বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(ক)
ওয়াহাবী আন্দোলনের ইতিহাস ও নতুন নামের সংস্কারক কারা ছিলো? উপমহাদেশে ওয়হাবী শব্দের প্রথম উদ্ভবঃ এবং উপমহাদেশে ওয়হাবী নামের আমদানী কারক কেঃ??
আজ থেকে প্রায় আড়াইশ বৎসর পূর্বের কথা। তখন আরব জাহান ছিল তুর্কি খেলাফতে উসমানিয়ার অধীনে ঐক্যবধ্য। ১৭০৩ সালে নজদের অন্তর্গত উয়ায়না শহরে জন্ম গ্রহণ করেন “মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব” (মৃত ১৭৮৬)। পরবর্তীতে তিনই আরবীয় উপদ্বীপে ধর্মীয় সংস্কারক হিসাবে এক মহান রাজনৈতিক শক্তিরূপে আবির্ভূত হন। মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব ছিলেন বাদশাহ আব্দুল আজিজ আস সাউদের মহান আধ্যাত্মিক শিক্ষক। তিনই ছিলেন চার মাযহাবের অন্যতম মাযহাব হাম্বলি মাযহাবের অনুসারী। তৎসময়ে আরব উপদ্বীপে শিরক-বিদাআত,কবর পুজা,মাজার পুজা, কবরে সিজদা করা,মাজারে মান্নত করা সহ নানান অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে ছেয়ে গিয়েছিল। ফলে তিনি তা হতে ইসলাম এবং মুসলমান কাতীকে মুক্ত রাখার জন্য এক একটি শুদ্ধি আন্দলনের সুত্রপাত করেন। যার নাম ছিল “মুহাম্মদি আন্দোলন” কিন্তু ধূর্ত উপনিবেশিক ইংরেজ গুষ্ঠি তার নাম বিকৃত করে নতুন নাম রাখে ওয়াহাবী আন্দোলন আর এই নাম করনেই প্রকৃত “মুহাম্মদি আন্দোলন” বিলপ্ত হয়ে ইংরেজদের সৃষ্ট “ওয়াহাবী আন্দোলন” নামে নতুন ভাবে শুরু করে।
সংঘাতের সুত্রপাতঃ
১৯০৯ সালে রসুল খিমা নামক স্তানে দুর্গ তৈরি করেন আবু মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব। আর সেখানেই ব্রিটিশ উপনিবেশিক খৃষ্টানদের সাথে মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের অনুসারীদের এক চুড়ান্ত সংঘর্ষ বেধেছিল। সে থেকেই পশ্চাত্তের ঐতিহাসিকরা এ শুদ্ধি আন্দোলনকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে “ওয়াহাবী আন্দোলন” নামে আখ্যা দিয়ে আসে। আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা বাস্তবায়ন কমিটি (ফেনি) জেলার সভাপতি মেজর মীর হোসেন চৌধুরি “হিজরী ক্যালেন্ডার বনাম হেলাল কমিটি” নামক বইয়ে লিখেছেন তারা (ব্রিটিশ) সে “মুহাম্মদি আন্দোলন” এর ঢেউয়ে আরব এলাকা থেকে পিচু হঠতে বাধ্য হয়। এদিকে উক্ত আন্দলনের থেকে কিছুটা প্রেরণা পেয়ে ভারতীয় আলেমদের একাংশ ব”ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন” কিংবা আজাদী আন্দোলনে অংশ নেন। এমনকি সে সময়ে ইংরেজরা আন্দোলনরত আলেমদের কোণঠাসা করে রাখার উদ্দেশে তাদের তাবেদার গুলাম কিছু আলেম সম্প্রদায় সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ বিরুধী আলেমদেরকে ওয়াহাবী নামে আখ্যায়িত করে নানা কুৎসা রটনা করে। ফলে ভারতে মুসলমানগন একই সুন্নি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও একই মাযহাবের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও ওয়াহাবী সুন্নি এই দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
খেলাফতে উসমানিয়ার পতনঃ
১৯২৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে খেলাফতে উসমানিয়ার খালিফা আব্দুল হামীদ পদচ্যুত হয়ে গেলে ১৯১৬ সালে ইংরেজদের উস্কানিতে সমগ্র আরব জাহানে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠে। সিরিয়া,ফিলিস্তিন,ইরাক,হিজায সহ সমগ্র আরব বিশ্ব তুর্কি খেলাফত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
আহলে সাউদ দ্বারা মক্কা মদীনার নিয়ন্ত্রনগ্রহনঃ
মক্কায় তুর্কি খেলাফতের গভর্নর ছিল শরিফ হুসাইন। ইংরেজদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে তুর্কি গভর্নর ক্ষমতার লোভে বিদ্রুহের আগুন জালিয়ে দেয়। ফলে ইংরেজদের ছত্র ছায়ায় মক্কা মদীনা তার অধীনে চলে যায়। আর রিয়াদ সহ দক্ষিন অঞ্চল থেকে যায় সাউদ গুত্রিয় বাদশাহ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুর রহমান বন ফায়সাল বিন তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ বিন ইমাম সাউদ বিন আব্দুল আজীজ বিন মুহাম্মদ বিন আস সাউদের নিয়ন্ত্রনে। এভাবে চলে যায় ব্যাস কয়েক বছর। ইংরেজদের পরিকল্পনা ছিল এ বিদ্রুহের পথ ধরে হিজাজকে তুরকিদের হাতছাড়া করানো এবং শরিফ হুসাইনের মাধ্যমে তার নিয়ন্ত্রন গ্রহণ করা। আব্দুল আজীজ বিন আব্দুর রহমান বিন ফাইসাল এর কারনে ইংরেজদের সে খায়েশ পূরণ হয়নাই। তিনি ১৯২৬ সালে শরিফ হুসাইনের ওপর আক্রমন করে তাকে পরাজীত করে মক্কা ও মদীনার নিয়ন্ত্রন পুনঃরায় গ্রহণ প্রতিষ্ঠা করেন।
গোত্র শাসিত অঞ্চলগুলোর কর্তিত্ত প্রতিষ্ঠাঃ
মুহাম্মদ বিন আস সাউদ নেতা হিসাবে ধর্মীয় সংস্কারক মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাবকে অনুসরন করতেন। যা আগে ও উল্লেখ করা হয়েছে। মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্তে ১৭৭৩ সালে রিয়াদের শায়েখ “দাহহামকে” পরাজীত করেন। ১৭৮৭ সালে মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব মৃত্যু বরন করলে পরবর্তীকালে শায়েখ মুহাম্মদ বিন আস সাউদের ছেলে আব্দুল আজীজ {মৃত-১৮০৩) এ আন্দোলনের হাল ধরেন। তার ইন্তেকালের পর তার পুত্র ইমাম সাউদ বিন আব্দুল আজীজ (মৃত-১৮১৪)খন্ড খন্ড যোদ্ধ অভিযান চালিয়ে নজদ এবং আশে পাশের গোত্র শাসিত এলাকা অঞ্চল গুলো দখল করেন। কিন্তু ততক্ষনে মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব ও শায়েখ আব্দুল আজীজ তাদের কেউ জীবিত ছিলেন না।
চলবে,,,,