জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
,
কবরস্থ করার পর মৃত ব্যাক্তি দুনিয়ার কোনো কিছু দেখেনা।
তবে তারা দুনিয়ার কারো কথা শুনতে পারে কিনা,এই বিষয়ে খোদ ছাহাবায়ে কেরামদের মাঝেই মতবিরোধ রয়েছে
,
এই বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে উভয় দিকেই দলিল রয়েছে।
কেহ কেহ বলেছেন যে তারা শুনতে পারেনা,কেহ কেহ বলেন যে শুনতে পারে।
কেহ কেহ বলেন যে যখন কেহ তাদের কবরের পাশে গিয়ে সালাম দেয়,তখন তাদের সালামের জবাব দেওয়া জন্য তাদের রুহ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
,
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ما من مسلم يمر بقبر أخيه كان يعرفه في الدنيا فَيُسَلم عليه، إلا رد الله عليه روحه، حتى يرد عليه السلام».
“যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়াতে পরিচিত তার কোনো মৃত্যু ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে গমন করে এবং তাকে সালাম দিলে তখন তার সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য আল্লাহ তার রূহকে ফেরত দেন।”
,
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসটি ইবন আব্দুল বার রহ. তার সনদে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। দেখুন, আল-ইসতিযকার, ১/১৮৫; আর-রূহ ফিল কালাম ‘আলা আরওয়াহিল আমওয়াতি ওয়াল আহইয়াই বিদ-দালায়িলি মিনাল কিতাব ওয়াস-সুন্নাহ, ইবনুল কাইয়্যিম রহ. পৃষ্ঠা ৫।
,
হাদীসের এ কথা দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত ব্যক্তি তাকে চিনতে পারেন এবং তার সালামের উত্তর দেন।
,
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিহতদের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘তোমরা তো সবাই ছিলে নেতৃস্থানীয় লোক। তোমরা আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করোনি অথচ অনেকেই আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। তোমরা আমাকে নিঃসঙ্গ সহায়হীন অবস্থায় ফেলেছিলে, অথচ অনেকে আমাকে সাহয্য করেছে। তোমরা আমাকে বের করে দিয়েছিলে, অথচ অনেকে আমাকে আশ্রয় দিয়েছে।’ এরপর নবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিহতদের মৃত দেহ টেনে বদরের একটি কূয়োর বেতর ছুড়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন।
হযরত আবু তালহা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে বদরের দিন কোরায়শদের ২৪ জন বড় বড় সর্দারের লাশ বদরের একটি নোংরা কূয়োয় নিক্ষেপ করা হয়। তখন নিয়ম ছিলো যে, কোন কাওমের ওপর জয়ী হলে তিনদিন যুদ্ধক্ষেত্রে কাটানো হতো। বদরের মাঠে তিনদিন কাটানোর পর নবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সওয়ারীর পিঠে আসন সাঁটা হলো। এরপর তিনি পদব্রজে চললেন, সাহাবারা তাঁকে অনুসরণ করলেন।হঠাৎ কূয়োর তীরে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। এরপর তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলতে লাগলেন, ‘হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করতে, তবে সেটা কি তোমাদের জন্যে ভালো হতো না?
