আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
177 views
in পবিত্রতা (Purity) by (37 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ
গতবারের হায়েজের কথা বলছি। আমার ৫ দিন হায়েজ ছিল। এরপর রক্ত দেখতে না পেয়ে  আমি ফরজ গোসল করে নামাজ আদায় শুরু করি।কিন্তু পরে নামাজ আদায় করে পেশাব করতে গিয়ে দেখি লজ্জা- স্থান শুকনো। কিন্তু পেশাবের সাথে সামান্য এক ফোঁটা রক্ত।
এরপর আমি আবার  গোসল করে নামাজ আদায় করি। এভাবে নামাজ আদায় করছিলাম কিন্তু আবার ১-২ ওয়াক্ত পর   পেশাবের সাথে এক ফোঁটা রক্ত দেখতে পাই । তখন আমার গোসল করে নামাজ আদায় করি।
এরপর আমার মনে হচ্ছিল আমি যদি আবার পেশাব করি তাহলে আবার হয়তো এক দুই ফোঁটা রক্ত  দেখতে পাবো। এভাবে বারবার পেশাব করতে গেলে হয়তো বারবারই এক দুই ফোটা রক্ত দেখতে পাবো। আবার আমি যে নামাজ না পড়ে অপেক্ষা করে দেখব তাতেও ভয় লাগছে,, যদি রক্ত  না আসে তাহলে তো নামাজ কাজা হয়ে যাবে। এভাবে বারবার গোসল করে নামাজ আদায়ও তো সম্ভাব না।
এজন্য আমি ইচ্ছা করে নামাজের আগে পেশাব করছিলাম না। পেশাব না  করে ৩-৪ ওয়াক্ত মতো নামাজ আদায় করেছিলাম যেন ব্লাড না আসে।  দুই তিন ওয়াক্ত পরে একবার পেশাব করে দেখি এক ফোঁটা রক্ত। আমি যতদূর জানি রক্ত যদি লজ্জাস্থানের  বাইরে না আসে তাহলে তো সেটা হায়েজ হিসাবে ধরা হবে না।

 সেজন্য আমি ভাবছিলাম রক্ত যেহেতু লজ্জাস্থানের বাইরে আসছে না তাই জন্য সমস্যা নেই। ওইভাবে নামাজ আদায় করি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে এতে গুনাহ হলো নাকি?? এখন কি আমাকে তওবা করতে হবে???? এটা কি ভুল হয়ে গেছে??।
২.আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ
গতবার হায়েজের  শেষের দিকে আমি পেশাবের পরে সামান্য স্রাব দেখতে পাই। কিন্তু ওর সাথে কোন রক্ত মিশ্রিত  ছিল না। কিন্তু এ স্রাব সামান্য হলদেটে ছিল কিনা  সেটা আমি টের পাচ্ছিলাম না।  একবার মনে হচ্ছিল স্রাবটা হালকা হালকা হলদেটে হতেও পারে আবার নাও  হতেও পারে। আমি কোনোটাই নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। কারোর স্বাভাবিকভাবে দেখে এভাবে৷ নিশ্চিতভাবে  বোঝা যাচ্ছিল না সঠিকভাবে রংটা কি। যাই হোক আমার কাছে মনে হয়েছিল এ ধরনের স্রাব  স্বাভাবিক সময় আমি  দেখেছি হয়তো। এটা হয়তো সাদাস্রাব। ওই জন্য আমি আর ফরজ গোসল করে নামাজ আদায় করিনি। কিন্তু আমার মনের মধ্যে এখন খুঁতখুত করছে। আমি বুঝতে পারছি না আমার সিদ্ধান্তটা সঠিক হয়েছে নাকি??  এখন আবার কি করনীয়?? একবার মনে হচ্ছে ঠিক আছে একবার মনে হচ্ছে না ঠিক নেই।

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী হায়েযের সর্বোচ্চ সময়সীমা ১০দিন।
এ ১০দিনের ভিতর লাল,হলুদ,সবুজ,লাল মিশ্রিত কালো বা নিখুত কালো যে কালারের-ই পানি বের হোক না কেন তা হায়েয হিসেবেই গণ্য হবে।যতক্ষণ না নেপকিন সাদা নজরে আসবে। (বেহেশতী জেওর-১/২০৬)  

হায়েজের দিন গুলোতে যেই কালারেরই রক্ত হোক,সেটি হায়েজের রক্ত বলেই গন্য হবে। 
উক্ত সময় নামাজ রোযা ইত্যাদি আদায় করা যাবেনা।
(কিতাবুল ফাতওয়া ২/৭৬)

তবে স্পষ্ট সাদা কালারের কিছু বের হলে সেটাকে হায়েজ বলা যাবেনা।
(ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়াহ ২/৮৩৩)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
উম্মে আলক্বামাহ তথা মার্জনা (مَوْلاَةِ عَائِشَةَ) হইতে বর্ণিত,

عن أم علقمة أَنَّهَا قَالَتْ : " كَانَ النِّسَاءُ يَبْعَثْنَ إِلَى عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ بِالدُّرْجَةِ فِيهَا الْكُرْسُفُ فِيهِ الصُّفْرَةُ مِنْ دَمِ الْحَيْضَةِ يَسْأَلْنَهَا عَنْ الصَّلَاةِ فَتَقُولُ لَهُنَّ لَا تَعْجَلْنَ حَتَّى تَرَيْنَ الْقَصَّةَ الْبَيْضَاءَ تُرِيدُ بِذَلِكَ الطُّهْرَ مِنْ الْحَيْضَةِ "

