আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
162 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (7 points)
প্রান এবং আর এফ এল কম্পানি আর্থিক দিকে কাদিয়ানিদের জন্য অনেক অবদান রেখেছে। তাই এটা তাদের কম্পানিই বলা যেতে পারে। এখন যেমন ইজরায়েল মুসলিমদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে সেজন্য তাদের কম্পানির পণ্যগুলো দেশব্যাপী বয়কটের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। এবং বয়কট করাও হচ্ছে। ঠিক তেমনি ভানে কাদিয়ানিরাও তো ইসলামের অনেক ক্ষতি করতেছে। তারাও তো মুসলিমদের অনেক বড় দুশমন। ইয়াহুদি, খ্রিস্টান মুশরিকরা তো সরাসরি প্রকাশ্যে কাফের। কিন্ত কাদিয়ানিরাতো মুসলিম পরিচয় দিয়ে ইসলামের সাথে, আমাদের নবীর সাথে, আমাদের আল্লাহর সাথে বেইমানি করতেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে,
১। তাদের কম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ হবে নাকি নাজায়েজ হবে?

২। যেহেতু আমি ব্যবসা করি, আমার মুদির দোকান আছে। তো এখন তাদের কম্পানির পণ্য ক্রয়-বিক্রয় কি জায়েজ হবে? আর দেখা যাই যে, মুদি দোকানের ক্ষেত্রে প্রান কম্পানিরই ৯০% পণ্য হয়। যার কারনে প্রান কম্পানির পণ্য পুরোপুরি এভয়েড করে দোকান চালানোও খুব কষ্টের। এখন এই অবস্থায় একজন মুসলিম হিসেবে করনীয় কি? তাদের কম্পানির পণ্য ক্রয়-বিক্রয় কি জায়েজ হবে?

1 Answer

0 votes
by (59,070 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

https://ifatwa.info/4581/  নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর আক্বিদায় বিশ্বাসীরা সমস্ত মুসলমানদের ঐক্যমতে কাফের। সুতরাং কাদিয়ানী কাফেরদের পণ্য ক্রয়ের বিধান হল, যদি বাজারে এছাড়া আর কোন সমমানের পণ্য না থাকে, তাহলে অপারগ অবস্থায় তাদের জায়েজ পণ্য ক্রয় করা জায়েজ আছে। কিন্তু যদি সমমানের পণ্য বাজারে থাকে, তাহলে তাদের প্রোডাক্টকৃত পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকা উচিত।

ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে আছেঃ 

لَا بَأْسَ بِأَنْ يَكُونَ بَيْنَ الْمُسْلِمِ وَالذِّمِّيِّ مُعَامَلَةٌ إذَا كَانَ مِمَّا لَا بُدَّ مِنْهُ (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الباب الرابع عشر فى اهل الذمة والاحكام-5/348

যদি সমমানের পণ্য বাজারে না থাকে,তাহলে কাফেরের পন্য ক্রয় করতে কোনো সমস্যা নেই।  

প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছে যে  "আমরা যে টাকা দিয়ে ওদের পণ্য কিনব, তার লভ্যংশ থেকে ওরা ১৬ ভাগ করে ১ ভাগ ব্যয় করবে কাদিয়ানী ধর্ম প্রচারের জন্য। এই টাকায় ধর্মান্তরিত হবে কিছু মুসলিম ভাই ও বোন। যারা ধর্মের ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ। এসব যদি আমরা অন্যায় ভেবে থাকি, একজন মুসলিম হিসেবে নিজ নিজ স্থান থেকে প্রতিবাদ করা ঈমানের নুন্যতম দাবী।

একজন মুসলিম কোন অন্যায় দেখলে সবার আগে হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে, না পারলে মুখ দিয়ে না পারলে মন থেকে অন্যায়কে ঘৃণা করবে। হাদিসে বর্ণিত অন্যায়ের প্রতিবাদের এই সুন্দর সংজ্ঞায়ন আমাদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে হবে।

পণ্য বয়কট সেই উপায় যার মাধ্যমে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে পারি। যেহেতু তাদের পন্য ক্রয় করলে তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা হয়,এবং শক্তিশালী অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম আরো বাড়িয়ে দিতে পারে, কাজেই এসব দেশের পণ্য ক্রয় করা,এবং এসব কোম্পানিতে চাকুরী করা থেকে আমাদের অবশ্যই বিরত থাকা চাই। তাদের পন্য ক্রয় করে তাদেরকে সহযোগিতা করা যাবেনা। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥:٢]

সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। {সূরা মায়িদা-২}

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ رَجَاءٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، ح وَعَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ أَخْرَجَ مَرْوَانُ الْمِنْبَرَ فِي يَوْمِ عِيدٍ فَبَدَأَ بِالْخُطْبَةِ قَبْلَ الصَّلَاةِ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا مَرْوَانُ خَالَفْتَ السُّنَّةَ أَخْرَجْتَ الْمِنْبَرَ فِي يَوْمِ عِيدٍ وَلَمْ يَكُنْ يُخْرَجُ فِيهِ وَبَدَأْتَ بِالْخُطْبَةِ قَبْلَ الصَّلَاةِ . فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ مَنْ هَذَا قَالُوا فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ . فَقَالَ أَمَّا هَذَا فَقَدْ قَضَى مَا عَلَيْهِ سَمِعْتُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مَنْ رَأَى مُنْكَرًا فَاسْتَطَاعَ أَنْ يُغَيِّرَهُ بِيَدِهِ فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ "

