আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
109 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (7 points)
edited by
https://ifatwa.info/90073/

আসসালামুয়ালাইকুম। শায়েখ সেখানে উত্তর দিয়েছেন তালাক হয়ে গেছে। আমি আমার স্বামীকে সব জানিয়েছিলাম। তিনি বললেন আমি কখন তালাক দিলাম। তুমি এত জোর জবরদস্তি করেছ চাইলে আমি সরাসরি তালাক বলে দিতে পারতাম। আমি তালাক দিতে চাইনি বা তালাক বলতে চাইনি তাই ওইভাবে বলেছি। আর এই শব্দে তালাক হয় কি না আমি জীবনেও জানতামনা। ওই কথাই কখনো আমি বলতাম না যদি তুমি আমাকে জোর না করতে। আর আমি সেটা বলেছিলাম পরেরবার ঝগড়া করলে তুমি তোমার পথে আমি আমার পথে। মানে আমার মাথায় সবসময় এইরকম চিন্তা ছিল আমি এইরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এত করে রাখার পরেও যদি তুমি থাকতে না চাও তাহলে পরেরবার ঝগড়া করলে তখন ডিভোর্স দিয়ে দেব দিয়ে তুমি তোমার পথে আমি আমার পথে। শুধু এই কথা বলার মাধ্যমে আমি তালাক দিয়ে দিছি ঝগড়া করলে অটোমেটিক তালাক হয়ে যাবে এই রকম কোনো চিন্তাই আমি করিনি। আমি এই সম্পর্ক কখনোই শেষ করতে চাইনি। আমি তোমাকে বুঝ দিতে পারতামনা। তাই বাধ্য হয়ে রাগ করে এভাবে বলতাম এবং সিদ্ধান্ত নিতাম যদি থাকতে না চাও তাহলে ডিভোর্স দেব কিন্তু পরে আবার আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতাম। প্রথমবার তালাকের পর আমি কখনোই এই শব্দ মুখে আনিনি। মুখে যাতে না আসে সেই চেষ্টা ও সব সময় করে গেছি। আমাকে একমাস পর জিজ্ঞেস করায় আমি প্রথমে নিয়ত নিয়ে সন্দেহে পড়ে গিয়েছিলাম এসব ব্যাপারে আমি জানতাম না তাই। যদি তালাক দেওয়ার কোনো ইচ্ছা থাকত এতদিনে কবেই আমি তালাক দিয়ে দিতাম। আমি ওই কথার মাধ্যমে দিয়ে দিছি এই রকম কোনো করেছি বলে আমার মনে হয়না। আমি ভবিষ্যতের কথা বুঝিয়েছিলাম আমি এটাই বেশি নিশ্চিত যদি ঝগড়া করে থাকতে না চাও তখন ডিবোর্স দিয়ে তুমি তোমার পথে আমি আমার পথে আর যদি না দেই তাহলে তো আর তালাক হবেনা।
আমার স্বামী উক্ত কথা গুলো বলল হুজুর। সে নিজেও এই উত্তর দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। সে বলছে সে পরেরবার ঝগড়া করে থাকতে না চাইলে তালাক দেওয়ার পর তুমি তোমার পথে আমি আমার পথে এগুলো বুঝিয়েছে। তার সিদ্ধান্ত এটাই ছিলো। সে কখনোই ভাবেনি তালাক দিয়ে ফেলেছে বলে। সে বললো তালাক দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে এতদিনে স্পষ্ট ভাবে তালাক বলে দিত। আমাদের সাহায্য করুন শায়েখ। আর ওইদিন হয়তো হুবহু এইরকম বলেনি। তার মারাত্মক রকমের ভুলে যাওয়ার সমস্যা আছে। তার সব কিছু মনে করতে অনেক কষ্ট হয়। সে বলল বিশ্বাস করো আমি যাই বলেছি আমি তালাক দেওয়ার পর হবে সেভাবে উদ্দেশ্যে বলেছি। আমি না দিলে হবেনা এই রকমই ভেবেছি। পরেরবার ঝগড়া করলে অটোমেটিক তালাক হবে এই রকম কোনো চিন্তা ও করিনি। কেউ তালাক দিতে চায়না এবং বলতে চায়না তাই অন্য কথা গুলো বলেছে উদ্দেশ্য ও তালাক দিয়ে দিয়েছে সেইরকম ছিলোনা এতেও কি আল্লাহর দরবারে তালাক হয় মূহতারাম ।

