জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্রনেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল আর তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পুরুষ লোক তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের সার্বিক ব্যাপারে দায়িত্বশীলা, তাকে সেটার পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পরিচারক তার মালিকের সম্পদের সংরক্ষক, আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এক কথায় তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে সে দায়িত্ব সম্পর্কে”।[ বুখারী : ৭১৩৮; মুসলিম: ১৭০৫ ]
★সুতরাং আপনার বোনের গার্জিয়ান যে হবে,সেই যদি তাকে না বুঝায়,তাহলে দাইয়্যুস হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি যদি তাদের গার্জিয়ান হোন,তাহলেও যেহেতু আপনি তাদেরকে বুঝাচ্ছেন,তাই আপনি দাইয়্যুস হিসেবে সাব্যস্ত হবেননা।
তবে হিকমতের সহিত ভালোভাবে বুঝানো অব্যাহত রাখতে হবে।
বিস্তারিত জানুনঃ
,
(০২)
বাড়িতে প্রত্যাহ তালিমের ব্যবস্থা করুনঃ
★ফাজায়েলে আমল’
এটি তাবলিগ জামাতের লোকেদের মধ্যে অধিক পরিচিত ও ব্যাপক পঠিত একটি বই। নামাজ, রোজা , হজ, জাকাত জিকির, কুরআন তেলাওয়াতের ফজিলত ও সাহাবিদের জীবনীর সমন্বয়ে রচিত বইটি।
তাবলিগী মেহনতে অংশগ্রহণকারীদের তালিম-তরবীয়তের জন্য তাবলিগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস রহ. উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর সমন্বয়ে একটি বই রচনার তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ফলে তিনি ভাতিজা শায়খুল হাদিস হযরত মাওলানা যাকারিয়াকে রহ. এরকম বই লেখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
আরো কিতাবের নাম জানুনঃ
,
এবং হক্কানী শায়েখদের আখেরাত,জান্নাত,জাহান্নাম ইত্যাদি সংক্রান্ত রেকর্ড কৃত বয়ান তাদেরকে শুনাবেন।
,
(০৩)
কিছু বুযুর্গানে দ্বীনেরা বলেছেন যে
বাহিরে-রাস্তায় পানাহারে স্মৃতিশক্তি কমে যায়,যেহেতু এখানে অনেকের বদনজর লাগে।
আবার এই খাবারের উপর অনেক ফকির মিসকিন যারা ক্রয় করতে পারেনা,তাদের এক প্রকারের দৃষ্টি থাকে,তাই এহেন খাবার খেলে স্মৃতি শক্তি হ্রাস পায় বলেছেন।
( তা'লিমুল মুতায়াল্লিম)
কিন্তু প্রশ্নে উল্লেখিত মেজবানের বাড়িতে, পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে, নিজ পরিবারে এক সাথে খাওয়ার সময় যেহেতু কাহারো বদ নজর পড়ার আশংকা নেই,তাই এতে কোনো সমস্যা নেই।
(বিঃদ্রঃ এগুলো বুযুর্গানে দ্বীনের কথা। শরয়ী কোনো বিধি নয়।)
,
স্মৃতিশক্তি স্বাভাবিক এবং ক্রমান্বয়ে বাড়ানোর আমল সম্পর্কে
বুযুর্গানে দ্বীন বলেছেন গুনাহ ছেড়ে দিতে হবে।
নিয়মিত মিসওয়াক করত্র হবে,মধু খেতে হবে,প্রত্যেহ সকালে ২১ টি কিসমিস খেতে হবে।
(তা'লিমুল মুতায়াল্লিম ৯৮)
নিম্নের দোয়াটি মুখস্থ করে মাঝে মাঝে পড়বেন
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।”
হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ চিন্তাযুক্ত অবস্থায় উক্ত দোয়া পড়তেন। (বুখারী ২৮৯৩)
,
কিছু আমল করতে হবেঃ
১। গুনাহ থেকে দূরে থাকবে। কারণ গুনাহর কারণে মুখস্থশক্তিতে দুর্বলতা আসে।
খতীব আল-জামে নামক গ্রন্থে (২/৩৮৭) ইয়াইয়া বিন ইয়াহইয়া থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক মালেক বিন আনাসকে বললেন: হে আবু আব্দুল্লাহ! মুখস্তশক্তি বাড়ানোর কোন কিছু আছে কি? তিনি বলেন: যদি কোন কিছু থাকে তাহলে সেটা হল: গুনাহ পরিত্যাগ করা। যখন কোন মানুষ গুনাহ করে তখন এ গুনাহটি তাকে ঘিরে রাখে এবং গুনাহর ফলে তাকে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা পেয়ে বসে। সে গুনাহর কারণে তার চিন্তাধারা মশগুল হয়ে থাকে। এভাবে এ দুশ্চিন্তা তার অনুভূতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে এবং তাকে অনেক কল্যাণকর কাজ থেকে দূরে রাখে। এর মধ্যে মুখস্থশক্তি অন্যতম।
