আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
135 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লহি ওয়াবারকাতুহ।
❝ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবেনা ❞ এই হাদিসটা আমরা কম বেশি সবাই জানি। সাধারণভাবে এই বন্ধন অটুট রাখা খুব একটা কঠিন নয়। সবার সাথে মিলেমিশেই থাকা হয় বেশিরভাগ সময়। তবে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি এর ব্যাতিক্রম হয়, তবে কি আমি বা আমরা এর জন্য জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো না? আমি একটু বিস্তারিত বলছি..


যদি কোন নিকট আত্মীয় খুব বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়? আমি ক্ষতির ব্যাপারটা সরাসরি বলতে সংকোচ বোধ করছি, তবে ক্ষতিটা অনেক বড়, এমন একজন ব্যাক্তি, যার থেকে পরিবারের মেয়ে সদস্যরা নিরাপদ নয় তার চরিত্রগত কারণে। আশা করি বুঝে নিবেন। এরকম একজন ব্যাক্তির থেকে পরিবারের মেয়েদের সেইফ রাখতে তাকে যদি বাসায় আসতে নিষেধ করা হয় তবে কি আমরা গুনাহ এর ভাগিদার হবো? তার পরিবারের অন্য সদস্যদের যথেষ্ট সমীহ করেই চলা হয়, তার বউ বাচ্চা, মা বাবা, ভাই বোন অন্য সবার সাথেই সম্পর্ক ঠিকই আছে, তাদের বিপদে আপদে সাহায্যও করা হয়। শুধু ঐ নির্দিষ্ট ব্যাক্তির আচরণ/চরিত্রগত কারণে তার সাথে কথা বলা হয় না এবং বাসায় আসতে নিষেধ করা হয়েছে। তাকে একাধিক বার সতর্ক করার পরও তার আচরণের কোনই পরিবর্তন হয় নি। এক্ষেত্রে আমরা যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা কি ঠিক আছে?


এই সম্পর্ক রিলেটেডই আরেকটি প্রশ্ন.... আমি এটাও জানি ক্ষমা করা মহৎ একটি গুন। আল্লাহ নিজেও ক্ষমা করতে পছন্দ করেন এবং যে ক্ষমা করে দেয় তাকেও পছন্দ করেন। অন্য সবাইকে ক্ষমা করে দিলেও উল্লেখিত এই ব্যাক্তির জন্য কোনো ভাবেই মন থেকে ক্ষমা আসে না। কারণ সে এখনও তার কাজের জন্য অনুতপ্ত নয়, শুধরাবারও নয়। এক্ষেত্রে আমি যদি তাকে ক্ষমা করতে না পারি আল্লাহ কি আমার উপর অসন্তুষ্ট হবেন?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

হাদীস শরীফে এসেছে 

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ " . - صحيح

জুবাইর ইবনু মুত্বঈম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ১৯-(২৫৫৫), আবূ দাঊদ ১৬৯৬, তিরমিযী ১৯০৯, সহীহুল জামি‘ ৭৬৭১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫৪০ সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০২৩৪, মুসনাদুল বাযযার ৩৪০৫, আহমাদ ১৬৭৩২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৩৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫৪, শু‘আবুল ঈমান ৭৯৫২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ১৪৯১, আর মু‘জামুল আওসাত্ব ৯২৮৭।)

আরো জানুনঃ  https://ifatwa.info/4223/

দারুল উলুম  দেওবন্দ এর 178050 নং ফতোয়াতে এসেছে যে কোনো মুসলমানের সাথে হিংসা ইত্যাদির কারনে সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই।  তবে সে যদি দীনের লাইন থেকে দূরে সরে যায়, মদ খায়, জুয়া খেলে, যেনা করে, সুদ খায়। বুঝানোর পরেও বুঝেনা, ইসলাম মানেনা। তাহলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ আছে। তবে  স্থায়ীভাবে নয়, সাময়িক ভাবে।  (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়্যাহ ৮/২৭০)

হযরত আবু আইয়ুব রাযি থেকে বর্ণিত।

 وعَنْ أَبِي أَيُّوبَ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثِ لَيَالٍ، يَلْتَقِيَانِ, فَيُعْرِضُ هَذَا، ويُعْرِضُ هَذَا، وخَيْرُهُمَا الَّذِي يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির জন্য হালাল নয় যে সে তার ভাই এর সাথে তিন দিনের বেশী এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে, দু’জনে সাক্ষাৎ হলেও একজন এদিকে আর অপর জন সে দিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাদের মধ্যে যে সর্বপ্রথম সালামের সূচনা করবে, সেই উত্তম ব্যাক্তি।(সহীহ মুসলিম-২৫৬০)

উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় মুল্লা আলী কারী রাহ লিখেন,

وَأَجْمَعَ الْعُلَمَاءُ عَلَى أَنَّ مَنْ خَافَ مِنْ مُكَالَمَةِ أَحَدٍ وَصِلَتِهِ مَا يُفْسِدُ عَلَيْهِ دِينَهُ أَوْ يُدْخِلَ مَضَرَّةً فِي دُنْيَاهُ يَجُوزُ لَهُ مُجَانَبَتُهُ وَبُعْدُهُ، وَرَبَّ صَرْمٍ جَمِيلٍ خَيْرٌ مِنْ مُخَالَطَةٍ تُؤْذِيهِ.

উলামাগণ একমত যে, কারো সাথে কথা বললে বা মিলিত হলে যদি তার দ্বীন নষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা বা তার দুনিয়া তার জন্য কষ্টকর হবে বলে ধারণা হয়, তাহলে এমন মানুষ থেকে দূরে থাকার জায়েয রয়েছে।অনেক সম্পর্ক বর্জন বা দূরত্ব এমন রয়েছে যা মিলিত হওয়ার চেয়ে অনেক উত্তম।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

১. চারিত্রিক দিক থেকে যারা খারাপ, এমন আত্মীয়দের সাথে সাময়িক ভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ আছে। এতে সমস্যা নেই। সুতরাং আপনারা তাদের সাথে সাময়িক ভাবে আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবেন। তবে স্থায়ী ভাবে নয়। অর্থাৎ তার চরিত্র সংশোধন হলে ও পূর্বের খাপার চরিত্র থেকে তওবা করলে তখন তার সাথে আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন রাখা জায়েয হবে না।

২. যখন সে পূর্বের গুনাহ থেকে তওবা করবে ও সৎচরিত্রবান হবে তখন তাকে ক্ষমা করা উচিত। তবে আপনি তাকে ক্ষমা না করলে ক্ষমাকারীর জন্য হাদীসে যেসকল সুসংবাদ এসেছে সেগুলো থেকে আপনি মাহরুম হবেন। আরো জানুন: https://ifatwa.info/62174/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...