تَقُولُ فِيهَا مَا قُلْتَ؟ فَقَالَ: «إِنَّمَا بَعَثْتُ إِلَيْكَ لِتَبِيعَهَا، أَوْ تَكْسُوَهَا»

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উমর (রাঃ) একটি রেশমী হুল্লা বিক্রী হতে দেখে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যদি এটি খরীদ করে নিতেন, তা হলে যখন কোন প্রতিনিধি দল আপনার কাছে আসে তখন এবং জুমুআর দিনে পরিধান করতে পারতেন। তিনি বললেনঃ এটা সে ব্যক্তিই পরতে পারে যার আখিরাতে কোন অংশ নেই। পরবর্তী সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর (রাঃ) এর নিকট ডোরাকাটা রেশমী হুল্লা পাঠান। তিনি কেবল তাকেই পরতে দেন। উমর (রাঃ) বললেন আপনি এখনি আমাকে পরতে দিয়েছেন, অথচ এ সম্পর্কে যা বলার তা আমি আপনাকে বলতে শুনেছি। তিনি বললেন আমি তোমার কাছে এজন্য পাঠিয়েছি যে তুমি এটি বিক্রি করে দিবে অথবা কাউকে পরতে দিবে। (সহীহ বুখারী-২/৮৬৮, হাদীস নং-৫৮৪১, ইফাবা-৫৪২৩)
,
وجاز بيع عصير عنب ممن يعلم أنه يتخذه خمرا، لأن المعصية لا تقوم بعينه، بل بعد تغيره، وقيل يكره لإعانته على المعصية (رد المحتار، كتاب الحظر والاباحة، فصل فى البيع-9/560، البحر الرائق، كتاب الكراهية، فصل فى البيع-8/371)

যার সারমর্ম হলো আঙ্গুরের নিংড়ানো রস বিক্রয় করা জায়েজ আছে, যদিও জানা যায় যে ঐ ব্যাক্তি এটা দিয়ে মদ বানাবে,কেননা এটা সরাসরি মদ বয়,বরং এটা পরিবর্তন হয়েই মদ হয়। 
কেহ কেহ বলেছেন যে মাকরুহ হবে।   
,
ফাসিক ব্যক্তিদের সহযোগিতার উদ্দেশ্য না করে, শুধু হালাল ব্যবসার নিয়তে গায়রে শরয়ী পোশাক বিক্রয় করলে গোনাহ হবে না। তবে এটি মাকরূহে তানজীহী তথা অনুত্তম হবে। তবে এর দ্বারা অর্জিত টাকা নিশ্চিতভাবেই জায়েজ হবে।
মনের মাঝে এর প্রতি ঘৃণা রেখে বিক্রি করবে।
যে ব্যক্তি বা নারীরা তা ব্যবহার করবে, তারা গোনাহগার হবে। কিন্তু বিক্রেতা নয়।

أن بيع العصير ممن يتخذه خمرا إن قصد به التجارة، فلا يحرم وإن قصد به لأجل التخمير حرم (الأشباه والنظائر-53)
যার সারমর্ম হলো আঙ্গুরের নিংড়ানো রস বিক্রয় করা ব্যবসার উদ্দেশ্যে জায়েজ আছে।

আরো জানুনঃ- 

(০২)
মুসলিমদের নিকট এই ধরনের পোষাক বিক্রি করা মাকরুহ।
এই পোষাক পড়া যে মুসলিমদের জন্য ঠিক নয়, একথা তাদেরকে বলে দেয়া আবশ্যক নয়।

(০৩)
উপরোক্ত পোশাক গুলি ক্রয় বিক্রয় করা যাবে।

তবে মেয়েদের জিন্সের প্যান্ট বিক্রি করার বিধান নিয়ে উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ রয়েছে। 

অনেকেই নাজায়েজ বলেছেন।

সুতরাং উক্ত পোশাক বিক্রয় না করাই সতর্কতা।

(০৪)
পুরুষদের ছবি ছাড়া পোশাক বিক্রয় করতে কোনো সমস্যা নেই।

ছবি যুক্ত পোশাক বিক্রয় মাকরুহ।
যার বিবরণ উপরে উল্লেখ রয়েছে।

এখন রইলো নারীদের পোশাক বিক্রয়ের মাসয়ালা।

https://www.ifatwa.info/242 ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ
নারীজাতীয় কাপড় সমূহ যা দোকানে বিক্রি হয়, তা তিন অবস্থা থেকে খালি নয়ঃ- 

