জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
শরীয়তের বিধান হলো ওয়াতনে আসলী (স্থায়ী নিবাস) তে এক দিনের জন্য গেলেও পুরো নামাজ পড়তে হবে।
ব্যক্তি নিজের স্থায়ী নিবাসে গেলে কখনো মুসাফির হয়না। স্থায়ী নিবাস বলে এমন স্থানকে-“যেখানে ব্যক্তির বসবাসের জন্য স্থায়ী গৃহ থাকে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে যেখানে সর্বদার জন্য থাকার নিবাস হয়”।
শরীয়তের বিধান হলো কোন স্থানে গিয়ে সেখানে যদি কমপক্ষে পনের দিন থাকার নিয়ত না করে, তাহলেও কসর পড়তে হবে। বেশি দিন থাকার নিয়ত করলে কসর করতে পারবে না।
৭৮ কিলোমিটার হল সফরের দূরত্ব। এর কম নয়। সুতরাং কেউ যদি ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বের সফরের নিয়তে বের হয় কেবল সেই ব্যক্তি কসর পড়তে পার। এরচে’কম দূরত্বের সফরের জন্য কসর পড়া জায়েজ নয়।
হাদীস শরীফে এসেছে
سنن أبى داود -صلاة السفر باب متى يقصر المسافر (1 / 465)حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ يَحْيَى بْنِ يَزِيدَ الْهُنَائِىِّ قَالَ سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ عَنْ قَصْرِ الصَّلاَةِ فَقَالَ أَنَسٌ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا خَرَجَ مَسِيرَةَ ثَلاَثَةِ أَمْيَالٍ أَوْ ثَلاَثَةِ فَرَاسِخَ – شُعْبَةُ شَكَّ – يُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ.
সারমর্মঃ যখন তিন ফারছাখ সফরের নিয়ত করে,তাহলে কসরের নামাজ পড়তে পারবে।
.
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত মহিলা যেখানে থাকেন, যদি সেই বাড়িকেই ওয়াতলে আসলী তথা মূল বাড়ি হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। অর্থাৎ সেখানেই তিনি মূলত থাকেন পরিবার নিয়ে।
নিজ পিতার বাসায় বা শশুর বাসায় স্থায়ী ভাবে থাকার যদি কোনো নিয়ত না থাকে,স্থায়ী ভাবেই যদি পিতার বাসা ত্যাগ করে থাকে, আর তার পিতার বাসা এই বাসা থেকে ৭৮ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি দুরত্বে হয়, তাহলে তিনি পিতার বাসায়/শশুর বাসায় গিয়ে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে মুসাফির হবেন।
সেখানে কসরের নামাজ পড়বেন।।
,
যদি তিনি যেখানে আছেন,সেটাকে ওয়াতনে আসলী (স্থায়ী নিবাস) হিসেবে ঠিক না করে,তাহলে তিনি নিজ পিতার বাসায় মুসাফির বলে গন্য হবেননা।
,
তিনি যেখানে আছেন,সেটাকে স্থায়ী নিবাস হিসেবে ঠিক করলেও যদি স্থায়ী ভাবেই যদি পিতার বাসা ত্যাগ না করে থাকেন,বরং নিজ জীবনের কোনো সময় সেখানে বা সেই এলাকায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে,তাহলেও তিনি নিজ পিতার বাসায়,শশুর বাসায় মুসাফির বলে গন্য হবেননা।
কারন সেটি এখনো তার স্থায়ী নিবাস হিসেবেই আছে।
فى رد المحتار- (الوطن الاصلى يبطل بمثله) ( قوله إذا لم يبق له بالأول أهل ) أي وإن بقي له فيه عقار قال في النهر : ولو نقل أهله ومتاعه وله دور في البلد لا تبقى وطنا له وقيل تبقى كذا في المحيط وغيره (رد المحتار-كتاب الصلاة، باب صلاة المسافر، مطلب في الوطن الأصلي ووطن الإقامة-2/614)
সারমর্মঃ ওয়াতনে আসলিতে যদি স্থায়ী আর না থাকার নিয়ত করে,এবং পরিবার সামানা যদি সেখানে আর না থাকে,তাহলে সেটা আর ওয়াতনে আসলি থাকবেনা।
অন্যথায় সেটা ওয়াতনে আসলি হিসেবেই থাকবে।
আরো জানুনঃ
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনার স্থায়ী বাসা কোনটা?
আপনি আপনার স্বামীকে নিয়ে যেখানে বসবাস করেন,সেটা কি আপনার স্থায়ী বাসা?
এখন আপনি আপনার স্বামীকে নিয়ে যেখানে বসবাস করেন, শশুর বাড়িকে স্থায়ীভাবে ত্যাগ করে এই বাসাকেই নিজ স্থায়ী বাসা হিসেবে নির্ধারন করেছেন কিনা?
আর কোনো দিন শশুর বাড়িতে স্থায়ী ভাবে যাওয়ার নিয়ত নেই,এমনটি হয়েছে কিনা?
