আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
54 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (7 points)
edited by
আমি একজন গৃহিনী। আমার কাছে টোটাল প্রায় ৪ ভরির কাছাকাছি গোল্ড, কিছু রূপা আছে। আর ৫০,৭০০ টাকা ধার হিসেবে অন্য কে দিয়ে রেখেছি।

২ বছর ৬ মাস আগে আমার বিয়ে হয়। বিয়েতে কিছু গোল্ড, রুপা পাই যা নেসাব পরিমাণ। কিন্তু আমি তখন বুঝিনি আমার যাকাত ফরয হয়ে গেছে। এর মাঝে কয়েক মাস পর পর আমি আরও কিছু গোল্ড এর মালিক হই।
আমার প্রশ্ন এখন আমি যাকাত কিভাবে দিবো? যেহেতু নিসাব পরিমাণ সম্পদ ১ বছর থাকা লাগে, এখন আমি তো একেক টা গোল্ড আইটেম একেক সময়ে কিনেছি, কোনোটা ২ বছর ৬ মাস আগে, কোনোটা ২ বছর আগে, কোনোটা ১ বছর ৪মাস আগে।

তাহলে আমি এখন গত ২ বছরের যাকাতের সম্পদের হিসাব কিভাবে করবো?

২.আমার স্বামীর কোনো সম্পদ নেই। আমরা ভাড়া থাকি। মাসে ২৯,৫০০টাকা বেতন পায়। তাতে সংসার চালানোর পর প্রতি মাসেই উনার আরও কয়েক হাজার টাকা ঋণ করতে হয়। আমরা কোনো প্রকার বিলাসিতা করিনা, তাও অভাব অনটনেই থাকি বলা যায়। বাড়ি ভাড়া দিয়ে, অন্য সব বিল দিয়ে, ঋণ পরিশোধ করে খাবারের চাহিদা টা কোনো রকম পূরণ করতে পারেন। অসুস্থতায় ডাক্তার দেখানোর স্বামর্থও থাকেনা। এখন আমি কি আমার যাকাতের টাকা আমার স্বামী কে দিতে পারবো?

৩. আমার বাবার বাড়ি, জমি আছে। কিন্তু উনার অনেক ঋণ। ব্যাংক থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ঋণ করেছেন। চলতে খুব কস্ট হয়ে যায়। তাকে কি আমি মেয়ে হয়ে যাকাত দিতে পারবো?

৪. আমার ছোটো বোন, সে বিবাহিত। তার কিছু গোল্ড আছে। তার স্বামীর বেতন অনেক কম। তারা অনেক আর্থিক কস্টে দিন যাপন করে। তাকে কি আমি যাকাত দিতে পারবো?

৪. প্রায় ১ বছর ৮ মাস আগে এক আত্মীয় কে ৬২,০০০ টাকা ধার দেই। কিছু মাস পর কিছু টাকা সে পরিশোধ করে। তার থেকে এখন আমি ৫০,৭০০ টাকা পাবো। এগুলোর যাকাত কি আমাকে দিতে হবে?

৫. যাকাত কি বর্তমান বাজার মূল্য অনুসারে দিবো? নাকি যখন সম্পদের ১ বছর হয়েছিলো সেই সময়ের বাজার মূল্য হিসেবে দিবো?

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাব

https://ifatwa.info/14937/ নং ফাতওয়াতে আমরা বলেছি যে,

কোন কোনো ব্যক্তির যাকাতের মাল তার দরিদ্র ভাই, বোন, চাচা, ফুফুসহ সকল দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনকে দিতে কোন আপত্তি নেই।

বরং তাদেরকে যাকাত দেওয়া হলে সেটা সদকা ও আত্মীয়তার হক আদায়। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: "মিসকীনকে যাকাত দেওয়া সদকা। আর আত্মীয়কে দেওয়া সদকা ও আত্মীয়তার হক আদায়"।[মুসনাদে আহমাদ (১৫৭৯৪) ও সুনানে নাসাঈ (২৫৮২)]

 

পূর্ণ হাদীসটি হলোঃ

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْأَعَلَى، قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ عَوْنٍ، عَنْ حَفْصَةَ، عَنْ أُمِّ الرَّائِحِ، عَنْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الصَّدَقَةَ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ، وَعَلَى ذِي الرَّحِمِ اثْنَتَانِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ»

সালমান ইব্ন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মিসকীনকে দান করার মধ্যে শুধু সাদাকা (র সওয়াব রয়েছে) আর আত্নীয়-স্বজনকে দান করা দুটি (সওয়াব রয়েছে) দান করা (র সওয়াব) এবং আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা (র সওয়াব)।

,নিজ পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ যারা তার জন্মের উৎস তাদেরকে নিজের যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। এমনিভাবে নিজের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতিন এবং তাদের  অধস্তনকে নিজ সম্পদের যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। স্বামী এবং স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়।-রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮

 

এরা গরীব হলেও এদেরকে যাকাতের মাল দেওয়া যাবে না; বরং সামর্থ্য থাকলে তাদের খরচ চালানো আবশ্যকীয়; যদি তাদের খরচ চালানোর মত সে ছাড়া অন্য কেউ না থাকে।

