আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
122 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (1 point)
আজকাল মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করার জন্য তাদের ছবি এডিট করে। কিছু লোক তাদের সুন্দর দেখাতে ফিল্টার ব্যবহার করে। অনেকে তাদের চোখকে আরও চকচকে করে তোলে। তাদের কেউ কেউ ফটো এডিটর ব্যবহার করে ত্বকের ব্রণ, আঁচিল, কালো দাগ দূর করে। এটা করা কি জায়েজ এবং এটা কি আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করার নিয়মের আওতায় পড়ে?

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

ছবিপ্রতিচ্ছবিমূর্তিডিজিটাল ছবি ভিডিও ইত্যাদির চারটি পর্যায় রয়েছে।

১. প্রাণীর মূর্তিভাস্কর্যত্রিমাত্রিক ছবি:

যেকোনো উদ্দেশ্যেই হোককোনো অবস্থাতেই প্রাণীর মূর্তিভাস্কর্য ও ত্রিমাত্রিক ছবির বৈধতা ইসলামে নেই। (তবে নিষ্প্রাণ ও জড়বস্তুর ভাস্কর্য সন্দেহাতীতভাবে জায়েয।)

২. প্রাণীর স্থিরচিত্র, (ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য বস্তু যেমন কাগজকাপড়দেয়াল ইত্যাদিতে) অঙ্কিত ছবি।

বহুসংখ্যক হাদীসের আলোকে এসব ছবি হারামনাজায়েয।

তবে বিশেষ প্রয়োজনে যেমন আইডি কার্ডপাসপোর্ট ইত্যাদির প্রয়োজনে জরুরত পূরণের ঐ গণ্ডির মধ্যে ছবি অঙ্কন করাতোলা ও সংরক্ষণ করা নাজায়েয নয়। (তবে নিষ্প্রাণ ও জড়বস্তুর ছবি তোলা শোপিস হিসেবে দেয়ালে বা আলমারিতে সংরক্ষণ করা সন্দেহাতীতভাবে জায়েজ।)

৩. প্রাণীর ডিজিটাল ছবি ভিডিও:

প্রাণীর ডিজিটাল ছবি হার্ডডিস্ক বা মেমরিতে থাকা পর্যন্ত এইসব ছবির ব্যাপারে ওলামাদের মধ্যে দুইটি মতামত রয়েছে।

ক. কিছুসংখ্যক ওলামাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলএসব ছবিও (হাদীসে উল্লেখিত) হারাম ও নাজায়েযের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু ইচ্ছে করলে এখান থেকে ছবি প্রিন্ট করা যায়।

খ. পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচিআরব বিশ্বসহ বর্তমান যুগের বহুসংখ্যক ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিভঙ্গি হলপ্রাণীর ডিজিটাল ছবি ঢালাওভাবে জায়েয নয়। আবার সম্পূর্ণ নাজায়েযও নয়। ছবি ও ভিডিওর বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্যের বিচারে ডিজিটাল ছবি ভিডিও জায়েয হবে। আবার নাজায়েযও হতে পারে। তারা ডিজিটাল ছবি ভিডিওকে اجتهادي (ইজতিহাদী) বিষয় সাব্যস্ত করেন।

ডিজিটাল ছবি একদিক থেকে আয়নায় দেখা যাওয়া প্রতিচ্ছবির মত। যেহেতু এসব ছবি সরাসরি ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য নয়। এর অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য ইলেকট্রিক সিগন্যাল ও ডিসপ্লে আবশ্যক। ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি দেখানোর জন্য আয়না যেমন সামনে থাকতে হবেডিজিটাল ছবি দৃশ্যমান করার জন্য ইলেকট্রিক সিগন্যাল লাগবে। তাই এসব ছবি আয়নার প্রতিচ্ছবির মত।

এই আলোকে এসব ছবি তারা জায়েয মনে করেন। যেসব ব্যক্তিদেরকে (গাইরে মাহরাম) এবং ব্যক্তিদের যেসব দৃশ্য (সতর) সরাসরি দেখা জায়েয নয়ছবি ভিডিওতেও সেসব ব্যক্তিদেরকে এবং ব্যক্তির সেসব দৃশ্যকে দেখা জায়েয নয়।

