জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামের মূল থিউরী হল স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ না হোক। তারা মিলেমিশে থাকুক। সমস্যা হলে উভয়ে বসে তা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। তাতে সমস্যার সমাধান না হলে পারিবারিক মুরুব্বীদের পরামর্শের আলোকে সমাধান করা উচিত। তারপরও যদি সমাধান না আসে। তাহলে নিরূপায় অবস্থায় ইসলাম এক তালাক দেবার অধিকার দিয়েছে স্বামীকে। তিন তালাকের নয়। তবে তিন তালাক দিলে পতিত হয়ে যায়।
সূরা আন নিসার ৩৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا (34)
"পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক। কারণ, আল্লাহ তাদের একের ওপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং পুরুষেরা নিজের ধন-সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগত এবং বিনম্র। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তারা তাঁর অধিকার ও গোপন বিষয় রক্ষা করে। আল্লাহই গোপনীয় বিষয় গোপন রাখেন।যদি স্ত্রীদের অবাধ্যতার আশংকা কর তবে প্রথমে তাদের সৎ উপদেশ দাও। এরপর তাদের শয্যা থেকে পৃথক কর এবং তারপরও অনুগত না হলে তাদেরকে শাসন কর৷ এরপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের সাথে কর্কশ আচরণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমু্ন্নত-মহীয়ান।" (৪:৩৪)
★শরীয়তে বিশেষ প্রয়োজনে,যখন স্বামী স্ত্রীর মাঝে বনিবনা কোনো ভাবেই সম্ভবপর হয়না,অথবা স্ত্রী এমন অসুস্থ, যে স্বামী তাকে নিয়ে কোনো ভাবেই ঘরসংসার করতে পারছেনা।
তখন এক তালাক দেওয়ার বিধান এসেছে।
,
বিনা কারণে তালাক প্রদাণ করা হারাম।
এর শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাতে অবশ্যই পেতে হবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত,
عن ابن عمر، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «أبغض الحلال إلى الله تعالى الطلاق»
অর্থ:রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাকের নিকট সর্বাপেক্ষা অপছন্দনীয় হালাল হচ্ছে 'তালাক'।(আবু দাউদ-২১৭৮)
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্ত্রী যেহেতু সুস্থ হয়েছে,তাই তাকে তালাক দেওয়া কোনোভাবেই জায়েজ নেই।
তালাক দিলে স্বামীর গুনাহ হবে।
,
স্বামী যদি মৌখিক বা লিখিত তালাক দেয়,তাহলে তালাক হয়ে যাবে।
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি স্বামী যেই তালাক্বনামায় স্ত্রীর সই চাইছে,সেই তালাক নামায় যদিও স্ত্রী সই না করে,তারপরেও উক্ত তালাকনামায় যদি স্বামী তালাকের কথা লেখে,বা কাউকে দিয়ে লেখায়,তাহলে তাতে যে কয় তালাকের কথা লেখা আছে,সে কয় তালাক পতিত হয়ে যাবে।
,
এতে শরয়ী দৃষ্টিকোন থেকে স্ত্রীর সই এর কোনো প্রয়োজন নেই।
তার সই ছাড়াও তালাক হয়ে যাবে।
,
হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি সেই তালাক নামায় তালাক প্রদানের কথা লেখে,তাহলে এক বা দুই তালাক হলে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরে নিতে চাইলে ফিরে নিতে পারবে।
বিস্তারিত জানুনঃ
,
তিন তালাক হলে শরয়ী হালালাহ করা ব্যাতিত তাকে বিবাহ করা জায়েজ হবেনা।
,
স্বামী ফিরে নিতে না চাইলে নাও নিতে পারে।
কোনো চাপ নাই।
,
আর যদি উক্ত তালাক নামায় তালাকের কথা না লেখা থাকে, কিছুই লেখা না থাকে,আর স্বামীও যদি মৌখিক তালাক না দেয়, তাহলে কোনো তালাক হবেনা।
,
এমতাবস্থায় স্ত্রী যে আপোষ করতে চাচ্ছে,সেটাও ছহীহ আছে।
চাইলে স্বামী স্ত্রীকে তালাক না দিয়েও অন্য মহিলাকে বিবাহ করতে পারে।
স্বামী তো মোট চারটি বিবাহ করার অধিকার রাখে।
,
তবে এই ১ম স্ত্রীরও পূর্ণ হক আদায় করতে হবে।
উভয় স্ত্রীর মাঝে সমতা বজায় রাখতে হবে।