আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
127 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (5 points)
আসসালামু আলাইকুম। হুজুর আমি ছোট বেলা থেকে জানতাম যে পর্দা করে চাকরী করা যাবে। আর তখন এটা শুনেছিলাম যে পর্দার ক্ষেত্রে মুখ খোলা রাখা জায়েয আছে। কিন্তু এখন মুখ লাগিয়ে পর্দা করার চেষ্টা করছি। আমার বাবা মা আর্থিক ভাবে সচ্ছল ছিল না, এখনো সচ্ছল না। আমি খাবার, পড়াশুনা থেকে সব ব্যাপারেই আর্থিক কষ্টে বড় হয়েছি।পড়াশুনার ব্যাপার টা তে খুব কষ্ট করতে হইসে আর্থিক সমস্যার কারণে। তাই আমি ছোট থেকে চিন্তা করেছি চাকরী করবো, পর্দা করে চাকরী করা জায়েয ভেবেই এ রকম ভাবে পড়াশুনা করেছি। ছোট থেকেই বোরখা, হিজাব, নামাজ পড়তাম। এখনও করি আলহামদুলিল্লাহ। বর্তমানে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করছি আমি।

এখানে নামাজের ব্যবস্থা আছে, একজন মহিলা ম্যানেজার এর সাথে কাজ করি। আমার অফিসের এমনিতে ওরকম সমস্যা নেই যে অপ্রয়োজনে ছেলেদের সাথে কথা বলতে হবে। ম্যাম এর সাথে কাজ নিয়ে কথা বলি, ছেলে কলিগদের সাথে খুব দরকার (অফিস এর কাজের) ছাড়া কথা বলি না। নিজে নিজে একা বসে কাজ করি, খুব দরকার এ তাদের থেকে হয়ত কাজের ব্যাপারে কোন কিছু শুনতে বা কথা জিজ্ঞেস করতে হয় দু এক সময়।
বোরখা, নিকাব সবই পড়ি কিন্তু এখানে খাবার খাওয়ার আলাদা জায়গা নেই, তাই আমাকে নাস্তা এবং দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় মুখ এর কিছু অংশ খুলে খেতে হয়, এরপর আবার মুখ লাগিয়ে ফেলি।। অফিস এর অন্য সেক্টর গুলোতে পুরুষরা কাজ করেন। এখানের অফিস গুলো এ রকমই সব, আলাদা জায়গা রাখে না খাবারের।
এখন হুজুর আমার বাবা , মা ও চান যে আমি চাকরী করি। তারা নামাজ পরেন কিন্তু এটা ভাবেন যে পর্দা করে মেয়েরা চাকরী করতে পারবে। আর যেহেতু আমরা আর্থিক ভাবে অচ্ছল। আমার হাসব্যান্ড ও চান বলতে তিনি নিরুপাই এখন। একসাথে ঢাকা তে থাকি আমি আর আমার হাসব্যান্ড । আমি যদি চাকরী না করি তাহলে হইত আমাকে আমার শ্বশুর বাড়িতে রেখে আসতে হবে তার । আমার শ্বশুর বাড়িতে পর্দা মেইন টেইন করার পরিবেশ নেই, আমার শ্বশুর বাড়িতে যৌথ পরিবার তারা। শ্বশুর এর ভাইরা ও একসাথে থাকেন। কেও ই তেমন পর্দার ব্যাপারে মানেন না। গোসল, বাথরুম সব বাহিরে, সেখানে গেলে আমার দ্বীন পালন করায় কঠিন হয়ে যাবে। আর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে আমার হাসব্যান্ড কে ছাড়া থাকতে হবে তাহলে।কারণ হাসব্যান্ড ঢাকা তে ছোট কাজ করে পাশাপাশি পড়াশুনা করে।

আমার হাসব্যান্ড আমাকে দ্বীন পালনে সহযোগিতা করে । কিন্তু সে চায় তার একটা চলার মতো রোজকার করার ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত যেনও আমি চাকরীটা করি আপাতত,আমাকে অন্য সব কিছুতে হেল্প করে। কিন্তু আমাকে তো চাকরী করতে হচ্ছে, আমরা দুজন চেষ্টা করেছিলাম যে এই কাজ টা যেনও বাসায় বসে করতে পারি, ম্যানেজার ম্যাম দিয়ে ছিলেন ও কিন্তু কিছুদিন পর আবার অফিসে এসেই কাজ করতে বলছেন। এখন যেহেতু ম্যানেজার মেয়ে মানুষ আর এমনিতে অন্য ব্যাপারে ভালোই তিনি, নামাজ ও পরেন তাই আমার হাসব্যান্ড আমাকে বুঝায় যে পরিস্থিতির কারণে আপাতত যেনো চাকরী টা করি। আমার হাসব্যান্ড এমনিতে খুব ভালো মানুষ, আর সেও আমাকে পর্দার মধ্যেই থাকতে সাহায্য করে শুধু চাকরীর জায়গা তে আমরা নিরুপায়।