وفی صحیح البخاری،کتاب الجنائز (۱۸۳/۱):حدثني نافع، أن ابن عمر رضي الله عنهما أخبره، قال: اطلع النبي صلى الله عليه وسلم على أهل القليب، فقال:وجدتم ما وعد ربكم حقا؟ فقيل له: تدعو أمواتا؟ فقال:ما أنتم بأسمع منهم، ولكن لا يجيبون۔
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছেন, আমরা তার সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি, তোমরা কি আমাদের প্রতিপালকের কৃত ওয়াদার সত্যতার প্রমাণ পেয়েছো।’ হযরত ওমর (রা.) আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল, আপনি এমনসব দেহের সাথে কি কথা বলছেন, যাদের রূহ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে সত্তার শপথ যার হাতে মোহাম্মদের প্রাণ আমি যা কিছু বলছি, তোমরা ওদের চেয়ে বেশি শুনতে পাও না। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, তোমরা ওদের চেয়ে বেশী শ্রবণকারী নও। কিন্তু ওরা জবার দিতে পারে না [বোখারী, মুসলিম, মেশকাত, ২য় খন্ড, পৃ. ৩৪৫]
“হে অমুকের পুত্র অমুক -হে অমুকের পুত্র অমুক! আল্লাহ ও তার রাসূল [ﷺ] তোমাদের পরিণতি সম্পর্কে যে ওয়াদা করেছিলেন- তা কি তোমরা সত্য পেয়েছো? আমার সাথে আল্লাহ যে ওয়াদা করেছিলেন – তা আমি সত্য পেয়েছি।” [মুসলিমঃ জান্নাত পর্ব, জান্নাতে মৃতের স্থান পেশ করা অধ্যায়, ২:৩৮৭, হাদিস: ২৮৭৩, ৬৯৫৯]
তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে আরও বললেনঃ
يا أهل القلب بئس العشيرة كنتم كذبتمونى وصدقنى الناس –
– “হে গর্তবাসীগণ! তোমাদের বর্তমান জীবন কতই না নিকৃষ্ট। যখন অন্যান্য লোকেরা আমাকে সত্য নবী বলে গ্রহণ করেছিল, তখন তোমরা আমাকে মিথ্যা মনে করতে।” (তারীখে তাবারীঃ হাঃ নং ৫৬০ তাফসীরে ইবনে কাসির, ৩/৪৪৪, সূরা মায়েদা, ৭৯ নং আয়াতের তাফসীর; আর রাওদ্বুল আনফ, ৫/১৪৭)
,
,
★যারা বলেন যে মুরদাহ শুনতে পারেনা,তারা এসব হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন যে রাসূল স.এর জীবনের উক্ত ঘটনাটি মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে বিশেষ ভাবে সঙ্গঘটিত হয়েছিল। এটি সবসময় নয়।
عن ابن عباس رضي اللہ عنہ قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم ما من أحد یمر بقبر أخیہ الموٴمن فإن یعرفہ في الدنیا فیسلم علیہ إلا عرفہ (حاشیة الطحطاوي علی مراقي الفلاح: ۶۲۰)
সারমর্মঃ যারাই তাকে সালাম দেয়,তাকেই মুরদাহ চিনতে পারে।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, কবরবাসীকে যখন তারা সালাম দিবেন তখন তাদেরকে মুখাতিব তথা উপস্থিত ব্যক্তিকে সম্বোধন করার শব্দ দ্বারা সালাম দিবেন। ফলে মুসলিম কবরবাসীকে সালামের সময় বলবে,
«السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ».
“তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে মুমিনদের গৃহে বসবাসকারী।”
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯।
মুতাওয়াতির সূত্রে সালাফদের থেকে অসংখ্য আসার (বাণী) বর্ণিত আছে যে, মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তির যিয়ারত বুঝতে পারেন এবং এতে সে খুশী হন।
۔
عن انس عن النبیﷺ انہ قال ان العبد اذا وضع فی قبرہ وتولی عنہ اصحابہ انہ لیسمع قرع نعالہم۔ ابوداؤد شریف ص:۴۶۰، ج:۲، کتاب الجنائز، باب المشی بین القبور فی النعل۔ مطبوعہ سعد بکڈپو دیوبند، بخاری شریف ص۱/۱۷۸، کتاب الجنائز، باب المیت یسمع النعال، مطبوعہ اشرفی دیوبند۔
রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয় তখন
ﻟﻴﺴﻤﻊ ﻗﺮﻉ ﻧﻌﻠﻴﻪ
অর্থাৎ সে তার সংগীদের হেটে চলে আসার সময় পায়ের শব্দ শুনতে পায়
[সহীহ বুখারী,মেশকাত শরীফ কিতাবুল ঈমান,বাবু ইসবাতি যিয়ারাতিল কুবুর! ]