অন্যভাবে বললে এভাবে বলা যাবেযা-কিছু সরাসরি দেখা নাজায়েযডিজিটাল ছবি ভিডিওতেও তা নাজায়েয।

সুতরাং অন্যায় অশ্লীলতা কোন অবস্থাতেই দেখা জায়েয নয়। সরাসরি হোক কিংবা ডিজিটাল ছবি ভিডিওতে হোক কোনো অবস্থাতেই তা দেখা জায়েয নাই। এসবের ছবি-ভিডিও ধারণ করাও জায়েয নয়।

৪. পানিআয়না ইত্যাদিতে প্রতিচ্ছবি ও প্রতিবিম্ব।

আয়নার ছবি জায়েয। এব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।

তবে আয়নার ছবি দেখার বিষয়ে মাসআলা হলোযাদেরকে (মাহরাম) সরাসরি দেখা বৈধ এবং যাদের যেসব দৃশ্য (সতর ছাড়া বাকি সব) সরাসরি দেখা অবৈধ নয়আয়নাতেও তাদেরকে এবং তাদের সেসব দৃশ্য দেখা যাবে। (আয়নায় গায়রে মাহরামকেও দেখা যাবে না এবং মাহরাম ব্যক্তিদের সতরও দেখা যাবে না।)

এর আলোকে বড় বড় আলেম ওলামাদের সামাজিক যোগাযোগে ছবি-ভিডিও আপলোডের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলআল্লাহর বান্দাদের হিদায়াতের উদ্দেশ্যে যদি তারা ওয়াজ-নসিহতমূলক কোনো ছবি-ভিডিও আপলোড করেনতবে সেসব ছবি-ভিডিও নাজায়েয বলা উচিত হবে না।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

শরীয়তের একটি সর্বজন স্বীকৃত মাস'আলা বা সিদ্ধান্ত হল,কোনো জিনিষের মূল হুকুম হারাম থাকলে,সেই জিনিষ সর্বদাই হারাম হবে।চায় সেই জিনিষের মাধ্যম পরিবর্তন হোক বা না হোক।যেমন ফটো তাসবীরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে হারাম।প্রথমে হাতে অঙ্কিত হত,তখনও হারাম ছিলো।এখন ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় ছবিকে তুলা হচ্ছে,এখনও হারাম হবে। সুতরাং আপনি বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তুলতে পারবেন ও রাখতেও পারবেন কিন্তু কোন প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক ছবি তোলা ও সেগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। যা থেকে দূরে থাকা আমাদের প্রত্যেকের জন্যই আবশ্যক।

ফটো এডিটিং নাজায়েয। কারণ এতে ফটো তোলার কাজে সহযোগিতা করা হয়। আপনি যেহেতু ফটো এডিটিং এর কাজ করেন আর এই কাজ করতে গিয়ে মহিলা মডেলদের ছবির মুখের তিলব্রণফাটাদাগচেহারাকে সুন্দর করাশরীরের দাগ পরিষ্কার করা ইত্যাদি করে থাকেন আর এই কাজ করতে গিয়ে যেমন ছবি তোলার কাজে সহযোগিতা হয় তেমনি গায়রে মাহরাম মহিলার ছবি দেখার গুনাহও হয়।

সুতরাং জীবিকা উপার্জনের জন্য এ কাজ করা বৈধ নয়। তবে যে সমস্ত কাজে কোনো প্রাণীর ছবি থাকে না সেসব কাজ করতে কোনো আপত্তি নেই।

সুতরাং উপরোক্ত বিবরণে থেকে আপনার প্রশ্নের সমাধান হলোযেসব জিনিস সরাসরি দেখা জায়েজ প্রয়োজনের খাতিরে সেগুলোর ছবি যুক্ত করা কাটছাঁট বা এডিটিং করার অবকাশ আছে। কিন্তু যেগুলো সরাসরি দেখা জায়েজ নাই সেগুলোর ছবি যুক্ত বা এডিট করাও জায়েজ নাই।

তবে বর্তমানে যত্রতত্র ডিজিটাল ছবির যেই মহামারি শুরু হয়েছে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনেখাহেশ পূরনার্থেকিংবা যেখানে ছবি না হলেও চলে এমন ক্ষেত্রেও ছবির অযাচিত ব্যবহার কিছুতেই জায়েজ হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...