আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
173 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (16 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ্।
★১★ ইবাদতে অলসতা আসে কেন?
আমি ইবাদত মনযোগ ও গুরুত্ব সহকারে করার চেষ্টা করি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকারও অপ্রাণ চেষ্টা করি কিন্তু কিছুদিন পরই অলসতা চলে আসে ইবাদত করতে ইচ্ছে করে না। আবার কিছুদিন পর ইবাদত ঠিকঠাক মতো করার চেষ্টা করি। আবারো কয়েকদিন পর অলসতা আসে এইরকম হওয়ার কারণ কি?
জুর করে আমি নিজেকে ইবাদতে বসায় তারপরও একদম অলস ইবাদতে।
আমার এইরকম অবস্থায় একদম খারাপ লাগে

মনে হচ্ছে,, আল্লাহর সাথে ঠাট্টা শুরু করেছি
দুইদিন পরপর ইবদাতে অলসতা!

 একদম ভালো লাগে না আমার।
আমি খুবই হতাশ!
ইবাদতে এই অবস্থা আমার কেন হচ্ছে?
আবার, যেদিন আমার ফজর কাযা হয় সেইদিন পুরোদিনটায় কেমন যেন হয়ে যায় অস্থিরতা কাজ করে মনে শান্তি থাকে না, বাকি নামাজগুলোর প্রতি, জিকির,তেলাওয়াত এগুলোতেও অলসতা চলে আসে তখন..

ফজর না পরতে পারলে বাকি ইবাদতগুলো করতে ইচ্ছে করে না একধরণের অস্থিরতা কাজ করে।

★২★স্বপ্নে দেখছি,,আমার মৃত মামাকে উনি আমার নানুর উঠানে খাটিয়ায় শুয়ে নড়াচড়া করছে। কে যেনো ওই খাটিয়া থেকে ২টা বস্তা নামিয়েছে একটায় বড় বস্তায় বড় সাপ আরেকটা ছোট সাদা বস্তা। সাদা বস্তায় কি ছিল জানিনা।
আরেকদিনও ওই মৃত মামাকে স্বপ্নে দেখছি,, তিনি আমার নানুর ঘরে এসে ইসলামি কথা বলতেছে। তারপর দেখলাম মামার ফুফু কেন জানি হতাশ হয়ে আছে ।
এই স্বপ্নগুলোর ব্যাখ্যা কি?

★৩★ বেদ্বীন ফ্যামিলিতে দাওয়াত  দিবো কিভাবে ?দাওয়াতি কাজ কিভাবে শুরু করবো?
★৪★নিজের আমল আখলাক সুন্দর করবো কিভাবে?
★৫★বিনয়ী বলতে কি বুঝায়?  কিভাবে বিনয়ী হবো?
★৬★ অন্তরের রোগগুলো থেকে বাঁচার উপায় কি?

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
ইবাদতে অলসতা এটা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে।
,
এক্ষেত্রে কিছু আমলঃ-
আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, 

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ 

হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।

আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)

★সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করবেন।

রাসূলুল্লাহ্ ﷺ দোয়া করতেন,

اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَن زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا

হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক। (মুসলিম ২৭২২)

সুতরাং আপনিও দোয়াটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

নেককারদের সোহবত গ্রহণ করুন। তাদের সাথে বেশি উঠাবসা করুন।
দাওয়াত তাবলিগের মেহনতের সাথে যুক্ত হতে পারেন,বা কোনো হক্কানী শায়েখের কাছে যেতে পারেন 

এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা আপনার জন্য সহজ হবে। 

 আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

ঈমান ও ইসলামের পরিবেশে সময় ব্যয় করুন।

আপনাকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
হক্কানী শায়েখের কাছে যান অথবা দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে যুক্ত হোন।
নেককার লোকদের সাথে চলুন,হক্কানী শায়েখদের নামাজ না পড়ার শাস্তি, জাহান্নামের শাস্তি সম্বলিত ওয়াজ শুনুন,ও এ সংক্রান্ত গ্রন্থাবলী পড়ুন।

নামাজে মনোযোগী হওয়ার পদ্ধতি জানুনঃ- 

নিম্নোক্ত দোয়া করতে পারেনঃ-
ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, হাসান বাছরী (রহঃ) দো‘আ করতেন,
 اللهم أنت ربنا، فارزقنا الاستقامة
 ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের রব। তুমি আমাদেরকে তোমার অটল থাকার তাওফীক দাও’।
(ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা হা-মীম সাজদা ৩০ আয়াত।)
,
★আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে বলেন, তুমি বল,
اللَّهُمَّ اهْدِنِىْ وَسَدِّدْنِىْ  

‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুপথ প্রদর্শন কর এবং আমাকে সরল পথে পরিচালিত কর। আর তুমি সুপথের সংকল্প কর এবং সঠিক পথে স্থির থাক, যেভাবে তীর তার লক্ষ্যে স্থির থাকে।
(মুসলিম হা/২৭২৫; মিশকাত হা/২৪৮৫।)

আপনার মন অশান্তিতে আছে।এ জন্য আপনি নিয়মিত ধারাবাহিক আল্লাহর যিকির করতে থাকুন-দেখবেন মন শান্ত হবে।
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।(সূরা রা'দ-২৮)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
কম খাবার গ্রহণ, এবং কম বিশ্রাম , এগুলো অলসতাকে কমিয়ে দেয়।