,
বুখারী ও মুসলিম শরীফে বিভিন্ন সনদে ও সুত্রে বর্ণিত হয়েছে-
انہ ﷺ امر بقتلی بدر فالقوا فی قلیب ۔ ثم جا ء حتی وقف علیھم وناداھم باسماء ھم یا فلان بن فلان ویافلان بن فلان ھل وجدتم ما وعدکم ربکم حقا۔ فانی وجدت ما وعدنی ربی حقا ۔ فقال لہ عمر یا رسول اللہّٰ ﷺ ما تخاطبوا من اقوام قد جیفوا ۔ فقال والذی بعثنی بالحق ما انتم باسمع لما اقول منھم ولکنھم لا یستطیعون جوابا۔
অর্থ- “রাসুল ﷺ বদরের যুদ্ধে নিহত ৭০ জন কোরাইশ নেতার লাশ একটি গর্তে ফেলার নির্দেশ দিলেন।এর কিছুদিন পর (৩ দিন) তিনি ঐ গর্তের নিকট এসে দাঁড়ালেন এবং তাদেরকে নাম ধরে ধরে সম্মোধন করে বললেন-হে অমুকের পুত্র অমুক,হে অমুকের পুত্র অমুক আল্লাহ্ পাক তোমাদের ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন-তোমরা কি তা সত্য পেয়েছো? আমি তো আমার সাথে আল্লাহর প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি সত্য পেয়েছি। হযরত ওমর (রাঃ) আরয করলেন-ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আঁপনি কি এমন মৃত লাশের সাথে কথা বলছেন-যারা পঁচে দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে? রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-আঁমি ঐ পবিত্র যাতের (সত্বার) শপথ করে বলছি- যিঁনি আঁমাকে সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন-তোমরা আমার কথা তাদের চেয়ে বেশী শুনতে পাচ্ছোনা-কিন্তু তারা জওয়াব দিতে অক্ষম”।
[বুখারী ও মুসলিম]
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৫৮, ইসলামিক সেন্টার ৭০১৬)।
,
ফত্হুল কবীর ১ম খন্ড ১৬৯ পৃষ্ঠায় হাদীস বর্ণিত হয়েছে-
روی عبد اللّٰہ بن عباسص انہ ﷺ قال ان المیت اذا دفن سمع خفق نعالھم اذا ولوا منصر فیلن۔
অর্থ-হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন- রাসুলেপাক ﷺ এরশাদ করেছেন-”যখন লোকেরা মৃত ব্যক্তিকে কবর দিয়ে বাড়ী ফিরে যায়-তখন কবরবাসী তাদের জুতার মৃদু শব্দও শুনতে পায়”
,
والذی تحصل لنا من النصوص واللہ اعلم ان سماع الموتی ثابت فی الجملۃ بالاحادیث الکثیرۃ الصحیحۃ۔“ (فتح الملھم ۴۷۹/۲)
সারমর্মঃ নিশ্চয়ই মুরদাহ ব্যাক্তির অনেক হাদীস দ্বারা প্রমানীত রয়েছে।
۔
فاعلم ان مسئلۃ سماع الموتی وعدمہ من المسائل التی وقع الخلاف فیہ بین الصحابۃ رضوان اﷲ علیہم اجمعین الخ، احکام القرآن للمفتی محمد شفیعؒ ص۳/۱۶۳، مطبوعہ کراچی۔
۶ ومذہبہا (ای مذہب عائشۃ) ان اہل القبور یعلمون ماسمعوا قبل الموت ولایسمعون بعد الموت انتہی قلت ہذا من عائشۃ یدل علی انہا ردت روایۃ …
ابن عمر المذکور ولکن الجمہور(یعنی جمہور العلماء) خالفوہا فی ذلک وقبلوا حدیث ابن عمررضی اللّٰہ تعالیٰ عنہ لموافقۃ من رواہ غیرہ علیہ (عمدۃ القاری ص۴/۲۰۲، کتاب الجنائز، الجزء الثامن، باب ماجاء فی عذاب القبر) ہذ ا مصیر من عائشۃ الی رد روایۃ ابن عمر المذکورۃ وقدخالفہا الجمہور فی ذلک وقبلوا حدیث ابن عمر (فتح الباری ص۳/۶۰۲؍ کتاب الجنائز، باب ماجاء فی عذاب القبر، مطبوعہ نزار مصطفی الباز مکہ مکرمہ
সারমর্মঃ এই ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ এর মত হলো মুরদাহ ব্যাক্তি মৃত বরনের পর শুনতে পরেনা।
,
হযরত ইবনে ওমর রাঃ এবং জমহুর দের মত হলো তারা শুনতে পারে।
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
মূল কথা হলো এই মাসআলার ক্ষেত্রে ইসলামী স্কলারদের মতবিরোধ রয়েছে।
দারুল উলুম দেওবন্দ এর 38875 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে এই মাসআলা নিয়ে আমাদের গবেষণা না করে আমাদের উচিত রাসুল সাঃ নির্দেশ মেনে কবর যিয়ারত করা।