আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। প্রশ্নটা একটু বড়, তাই আফওয়ান। অনুগ্রহ করে বিরক্ত হবেন না। প্রথমে জানিয়ে রাখি, "আমি নিজেও একজন মেয়ে। আমার দৃষ্টি সালাফগনের মতো হতে চাওয়া। দুনিয়াবিমুখতা ত্যাগ করা।"
সম্প্রতি এক ভাই তার পাবলিক পোস্টে বলেছেন আহলিয়া সম্পর্কে। তা নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে, এবং দ্বীনি ঘরানার বোনেরাও অনেক তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে। বিষয়টির শরয়ী দৃষ্টিভঙ্গি জানা জরুরী আমার। ভাইটির বক্তব্য।
এই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই-
বিয়ের পর সহ-শিক্ষা ত্যাগ করতে হবে।
✓ চাকরির নাম উচ্চারণ করা যাবে না।
✓ হাতে নিজস্ব কোনো এন্ড্রয়েড থাকা যাবে না [প্রয়োজনীয় কাজ গুলো স্বামীর এন্ড্রয়েড দিয়েই করতে হবে]। ✓ স্বামী একাধিক বিয়ে করুক আর না করুক একাধিক বিয়ে নিয়ে সুধারণা ও রেসপেক্ট রাখতে হবে।
স্বামীর আনুগত্য করতে হবে।
বাজার হাট, শপিংমল, টুরিস্ট স্পটে স্বামীর অনুমতি ছাড়া যাওয়া যাবে না।
✓ স্বামীর অনুপস্থিতিতে বাবার বাড়িতে দীর্ঘদিন অবস্থান করা যাবে না। ✓ সিজার এড়াতে প্রাচীন নারীদের অনুসরণ করতে হবে। আধুনিক ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন মানা যাবে না। বাচ্চা জন্মের একদিন আগেও সংসারের কাজ করতে হবে। (সিজার এড়াতে প্রাচীন পদ্ধতি- কমেন্টে লিংক)
✓ স্বামীর অধিক সন্তান লালন পালন করার পূর্ণ অনুগত হতে হবে। সন্তান লালন পালন ঝামেলা সৃষ্টি করতে সংসারে অস্বস্তি পরিবেশ তৈরী করা যাবে না।
এমন কোনো সিচুয়েশন ক্রিয়েট করা যাবে না যে, অধিক সন্তান ফোবিয়া যেনো স্বামীর মনে না ঢুকে।
✓ স্বামী ৩ বেলা ভালো খাওয়াবে এটা বাধ্যতামূলক না। ভরণ পোষণ এর সংজ্ঞা শরীয়তের আলোকেই হবে। পোশাক আর কসমেটিকস বিলাসিতা এড়িয়ে যেতে হবে।
✓ বাহিরের ফুচকা, চকলেট এগুলো আসক্তি থাকা যাবে না। এগুলো ভোজনরসিক এর আড়ালে উদরপূর্তির ট্র্যাডিশনাল মাইন্ড থেকে বের হতে হবে।
✓ কেউ অপমান করলে যেমন উলঙ্গ হওয়া জায়েজ নয়। স্বামী, শাশুড়ী টর্চার করলেও চাকরি বা স্বাবলম্বী হওয়া জায়েজ নেই। তাকে সবর করতে হবে।
✓ অনলাইন বিজনেস করলে স্বামীর উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে এন্ড্রয়েড থেকে বিদায় নিতে হবে। [শেষ জামানায় স্বামীর সাথে স্ত্রীরাও ব্যবসা করবে এই বৈশিষ্ট্য যেনো কোনো যুহুদ পাত্রের সাথে না ঘটে]
■ পরিশেষে বলি আপনি বিয়ের আগে পাত্রী থেকে এই ব্যাপার গুলো স্পষ্ট বলে দিবেন। যে আসার সে আসবেই। আর হিগাভী ফেমিরা এসব প্রশ্ন দেখলে পাত্রকে রিজেক্ট করবেই।
আর আপনিও বেচে যাবেন। আপনার কপালে এসব আসবে না।
এখন আমার কথা হচ্ছে:
ভাইটি বিস্তারিত না লিখতে পারায় বিতর্কিত হয়েছে। তবে ওনার সবগুলো পয়েন্ট আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। ব্যাখ্যা দাঁড় করালে যুক্তি পাওয়ারই কথা। যেমন:
কওমীর অনেক মুহতামিম, মুয়াল্লিম, তাদের আহলিয়াগন এন্ড্রয়েড ফোন চালায় না। স্বামী যদি অনুমতি না দেয়, সে যদি বলে আমার ফোন থেকে সবকিছু করো, তাহলে তো সমস্যা হওয়ার কথা না।
সহশিক্ষা ত্যাগ, বাজার ঘাট শপিং মলে না যাওয়া, স্বামীর আনুগত্য করা, চাকরীর নাম মুখেও না আনা, আল্লাহর বিধান হিসেবে মাসনাকে হেয় না করা বরং তার প্রতি সুধারনা রাখা, তিনবেলায়ই ভালোমন্দ খেতে দিতে হবে বাধ্যতামূলক এমন মনে না করা ইত্যাদি অপশনগুলো এক কথায় উত্তম। এগুলো নিয়ে কারও কোনো মতবিরোধ নাই। এগুলো তাকওয়া অবলম্বনের জন্য বলা। কিন্তু ওই ভাইয়ের কিছু কথা বিতর্ক তুলেছ:
