আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
232 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (41 points)
আসসালামু আলাইকুম।
(ক) হযরত উপমহাদেশে ওয়াহাবী আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাই। তাদের আকীদা গত কোন ভ্রান্তি ছিল কিনা?
(খ) শাহ সৈয়দ আহমদ শহীদ রহ.  কে অনেকে উপমহাদেশে ওয়াহাবী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা বলে থাকেন? এটা কতটুকু সত্য।
(গ) আমরা জানি যে উনি ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে মাওলানা কাসেম নানুতুবী রহ. এর সাথে শামেলীর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। এটা কতটুকু সত্য?
(ঘ) আবার আমরা জানি আব্দুল ওয়াহাব নজদীকে ইংরেজরা ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। তার চিন্তা ধারাকে ওয়াহাবী মত বলা হয়।  শাহ আহমদ শহীদ রহ। এর সাথে তাহলে কেন  ওয়াহাবী আন্দোলনের সম্পৃক্ততা আনা হয়?


জাযাকাল্লাহ খায়র।

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(ক)
ওয়াহাবী আন্দোলনের ইতিহাস ও নতুন নামের সংস্কারক কারা ছিলো? উপমহাদেশে ওয়হাবী শব্দের প্রথম উদ্ভবঃ এবং উপমহাদেশে ওয়হাবী নামের আমদানী কারক কেঃ?? 

আজ থেকে প্রায় আড়াইশ বৎসর পূর্বের কথা। তখন আরব জাহান ছিল তুর্কি খেলাফতে উসমানিয়ার অধীনে ঐক্যবধ্য। ১৭০৩ সালে নজদের অন্তর্গত উয়ায়না শহরে জন্ম গ্রহণ করেন “মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব” (মৃত ১৭৮৬)। পরবর্তীতে তিনই আরবীয় উপদ্বীপে ধর্মীয় সংস্কারক হিসাবে এক মহান রাজনৈতিক শক্তিরূপে আবির্ভূত হন। মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব ছিলেন বাদশাহ আব্দুল আজিজ আস সাউদের মহান আধ্যাত্মিক শিক্ষক। তিনই ছিলেন চার মাযহাবের অন্যতম মাযহাব হাম্বলি মাযহাবের অনুসারী। তৎসময়ে আরব উপদ্বীপে শিরক-বিদাআত,কবর  পুজা,মাজার পুজা, কবরে সিজদা করা,মাজারে মান্নত করা সহ নানান অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে ছেয়ে গিয়েছিল। ফলে তিনি তা হতে ইসলাম এবং মুসলমান কাতীকে মুক্ত রাখার জন্য এক একটি শুদ্ধি আন্দলনের সুত্রপাত করেন। যার নাম ছিল “মুহাম্মদি আন্দোলন” কিন্তু ধূর্ত উপনিবেশিক ইংরেজ গুষ্ঠি তার নাম বিকৃত করে নতুন নাম রাখে ওয়াহাবী আন্দোলন আর এই নাম করনেই প্রকৃত “মুহাম্মদি আন্দোলন” বিলপ্ত হয়ে ইংরেজদের সৃষ্ট “ওয়াহাবী আন্দোলন” নামে নতুন ভাবে শুরু করে।

সংঘাতের সুত্রপাতঃ
১৯০৯ সালে রসুল খিমা নামক স্তানে দুর্গ তৈরি করেন আবু মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব। আর সেখানেই ব্রিটিশ উপনিবেশিক খৃষ্টানদের সাথে মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের অনুসারীদের এক চুড়ান্ত সংঘর্ষ বেধেছিল। সে থেকেই পশ্চাত্তের ঐতিহাসিকরা এ শুদ্ধি আন্দোলনকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে “ওয়াহাবী আন্দোলন” নামে আখ্যা দিয়ে আসে। আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা বাস্তবায়ন কমিটি (ফেনি) জেলার সভাপতি মেজর মীর হোসেন চৌধুরি “হিজরী ক্যালেন্ডার বনাম হেলাল কমিটি” নামক বইয়ে লিখেছেন তারা (ব্রিটিশ) সে “মুহাম্মদি আন্দোলন” এর ঢেউয়ে আরব এলাকা থেকে পিচু হঠতে বাধ্য হয়। এদিকে উক্ত আন্দলনের থেকে কিছুটা প্রেরণা পেয়ে ভারতীয় আলেমদের একাংশ ব”ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন” কিংবা আজাদী আন্দোলনে অংশ নেন। এমনকি সে সময়ে ইংরেজরা আন্দোলনরত আলেমদের কোণঠাসা করে রাখার উদ্দেশে তাদের তাবেদার গুলাম কিছু আলেম সম্প্রদায় সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ বিরুধী আলেমদেরকে ওয়াহাবী নামে আখ্যায়িত করে নানা কুৎসা রটনা করে। ফলে ভারতে মুসলমানগন একই সুন্নি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও একই মাযহাবের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও ওয়াহাবী সুন্নি এই দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। 

