ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির
রহমানির রহিম
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
ফরজ গোসল ইসলামী জীবন বিধানের গুরুত্বপূর্ণ একটি
বিষয়। কারো ওপর গোসল ফরজ হলে সঠিক পদ্ধতিতে গোসল আদায় না করা পর্যন্ত ওই ব্যক্তি নাপাক
থাকে। আর নাপাক অবস্থায় নামাজ পড়লে সওয়াবতো হবেই না বরং কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে
হবে। নামাজ ছাড়াও অনেক ইবাদত রয়েছে যেগুলো নাপাক অবস্থায় শুদ্ধ হয় না। ইসলামের বহু
আমল সঠিকভাবে সম্পাদন করার জন্য শারীরিক পবিত্রতা অপরিহার্য।
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وان كنتم جنبا فاطهروا
‘তোমরা
যদি নাপাক (জানাবাত) অবস্থায় থাকো, তবে নিজেদের দেহ (গোসলের মাধ্যমে)
ভালোভাবে পবিত্র করে নাও।’ (সুরা মায়েদা ৬)
হাদীস শরীফে রাসুল সাঃ এর গোসলের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে যে,
حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا
سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ سَالِمِ بْنِ أَبِي الْجَعْدِ، عَنْ
كُرَيْبٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنْ مَيْمُونَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم اغْتَسَلَ مِنَ الْجَنَابَةِ، فَغَسَلَ فَرْجَهُ
بِيَدِهِ، ثُمَّ دَلَكَ بِهَا الْحَائِطَ ثُمَّ غَسَلَهَا، ثُمَّ تَوَضَّأَ
وُضُوءَهُ لِلصَّلاَةِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ غُسْلِهِ غَسَلَ رِجْلَيْهِ.
মাইমূনাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপবিত্রতার গোসল করলেন। তিনি নিজের লজ্জাস্থান ধুয়ে
ফেললেন। তারপর হাত দেয়ালে ঘষলেন এবং তা ধুলেন। তারপর সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করলেন।
গোসল শেষ করে তিনি তাঁর দু’পা ধুয়ে নিলেন। (বুখারী ২৬০২৪৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৮)
حَدَّثَنَا مُوسَى، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ
الْوَاحِدِ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ سَالِمِ بْنِ أَبِي الْجَعْدِ، عَنْ كُرَيْبٍ،
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَتْ مَيْمُونَةُ وَضَعْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم مَاءً لِلْغُسْلِ، فَغَسَلَ يَدَيْهِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا، ثُمَّ
أَفْرَغَ عَلَى شِمَالِهِ فَغَسَلَ مَذَاكِيرَهُ، ثُمَّ مَسَحَ يَدَهُ بِالأَرْضِ،
ثُمَّ مَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَغَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ، ثُمَّ أَفَاضَ عَلَى
جَسَدِهِ، ثُمَّ تَحَوَّلَ مِنْ مَكَانِهِ فَغَسَلَ قَدَمَيْهِ
ইবনু ‘আববাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, মাইমূনাহ্ (রাযি.) বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য গোসলের
পানি রাখলাম। তিনি তাঁর হাত দু’বার বা তিনবার ধুয়ে নিলেন। পরে তাঁর বাম হাতে পানি নিয়ে
তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। তারপর মাটিতে হাত ঘষলেন। তারপর কুলি করলেন,
নাকে পানি দিলেন,
তাঁর চেহারা ও দু’হাত ধুয়ে নিলেন।
অতঃপর তাঁর সারা দেহে পানি ঢাললেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুয়ে নিলেন। (বুখারী
২৫৭,২৪৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৫)
যে সব কারণে গোসল ফরজ
হয়ঃ
এক. জাগ্রত বা ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত
হওয়া। ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনা অনুভব না হলেও গোসল ফরজ। কেননা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ
হলে মানুষ অনেক সময় টের পায় না। তাই কোনো ব্যক্তি ঘুম থেকে ওঠার পর যদি তার কাপড়ে নাপাকির
চিহ্ন দেখে, তাহলে তার স্বপ্নদোষ বা বীর্যপাতের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক,
সর্বাবস্থায় গোসল ফরজ হবে। (হেদায়া
১/৪৫, আন নুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ২৯)
দুই. স্ত্রী সহবাস করা। সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে
পুরুষাঙ্গের সর্বনিম্ন সুপারি পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই উভয়ের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে,
চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক। (বুখারি,
হা. ২৯১,
মুসলিম,
হা. ৩৪৩)
তিন. নারীদের হায়েয (ঋতুস্রাব) এবং নেফাস (সন্তান প্রসবোত্তর
স্রাব) বন্ধ হওয়ার পরও গোসল ফরজ। (রদ্দুল মুহতার ১/১৬৫)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
১. যদি উক্ত ব্যক্তি মিথ্যা
বলা হারাম জেনেও গুনাহ মনে করেই (হালাল মনে না করে) উক্ত কথা বলে থাকে এতে তার ঈমান
ভঙ্গ হবে না। তবে সে গুনাহে কবিরাকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, শরীয়তের বিধান মতে মিথ্যা কথা বলা কবিরাহ গুনাহ।
কোনো মুসলমান কবিরাহ গোনাহ করলে ঈমান থেকে খারিজ হবে না। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের
আকিদা এবং বিশ্বাস। তবে সে তাওবাহ করলে হয়তো আল্লাহ তাকে ক্ষমা ও করে দেবেন। (ফাতাওয়ায়ে
মাহমুদিয়্যাহ-১/৬৬৫)
তবে তাকে মুহাব্বত ও হেকমতের সাথে
ভালোভাবে বুঝাতে হবে যেন সে সালাতের প্রতি যত্নশীল হয় এবং মিথ্যা পরিহার করে। তবে কোন অবস্থাতে তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা উচিত হবে না। হতে পারে এতে শয়তান
তাকে আরো বেশী দিকভ্রান্ত করবে।
২. ★ফরজ গোসলের নিয়ম:
১. গোসলের জন্য মনে মনে নিয়্যাত করতে
হবে। ৭
২. প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ৩
বার ধুতে হবে।
৩. এরপর ডানহাতে পানি নিয়ে বামহাত
দিয়ে লজ্জাস্থান এবং তার আশপাশ ভালো করে ধুতে হবে। শরীরের অন্য কোন জায়গায় বীর্য বা
নাপাকি লেগে থাকলে সেটাও ধুতে হবে।
৪. এবার বামহাতকে ভালো করে ধুইয়ে ফেলতে
হবে।
৫. এবার ওজুর নিয়মের মত করে ওজু করতে
হবে।
৬. ওজু শেষে মাথায় তিনবার পানি ঢালতে
হবে।
৭. এবার সমস্ত শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে
৩ বার ডানে তারপরে ৩ বার বামে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুতে হবে,
যেন শরীরের কোন অংশই বা কোন লোমও শুকনো
না থাকে। নাভি, বগল ও অন্যান্য কুঁচকানো জায়গায় পানি দিয়ে ধুতে হবে।
৮. সবার শেষে একটু অন্য জায়গায় সরে
গিয়ে দুই পা ৩ বার ভালোভাবে ধুতে হবে।
মনে রাখতে হবে:
১. পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের
চুল ভালোভাবে ভিজতে হবে।
২. এই নিয়মে গোসলের পর নতুন করে আর
ওজুর দরকার নাই, যদি ওজু না ভাঙ্গে।