আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
436 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (18 points)
আমার আব্বু নাই, ব্যাংকের ইন্টারেস্ট সংসার চালানোর কাজে উইজ করা লাগে যেহেতু উপার্জনের কোন লোক নাই। আমাকে এতদুর পড়াশোনা করানো হয়েছে, আমার কি অধিকার নাই কোন যে আমি নিজে উপার্জন করে আম্মার খরচ চালাতে পারি,সাথে ব্যাংকের ইন্টারেস্ট অফ করতে???? কিন্তু আমার স্বামী চায় না যে আমি বাইরে যেয়ে জব করি, তাইলে আমি আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের ইন্টারেস্ট অফ করতে পারবোনা, না পারব মায়ের দ্বায়িত্ব নিতে, আমার এই মূহুর্তে কি করার আছে?

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
উসূলঃ প্রয়োজন অনেক নিষিদ্ধ জিনিষকে সিদ্ধ করে দেয়
ﺍﻟﻀﺮﻭﺭﺍﺕ ﺗﺒﻴﺢ ﺍﻟﻤﺤﻈﻮﺭﺍﺕ
স্থান-কাল-পাত্র বেধে সময়ের  প্রয়োজনে ফুকাহায়ে কিরামগন সহজতার স্বার্থে আসল হুকুম থেকে সরে এসে তার বিপরীত সাময়িক হুকুম মাঝেমধ্যে প্রয়োগ করে থাকেন।একেই পরিভাষায় জরুরত বলে। জরুরত বা সময়ের চাহিদায় অনেক বিধিত সিদ্বান্তকে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক পরিবর্তন করে দেয়।
এরকম কিছু ফিকহী মূলনীতি 'উসূলে ফিকহ' এর কিতাবাদিতে সবিস্তারে বর্ণিত আছে,তন্মধ্যে কিছু মূলনীতি হল।
 যথাক্রমেঃ-
(১) ﺍﻟﻀﺮﻭﺭﺍﺕ ﺗﺒﻴﺢ ﺍﻟﻤﺤﻈﻮﺭﺍﺕ
(প্রয়োজন অনেক নিষিদ্ধ জিনিষকে বৈধ করে দেয়)
এটা একাটা নীতিসিদ্ধ মৌলিক ফিকহী ক্বায়দা/ধারা যা কোরআন এবং হাদিসের থেকে চয়ন করা হয়েছে।
যেমনঃ-কোরআন থেকে.....
 ﻭَﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﻻَّ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﻣِﻤَّﺎ ﺫُﻛِﺮَ ﺍﺳْﻢُ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻗَﺪْ ﻓَﺼَّﻞَ ﻟَﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﺍﺿْﻄُﺮِﺭْﺗُﻢْ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻭَﺇِﻥَّ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻟَّﻴُﻀِﻠُّﻮﻥَ ﺑِﺄَﻫْﻮَﺍﺋِﻬِﻢ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻋِﻠْﻢٍ ﺇِﻥَّ ﺭَﺑَّﻚَ ﻫُﻮَ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﺎﻟْﻤُﻌْﺘَﺪِﻳﻦ
তরজমাঃ-কোন কারণে তোমরা এমন জন্তু থেকে ভক্ষণ করবে না, যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়, অথচ আল্লাহ ঐ সব জন্তুর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যেগুলোকে তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন; কিন্তু সেগুলোও তোমাদের জন্যে হালাল, যখন তোমরা নিরুপায় হয়ে যাও। অনেক লোক স্বীয় ভ্রান্ত প্রবৃত্তি দ্বারা না জেনে বিপথগামী করতে থাকে। আপনার প্রতিপালক সীমাতিক্রম কারীদেরকে যথার্থই জানেন।(সূরা আন-আম-আয়াতঃ-১১৯)

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻴْﺘَﺔَ ﻭَﺍﻟﺪَّﻡَ ﻭَﻟَﺤْﻢَ ﺍﻟْﺨِﻨﺰِﻳﺮِ ﻭَﻣَﺎ ﺃُﻫِﻞَّ ﺑِﻪِ ﻟِﻐَﻴْﺮِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻓَﻤَﻦِ ﺍﺿْﻄُﺮَّ ﻏَﻴْﺮَ ﺑَﺎﻍٍ ﻭَﻻَ ﻋَﺎﺩٍ ﻓَﻼ ﺇِﺛْﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ
তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।
(সূরা বাক্বারা-আয়াতঃ১৭৩)