এখন আমি কি করবো উস্তাদ, আমার নিজের ও অসহায় লাগছে চাকরী জায়েয হবে কিনা এটা ভেবে। আমি চাকরী ছাড়লে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দ্বীন পালন করবো কিভাবে, সেখানে তো গোসল, ঘরের সব কাজ বাহিরে। এখন সেখানে পর্দার ব্যাবস্থা করার মতো টাকা ও নেই আমার হাসব্যান্ড এর কাছে।
আবার আমার বাবাও অনেক বয়স হইসে। বাসায় ভাইয়ের সংসার এ থাকেন, তাদের আর্থিক অবস্থা খুব ই খারাপ। সেখানে কিছুদিন থাকার মতো পরিস্থিতি ও নেই আমার এখন, আমার ছোট বোন কে পড়াশুনার জন্য টাকা ও দিতে হয় আমার।
এখন চাকরীর সমস্যা টা ছাড়া অন্য সব সহজ আমার জন্য, বাসার মধ্যে ইসলামিক পড়াশুনা করতেও হাসব্যান্ড সহযোগিতা করেন । দ্বীনের এতো বুঝ আগে ছিল না আমার মধ্যে, এখন দ্বীন পালনের অনেক চেষ্টা করসি কিন্তু মনে হচ্ছে যে চাকরী করে কি আমার অন্য এবাদাত করে লাভ হচ্ছে বেশি? নিরুপায় হয়ে চাকরী টা কি জায়েয এখন আমার জন্য?
অনেক দুয়া করতেসি যেনও বাসায় বসে কোন কাজ করার ব্যবস্থা আল্লাহ করে দেন আমাকে। হাসব্যান্ড আর অল্প কিছুদিন ধৈর্য ধরতে বলতেসে আমাকে। বলসে সে একটু ভালো কিছু করতে পারলে আমাকে আর বাসার বাহিরে চাকরী করতে দিবে না। এখন কি ধৈর্য ধরে আল্লাহর কাছে দুয়া, ক্ষমা চেয়ে চাকরী টা করা জায়েয হবে আপাতত? নাকি চাকরী টা ছেড়ে দিবো? তখন সব কিছু আরও খারাপ হলে যদি দ্বীন পালন না করতে পারি? হাসব্যান্ড কেও তো তখন কিছু বলতে পারবো না, আমার খুব অসহায় লাগতেসে হুজুর। বিস্তারিতও লিখলাম জন্য বড় হয়েছে মাফ করবেন আর আমাকে পরামর্শ দিন হুজুর।

1 Answer

0 votes
by (560,580 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

প্রয়োজন, অপরাগতা কিংবা ঠেকায় পড়ার পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ অবস্থায় নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শরীয়ত তাদের ওপর এমন দায়িত্ব আরোপ করে নি, যার কারণে তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا
‘নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)

নারী মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ ‘তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম।’ (আবু দাউদ ৫৬৭)

নারী চাকরির খাতিরে ঘর থেকে বের হতে পারবে। তবে এর জন্য কিছু নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। নিয়ম ও শর্তগুলো মেনে চললে নারীর জন্য ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয হবে; অন্যথায় নয়। 
যেমন,
– যদি সত্যিকারে তার চাকরি করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হবে।
– চাকরিটা তার দৈহিক, মানসিক স্বভাব ও রুচির সঙ্গে সামন্জস্যশীল হতে হবে। যেমন, ডাক্তারি, নার্সিং, শিক্ষা, সেলাই কিংবা এ জাতীয় পেশা হতে হবে।
– কর্মক্ষেত্রে পর্দার পরিপূর্ণ পরিবেশ থাকতে হবে। অন্যথায় জায়েয হবে না।
– চাকরির কারণে যাতে পরপুরুষের সঙ্গে সফর করতে না হয়।
– কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে যাতে কোন হারাম কাজ করতে না হয়। যেমন, ড্রাইভারের সঙ্গে একাকী যাওয়া, পারফিউম ব্যবহার করা ইত্যাদি।
– নারীর প্রধান কাজ ও দায়িত্ব হচ্ছে স্বামীর খেদমত করা, তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা ও মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করা। যদি চাকরি করতে গিয়ে এসব দায়িত্ব পালনে ব্যাপক অসুবিধা হয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হবে না। (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৯৮১ ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৫৯)

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
কোনো ব্যাংকের আইটি সেক্টরে কাজ করা আপনার জন্য জায়েজ হবেনা।

অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের আইটি সেক্টর হলে সেক্ষেত্রে প্রশ্নের বিবরন মতে সেখানে যেহেতু পূর্ণ পর্দার পরিবেশ নেই,তাই সেখানে চাকুরী করা আপনার জন্য জায়েজ হবেনা।  

★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি চাকুরী চালিয়ে যেতে চাইলে এক্ষেত্রে যেহেতু খাবার খাওয়ার সময় মুখ খুলতে হয়,তাই আপনি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পুরুষদের খাবার শেষে/আগে পূর্ণ পর্দার আড়ালে খাবার খাবেন।

অথবা বাহিরে এসে কোনো নিরাপদ স্থানে পর্দার আড়ালে খাবার খাবেন।
অন্যথায় সেখানে খাবারই খাবেননা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...