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ‘ঈদের দিন মারওয়ান ঈদের মাঠে মিম্বার স্থাপন করে সলাতের পূর্বেই খুত্ববাহ শুরু করায় জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলেন, হে মারওয়ান! তুমি সুন্নাত বিরোধী কাজ করলে। তুমি ‘ঈদের দিন বাইরে মিম্বার এনেছো এবং সলাতের পূর্বেই খুত্ববাহ শুরু করেছো। অথচ ইতিপূর্বে (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খুলাফায়ি রাশিদীনের যুগে) কখনো এমনটি করা হয়নি। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, লোকটি কে? লোকজন বললো, অমুকের পুত্র অমুক। তিনি বললেন, সে তার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কেউ কোন গর্হিত (শারী‘আত বিরোধী) কাজ সংঘটিত হতে দেখলে তাকে হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। এরূপ করতে অক্ষম হলে তা কথার দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি এতেও অক্ষম হয় তাহলে সে তা অন্তরে ঘৃণা করবে (বা তা দূর করার উপায় অন্বেষনে চিন্তা-ভাবনা করবে)। তবে এটি হচ্ছে দুর্বলতম ঈমানের পরিচায়ক। (মুসলিম , ইবনু মাজাহ  হাঃ ১২৭৫হাঃ ৪০১৩), আহমাদ (৩/১০)

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، وَهَنَّادُ بْنُ السَّرِيِّ، قَالَا: حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ رَجَاءٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، وَعَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ رَأَى مُنْكَرًا فَاسْتَطَاعَ أَنْ يُغَيِّرَهُ بِيَدِهِ فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ - وَقَطَعَ هَنَّادٌ بَقِيَّةَ الْحَدِيثِ، وَفَّاهُ ابْنُ الْعَلَاءِ: - فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ بِلِسَانِهِ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কেউ কোনো অন্যায় হতে দেখলে সে তা হাতের সাহায্যে দমন করতে সক্ষম হলে তা দ্বারা যেন প্রতিরোধ করে। ‘‘হান্নাদ’’ এ হাদীসের বাকী অংশ উল্লেখ করেনি। তবে ইবনুল আলা তা পূর্ণ করেছেন। তা হলোঃ যদি হাতের দ্বারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম না হয়, তবে জিহ্বা দ্বারা আর যদি জিহ্বা দ্বারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম না হলে তবে অন্তর দ্বারা, তবে এটা দুর্বল ঈমানের স্তর। (আবু দাউদ ৪৩৪০)

একজন মুসলমান হিসেবে বাজারে কোনো মুসলিম কম্পানির পণ্য ক্রয় করাই উচিৎ। তবে যদি বাজারে  মুসলিম কম্পানির মানসম্মত পণ্য খোজে না পাওয়া যায়, তাহলে অমুসলিম কম্পানির পণ্য ক্রয় করা যাবে। হ্যা মুসলিম কম্পানির মানসম্মত পণ্য বাজারে থাকা সত্তেও অমুসলিম কম্পানির পণ্য ক্রয় করা সর্বদা অনুত্তম ও অনুচিত হিসেবেই বিবেচিত হবে।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

১. নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গিয়েছে যে প্রান এবং আরএফএল এগুলো কাফিয়ানীদের পণ্য। একজন মুসলিম কোন অন্যায় দেখলে সবার আগে হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে, না পারলে মুখ দিয়ে না পারলে মন থেকে অন্যায়কে ঘৃণা করবে। হাদিসে বর্ণিত অন্যায়ের প্রতিবাদের এই সুন্দর সংজ্ঞায়ন আমাদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে হবে। পণ্য বয়কট সেই উপায় যার মাধ্যমে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে পারি।

যেহেতু তাদের পন্য ক্রয় করলে ইসলাম বিরোধীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা হয়, এবং শক্তিশালী অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম আরো বাড়িয়ে দিতে পারে, কাজেই এসব দেশের পণ্য ক্রয় করা এবং এসব কোম্পানিতে চাকুরী করা থেকে আমাদের অবশ্যই বিরত থাকা চাই। সুতরাং কাদিয়ানীদের কোম্পানীতে চাকুরী করা সরাসরি হারাম না হলেও উলামায়ে কেরাম তাদের কোম্পানীতে চাকুরী করতে নিরুৎসাহিত করে থাকে এবং ঈমানী চেতনা ও তাক্বওয়ার দৃষ্টিতে এটি কোন ভাবে কাম্য নয়।

২. কাদিয়ানী কাফেরদের পণ্য ক্রয়- বিক্রয়ের বিধান হল, যদি বাজারে এছাড়া আর কোন সমমানের পণ্য না থাকে, তাহলে অপারগ অবস্থায় তাদের জায়েজ পণ্য ক্রয়-ব্ক্রিয় করা জায়েজ আছে। কিন্তু যদি সমমানের পণ্য বাজারে থাকে, তাহলে তাদের প্রোডাক্টসমূহ ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকা উচিত। এটিই তাক্বওয়ার দাবী।

বিস্তারিত জানুনঃ https://ifatwa.info/7143/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...