আসসালামু আলাইকুম। হুজুর আমি ছোট বেলা থেকে জানতাম যে পর্দা করে চাকরী করা যাবে। আর তখন এটা শুনেছিলাম যে পর্দার ক্ষেত্রে মুখ খোলা রাখা জায়েয আছে। কিন্তু এখন মুখ লাগিয়ে পর্দা করার চেষ্টা করছি। আমার বাবা মা আর্থিক ভাবে সচ্ছল ছিল না, এখনো সচ্ছল না। আমি খাবার, পড়াশুনা থেকে সব ব্যাপারেই আর্থিক কষ্টে বড় হয়েছি।পড়াশুনার ব্যাপার টা তে খুব কষ্ট করতে হইসে আর্থিক সমস্যার কারণে। তাই আমি ছোট থেকে চিন্তা করেছি চাকরী করবো, পর্দা করে চাকরী করা জায়েয ভেবেই এ রকম ভাবে পড়াশুনা করেছি। ছোট থেকেই বোরখা, হিজাব, নামাজ পড়তাম। এখনও করি আলহামদুলিল্লাহ। বর্তমানে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করছি আমি।
এখানে নামাজের ব্যবস্থা আছে, একজন মহিলা ম্যানেজার এর সাথে কাজ করি। আমার অফিসের এমনিতে ওরকম সমস্যা নেই যে অপ্রয়োজনে ছেলেদের সাথে কথা বলতে হবে। ম্যাম এর সাথে কাজ নিয়ে কথা বলি, ছেলে কলিগদের সাথে খুব দরকার (অফিস এর কাজের) ছাড়া কথা বলি না। নিজে নিজে একা বসে কাজ করি, খুব দরকার এ তাদের থেকে হয়ত কাজের ব্যাপারে কোন কিছু শুনতে বা কথা জিজ্ঞেস করতে হয় দু এক সময়।
বোরখা, নিকাব সবই পড়ি কিন্তু এখানে খাবার খাওয়ার আলাদা জায়গা নেই, তাই আমাকে নাস্তা এবং দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় মুখ এর কিছু অংশ খুলে খেতে হয়, এরপর আবার মুখ লাগিয়ে ফেলি।। অফিস এর অন্য সেক্টর গুলোতে পুরুষরা কাজ করেন। এখানের অফিস গুলো এ রকমই সব, আলাদা জায়গা রাখে না খাবারের।
এখন হুজুর আমার বাবা , মা ও চান যে আমি চাকরী করি। তারা নামাজ পরেন কিন্তু এটা ভাবেন যে পর্দা করে মেয়েরা চাকরী করতে পারবে। আর যেহেতু আমরা আর্থিক ভাবে অচ্ছল। আমার হাসব্যান্ড ও চান বলতে তিনি নিরুপাই এখন। একসাথে ঢাকা তে থাকি আমি আর আমার হাসব্যান্ড । আমি যদি চাকরী না করি তাহলে হইত আমাকে আমার শ্বশুর বাড়িতে রেখে আসতে হবে তার । আমার শ্বশুর বাড়িতে পর্দা মেইন টেইন করার পরিবেশ নেই, আমার শ্বশুর বাড়িতে যৌথ পরিবার তারা। শ্বশুর এর ভাইরা ও একসাথে থাকেন। কেও ই তেমন পর্দার ব্যাপারে মানেন না। গোসল, বাথরুম সব বাহিরে, সেখানে গেলে আমার দ্বীন পালন করায় কঠিন হয়ে যাবে। আর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে আমার হাসব্যান্ড কে ছাড়া থাকতে হবে তাহলে।কারণ হাসব্যান্ড ঢাকা তে ছোট কাজ করে পাশাপাশি পড়াশুনা করে।
আমার হাসব্যান্ড আমাকে দ্বীন পালনে সহযোগিতা করে । কিন্তু সে চায় তার একটা চলার মতো রোজকার করার ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত যেনও আমি চাকরীটা করি আপাতত,আমাকে অন্য সব কিছুতে হেল্প করে। কিন্তু আমাকে তো চাকরী করতে হচ্ছে, আমরা দুজন চেষ্টা করেছিলাম যে এই কাজ টা যেনও বাসায় বসে করতে পারি, ম্যানেজার ম্যাম দিয়ে ছিলেন ও কিন্তু কিছুদিন পর আবার অফিসে এসেই কাজ করতে বলছেন। এখন যেহেতু ম্যানেজার মেয়ে মানুষ আর এমনিতে অন্য ব্যাপারে ভালোই তিনি, নামাজ ও পরেন তাই আমার হাসব্যান্ড আমাকে বুঝায় যে পরিস্থিতির কারণে আপাতত যেনো চাকরী টা করি। আমার হাসব্যান্ড এমনিতে খুব ভালো মানুষ, আর সেও আমাকে পর্দার মধ্যেই থাকতে সাহায্য করে শুধু চাকরীর জায়গা তে আমরা নিরুপায়।
এখন আমি কি করবো উস্তাদ, আমার নিজের ও অসহায় লাগছে চাকরী জায়েয হবে কিনা এটা ভেবে। আমি চাকরী ছাড়লে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দ্বীন পালন করবো কিভাবে, সেখানে তো গোসল, ঘরের সব কাজ বাহিরে। এখন সেখানে পর্দার ব্যাবস্থা করার মতো টাকা ও নেই আমার হাসব্যান্ড এর কাছে।
আবার আমার বাবাও অনেক বয়স হইসে। বাসায় ভাইয়ের সংসার এ থাকেন, তাদের আর্থিক অবস্থা খুব ই খারাপ। সেখানে কিছুদিন থাকার মতো পরিস্থিতি ও নেই আমার এখন, আমার ছোট বোন কে পড়াশুনার জন্য টাকা ও দিতে হয় আমার।
এখন চাকরীর সমস্যা টা ছাড়া অন্য সব সহজ আমার জন্য, বাসার মধ্যে ইসলামিক পড়াশুনা করতেও হাসব্যান্ড সহযোগিতা করেন । দ্বীনের এতো বুঝ আগে ছিল না আমার মধ্যে, এখন দ্বীন পালনের অনেক চেষ্টা করসি কিন্তু মনে হচ্ছে যে চাকরী করে কি আমার অন্য এবাদাত করে লাভ হচ্ছে বেশি? নিরুপায় হয়ে চাকরী টা কি জায়েয এখন আমার জন্য?
অনেক দুয়া করতেসি যেনও বাসায় বসে কোন কাজ করার ব্যবস্থা আল্লাহ করে দেন আমাকে। হাসব্যান্ড আর অল্প কিছুদিন ধৈর্য ধরতে বলতেসে আমাকে। বলসে সে একটু ভালো কিছু করতে পারলে আমাকে আর বাসার বাহিরে চাকরী করতে দিবে না। এখন কি ধৈর্য ধরে আল্লাহর কাছে দুয়া, ক্ষমা চেয়ে চাকরী টা করা জায়েয হবে আপাতত? নাকি চাকরী টা ছেড়ে দিবো? তখন সব কিছু আরও খারাপ হলে যদি দ্বীন পালন না করতে পারি? হাসব্যান্ড কেও তো তখন কিছু বলতে পারবো না, আমার খুব অসহায় লাগতেসে হুজুর। বিস্তারিতও লিখলাম জন্য বড় হয়েছে মাফ করবেন আর আমাকে পরামর্শ দিন হুজুর।