১. ফুচকা, বাইরের খাবার বাধ্যবাধকতা থাকা যাবে না। মেয়েরা এটার বিরোধিতা করে। তবে কেউই তো বাধ্যতামূলক খায় না। মাঝেমধ্যে খাওয়া খারাপ না। লোকটি হয়তো তা বুঝিয়েছে।
২. স্বামীর এন্ড্রয়েড ফোনে যদি ক্লাস করা যায়, বাসায় যোগাযোগ করা যায় তাহলেও মেয়েদের সমস্যা হওয়ার কথা না।
৩. ভাইটি বলেছেন স্বামী ছাড়া দীর্ঘদিন বাবার বাসায় না থাকতে। এটার পিছনে যথার্থ কারণ আছে। আমি নিজে দেখেছি স্বামী ছাড়া দীর্ঘদিন বাবার বাসায় থাকলে কতটা অশান্তি সৃষ্টি হয়। আবার স্বামীর অনুপস্থিতিতে দীর্ঘদিন শ্বশুর বাড়ি থাকলেও বিভিন্ন সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে সমতা জরুরী।
৪. সন্তান নেওয়ার বিষয়টি, মেয়েরা যেমন অধিক সন্তান নিতে ইচ্ছুক থাকবে, তদ্রুপ ভাইদের এটাও মাথায় রাখতে হবে "শারীরিক কন্ডিশন"
৫. স্বামীর সাথে বিজনেস করার বিষয়ে বলেছেন। অবশ্যই এটি কিয়ামতের আলামত। তাই এটা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার কথা না।
৬. টর্চারের কথাটা আমারও খারাপ লেগেছে সামান্য। তবে এখানেও মূলনীতি আছে। যেমন শ্বাশুড়ি বা পরিবারের কেউ ঝগড়াঝাটি টর্চার করলেই স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ করতে হবে এমন নয়। আবার ওই স্বামীরও উচিত হবে না স্ত্রীকে টর্চার করা বা করতে দেওয়া। একটা মেয়ে সব শর্ত মেনে আসার পরও যদি প্রহার করে তবে তা স্পষ্ট জুলুম।
আর যদি মেয়েটি সেইরকম না হয়, কিছু ঘাড়ত্যাড়ামি করে, সেক্ষেত্রে শরীয়তসম্মত বোঝাপড়া, শরীয়তসম্মত শাসন তো অবশ্যই জরুরী। এক্ষেত্রে তো ছাড় দেওয়ার স্কোপ নাই। আবার ভাইটি বলেছেন যে যদি এমন হয়ে যায়ও, তারপরও নারীরা যেন সংসারের বাহিরে নিজেদের ক্যারিয়ার গঠন করতে প্রস্তুত হয়ে না যায়।
মূলত এই টপিকে ভাইটির মেসেজ হচ্ছে, "দ্বীনদার হিসেবে সবর করতে হবে অবশ্যই। সাংসারিক সমস্যা থাকলেও যেন নারীবাদী ক্যারিয়ার গড়তে না যায়।"
সিজারের বিষয়টি তো আলেম ওলামাগণ ভালো জানেন। এটা কতটা ভয়াবহ। এক্ষেত্রে প্রাচীন পদ্ধতি যেমন অনুসরণ করতে হবে, তেমনি ভাইয়েরও উচিত অন্তস্বত্তা স্ত্রীকে দিয়ে সর্বপ্রকার কাজ না করানো। সে কাজ করবে জাস্ট ব্যায়াম হিসেবে। সে কেন সব কাজ করবে? অন্য সময় হলে সমস্যা নাই কাজ করতে। বাট বাচ্চা হওয়ার আগেরদিনও কেমন একটা জুলুম হয়ে যায় না? ভাইদেরও এটা মাথায় রাখা উচিত যে স্ত্রীর কাজে সাহায্য করাও সুন্নাত।
সবকিছু দাঁড় করালে এটি যার যার ব্যক্তিগত রুচি। কেউ যদি চায় তার স্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি, ফ্যামিনিস্ট, দুনিয়ায় ডুবন্ত কেউ না হোক; সে কি এসব শর্ত আরোপ করতে পারবে না?? ভাইদের দ্বীন যদি সালাফদের মতো উত্তম হয় তাহলে উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যের নারী চাওয়া কি ভুল? যদিও এমন নারী পাওয়া রেয়ার।
আবার বোনেরা যে বিশেষ শর্তগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করতেছে, "তাদেরও বুঝা উচিত, শর্ত দিলেই সব শর্ত পালিত হয় না। কখনও কখনও নিয়ম ভাঙে ভালোবাসার খাতিরে। নিয়ম ভেঙেই আর মাধুর্যতা আনতে চায়। বোনদের কি এটাও বুঝা উচিত না যে সলিহা, মুমিনাহ, মুমতাহিনাহ, মুসলিমাহ নারীদের কেমন হওয়া উচিত? তাছাড়া যার ইচ্ছে হবে সে ওমন ছেলেকে বিয়ে করবে, যার ইচ্ছে হবে না সে করবে না। সেক্ষেত্রে একটা পোস্ট নিয়ে ছেলেদের কমেন্টে গিয়ে উল্টোপাল্টা বলে আসা, বউ না যৌনদাসী লাগবে, গালি দিতে ইচ্ছে করছে, আপনার মা বোনকে এমন কারও সাথে বিয়ে দেন ইত্যাদি কমেন্ট করা কি মুমিন মেয়েদের আদবের খেলাফ নয়? এগুলো শরীয়ত সম্মত কতটুক!
একটু জানাতেন যদি।
আফওয়ান, প্রশ্ন অনেক লম্বা হয়ে গেলো!