আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
130 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
জীবন ঘনিষ্ঠ কিছু প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানতে চাই


আসসালামু আলাইকুম, আমি দীর্ঘদিন যাবত নিয়মিত নামাজ পড়ি না। এমনকি জুমুআ এর নামাজও মিস হয়।
১। আমার নামাজ আদায় করতে কিংবা ইবাদাত এ স্বাদ আসে না, নামাজ পড়তে কষ্ট লাগে। এটা কিভাবে সমাধান করবো?

২। নামাজ পড়লেও মনোযোগ থাকে না। শুধু মনের মধ্যে এমন ধারণা আসে যে, এটা কবুল না হলেও আগামীকাল থেকে ভাল করে পড়বো। অর্থাৎ, মানুষের আমল জমানোর মধ্যে একটা ভাললাগা কাজ করে। কিন্তু, আমার মধ্যে এই চেতনা আসে না। কি করবো আমি?

৩। মাসআলায় পড়েছি নাপাক কাপড় ৩ বার নিংড়াত্ব হয়। কিন্তু আমার বাড়ির লোক ডিটারজেন্ট দিয়ে ১ বার ধৌত করে। সকল কাপড় এমন করে। তাদের বুঝিয়েও লাভ হয়নি। এখন আমার জন্য ফজরের নামাজ পড়া কঠিন। কারণ, চাদরে নাপাকি লেগেছিল। তারা সব কিছু ধুয়ে ফেলেছে ১ বার। এখন শোয়ার কারণে হয়তো মুখের লালায় বালিশের কাভার থেকে শরীরও নাপাক হয়। এত সকালে গোসল করাও কঠিন। লেপ কম্বল, চাদর আমার পক্ষে ধোয়াও কঠিন।  এখন আমার করণীয় কি?

৪। আমার কাপড়ে নাপাকি (বীর্য) লেগেছিল। তারা তাদের কাপড় সহ সব ধুয়ে ফেলেছিল একসাথে। এরপর থেকে আমার ঘরে চলাচল অস্বস্তি লাগে। দরজার হাত দিলে কিংবা কাপড় দড়িতে শুকাতে কিংবা খাবার খাওয়ার পরও অনেকবার কুলি করি। এভাবে আমার জীবন কঠিন হয়ে গেছে। গোসল করলে অনেকবার বালতি ধুতে হয়। কারণ, যখন বালতিতে নাপাক কাপড় ধৌত করে তখন বার বার ট্যাও এ হাত দেয়। তাদের কোনদিন ট্যাপ ধুতে দেখিনি। তারা তো প্রতিবার ট্যাপ এ ব্যবহার করে ঘরে আসে। এইগুলা কিভাবে সমাধান করবো?

৫। শুকনো আসবাব পত্র থেকে হাতে নাপাকি ছড়িয়েছে কি না কিভাবে বুঝবো? তা নির্নয়ের পদ্ধতি কি?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, 

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ 

হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।

আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)

★সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করবেন।

রাসূলুল্লাহ্ ﷺ দোয়া করতেন,

اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَن زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا

হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক। (মুসলিম ২৭২২)
সুতরাং আপনিও দোয়াটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

নেককারদের সোহবত গ্রহণ করুন। তাদের সাথে বেশি উঠাবসা করুন।

দাওয়াত তাবলিগের মেহনতের সাথে যুক্ত হতে পারেন 

এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা আপনার জন্য সহজ হবে। 

 আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

অধিকহারে ইস্তেগফার করুন। প্রয়োজনে এর জন্য প্রত্যেক নামাজের পর একটা নিয়ম করে নিন। যেমন, প্রত্যেক নামাজের পর ৫০/১০০/২০০ বার أسْتَغْفِرُ اللهَ   অথবা أسْتَغْفِرُ اللهَ وَأتُوبُ إلَيهِ অথবা  اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي পড়ার নিয়ম করে নিতে পারেন। 

★কখনো একাকী নিভৃতে থাকবেন না। কেননা একাকীত্ব গোনাহ চিন্তা করার কারণ হতে পারে। আপনার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হোন। ঈমান ও ইসলামের পরিবেশে সময় ব্যয় করুন।

আপনাকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)

অনুরূপভাবে আমরা আপনাকে বুঝে বুঝে নবীদের কাহিনী, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। 

★অধিকহারে আল্লাহর যিকির করুন। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর যিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ ২৮)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
অধিকহারে আল্লাহর যিকির ও কুরআন তিলাওয়াত করুন।  তাহলে ইনশাআল্লাহ ইবাদাত এ স্বাদ আসবে।
নামাজের ওয়াজিব সুন্নাত যথাযথ ভাবে আদায় করবেন।মহান আল্লাহর মহাত্ম অন্তরের মধ্যে রেখে তিনি আপনাকে দেখছেন এমন চিন্তা রেখে নামাজ আদায় করবেন।

হক্কানী শায়েখের কাছে যান অথবা দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে যুক্ত হোন।
নেককার লোকদের সাথে চলুন,হক্কানী শায়েখদের জাহান্নামের শাস্তি সম্বলিত ওয়াজ শুনুন,ও এ সংক্রান্ত গ্রন্থাবলী পড়ুন।

নামাজে মনোযোগী হওয়ার পদ্ধতি জানুনঃ- 

(০২)
এই চিন্তা এখনই বাদ দিতে হবে।
মনে করতে হবে যে আমার এই নামাজই কবুল হবে।

(০৩)
আপনার লেপ কম্বল, চাদর আপনি নিজে অথবা কাজের লোককে দিয়ে শরীয়ত সম্মত পন্থায় ধুয়ে নিবেন।

(০৪)
আপনার কাপড় আপনি নিজে অথবা কাজের লোককে দিয়ে শরীয়ত সম্মত পন্থায় ধুয়ে নিবেন।

(০৫)
শুকনো আসবাব পত্র যদি নাপাক হয়,আর আপনার হাত যদি ভেজা হয়,সেক্ষেত্রে আপনার হাতে নাপাকির গন্ধ/চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে কিনা,সেই বিষয়টি লক্ষ্য করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...