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

তালাক খুবই মারাত্মক  একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যে,  আল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক।

(আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।) 


যদি স্বামী তালাক দেয়ার উপর ধমক দিতে থাকে,বা স্ত্রী তালাক চায়,বা সেখানে অন্য কোনো ব্যাক্তি সেই স্বামীকে তালাক দেয়ার উপর উদ্ভুদ্ধ করে,তাহলে সেটিকে তালাকের মজলিস,মুযাকারায়ে তালাক বলা হবে।

মুযাকারায়ে তালাক বা তালাকের মজলিস কাকে বলে?
এ বিষয়ে রদ্দুল মুহতারে বর্ণিত রয়েছে,
"(قَوْلُهُ: وَهِيَ حَالَةُ مُذَاكَرَةِ الطَّلَاقِ) أَشَارَ بِهِ إلَى مَا فِي النَّهْرِ مِنْ أَنَّ دَلَالَةَ الْحَالِ تَعُمُّ دَلَالَةَ الْمَقَالِ قَالَ: وَعَلَى هَذَا فَتُفَسَّرُ الْمُذَاكَرَةُ بِسُؤَالِ الطَّلَاقِ أَوْ تَقْدِيمِ الْإِيقَاعِ كَمَا فِي اعْتَدِّي ثَلَاثًا وَقَالَ قَبْلَهُ الْمُذَاكَرَةُ أَنْ تَسْأَلَهُ هِيَ أَوْ أَجْنَبِيٌّ الطَّلَاقَ".
( كتاب الطلاق، بَابُ الْكِنَايَاتِ، ٣ / ٢٩٧)

মুযাকারায়ে তালাকের অর্থ হল, স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর নিকট তালাকের আবেদন করা ,অথবা তৃতীয় কোনো ব্যক্তির পক্ষ থেকে স্বামীর নিকট তালাকের আবেদন এবং তামান্না করা। এই উভয় প্রকারকে 'মুতালাবায়ে তালাক' নামে অভিহিত করা হয়।তাছাড়া স্বামী যদি ইতিপূর্বে স্ত্রীকে এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকে,তাহলে এদ্বারাও মুযাকারায়ে তালাক প্রমাণিত হবে।এই তৃতীয় প্রকারকে  তাকদীমূল ঈ'কা বলা হয়ে থাকে।(রদ্দুল মুহতার-৩/২৯৭) 

আরো জানুনঃ- 

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতকে তালাকের মজলিস বলা হবে।  
স্ত্রী তালাক না চাইলেও এটি তালাকের মজলিস।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
https://ifatwa.info/1049/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ  

 "ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া) তে বর্ণিত রয়েছে,

 لَا يَقَعُ بِهَا الطَّلَاقُ إلَّا بِالنِّيَّةِ أَوْ بِدَلَالَةِ حَالٍ كَذَا فِي الْجَوْهَرَةِ النَّيِّرَةِ. ثُمَّ الْكِنَايَاتُ ثَلَاثَةُ أَقْسَامٍ (مَا يَصْلُحُ جَوَابًا لَا غَيْرُ) أَمْرُك بِيَدِك، اخْتَارِي، اعْتَدِّي (وَمَا يَصْلُحُ جَوَابًا وَرَدَّا لَا غَيْرُ) اُخْرُجِي اذْهَبِي اُعْزُبِي قُومِي تَقَنَّعِي اسْتَتِرِي تَخَمَّرِي (وَمَا يَصْلُحُ جَوَابًا وَشَتْمًا) خَلِيَّةٌ بَرِيَّةٌ بَتَّةٌ بَتْلَةٌ بَائِنٌ حَرَامٌ


কেনায়া শব্দাবলী দ্বারা নিয়ত ব্যতীত বা তালাকের ব্যাপারে ইশরা ইঙ্গিত ব্যতীত তালাক পতিত হয় না।কেনায়া তালাক তিন প্রকার যথাঃ-


(১)