প্রথম অবস্থাঃ- 

বিক্রেতার বিশ্বাস বা ধারণা রয়েছে যে, এই কাপড়গুলো হালাল ত্বরিকায়-ই ব্যবহৃত হবে,হারাম ত্বরিকায় কখনো ব্যবহৃত হবে না। তাহলে এই সমস্ত কাপড় বিক্রি করা জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। 

দ্বিতীয় অবস্থাঃ-

বিক্রেতার বিশ্বাস বা ধারণা রয়েছে যে, এই কাপড়গুলো হারাম ত্বরিকায় ব্যবহৃত হবে।তথা মহিলা এগুলো পড়ে পরপুরুষের সামনে সৌন্দর্য্য প্রদর্শন করবে।তাহলে এই সমস্ত কাপড় বিক্রি করা সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরামদের মতপার্থক্য রয়েছে।

একদল উলামায়ে কেরাম বলেন, হারাম।কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেন, তোমরা গোনাহ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যকে সাহায্য করো না।(সূরা মায়েদা-০২)  

অপরদিকে একদল উলামায়ে কেরাম বলেন,জায়েয।গোনাহ তারই হবে যে কাপড় পড়বে।বিক্রেতার এক্ষেত্রে কোনো গোনাহ হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ রেশম কাপড় বিক্রির অনুমতি হযরত উমর রাযি কে দিয়েছিলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত।

 عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ: أَنَّ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ رَأَى حُلَّةً سِيَرَاءَ تُبَاعُ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَوِ ابْتَعْتَهَا تَلْبَسُهَا لِلْوَفْدِ إِذَا أَتَوْكَ وَالجُمُعَةِ؟ قَالَ: «إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ» وَأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ بَعْدَ ذَلِكَ إِلَى عُمَرَ حُلَّةًسِيَرَاءَ حَرِيرٍ كَسَاهَا إِيَّاهُ، فَقَالَ عُمَرُ: كَسَوْتَنِيهَا، وَقَدْ سَمِعْتُكَ تَقُولُ فِيهَا مَا قُلْتَ؟ فَقَالَ: «إِنَّمَا بَعَثْتُ إِلَيْكَ لِتَبِيعَهَا، أَوْ تَكْسُوَهَا» 

উমর (রাঃ) একটি রেশমী হুল্লা বিক্রী হতে দেখে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যদি এটি খরীদ করে নিতেন, তা হলে যখন কোন প্রতিনিধি দল আপনার কাছে আসে তখন এবং জুমুআর দিনে পরিধান করতে পারতেন। তিনি বললেনঃ এটা সে ব্যক্তিই পরতে পারে যার আখিরাতে কোন অংশ নেই। পরবর্তী সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর (রাঃ) এর নিকট ডোরাকাটা রেশমী হুল্লা পাঠান। তিনি কেবল তাকেই পরতে দেন। উমর (রাঃ) বললেন, আপনি এখনি আমাকে পরতে দিয়েছেন, অথচ এ সম্পর্কে যা বলার তা আমি আপনাকে বলতে শুনেছি। তিনি বললেন আমি তোমার কাছে এজন্য পাঠিয়েছি যে, তুমি এটি বিক্রি করে দিবে অথবা কাউকে পরতে দিবে। (সহীহ বুখারী-২/৮৬৮, হাদীস নং-৫৮৪১, ইফাবা-৫৪২৩)

৩য় অবস্থাঃ-
যদি বিক্রেতা সন্দেহ করে এবং দিধাবোধ করে যে, এই কাপড়গুলো হারামে ব্যবহৃত হবে? না হারামে ব্যবহৃত হবে? এবং কাপড়ও এমন যে, ইহা উভয় ত্বরিকায়ই ব্যবহৃত হয়।এবং হলাল-হারাম পরিধানের কোনো একটিকে অগ্রাধিকার দেয়ার কোনোও ইঙ্গিত আপাতত সামনে নেই,তাহলে এমতাবস্থায় এই কাপড় গুলোকে বিক্রি করতে কোনো অসুবিধা নেই।

বিস্তারিত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...