 

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবেনা। এমনিতেই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে।  

,

তবে স্বামী যদি ঋন গ্রস্থ হয়,কোনোভাবেই তাহা পূরন করতে সক্ষম না হয়, তাহলে কিছু ইসলামী স্কলারদের মতে সেই ছুরতে ঋন পরিশোধ করার জন্য স্ত্রী যাকাতের টাকা স্বামীকে দিতে পারবে। শায়েখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল দাঃবাঃ এই বিষয়ে  লিখেছেনঃ

 

স্ত্রী সম্পদশালী হলে তার ঋণগ্রস্ত স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে।কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে এমন গরিব-অসহায় ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া জায়েজ যাদের ভরণ-পোষণ দেয়া যাকাত দাতার জন্য ফরয নয়। যেমন: পিতা, মাতা, স্ত্রী প্রমুখকে যাকাত দেয়া যাবে না। কেননা তাদের ভরণ-পোষণ দেয়া ফরয।

কিন্তু ভাই, বোন, চাচা, চাচী, ফুফা, খালু, মামা ইত্যাদি ব্যক্তিদেরকে যাকাত দেয়া যাবে যদি তারা যাকাত পাওয়ার হকদার হয়।

 

এমন কি স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয় আর স্বামী ঋণগ্রস্ত হয় আর আর্থিক অভাবে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয় তাহলে তাহলে স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে পারে। শরিয়তে এতে কোনো বাধা নেই। কেননা, স্বামীর ভরণ-পোষণ দেয়া স্ত্রীর জন্য ফরয নয়।

 

 এ মর্মে হাদিস হল:

আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতর দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গেলেন এবং সালাত শেষ করলেন। পরে লোকদের উপদেশ দিলেন এবং তাদের সদকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন আর বললেন: “লোক সকল! তোমরা সদকা দিবে। তারপর মহিলাগণের নিকট গিয়ে বললেন: মহিলাগণ তোমরা সদকা দাও। আমাকে জাহান্নামে তোমাদেরকে অধিক সংখ্যক দেখানো হয়েছে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কি? তিনি বললেন: তোমরা বেশী অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হয়ে থাক। হে মহিলাগণ! জ্ঞান ও দ্বীনে অপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়চেতা পুরুষের বুদ্ধি হরণ কারিণী তোমাদের মত কাউকে দেখিনি।”

যখন তিনি ফিরে এসে ঘরে পৌঁছলেন, তখন ইবনে মাস’উদ (রাঃ) এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল, যায়নাব এসেছেন। তিনি বললেন, কোন যায়নাব? বলা হল, ইবনে মাস’উদের স্ত্রী। তিনি বললেন: হ্যাঁ, তাকে আসতে দাও। তাকে অনুমতি দেওয়া হল।

তিনি বললেন: হে আল্লাহর নবী, আজ আপনি সা’দকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা সা’দকা করব ইচ্ছা করেছি। ইবনে মাস’উদ (রাঃ) (তার স্বামী) মনে করেন, আমার এ সদকায় তাঁর এবং তার সন্তানদেরই হক বেশী। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ইবনে মাস’উদ (রাঃ) ঠিক বলেছে। “তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ সদকায় অধিক হকদার।” সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বর: [1377] অধ্যায়ঃ ২১/ যাকাত (كتاب الزكاة) ইসলামিক ফাউন্ডেশন

 

আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/55464/

আরো জানুন- https://www.ifatwa.info/121       

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

 

১. কেউ যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায় তাহলে বছরের মাঝে যদি আরো কিছু সম্পদ আসে তাহলে সেটাও পূর্বের নিসাবের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে। যেমন কোনো ব্যক্তির মালিকানায় ১ লাখ টাকা আছে। অত:পর ৬ মাস পর আরো ৫০ হাজার টাকা তার মালিকানায় আসেলো। তাহলে ৬ মাস পর তাকে দেড় লাখ টাকার যাকাত দিতে হবে। যদিও এখানে ৫০ হাজার টাকার মাত্র ৬ মাস পূর্ণ হয়েছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনিও এভাবে হিসাব করে যাকাত দিয়ে দিবেন।  

 

২. হানাফী মাযহাব মতে স্ত্রী স্বামীকে কোনোভাবেই যাকাত দিতে পারবেনা। ঋনের ক্ষেত্রেও না। এমনিতেই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে। সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্ত্রী-স্বামীকে যাকাত দিতে পারবেনা।

 

৩. না, বাবা-মাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। এমনিতেই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা যাবে।

৪. জ্বী হ্যাঁ, বোন ও দুলাভাই যাকাতের হকদার হলে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে এবং যাকাতের কথা বলে দিলে তা গ্রহণ করতে তারা লজ্জাবোধ করলে যাকাতের নিয়তে গিফটের কথা বলেও তাদেরকে যাকাত দিতে পারবেন।

 

৫. জ্বী হ্যাঁ, ঐ টাকাগুলোরও যাকাত দিতে হবে।

৬. যখন সম্পদের ১ বছর পূর্ণ হয়েছিলো সেই সময়ের বাজার মূল্য হিসেবে যাকাত দিয়ে দিবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...