তিনি বলেনঃ (ঋতুমতী) স্ত্রীলোকেরা আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট ঝোলা বা ডিবা (دُرْجَة) পাঠাইতেন, যাহাতে নেকড়া বা তুলা (كُرْسُفْ) থাকিত। উহাতে পাণ্ডুবৰ্ণ ঋতুর রক্ত লাগিয়া থাকিত। তাহারা এই অবস্থায় নামায পড়া সম্পর্কে তাহার নিকট জানিতে চাহিতেন। তিনি [আয়েশা (রাঃ)] তাহাদিগকে বলিতেনঃ তাড়াহুড়া করিও না, যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ সাদা (বর্ণ) দেখিতে না পাও। তিনি ইহা দ্বারা ঋতু হইতে পবিত্রতা (طُهْر) বুঝাইতেন।(মুয়াত্তা মালিক-১২৭)

حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ سُهَيْلٍ، - يَعْنِي ابْنَ أَبِي صَالِحٍ - عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، حَدَّثَتْنِي فَاطِمَةُ بِنْتُ أَبِي حُبَيْشٍ أَنَّهَا أَمَرَتْ أَسْمَاءَ - أَوْ أَسْمَاءُ حَدَّثَتْنِي أَنَّهَا أَمَرَتْهَا فَاطِمَةُ بِنْتُ أَبِي حُبَيْشٍ - أَنْ تَسْأَلَ، رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَمَرَهَا أَنْ تَقْعُدَ الأَيَّامَ الَّتِي كَانَتْ تَقْعُدُ ثُمَّ تَغْتَسِلُ - صحيح 

উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবাইশ (রাঃ) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আসমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন অথবা আসমা-ই আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবাইশ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করার জন্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দিলেন যে, (পূর্বের হিসেব মতো) হায়িযের দিনগুলোতে অপেক্ষা করবে, তারপর নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হলে গোসল করবে।
(আবু দাউদ ২৮১ নাসায়ী ২০১)

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,

فَإِنْ لَمْ يُجَاوِزْ الْعَشَرَةَ فَالطُّهْرُ وَالدَّمُ كِلَاهُمَا حَيْضٌ سَوَاءٌ كَانَتْ مُبْتَدَأَةً أَوْ مُعْتَادَةً وَإِنْ جَاوَزَ الْعَشَرَةَ فَفِي الْمُبْتَدَأَةِ حَيْضُهَا عَشَرَةُ أَيَّامٍ وَفِي الْمُعْتَادَةِ مَعْرُوفَتُهَا فِي الْحَيْضِ حَيْضٌ وَالطُّهْرُ طُهْرٌ. هَكَذَا فِي السِّرَاجِ الْوَهَّاجِ.
«الفتاوى الهندية» (1/ 37)

মাঝেমধ্যে হায়েয হওয়া আবার মাঝেমধ্যে বন্ধ হওয়া, দশ দিনের ভিতর সবকিছুই হায়েয হিসেবে গণ্য হবে।চায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন ঐ মহিলা প্রথমবার হোক বা এ ব্যাপারে অভ্যস্ত থাকুক।
যদি রক্তস্রাব দশদিন অতিক্রম করে যায়, তাহলে প্রথমবার এ পরিস্থিতির সম্মুখিন মহিলার জন্য দশদিন হায়েয। আর কোনো এক সংখ্যায় আদত ওয়ালী মহিলার জন্য তার পূর্বের আদতই হায়েয় এবং বাদবাকী সময় তুহুর। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৩৭,কিতাবুল-ফাতাওয়া-২/১০৮,কিতাবুন-নাওয়াযিল-৩/১৭২)

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/7474

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
রক্ত যদি লজ্জাস্থানের বাইরে না আসে তাহলে সেটা হায়েজ হিসাবে ধরা হবে না।
সুতরাং এমনটি হলে আপনার কোনো গুনাহ হবেনা।

আর যদি লজ্জাস্থানের বাহিরে আসে,সেক্ষেত্রে এটি যদি এভাবে দশদিন অতিক্রম করে যায়,তাহলে পূর্বের মাসের অভ্যাসগত সময় হায়েজ বলে গন্য হবে,বাকি দিন গুলি ইস্তেহাজা।

আর যদি দশদিনের আগেই বন্ধ হয়ে যায়,তাহলে যে কয়দিন এ রক্ত বের হয়েছে,সে কয়দিন হায়েজ হিসেবে গন্য হবে। 

এ দিন গুলোতে নামাজ পড়ার কারনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। 

(০২)
এটি সাদা স্রাব ছিলো কিনা,সেটি জানার জন্য সাদা টিস্যুতে বা প্যাড-এ নিয়ে দেখা উচিত ছিলো।

তবে প্রশ্নের বিবরন মতে বুঝা যাচ্ছে যে সম্ভবত এটি সাদা স্রাব ছিলোনা,তাই এক নং প্রশ্নের জবাব অনুপাতেই কাজ করতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

–1 vote
1 answer 220 views
0 votes
1 answer 165 views
0 votes
1 answer 139 views
...