যে সমস্ত শব্দাবলী দ্বারা তালাক ব্যতীত ভিন্ন কিছু বুঝা যায় না।যেমন,তোমার বিষয় তোমার হাতে,তুমি পছন্দ করো,তুমি গণনা করো।


(২) যে সমস্ত শব্দাবলী দ্বারা তালাক হওয়া এবং না হওয়া উভয়টি বুঝায়।যেমন,তুমি বের হও,তুমি চলে যাও,তুমি আমার কওম থেকে দূরে চলে চাও,তুমি নেকাব পরিধান করো,তুমি পর্দার আড়ালে চলে যাও,তুমি উড়না পরিধান করো।


(৩) যা তালাক এবং গালির উভয়টির সম্ভাবনা রাখে। হারাম,বায়িন,মুক্ত,দায়মুক্ত, বাত্তাহ,বাতলাহ ইত্যাদি শব্দাবলি।


পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট তিন প্রকারঃ যথাঃ- 

وَالْأَحْوَالُ ثَلَاثَةٌ (حَالَةُ) الرِّضَا (وَحَالَةُ) مُذَاكَرَةِ الطَّلَاقِ بِأَنْ تَسْأَلَ هِيَ طَلَاقَهَا أَوْ غَيْرُهَا يَسْأَلُ طَلَاقَهَا (وَحَالَةُ) الْغَضَبِ 

পরিবেশ ও পরিস্থিতি তিন প্রকার।(১) হালতে রেযা- খুশির হালত(২) তালাকের শব্দাবলী উচ্ছারণের হালত(৩) রাগান্বিত অবস্থা।


فَفِي حَالَةِ الرِّضَا لَا يَقَعُ الطَّلَاقُ فِي الْأَلْفَاظِ كُلِّهَا إلَّا بِالنِّيَّةِ وَالْقَوْلُ قَوْلُ الزَّوْجِ فِي تَرْكِ النِّيَّةِ مَعَ الْيَمِينِ

(১) খুশির হালতে নিয়ত ব্যতীত কেনায়া শব্দাবলী দ্বারা তালাক পতিত হবে না।নিয়ত না থাকার বিষয়ে স্বামীর কথাই কসমের সাথে গ্রহণযোগ্য। 


وَفِي حَالَةِ مُذَاكَرَةِ الطَّلَاقِ يَقَعُ الطَّلَاقُ فِي سَائِرِ الْأَقْسَامِ قَضَاءً إلَّا فِيمَا يَصْلُحُ جَوَابًا وَرَدَّا فَإِنَّهُ لَا يُجْعَلُ طَلَاقًا كَذَا فِي الْكَافِي

(২)তালাকের আলোচনার পরিস্থিতিতে সকল প্রকার কেনায়া তালাকে তালাক পতিত হবে।তবে যে শব্দগুলো তালাকের আবেদনের জবাব এবং রদ উভয়টা বুঝাবে,সে শব্দগুলো দ্বারা তালাক পতিত হবে না।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৩৭৫)


★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
উপরে উল্লেখ রয়েছে যে তালাকের আলোচনার পরিস্থিতিতে যে সমস্ত শব্দাবলী দ্বারা তালাক ব্যতীত ভিন্ন কিছু বুঝা যায় না,যে সমস্ত শব্দাবলী বললে তালাকের নিয়ত না থাকলেও তালাক পতিত হবে। 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনি তাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য জোড় জবরদস্তি করেছিলেন।
যার প্রেক্ষিতে আপনার স্বামী বলেছেঃ 
"তুমি তোমার পথে আমি আমার পথে"

যেহেতু সেই সময়ে আপনি ডিভোর্স দেওয়ার জন্য জোড় জবরদস্তি করেছিলেন,সুতরাং সেটি মুযাকারায়ে তালাকের হালত ছিলো।
এমতাবস্থায় আপনার স্বামী যদিও উক্ত বাক্য বলার সময় তালাকের নিয়ত করেনি, তবুও এক তালাকে বায়েন পতিত হয়েছে।
সুতরাং আগে যেহেতু এক তালাক পতিত হয়েছিলো,এখন নতুন করে আরো এক তালাক পতিত হয়ে মোট ২ তালাক হলো।

পুনরায় ঘর সংসার করতে চাইলে নতুন করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (574,260 points)
জবাব একই থাকবে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...