খেলাফতে উসমানিয়ার পতনঃ 
১৯২৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে খেলাফতে উসমানিয়ার খালিফা আব্দুল হামীদ পদচ্যুত হয়ে গেলে ১৯১৬ সালে ইংরেজদের উস্কানিতে সমগ্র আরব জাহানে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠে। সিরিয়া,ফিলিস্তিন,ইরাক,হিজায সহ সমগ্র আরব বিশ্ব তুর্কি খেলাফত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। 

আহলে সাউদ দ্বারা মক্কা মদীনার নিয়ন্ত্রনগ্রহনঃ
মক্কায় তুর্কি খেলাফতের গভর্নর ছিল শরিফ হুসাইন। ইংরেজদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে তুর্কি গভর্নর ক্ষমতার লোভে বিদ্রুহের আগুন জালিয়ে দেয়। ফলে ইংরেজদের ছত্র ছায়ায় মক্কা মদীনা তার অধীনে চলে যায়। আর রিয়াদ সহ দক্ষিন অঞ্চল থেকে যায় সাউদ গুত্রিয় বাদশাহ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুর রহমান বন ফায়সাল বিন তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ বিন ইমাম সাউদ বিন আব্দুল আজীজ বিন মুহাম্মদ বিন আস সাউদের নিয়ন্ত্রনে। এভাবে চলে যায় ব্যাস কয়েক বছর। ইংরেজদের পরিকল্পনা ছিল এ বিদ্রুহের পথ ধরে হিজাজকে তুরকিদের হাতছাড়া করানো এবং শরিফ হুসাইনের মাধ্যমে তার নিয়ন্ত্রন গ্রহণ করা। আব্দুল আজীজ বিন আব্দুর রহমান বিন ফাইসাল এর কারনে ইংরেজদের সে খায়েশ পূরণ হয়নাই। তিনি ১৯২৬ সালে শরিফ হুসাইনের ওপর আক্রমন করে তাকে পরাজীত করে মক্কা ও মদীনার নিয়ন্ত্রন পুনঃরায় গ্রহণ প্রতিষ্ঠা করেন। 

গোত্র শাসিত অঞ্চলগুলোর কর্তিত্ত প্রতিষ্ঠাঃ 
মুহাম্মদ বিন আস সাউদ নেতা হিসাবে ধর্মীয় সংস্কারক মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাবকে অনুসরন করতেন। যা আগে ও উল্লেখ করা হয়েছে। মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্তে ১৭৭৩ সালে রিয়াদের শায়েখ “দাহহামকে” পরাজীত করেন। ১৭৮৭ সালে মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব মৃত্যু বরন করলে পরবর্তীকালে শায়েখ মুহাম্মদ বিন আস সাউদের ছেলে আব্দুল আজীজ {মৃত-১৮০৩) এ আন্দোলনের হাল ধরেন। তার ইন্তেকালের পর তার পুত্র ইমাম সাউদ বিন আব্দুল আজীজ (মৃত-১৮১৪)খন্ড খন্ড যোদ্ধ অভিযান চালিয়ে নজদ এবং আশে পাশের গোত্র শাসিত এলাকা অঞ্চল গুলো দখল করেন। কিন্তু ততক্ষনে মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব ও শায়েখ আব্দুল আজীজ তাদের কেউ জীবিত ছিলেন না। 

চলবে,,,,


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...