আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
211 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (12 points)

স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে " এখানেই সম্পর্ক শেষ" এভাবে একবার এবং "এটাই তো শোনা বাকি আছে তোমার? যাও সম্পর্ক শেষ" এভাবে একবার এবং "আমি ঘুমালেই যদি তোমার সমস্যা হয় তাহলে আমি এটা মানতে পারব না, এভাবে সম্পর্ক রাখার দরকার নেই" এভাবে একবার এরপর স্ত্রী বলেন যে "এভাবে বলবেন না, আর উচ্চারণ করবেন না সত্যিই সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে কিন্তু তখন স্বামী যদি বলে "আমার এটার আর দরকার নেই"এভাবে একবার উক্ত ভাবে একই সময়ে কয়েকবার এইসকল কথা বলে থাকলে ঐ সম্পর্কে কি তিন তালাকের হুকুম প্রযোজ্য হবে? উল্লেখ্য যে ইতপূর্বেও একবার স্বামী বলেছিলো " সম্পর্ক শেষ" তখন স্ত্রী কথা ধরায় স্বামী বলে যে আমি "সম্পর্ক শেষ করার ব্যবস্থা করে দিব"  এটা বলতে চেয়েছিলাম তুমি কথা শেষ করার আগেই আমাকে আটকে দিয়েছো। আমি শুধু ঐটুকু বলতে চাইনি। কিন্তু স্ত্রীর মনে হয় সে ঐটুকুই বলেছে। এই অবস্থায় "সম্পর্ক শেষ কথাটি স্পষ্ট দুবার বলা হয়েছে এক বসায়। আর স্ত্রীর ভাষ্যমতে পূর্বের একবার দিয়ে মোট তিনবার হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এই সম্পর্কের হুকুম কী?

1 Answer

0 votes
by (573,660 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তে বিশেষ প্রয়োজনে,যখন স্বামী স্ত্রীর মাঝে  বনিবনা কোনো ভাবেই সম্ভবপর হয়না,তখন এক তালাক দেওয়ার বিধান এসেছে।
বিনা কারণে তালাক প্রদাণ করা হারাম।এর শাস্তি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে অবশ্যই পেতে হবে।

তালাক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত,

عن ابن عمر، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «أبغض الحلال إلى الله تعالى الطلاق»

অর্থ:রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাকের নিকট সর্বাপেক্ষা অপছন্দনীয় হালাল হচ্ছে 'তালাক'।(আবু দাউদ-২১৭৮)

শরিয়তের পরিভাষায় প্রশ্নে উল্লেখিত জাতীয় শব্দে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

ফাতওয়ার কিতাবে আছেঃ 

وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.
احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت
برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية

সারমর্মঃ  
২য় প্রকার,কেনায়া বাক্য।
এর দ্বারা তালাক হবেনা,কিন্তু তালাকের নিয়ত অথবা অবস্থার ভিত্তিতে তালাক হবে। কেনায়া বাক্য দুই প্রকার। এর মধ্যে তিনটি শব্দ এমন আছে, যার দ্বারা  তালাকে রজয়ী পতিত হয়। 
সেগুলো হলোঃ- তুমি ইদ্দত পালন করো,তুমি তোমার গর্ভাশয় মুক্ত করো,তুমি এক।

আর কেনায়া তালাকের অন্যান্য শব্দ,যেক্ষেত্রে তালাকের নিয়ত করলে বায়েন তালাক হয়। তিন তালাকের নিয়ত করলে তিন তালাক পতিত হয়। 
যদি দুই তালাকের নিয়ত করে,সেক্ষেত্রে এক তালাক পতিত হয়।
যেমনঃ- তুমি বিচ্ছিন্ন, তুমি সম্পর্ক মুক্ত,তুমি ভিন্ন,তুমি হারাম,তুমি শুণ্য,তুমি মুক্ত,তোমার রশি তোমার কাঁধে,তুমি তোমার পরিবারবর্গের সাথে মিলিত হও,আমি তোমাকে তোমার পরিবারের জন্য হেবা-দান করলাম,আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম,আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম,তোমার বিষয় তোমার হাতে,তুমি আযাদ,তুমি ঘোমটা পড়,তুমি ওড়না দ্বারা নিজেকে আবৃত করো,তুমি আড়াল হও (পর্দা করো), তুমি বিদূরিত হও, তুমি বের হয়ে যাও,তুমি চলে যাও,তুমি দন্ডায়মান হও (দাঁড়িয়ে যাও), তুমি অন্য স্বামী খুজো।
স্বামীর যদি এখানে নিয়ত না থাকে,তাহলে এ সব বাক্য দ্বারা তালাক হবেনা। তবে মুযাকারায়ে তালাকের ক্ষেত্রে হলে কাযা'আন তালাক হবে। দিয়ানাতান তালাক হবেনা,কিন্তু যদি নিয়ত করে,তাহলে তালাক হবে।
আর যদি মুযাকারায়ে তালাকের ক্ষেত্রে না হয়,বরং রাগ ও ঝগড়াঝাটির অবস্থায় হয়,তাহলে প্রত্যেকটি কেনায়া বাক্য বলার দ্বারাই তালাক হবে,কিন্তু যেসব বাক্য দিয়ে গালি গালাজ উদ্দেশ্য করা হয়,সেসব বাক্য দ্বারা তালাক হবেনা,কিন্তু যদি নিয়ত করে,তাহলে তালাক হবে।

(কুদুরী ৩৬৩.৩৬৪. হেদায়া শরহুল বিদায়াহ ১/২৪১)

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
"সম্পর্ক শেষ" শব্দটি তালাকের কেনায়া বাক্য। তালাকের নিয়তে বললেই কেবল তালাক হয়,তালাকের নিয়ত ছাড়া বললে তালাক হয়না।

এ সংক্রান্ত জানুনঃ 

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত শব্দ গুলো বলার দ্বারা যদি স্বামীর তালাকের নিয়ত থেকে থাকে,তাহলে এক তালাক পতিত হবে।    
নতুবা এক তালাকও পতিত হবেনা।

★কেননা শরীয়তের বিধান হলো কেনায়া বাক্যে তালাক দেওয়া হলে ইদ্দতের মধ্যে স্পষ্ট বাক্যে তালাক দিলে আবার তালাক পতিত হবে।
অস্পষ্ট বাক্যে তালাক দিলে অথবা ইদ্দতের পর তালাক দিলে সেই তালাক পতিত হবেনা।  

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ   
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (3/ 306)
(الصريح يلحق الصريح و) يلحق (البائن) بشرط العدة (والبائن يلحق الصريح) الصريح ما لا يحتاج إلى نية بائنا كان الواقع به أو رجعيا فتح  ۔۔۔ (لا) يلحق البائن (البائن)
সারমর্মঃ
স্পষ্ট বাক্যে তালাক দিলে ইদ্দতের মধ্যে স্পষ্ট এবং অস্পষ্ট অভয় প্রকারের বাক্য দ্বারাই তালাক দিলে তাহা পতিত হবে।
তবে কেনায়া বাক্যে তালাক দেওয়া হলে ইদ্দতের মধ্যে স্পষ্ট বাক্যে তালাক দিলে আবার তালাক পতিত হবে।
অস্পষ্ট বাক্যে তালাক দিলে সেই তালাক পতিত হবেনা।   


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...