যদি আর আর কোনো দিন শশুর বাড়িতে স্থায়ী ভাবে যাওয়ার নিয়ত না থাকে,বরং এই বাসাকেই স্থায়ী ভাবে পরিবার নিয়ে সারাজীবন থাকার নিয়ত করে থাকেন,এবং আপনাদের এই বাসা হতে আপনার শশুর বাড়ি ৭৮ কিলোমিটার এর দূরত্বে হলে ও সেখানে গিয়ে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে,সেক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে নিজ শশুর বাড়িতে গেলে কসর নামাজ আদায় করবেন।
এক্ষেত্রে এখন আপনি আপনার স্বামীকে নিয়ে যেখানে বসবাস করেন,সেই বাসা হতে আপনার দাদার বাড়ি ৭৮ কিলোমিটার এর দূরত্বে হলে ও সেখানে গিয়ে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে,সেক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে নিজ বাসা হতে সরাসরি নিজ দাদার বাড়িতে গেলে কসর নামাজ আদায় করবেন।
আপনি আপনার স্বামীকে নিয়ে যেখানে বসবাস করেন,সেই বাসা হতে আপনার আম্মুর বাড়ি ৭৮ কিলোমিটার এর দূরত্বে হলে ও সেখানে গিয়ে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে,সেক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে নিজ বাসা হতে সরাসরি নিজ আম্মুর বাড়িতে গেলে কসর নামাজ আদায় করবেন।
আপনার শশুর বাড়ি হতে দাদা/আম্মুর বাড়িতে গেলে কসর আদায় করতে পারবেন।
তবে আপনার দাদার বাড়ি হতে আপনার আম্মুর বাড়ি অথবা আপনার আম্মুর বাসা হতে আপনার দাদার বাড়িতে গেলে কসর আদায় করতে পারবেননা।
★আর যদি শশুর বাড়িকেই নিজ স্থায়ী বাসা হিসেবে নির্ধারন করে থাকেন,এখন স্বামীকে নিয়ে যেই বাসায় থাকেন,সেই বাসায় পরিবার নিয়ে সারাজীবনের জন্য স্থায়ী ভাবে থাকার নিয়ত না থাকে,বরং শশুর বাড়িকেই স্থায়ী ভাবে পরিবার নিয়ে সারাজীবন থাকার নিয়ত করে থাকেন,সেক্ষেত্রে শশুর বাড়িতে গিয়ে কসরের নামাজ আদায় করতে পারবেননা।
তবে দাদা/আম্মুর বাড়িতে গিয়ে কসরের নামাজ আদায় করবেন।
তবে আপনার দাদার বাড়ি হতে আপনার আম্মুর বাড়ি অথবা আপনার আম্মুর বাসা হতে আপনার দাদার বাড়িতে গেলে কসর আদায় করতে পারবেননা।
(০২)
স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে শশুর বাড়ির ঠিকানা দেয়া আবশ্যক ছিলো।
তদুপরি ডকুমেন্টস সহজেই পাওয়ার স্বার্থে ও জন্ম সনদ, ভোটার আইডি কার্ড ইত্যাদির সাথে মিল রাখার জন্য এভাবে ঠিকানা লেখাতে গুনাহ হবেনা।
(০৩)
না,এমনটি করা যাবেনা।
(০৪)
এক্ষেত্রে সরাসরি আপনার দাদার বাড়ি/ সরাসরি আম্মুর বাড়িতে যদি যায়,এবং বর্তমান বাসা থেকে আপনার দাদা/আম্মুর বাড়ি ৭৮ কিলোমিটার এর দূরত্বে হলে ও সেখানে গিয়ে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে সেখানে গিয়ে আপনার স্বামী কসর করবেন।
তবে ঐ এলাকার যেই বাড়িতে তিনি আগে থেকে ছিলেন,যেখানে স্থায়ী ভাবে থাকার নিয়ত আছে,সেখানে গেলে কসর করতে পারবেনা।
সেই বাড়িতে আগে গিয়ে পরবর্তীতে আপনার দাদা/আম্মুর বাসায় গেলেও কসর করতে পারবেনা।
আপনার দাদার বাড়ি হতে আপনার আম্মুর বাড়ি অথবা আপনার আম্মুর বাসা হতে আপনার দাদার বাড়িতে গেলে কসর আদায় করতে পারবেননা।
(০৫)
এক্ষেত্রেও কসর আদায় করবেন।
(০৬)
সেখানে গিয়ে পূর্ণ নামাজ আদায় করবেন।
কসর আদায় করতে পারবেননা।
(০৭)
আপনি পূর্ণ নামাজ আদায় করবেন।
কসর আদায় করতে পারবেননা।
উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে ৭৮ কিলোমিটার দূরত্ব হতে হবে।
(০৮)
প্রশ্নের বিবরন মতে উক্ত আন্টির মালিকানায় যেহেতু তার দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ থেকেও অতিরিক্ত টাকা আছে,তাই তাকে যাকাত দেয়া যাবেনা।
বরং তার উপরেও যাকাত ফরজ।
এখন কথা হলো, তাদের যদি কোনো জমি না থাকে,তার যে ছেলে আছে,তারা যদি বালেগ হয়,আর তাদের মালিকানায় যদি কোনো স্বর্ণ না থাকে,এবং নেসাব পরিমান টাকা না থাকে,সেক্ষেত্রে তার ছেলেকে আপনি যাকাত দিতে পারেন।
★তার ছেলেকে টাকা দিয়ে যদি বলে দেন এইটা যাকাত এর টাকা বাড়ির কাজে ব্যাবহার করেন তাহলে হবে। এমন ভাবে বলা যাবে।
এক্ষেত্রে যাকাত এর টাকা বলা আবশ্যক নয়।
আপনার মধ্যে যাকাত প্রদানের নিয়ত থাকাই যথেষ্ট।
তাদেরকে হাদিয়া বলেও টাকাটা দিতে পারেন।
এতেও আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
(০৯)
এটা কেনায়া বাক্য নয়।
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক আগের মতোই বহাল রয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ৷ কোনো সমস্যা হয়নি।
নিশ্চিন্ত মনে ঘর সংসার চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ রইলো।