বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
সর্ব মহলের স্বীকৃত বিষয় মানুষের চাহিদা সমূহের মধ্যে বিবাহ হচ্ছে সব চেয় বেশী চাহিদাসম্পন্ন বস্তু,এবং এটা জান্নাতে পুরুষ-মহিলার উভয়ের ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হবে,মহিলাকে আল্লাহ তা'আলা জান্নাতে তার দুনিয়ার স্বামীর সাথে বিবাহ দিবেন(যদি ঐ স্বামী ও জান্নাতি হয়)।
যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻭَﺃَﺩْﺧِﻠْﻬُﻢْ ﺟَﻨَّﺎﺕِ ﻋَﺪْﻥٍ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻭَﻋَﺪْﺗَﻬُﻢْ ﻭَﻣَﻦْ ﺻَﻠَﺢَ ﻣِﻦْ ﺁﺑَﺎﺋِﻬِﻢْ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻬِﻢْ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻬِﻢْ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ
হে আমাদের পালনকর্তা, আর তাদেরকে দাখিল করুন চিরকাল বসবাসের জান্নাতে, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের বাপ-দাদা, পতি-পত্নী ও সন্তানদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(মাজমু'উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাঈল ইবনে উসাইমিনঃ২/৫১)
ঐ মহিলা যে দুনিয়াতে বিবাহ করেনি,অথবা ঐ মহিলা যার স্বামী জান্নাতে প্রবেশ করেনি, এ রকম মহিলা ব্যপারে কোন প্রকাশ্য আলোচনা সাধারণত পাওয়া যায়না,
আল্লামা আলুসি বাগদাদী রাহ বলেনঃ
ﻭﻳﻌﻄﻲ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻫﻨﺎﻙ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺰﻭﺟﺎﺕ ، ﻭﻗﺪ ﻳﻀﻢ ﺇﻟﻰ ﺫﻟﻚ ﻣﺎ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻣﻦ ﻧﺴﺎﺀ ﻣُﺘْﻦَ ﻭﻟﻢ ﻳﺘﺰﻭﺟﻦ .
জান্নাতি পুরুষদেরকে তার পৃথিবীর স্ত্রী দেওয়া হবে,সাথে সাথে ঐ সমস্ত মহিলাকেও তাকে দেওয়া হতে পারে যে মহিলা মারা গেছে এবং বিবাহ হয়নি।
ﻭﻣﻦ ﺗﺰﻭﺟﺖ ﺑﺄﻛﺜﺮ ﻣﻦ ﻭﺍﺣﺪ : ﻓﻬﻲ ﻵﺧﺮ ﺃﺯﻭﺍﺟﻬﺎ ، ﺃﻭ ﻷﻭﻟﻬﻢ ﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻃﻠﻘﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ، ﺃﻭ ﺗﺨﻴﺮ ﻓﺘﺨﺘﺎﺭ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﺃﺣﺴﻨﻬﻢ ﺧﻠﻘﺎً ﻣﻌﻬﺎ ، ﺃﻗﻮﺍﻝ : ﺻﺤﺢ ﺟﻤﻊ ﻣﻨﻬﺎ ﺍﻷﻭﻝ ، ﻭﺗﻌﻄﻰ ﺯﻭﺟﺔ ﻛﺎﻓﺮ ﺩﺧﻠﺖ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻟﻤﻦ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ "
ঐ মহিলা যে দুনিয়াতে দুই বা ততোধিক স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল,সে সর্বশেষ স্বামীর সাথে জান্নাতে থাকবে,অথবা প্রথম স্বামীর সাথে থাকবে( যদি বিবাহ বিচ্ছেদ না হয়ে থাকে),অথবা স্ত্রীকে এখতিয়ার দেয়া হবে।
আহলে কিতাবের মু'মিন স্ত্রীকে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার সাথে বিবাহ দিবেন।(রুহুল মা'আনী-২৫/১৩৬)
ইবনে উসাইমিন রহ বলেনঃ
ঠিক তেমনিভাবে অবিবাহিত মহিলা মারা গেলে অথবা ঐ মহিলা যে মারা গেছে কিন্তু তার স্বামী তার সাথে জান্নাতে প্রবেশ করেনি,যখন সে জান্নাতে বিবাহের আগ্রহ প্রকাশ করবে,তখন তাকে জান্নাতে পৃথিবীর অবিবাহিত পুরুষদের সাথে বিবাহ দেয়া হবে,অথবা তাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরিকৃত জান্নাতি পুরুষদের সাথে তাদেরকে বিবাহ দেয়া হবে,অথবা আল্লাহ যার সাথে চান তার সাথে।
৭০জন হুর পুরুষকে দেয়া হবে,মহিলাকে তাদের সর্দার বানানো হবে,মহিলারা জান্নাতে একজন স্বামী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে,তারা অন্য কাউকে চাইবে না।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ يُطَافُ عَلَيْهِم بِصِحَافٍ مِّن ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ وَأَنتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ لَكُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ كَثِيْرَةٌ مِّنْهَا تَأْكُلُوْنَ.