২। অধিক হারে আল্লাহর যিকির করবে। যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: واذكر ربك إذا نسيت“যখন ভুলে যান তখন আল্লাহর যিকির করুন”। (সূরা কাহাফ: ২৪)
৩। কোন কোন আলেম এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলো মুখস্থশক্তি বৃদ্ধি করে। যেমন- মধু ও কিসমিস খাওয়া।
ইমাম যুহরী বলেন: তুমি মধু খাবে; কারণ এটি স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল।
তিনি আরও বলেন: যে হাদিস মুখস্ত করতে চায় সে যেন কিসমিস খায়। (খতীব আল-বাগদাদীর ‘আল-জামে’ ২/৩৯৪)
আলেমগণ আরও বলেন: অম্লজাতীয় খাবার স্মৃতিশক্তির জড়তা ও মুখস্থশক্তির দুর্বলতা বাড়ায়।
৫। মুখস্থশক্তি বৃদ্ধি ও ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রতিরোধে আরও যে জিনিসটি সাহায্য করে সেটি হচ্ছে- মাথায় শিংগা লাগানো। এটি পরীক্ষিত। (আরও বিস্তারিত জানতে ইবনুল কাইয়্যেম এর ‘আততিব্ব আন-নাবাবি’ পড়)।
,
(০৪)
খাওয়ার পর প্লেট ধোয়া পানি পান করা সুন্নত। এই ধারণা সঠিক নয়।
হাদীস ও সুন্নাহর কিতাবে এমন কোনো সুন্নতের কথা নেই। সুন্নত হল, খাওয়ার পর হাত, হাতের আঙ্গুল চেটে খাওয়া এবং বরতন ভালোভাবে মুছে খাওয়া।
,
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে আঙ্গুল ও বরতন ভালোভাবে পরিষ্কার করে খাওয়ার আদেশ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২০২২)
,
সুতরাং আঙ্গুল ও প্লেট ভালোভাবে পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নত, ধুয়ে পানি পান করা সুন্নত নয়। তবে সুন্নত ও মুস্তাহাব মনে না করে কেউ যদি প্লেট ধুয়ে পানি পান করে তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই; বরং তা মুবাহ। কিন্তু একে সুন্নত বলা সঠিক নয়।
,
(০৫)
খাবার পড়ে গেলে তুলে খাওয়া নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত।
,
এ সুন্নত আদায়ের জন্য আরেকটি সহায়ক আদব হল দস্তরখান।
,
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
مَا أَكَلَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَلَى خِوَانٍ، وَلاَ فِي سُكْرُجَةٍ، وَلاَ خُبِزَ لَهُ مُرَقّقٌ، قُلْتُ لِقَتَادَةَ : عَلاَمَ يَأْكُلُونَ؟ قَالَ : عَلَى السّفَر.
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ‘খিওয়ান’-এর উপর (টেবিল বা টেবিলের মত উঁচু কিছুতে) খাবার রেখে খাননি এবং ‘সুকরুজা’তেও (ছোট ছোট পাত্রবিশেষ) নয়। তাঁর জন্য কখনো পাতলা রুটিও তৈরি করা হয়নি। (কাতাদা থেকে বর্ণনাকারী) ইউনুস কাতাদাকে জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে তাঁরা কীসের উপর খেতেন? তিনি বললেন, ‘সুফরা’র উপর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৪১৫
সে যুগে ‘সুফরা’ ছিল চামড়ার। তাতে আংটা থাকত। খুলে বিছালে দস্তরখান, গুটিয়ে ফেললে সফরের পাথেয় রাখার মত ছোট ব্যাগ। ‘সুফরা’তে সাধারণত শুকনা খাবার রেখে খাওয়া হত। এই ধরনের দস্তরখান না হোক অন্য কোনো ধরনের দস্তরখান হলেও ব্যবহার করার চেষ্টা করব। আমি যদি দস্তরখান ছাড়া খাই তাহলে খাবার নিচে পড়ে ময়লা লেগে যাবে; তা আবার পরিষ্কার করে তারপর খেতে হবে। কিন্তু যদি দস্তরখান বিছিয়ে নেই তাহলে দস্তরখান থেকে তুলেই খেতে পারব।
,
এজন্যই দস্তরখানা বিছিয়ে খানা খেতে হবে,যাতে কোনো খাবার নিচে পরে না যায়।
এবং পড়ে যাওয়া সেই খাবার যেনো তুলে নিয়ে খাওয়া যায়।
,
ময়লা কোথাও খাবার পড়ে গেলে সেটা তুলে খাওয়া জরুরী নয়।