বিশিষ্ট ততাফসির বিশারদ আব্দুর রহমান আস-সি'দী রহ, উক্ত আয়াতের ব্যখ্যা করে বলেনঃ
( ﻓَﻤَﻦِ ﺍﺿْﻄُﺮَّ
অর্থাৎ-পিপাসা বা খাবার না থাকার ধরুণ, অথবা কাররো ভয় প্রদর্শনের ধরুণ মৃতপ্রাণী (হারাম) ভক্ষণ করতে মজবুর হওয়া,এ ছাপড়ার বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকা।
ﻏَﻴْﺮَ ﺑَﺎﻍ
অর্থাৎ-হালালের উপর ক্ষমতা থাকার পর হারামকে অন্বেষণ করা অথবা প্রচন্ড বুক না থাকা-এরকম না হওয়া।
ٍ ) ﺃﻱ : ﻏﻴﺮ ﻃﺎﻟﺐ ﻟﻠﻤﺤﺮَّﻡ ، ﻣﻊ ﻗﺪﺭﺗﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﻼﻝ ، ﺃﻭ ﻣﻊ ﻋﺪﻡ ﺟﻮﻋﻪ .ﻭَﻻ ﻋَﺎﺩٍ
তরজমাঃ-প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেয়ে বা সুবিধা ভোগ করে সীমালঙ্ঘন করা যাবে না।বরং প্রয়োজনের ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।
) ﺃﻱ : ﻣﺘﺠﺎﻭﺯ ﺍﻟﺤﺪ ﻓﻲ ﺗﻨﺎﻭﻝ ﻣﺎ ﺃﺑﻴﺢ ﻟﻪ ﺍﺿﻄﺮﺍﺭﺍً ، ﻓﻤَﻦ ﺍﺿﻄﺮ ﻭﻫﻮ ﻏﻴﺮ ﻗﺎﺩﺭ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﻼﻝ ، ﻭﺃﻛﻞ ﺑﻘﺪﺭ ﺍﻟﻀﺮﻭﺭﺓ : ﻓﻼ ﻳﺰﻳﺪ ﻋﻠﻴﻬﺎ .( ﻓَﻼ ﺇِﺛْﻢ
অর্থাৎ-তখন হারাম জিনিষ ভক্ষণ করলেও কোনো গোনাহ হবে না।এ পরিস্থিতিতে হারাম সমায়িক সময়ের জন্য হালাল হয়ে যায়।এ সময় মানুষ আল্লাহর পক্ষ থেকে তা ভক্ষণ করে জীবন বাচাতে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে যায়।এমনি তখন নিজের জীবনকে ধংসের ধরুণ তিরস্কারেরও যোগ্য হয়ে যায়।নিজের জীবন বাচানো তখন ফরজ, হারাম ভক্ষণ না করে তৎক্ষনাৎ মারা গেলে গোনাহগার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়ে যায়।তখন সে আত্মহত্যাকারী বলে বিবেচিত হয়ে যায়।এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ। এজন্যই আল্লাহ শেষে বলছেন " নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু"।


দ্বিতীয় আরেকটি মূলনীতি হল,
দুই মসিবত বা দুই ক্ষতির মধ্যে তুলনামূলক কমটাকে গ্রহণ করা।


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার বিবরণ মতে আপনার মা কে সুদ থেকে বাঁচাতে আপনি চাকুরী করতে পারবেন।তবে এজন্য আপনাকে পর্দা সম্মত চাকুরী খুজতে হবে।যদি পর্দা সম্মত চাকুরীর কোনো খোজ না পান,তাহলে আপনার বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ কে মূলধন রেখে সেই টাকা দিয়ে পর্দার আড়ালে থেকে ব্যবসাও করতে পারেন।

যদি উপরোক্ত দু'টির কোনোটিই সম্ভব না হয়,আপনার নিকটাত্মীয় কেউ আপনার মার দেখাশুনা না করে, তাহলে আপনার স্বামীর কাছে দু'টি অপশন থাকবে,স্বামী আপনার মায়ের ভরণপোষণ গ্রহণ করবে,অথবা আপনাকে পর্দা সম্মত চাকুরীর অনুমোদন দিবে।

যদি স্বামী দায়িত্ব গ্রহণ না করে,এবং আপনাকে চাকুরীরও অনুমোদন না দেয়,তাহলে আপনি চাকুরী করতে পারবেন।এক্ষেত্রে আপনাকে চাকুরীর যেতে স্বামী বারণ করতে পারবে না।


কিন্তু যদি উক্ত চাকুরীতে গেলে আপনার ইজ্জত আব্রুর ক্ষতির আশংকা থাকে,তাহলে এমতাবস্থায় আপনার মা প্রয়োজন পর্যন্ত সুদ গ্রহণ করতে পারবেন।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...