‘তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীরা জান্নাতে প্রবেশ কর তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করে দেওয়া হবে। তাদের সামনে সোনার থালা ও পানপাত্রসমূহ পরিবেশন করা হবে এবং মন ভুলানো ও দৃষ্টির পরিতৃপ্তকারী জিনিস সমূহ সেখানে থাকবে। তাদেরকে বলা হবে এখন তোমরা চিরদিন এখানেই থাক। তোমরা পৃথিবীতে যে নেক আমল করেছিলে সে সব আমলের দরুন তোমরা এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী হয়েছ। তোমাদের জন্য এখানে প্রচুর ফল-ফলাদী রয়েছে যা তোমরা খাবে’ (যুখরূফ ৭০-৭৩)।
দুনিয়ার স্ত্রী ও জান্নাতী হুরদের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠানঃ
হুরদের অহঙ্কার।
عن علی رضی اللّٰہ عنہ قال قال رسول اللّٰہ ﷺ فی الجنۃ لمجتمعا للحور العین۔ یرتفعن باصوات لم تسع الخلائن بمثلا، قال یقلن نحن الخالدات فلا نبیذ ونحن الناعمات فلا نبأس ۔ ونحن الراضیات فلا نسخط۔ طوبی لمن کان لنا وکنا لہ ۔
অর্থঃ হযরত আলী (রাঃ) বলেন- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “জান্নাতের মধ্যে ডাগর চোখ বিশিষ্ট হুরদের মিলনমেলা বসবে। তাঁরা এত উচ্চ আওয়াজ করবে- যা সৃষ্টির কেউ শুনেনি। হুযুর (ﷺ) বলেন- “তাঁরা উচ্চ আওয়াজে বলতে থাকবে- “আমরা জান্নাতে এমন চিরস্থায়ী যে- নষ্ট হবো না। আমরা এমন নেয়ামত প্রাপ্তা যে- তা কখনও পুরাতন এবং নষ্ট হবেনা। আমরা স্বামীদের প্রতি এমন রাযী যে- কোনদিন গোস্বা হবোনা। আমরা যাদের জন্য এবং যারা আমাদের জন্য- সবারই ভাগ্য সুপ্রসন্ন” (তিরমিযি শরীফ)।
দুনিয়ার স্ত্রীদের জবাব
قالت عائشۃ رضی اللّٰہ عھا ان الحور العین اذا قلن ھذہ المقالۃ ۔ اجابھن ۔ المؤمنات من اھل الدنیا ۔ نحن المصلیات وما صلیتن ۔ ونحن الصائمات ۔ وما صمتن ،ونحن المتوضات وما توضائن ونحن المتصدقات وما تصدقتن ۔ قالت عائشۃ فلغبنھن۔
অর্থঃ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)
বলেন- “জান্নাতী হুরেরা যখন ঐসব বড়াই করবে- তার জবাবে দুনিয়ার মুমিন স্ত্রীগণ বলবে-“আমরা ছিলাম নামাযী- তোমরা নামাযী নও। আমরা ছিলাম রোযাদার- তোমরা তো রোযা রাখনি। আমরা ছিলাম ওযু সম্পাদনকারিনী- তোমরা তো তা ছিলেনা। আমরা ছিলাম সাদ্কাকারিনী- তোমরা তো তা ছিলেনা”। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন- দুনিয়ার মহিলারাই এই বিতর্কে জিতে যাবে”। (আত-তাযকিরাহ্)।
ব্যাখ্যাঃ বুঝা গেলো- হুরেরা হলো ভোগের, আর দুনিয়ার স্ত্রীরা হলো ত্যাগের। হুরেরা আমল শুন্য- আর মোমেন নারীরা হবে আমলে পূন্য। শুন্যের উপর পূন্যের প্রাধান্য সর্বজন স্বীকৃত। কাজেই দুনিয়ার স্ত্রীর সম্মান হবে বেশী। ইহাই হাদীসের মূল কথা। আল্লাহ্ যেন আমাদেরকে জান্নাতে দুনিয়ার পূন্যবতী স্ত্রী নসীব করেন। আমীন!
বিঃ দ্রঃ ঐসব মা বোনদের জন্য সুসংবাদ- যারা দুনিয়াতে নামায রোযা, অযু গোসল, পাক পবিত্রতা ও সাদ্কা খয়রাতে ত্রুটি করেন না। তাঁরাই হবেন সেরা ও মর্যাদার অধিকারিনী। তাঁদের মূল্য জান্নাতী হুরের চেয়েও অধিক।