দীর্ঘ আশা ইবাদতে অলসতা তৈরি করে।
অলসতার অন্যতম কারণ চেতনা ও স্পৃহা না থাকা। নিজের মধ্যে প্রেরণা, চেতনা ও উদ্দীপনা জাগাতে মনীষীদের জীবনী ও  বাণী পড়ুন। 
★তৎপর, উদ্যমী ও কর্মচঞ্চল মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করুন। নেককার মানুষের সংস্পর্শ গ্রহণ করুন। এতে নিজের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হবে। 
নিজের হিম্মত ও মনোবল বৃদ্ধি করুন।

★ফজরের নামাজের প্রতি যত্নবান হোন। কেননা অলসতার কারণে ফজরের নামাজ না পড়তে পারলে এটাই হবে সারা দিনের আমলহীনতা, গুনাহমুখিতা ও অলসতার সূচনা।

নিম্নের দোয়াটি মাঝে মাঝে পড়বেনঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।”

(০২)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার আমল বাড়িয়ে দিতে হবে,দ্বীনদার লোকদের সাথে উঠাবসা করতে হবে,পবিত্র হালতে থাকতে হবে,অহংকার থেকে বেঁচে থাকতে হবে। 
বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত, যিকির আযকার,ফরজ সহ নফল নামাজ পড়তে হবে। 
দান ছদকাহ করতে হবে।
,
স্বপ্নের কথা কাউকে বলা যাবেনা।

আরো জানুনঃ- 

(০৩)
এক্ষেত্রে প্রথমে সেই পরিবারের সকল সদস্যদের বয়স বিবেচনা করে সে অনুযায়ী  বিভিন্ন ইসলামিক বই-পুস্তক ক্রয় করে তাদের হাদিয়া দিতে পারেন।

ইসলামিক বক্তাদের ওয়াজ নসিহত তাদেরকে শুনতে বলতে পারেন।  

পারিবারিক তালিম : পরিবারের সবাই মিলে একসাথে বসে এবং যাদেরকে দাওয়াত দিতে চাচ্ছেন,তাদেরকেও সাথে করে তালিম করতে হবে।

কেউ একজন কোন একটি বই থেকে সকলের উদ্দেশ্যে পড়বেন।
ফাজায়েলে তালিম,ফাজায়েলে সাদাকাত,
 ইমাম বুখারি রহঃ এর ‘আদাবুল মুফরাদ’ অথবা ইমাম নববির ‘রিয়াদুস সালিহিন’ থেকে তালিম করা যেতে পারে। ফজরের পর হলে ভালো হয়। প্রথম প্রথম কেউ বসতে না চাইলে একাই চালিয়ে যান। একেবারে নিয়ম বানিয়ে নিন। পরিবারে দাওয়াতের ক্ষেত্রে এটা বেশ ইফেক্টিভ।

তাদেরকে দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতের সাথে যুক্ত হতে বলবেন।

(০৪)
এ সংক্রান্ত জানুনঃ- 

(০৫)
বিনয় ও নম্রতা দু’টি সমার্থক শব্দ। বিনয়ী অর্থ: ঔদ্ধত্য হীন, নিরহঙ্কার, অবনত, নরম, কোমল, শান্ত-শিষ্ট ইত্যাদি।

বিনয়ী হওয়ার উপায়ঃ-
১. অন্তর থেকে অহংকারকে বিদায় জানানো।
এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ- 

২. সত্যকে ও হককে গ্রহণ করা যদিও তা বয়স, জ্ঞান-গরিমা ও পদমর্যাদায় ছোট কোন ব্যক্তির নিকট থেকে পাওয়া যায়।

৩. কাউকে হেয় না করা বা ছোট নজরে না দেখা।

৪. ভুল হলে নি:সঙ্কোচে স্বীকার করা। ভুল স্বীকার করলে মানুষের সম্মান কমে না বরং বৃদ্ধি পায়।

৫. যথাসাধ্য মানুষের উপকার করা এবং এ জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা বা প্রতিদান পাওয়ার আশা না করা।

৬. কেউ উপকার করলে তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা।

৭. মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলা।

৮. ধনী-গরিব সবার সাথে মিলমিশ ও উঠবস করা।

৯. নিজের অর্থ-সম্পদ, জ্ঞান-গরিমা, ক্ষমতা, পদমর্যাদা, সৌন্দর্য, পোশাক ইত্যাদির ক্ষেত্রে অন্যের উপর নিজেকে শ্রেষ্ঠ না ভাবা।

১০. মানুষের সাথে আচার-আচরণ ও কথা-বার্তা বলার সময় নম্রতা, ভদ্রতা, শালীনতা ও শিষ্টতা বজায় রাখা।

১১. লজ্জাবোধ থাকা এবং নিষ্প্রয়োজনীয় কোনো কথা বা কাজ না করা।

(০৬)
এক্ষেত্রে করনীয় হলো নিজের নফসের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

নিজের নফসের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সহজ ও সাধারণ পদ্ধতি হলো অন্তরে পরকালের চিন্তা ও আল্লাহর কাছে জবাবদিহির কথা সব সময় জাগ্রত রাখা।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল খুশির অনুসরণ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত। ’ (সুরা নাযিয়াত, আয়াত : ৪০-৪১)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...